সুনামগঞ্জে রাতের আঁধারে লুট হচ্ছে সুরমার বালু 

#
news image

অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাতের আঁধারে সুরমা নদী থেকে বালু লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। ড্রেজারের তান্ডবে একদিকে যেমন নদীর দুই তীরের জনপদ হুমকিতে পড়েছে, অন্যদিকে ঝুঁকিতে রয়েছে জেলা শহরের সাথে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগ সেতু আব্দুজ জহুর সেতু। প্রতি রাতে নদীর কয়েকটি স্থানে ড্রেজারের তান্ডব চললেও এসব বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে সুবিধা দিয়ে সুরমা নদীর বালু এভাবে লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

ড্রেজারের তান্ডব বন্ধ না হলে আব্দুজ জহুর সেতুসহ দুই তীরের কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। সুনামগঞ্জ শহরের আব্দুজ জহুর সেতু এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আব্দুজ জহুর সেতু সংলগ্ন সুরমা নদীর কয়েকশ মিটার এলাকাজুড়ে একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন ধরে জলিলপুর, আব্দুজ জহুর সেতু এলাকা, অচিন্তপুর, বড়পাড়া এলাকাসহ একাধিক স্থানে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। রাত ১টার পর থেকে শুরু হয়ে ভোররাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। পরে এসব বালু বাল্কহেড বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। প্রতিরাতে কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।এ বিষয়ে কথা হয় বালু উত্তোলনের সাথে থাকা এক শ্রমিকের সাথে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শ্রমিক জানান, ৩১ ডিসেম্বর ব্রিজের নিচ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন শেষে এগুলো ১৯টি বাল্কহেডে বোঝাই করা হয়েছে। ৩ জানুয়ারি একই স্থান থেকে ১৫টি এবং জলিলপুর বাজার এলাকা থেকে ২৪টি, ৭ জানুয়ারি অচিন্তপুর এলাকা থেকে ২৪টি এবং ৮ জানুয়ারি আব্দুজ জহুর সেতু এলাকা থেকে ২৭টি বাল্কহেডে বালু বোঝাই করা হয় ড্রেজার মেশিনে। এসব বালু ভাটি এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডা¤িপং করার পাশপাশি সিন্ডিকেটে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন সিন্ডিকেটে রাজিব, মমিন, রমজান ও বাবুল নামের একাধিক ব্যক্তি রয়েছে। তাদের পেছনে রয়েছে বড়ধরনের রাঘববোয়ালরা। প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তিদের হাত করে রাতের আঁধাতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয় বলে জানান তিনি।

এদিকে রাতে ড্রেজার মেশিনের শব্দে অতিষ্ঠ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজন। ড্রেজারের বিকট শব্দে নির্ঘুমরাত কাটাতে হয় তাদের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। শাহ মো. মহসিন নামের একজন লিখেছেন, বিয়ের ৮ বছর পর আজ প্রথম রাত্রিযাপন করলাম পশ্চিম তেঘরিয়াস্থ আমার শ্বশুর বাড়িতে। কিন্তু ড্রেজার মেশিনের শব্দে আর ঘুমাতে পারিনি। দায় কার এলাকাবাসীর, না ওসি, না এসিল্যান্ডের, না ডিসি, না এমপি মহোদয়ের? তাঁর এমন পোস্টের কমেন্টে স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমার বলার কিছু নেই।

ড্রেজারের সবচাইতে কাছে আমি ঘুমাই। আমি মাঝে মাঝে এয়ারফোন ব্যবহার করে থাকি, ঘুমের মধ্যেও। অপরদিকে আব্দুজ জহুর সেতু এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলনের বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, সেতু এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বালি উত্তোলন করা যাবে না। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন হয়ে থাকলে এটি সেতুর জন্যে ক্ষতির বিষয়। আমরা বিষয়টি চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানাবো।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এমদাদুল হক শরীফ বলেন, লোকেশন চিহ্নিত করে নৌ পুলিশকে অবগত করে রাখব। তিনি নিজেও বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।এ ব্যাপারে জানতে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ’র মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ড্রেজারে বালু উত্তোলন অবৈধ। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা যাবে না। আমি পুলিশকে বলে রাখবো, রাতে যেখানেই ড্রেজার পাবে সেখানেই যাতে আটক করা হয়।

 

অরুন চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ

১০ জানুয়ারি, ২০২৪,  4:06 PM

news image

অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাতের আঁধারে সুরমা নদী থেকে বালু লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। ড্রেজারের তান্ডবে একদিকে যেমন নদীর দুই তীরের জনপদ হুমকিতে পড়েছে, অন্যদিকে ঝুঁকিতে রয়েছে জেলা শহরের সাথে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগ সেতু আব্দুজ জহুর সেতু। প্রতি রাতে নদীর কয়েকটি স্থানে ড্রেজারের তান্ডব চললেও এসব বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে সুবিধা দিয়ে সুরমা নদীর বালু এভাবে লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

ড্রেজারের তান্ডব বন্ধ না হলে আব্দুজ জহুর সেতুসহ দুই তীরের কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। সুনামগঞ্জ শহরের আব্দুজ জহুর সেতু এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আব্দুজ জহুর সেতু সংলগ্ন সুরমা নদীর কয়েকশ মিটার এলাকাজুড়ে একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন ধরে জলিলপুর, আব্দুজ জহুর সেতু এলাকা, অচিন্তপুর, বড়পাড়া এলাকাসহ একাধিক স্থানে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। রাত ১টার পর থেকে শুরু হয়ে ভোররাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। পরে এসব বালু বাল্কহেড বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। প্রতিরাতে কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।এ বিষয়ে কথা হয় বালু উত্তোলনের সাথে থাকা এক শ্রমিকের সাথে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শ্রমিক জানান, ৩১ ডিসেম্বর ব্রিজের নিচ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন শেষে এগুলো ১৯টি বাল্কহেডে বোঝাই করা হয়েছে। ৩ জানুয়ারি একই স্থান থেকে ১৫টি এবং জলিলপুর বাজার এলাকা থেকে ২৪টি, ৭ জানুয়ারি অচিন্তপুর এলাকা থেকে ২৪টি এবং ৮ জানুয়ারি আব্দুজ জহুর সেতু এলাকা থেকে ২৭টি বাল্কহেডে বালু বোঝাই করা হয় ড্রেজার মেশিনে। এসব বালু ভাটি এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডা¤িপং করার পাশপাশি সিন্ডিকেটে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন সিন্ডিকেটে রাজিব, মমিন, রমজান ও বাবুল নামের একাধিক ব্যক্তি রয়েছে। তাদের পেছনে রয়েছে বড়ধরনের রাঘববোয়ালরা। প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তিদের হাত করে রাতের আঁধাতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয় বলে জানান তিনি।

এদিকে রাতে ড্রেজার মেশিনের শব্দে অতিষ্ঠ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজন। ড্রেজারের বিকট শব্দে নির্ঘুমরাত কাটাতে হয় তাদের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। শাহ মো. মহসিন নামের একজন লিখেছেন, বিয়ের ৮ বছর পর আজ প্রথম রাত্রিযাপন করলাম পশ্চিম তেঘরিয়াস্থ আমার শ্বশুর বাড়িতে। কিন্তু ড্রেজার মেশিনের শব্দে আর ঘুমাতে পারিনি। দায় কার এলাকাবাসীর, না ওসি, না এসিল্যান্ডের, না ডিসি, না এমপি মহোদয়ের? তাঁর এমন পোস্টের কমেন্টে স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমার বলার কিছু নেই।

ড্রেজারের সবচাইতে কাছে আমি ঘুমাই। আমি মাঝে মাঝে এয়ারফোন ব্যবহার করে থাকি, ঘুমের মধ্যেও। অপরদিকে আব্দুজ জহুর সেতু এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলনের বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, সেতু এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বালি উত্তোলন করা যাবে না। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন হয়ে থাকলে এটি সেতুর জন্যে ক্ষতির বিষয়। আমরা বিষয়টি চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানাবো।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এমদাদুল হক শরীফ বলেন, লোকেশন চিহ্নিত করে নৌ পুলিশকে অবগত করে রাখব। তিনি নিজেও বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।এ ব্যাপারে জানতে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ’র মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ড্রেজারে বালু উত্তোলন অবৈধ। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা যাবে না। আমি পুলিশকে বলে রাখবো, রাতে যেখানেই ড্রেজার পাবে সেখানেই যাতে আটক করা হয়।