সাড়ে চারশ’ বছরের ঐতিহ্য বার্থী তারা মায়ের মন্দির
নাগরিক প্রতিবেদক
১০ মার্চ, ২০২৩, 7:11 PM
সাড়ে চারশ’ বছরের ঐতিহ্য বার্থী তারা মায়ের মন্দির
‘কে বলেছে মা আমার কালো, মা যে আমার বিশ্বজুড়ে জ্বালিয়ে দিলো আলো’ এমন বহু ভক্তিমূলক গান কিংবা ছন্দ মন্দিরে আসা ভক্তদের মুখে মুখে প্রচলিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে জাগ্রত তারা মায়ের মন্দিরে আসা ভক্তদের মনের বাসনা পূর্ণ হয়েছে বা পূর্ণ হয় এ কারনেই বিগত প্রায় সাড়ে চারশ’ বছর ধরেই এ মন্দিরে বিপুল পরিমাণ ভক্তদের সমাগম ঘটে। প্রতিনিয়ত ভক্তরা শ্রদ্ধা জানিয়ে মায়ের চরনে অঞ্জলি দিয়ে থাকেন।
এখানে আসলে জীবনের দুঃখ মোচন হয়, মনে শান্তি মেলে। এ বিশ্বাস থেকে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ভিড় জমে। সবুজ বৃক্ষরাজির ছায়াঘেরা পরিবেশ আর এক পাশের খাল যেন আগত ভক্তদের ভাবদর্শনকে বহু গুণে শাণিত করে। প্রায় সাড়ে চারশ’ বছরের পুরোনো বার্থী শ্রীশ্রী তারা মায়ের মন্দিরটি ভক্তদের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার মনোমুগ্ধকর ও শৈল্পিক স্থাপনার এক অনন্য নিদর্শন। এছাড়াও প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে জাগ্রত এ দর্শনীয় মন্দিরটি পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবেও পরিচিত।
বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার বার্থী বাজার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এ মন্দিরের বাৎসরিক পূজা শনিবার। এ উপলক্ষে মন্দিরের পূজা উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের ভক্তরা মন্দিরে আসতে শুরু করেছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, হিমালয় পর্বত কিংবা কানাডা থেকে আসা কোনো এক সন্ন্যাসী তারা মায়ের এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রাগৈতিহাসিক যুগে হিমালয় পর্বত থেকে সাধু-সন্ন্যাসীরা এখানে যাতায়াত করতেন। ওইসময় বার্থী গ্রামটি ছিলো একটি তীর্থস্থান। আর্য যুগ থেকে বার্থী গ্রাম ছিল ব্রাহ্মণদের আবাসভূমি। সেই যুগে এখানে ৩৬৫টি ঘর ছিল, যেখানে ব্রাহ্মণরা থাকতেন। ছিলো বহু দেব-দেবী। পরবর্তী সময়ে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তৎকালীন জমিদার ভূপতিমোহন বকসি মন্দিরটি সংস্কার করেন। এরপর বিভিন্ন সময় মন্দিরটির আধুনিকায়নের কাজ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ মন্দিরকে কেউ বলেন বার্থী কালীবাড়ি, কেউ বলেন বার্থী তারা মায়ের মন্দির। মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খালে একসময় ভরা যৌবন ছিলো। স্বপ্নে ভক্তদের বিপদ মুক্তির আশায় তারা মা জোয়ার-ভাটার ওই খালে স্নান করার নির্দেশ দিতেন। সংস্কারের অভাবে খালটি আজ মৃতপ্রায়। ঢাকাণ্ডবরিশাল মহাসড়ক সম্প্রসারণের ফলে মন্দিরের কিছু জায়গা রাস্তায় চলে গেছে।
সূত্রমতে, ষাটের দশকে বরিশাল শহরের প্রখ্যাত জমিদার রামলাল ভট্টাচার্য স্বপ্নাদীষ্ট হয়ে তারা মায়ের মন্দির পূর্ণ সংস্কার ও পাকা করন করেন। দীর্ঘদিন পর বার্থী তারা মায়ের মন্দির কমপ্লেক্সের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। মায়ের মন্দির আধুনিকায়ণের কাজটি করেছেন তারা মায়ের কৃপাধন্য ছেলে মন্দির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার এবং বরিশালের শিল্পপতি বিজয় কৃষ্ণ দে। তাদের প্রচেষ্টায় মন্দিরটি আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছে ভারতের জয়পুরের একটি নামকরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শিল্পীদের একবছর সময় নিয়ে শ্বেত পাথরের দ্বারা নির্মিত মূর্তিগুলো। এখানে শ্রীশ্রী তারা মায়ের পূজার পাশাপাশি নারায়ণ, রক্ষাচন্ডী পূজা, শনি দেবের পূজা, শীতলা মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে মায়ের মন্দিরে শ্বেত পাথরের নতুন বিগ্রোহ পূর্ণ প্রতিষ্ঠায় উদ্বোধণ করা হয়েছে। মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সহকারি পুলিশ সুপার শান্তনু ঘোষ বলেন, প্রতিবছর বাৎসরিক পূজার সময় এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এবং ভারত, নেপাল, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা মায়ের আশীর্বাদ নিতে ছুটে আসেন।
বাৎসরিক পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আজ ২৬ ফাল্গুন, ১১ মার্চ তারা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা উপলক্ষে দিন-রাতব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পূজায় মন্দির চত্বরসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন বয়সের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। তাছাড়া বছরের অন্যান্য সময়গুলোতেও মন্দিরে ভক্তদের ভিড় থাকে। তিনি আরও বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে মন্দিরের উদ্দেশ্যে আসা ভক্তদের জন্য এখানে ‘শান্তিলতা পোদ্দার অঙ্গন’ ও ‘নবদ্বীপ পোদ্দার’ নামে দুটি বিশ্রামাগার রয়েছে। মন্দিরটি পরিচালনায় রয়েছে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। সজল ঘোষ আরও বলেন, তারা মায়ের নামানুসারে গৌরনদীতে বার্থী তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তারাকুপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তারাকুপি নামের একটি গ্রামও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তারা মায়ের মন্দিরের পেছনের বহেরা গাছ নিয়েও ভক্তদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। বহেরা গাছটির কেউ ক্ষতিসাধন করলে তার চরম ক্ষতি হতো-বলে অদ্যবর্ধি এলাকার হিন্দু মুসলমানসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকদের তারা মায়ের মন্দির ও বহেরা গাছটির প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভক্তি।
মন্দিরের ভক্ত পূজারী পঙ্কজ কুন্ডু বলেন, প্রবীণ ব্যক্তিদের মুখে শুনেছি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২৫ এপ্রিল সড়কপথে প্রথম দক্ষিণাঞ্চলে পাক হানাদার বাহিনী যখন গাড়ির বহর নিয়ে প্রবেশ করছিলো তখন বার্থী তারা মন্দিরের দৈনন্দিন পূর্জাচনা চলছিলো। তখন পাক সেনারা গাড়ি থেকে নেমে পূজারি শশীকান্ত ভট্টাচার্য্য ও সুবোধ চন্দ্রকে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে কিছু পথ যাওয়ার পর পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পরে। এবং যে সৈনিক মন্দিরে গুলিবর্ষন করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো সে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে মৃত্যুবরণ করে।
বার্থী তারা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি পঞ্চানন দত্ত বলেন, সকল মানব জীবনের মোহময় ও অন্ধকার দূর করতে জীবনে দুঃখ মোচন ও শান্তি অর্জন এবং জগতের মঙ্গলার্থে প্রতিবারের ন্যায় এবারও তারা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজার আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে কালী পূজা শুরু হবে। মন্দিরের পুরোহিত পূজা অর্চনা করবেন। সকালে চন্ডিপাঠ ও শিতলা পূজা, দুপুরে বলিদান, বিকেলে গীতাপাঠ, সন্ধ্যায় মায়ের সামনে আরতি প্রতিযোগিতা, রাতে প্রসাদ বিতরণ ও শিবাভোগ, গভীর রাতে ধর্মীয় গান অনুষ্ঠিত হবে।
পূজা উপলক্ষে মন্দিরকে আলোক সজ্জায় সজ্জিতসহ বর্নিল সাজে সাজানো হয়েছে। বাৎসরিক পূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এবং দেশের খুলনা, ঢাকা, বাগেরহাট, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মন্দিরে ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন। গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, দেশ-বিদেশের আগত হাজার-হাজার ভক্তদের সবধরনের নিরাপত্তা দিতে মন্দির এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নাগরিক প্রতিবেদক
১০ মার্চ, ২০২৩, 7:11 PM
‘কে বলেছে মা আমার কালো, মা যে আমার বিশ্বজুড়ে জ্বালিয়ে দিলো আলো’ এমন বহু ভক্তিমূলক গান কিংবা ছন্দ মন্দিরে আসা ভক্তদের মুখে মুখে প্রচলিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে জাগ্রত তারা মায়ের মন্দিরে আসা ভক্তদের মনের বাসনা পূর্ণ হয়েছে বা পূর্ণ হয় এ কারনেই বিগত প্রায় সাড়ে চারশ’ বছর ধরেই এ মন্দিরে বিপুল পরিমাণ ভক্তদের সমাগম ঘটে। প্রতিনিয়ত ভক্তরা শ্রদ্ধা জানিয়ে মায়ের চরনে অঞ্জলি দিয়ে থাকেন।
এখানে আসলে জীবনের দুঃখ মোচন হয়, মনে শান্তি মেলে। এ বিশ্বাস থেকে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ভিড় জমে। সবুজ বৃক্ষরাজির ছায়াঘেরা পরিবেশ আর এক পাশের খাল যেন আগত ভক্তদের ভাবদর্শনকে বহু গুণে শাণিত করে। প্রায় সাড়ে চারশ’ বছরের পুরোনো বার্থী শ্রীশ্রী তারা মায়ের মন্দিরটি ভক্তদের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার মনোমুগ্ধকর ও শৈল্পিক স্থাপনার এক অনন্য নিদর্শন। এছাড়াও প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে জাগ্রত এ দর্শনীয় মন্দিরটি পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবেও পরিচিত।
বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার বার্থী বাজার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এ মন্দিরের বাৎসরিক পূজা শনিবার। এ উপলক্ষে মন্দিরের পূজা উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের ভক্তরা মন্দিরে আসতে শুরু করেছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, হিমালয় পর্বত কিংবা কানাডা থেকে আসা কোনো এক সন্ন্যাসী তারা মায়ের এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রাগৈতিহাসিক যুগে হিমালয় পর্বত থেকে সাধু-সন্ন্যাসীরা এখানে যাতায়াত করতেন। ওইসময় বার্থী গ্রামটি ছিলো একটি তীর্থস্থান। আর্য যুগ থেকে বার্থী গ্রাম ছিল ব্রাহ্মণদের আবাসভূমি। সেই যুগে এখানে ৩৬৫টি ঘর ছিল, যেখানে ব্রাহ্মণরা থাকতেন। ছিলো বহু দেব-দেবী। পরবর্তী সময়ে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তৎকালীন জমিদার ভূপতিমোহন বকসি মন্দিরটি সংস্কার করেন। এরপর বিভিন্ন সময় মন্দিরটির আধুনিকায়নের কাজ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ মন্দিরকে কেউ বলেন বার্থী কালীবাড়ি, কেউ বলেন বার্থী তারা মায়ের মন্দির। মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খালে একসময় ভরা যৌবন ছিলো। স্বপ্নে ভক্তদের বিপদ মুক্তির আশায় তারা মা জোয়ার-ভাটার ওই খালে স্নান করার নির্দেশ দিতেন। সংস্কারের অভাবে খালটি আজ মৃতপ্রায়। ঢাকাণ্ডবরিশাল মহাসড়ক সম্প্রসারণের ফলে মন্দিরের কিছু জায়গা রাস্তায় চলে গেছে।
সূত্রমতে, ষাটের দশকে বরিশাল শহরের প্রখ্যাত জমিদার রামলাল ভট্টাচার্য স্বপ্নাদীষ্ট হয়ে তারা মায়ের মন্দির পূর্ণ সংস্কার ও পাকা করন করেন। দীর্ঘদিন পর বার্থী তারা মায়ের মন্দির কমপ্লেক্সের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। মায়ের মন্দির আধুনিকায়ণের কাজটি করেছেন তারা মায়ের কৃপাধন্য ছেলে মন্দির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার এবং বরিশালের শিল্পপতি বিজয় কৃষ্ণ দে। তাদের প্রচেষ্টায় মন্দিরটি আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছে ভারতের জয়পুরের একটি নামকরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শিল্পীদের একবছর সময় নিয়ে শ্বেত পাথরের দ্বারা নির্মিত মূর্তিগুলো। এখানে শ্রীশ্রী তারা মায়ের পূজার পাশাপাশি নারায়ণ, রক্ষাচন্ডী পূজা, শনি দেবের পূজা, শীতলা মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে মায়ের মন্দিরে শ্বেত পাথরের নতুন বিগ্রোহ পূর্ণ প্রতিষ্ঠায় উদ্বোধণ করা হয়েছে। মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সহকারি পুলিশ সুপার শান্তনু ঘোষ বলেন, প্রতিবছর বাৎসরিক পূজার সময় এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এবং ভারত, নেপাল, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা মায়ের আশীর্বাদ নিতে ছুটে আসেন।
বাৎসরিক পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আজ ২৬ ফাল্গুন, ১১ মার্চ তারা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা উপলক্ষে দিন-রাতব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পূজায় মন্দির চত্বরসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন বয়সের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। তাছাড়া বছরের অন্যান্য সময়গুলোতেও মন্দিরে ভক্তদের ভিড় থাকে। তিনি আরও বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে মন্দিরের উদ্দেশ্যে আসা ভক্তদের জন্য এখানে ‘শান্তিলতা পোদ্দার অঙ্গন’ ও ‘নবদ্বীপ পোদ্দার’ নামে দুটি বিশ্রামাগার রয়েছে। মন্দিরটি পরিচালনায় রয়েছে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। সজল ঘোষ আরও বলেন, তারা মায়ের নামানুসারে গৌরনদীতে বার্থী তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তারাকুপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তারাকুপি নামের একটি গ্রামও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তারা মায়ের মন্দিরের পেছনের বহেরা গাছ নিয়েও ভক্তদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। বহেরা গাছটির কেউ ক্ষতিসাধন করলে তার চরম ক্ষতি হতো-বলে অদ্যবর্ধি এলাকার হিন্দু মুসলমানসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকদের তারা মায়ের মন্দির ও বহেরা গাছটির প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভক্তি।
মন্দিরের ভক্ত পূজারী পঙ্কজ কুন্ডু বলেন, প্রবীণ ব্যক্তিদের মুখে শুনেছি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২৫ এপ্রিল সড়কপথে প্রথম দক্ষিণাঞ্চলে পাক হানাদার বাহিনী যখন গাড়ির বহর নিয়ে প্রবেশ করছিলো তখন বার্থী তারা মন্দিরের দৈনন্দিন পূর্জাচনা চলছিলো। তখন পাক সেনারা গাড়ি থেকে নেমে পূজারি শশীকান্ত ভট্টাচার্য্য ও সুবোধ চন্দ্রকে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে কিছু পথ যাওয়ার পর পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পরে। এবং যে সৈনিক মন্দিরে গুলিবর্ষন করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো সে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে মৃত্যুবরণ করে।
বার্থী তারা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি পঞ্চানন দত্ত বলেন, সকল মানব জীবনের মোহময় ও অন্ধকার দূর করতে জীবনে দুঃখ মোচন ও শান্তি অর্জন এবং জগতের মঙ্গলার্থে প্রতিবারের ন্যায় এবারও তারা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজার আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে কালী পূজা শুরু হবে। মন্দিরের পুরোহিত পূজা অর্চনা করবেন। সকালে চন্ডিপাঠ ও শিতলা পূজা, দুপুরে বলিদান, বিকেলে গীতাপাঠ, সন্ধ্যায় মায়ের সামনে আরতি প্রতিযোগিতা, রাতে প্রসাদ বিতরণ ও শিবাভোগ, গভীর রাতে ধর্মীয় গান অনুষ্ঠিত হবে।
পূজা উপলক্ষে মন্দিরকে আলোক সজ্জায় সজ্জিতসহ বর্নিল সাজে সাজানো হয়েছে। বাৎসরিক পূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এবং দেশের খুলনা, ঢাকা, বাগেরহাট, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মন্দিরে ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন। গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, দেশ-বিদেশের আগত হাজার-হাজার ভক্তদের সবধরনের নিরাপত্তা দিতে মন্দির এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।