বুয়েট ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার: তদন্তে পুলিশ-র‌্যাব

#
news image

রাজধানীর রামপুরা থেকে নিখোঁজের তিনদিন পর সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪)-এর মরদেহ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বনানীঘাট থেকে উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। তার শরীর ও মাথায় আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে এটাকে হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। 
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের   আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. শেখ ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, “সোমবার রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতাল মর্গে আসে। মঙ্গলবার সকালে আমরা তিন সদস্যের একটি বোর্ড ময়নাতদন্তে তার মাথায় এবং বুকে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি।”
“তবে সেই আঘাত কোন ধারালো অস্ত্রের নয়। আঘাতের চিহ্ন দেখে এটাকে হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। পুলিশের চাহিদা ও অধিকতর তথ্যের জন্য তথ্য উপাত্ত ও আলামত মহাখালি ভিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকে কীভাবে মারা হয়েছে,” বলেন চিকিৎসক ফরহাদ।
অপরদিকে ফারদিন পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়েছে নাকি অন্য কোনো কারণে মৃত্যু- সেই রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব।  নিখোঁজ ও পরে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ফারদিনের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ইতোমধ্যে বন্ধু-বান্ধবিসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে ফারদিনের পরিবারের দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। 
এ ব্যাপারে মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান প্রভাতী খবরকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এ ঘটনার পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। এ মুহূর্তে আসলে তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা অনেক ঘটনা সামনে রেখেই কাজ করছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফারদিনের মোবাইল ফোনের লোকেশন চেক করে দেখা গেছে, সোমবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিচরণ। তবে তা ফারদিনসহ নাকি ফারদিন ছাড়াই তার মোবাইল অন্য কেউ ক্যারি করেছে তা তদন্ত সাপেক্ষ বলা যাবে।
এরমধ্যে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একাধিক ঘটনা সামনে রেখে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে র‌্যাবের একাধিক গোয়েন্দা টিম মাঠে রয়েছে। গতকাল বাহিনীটির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রভাতী খবরকে বলেন, পরশের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই এর রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে র‌্যাব। তাকে কেউ হত্যা করেছে কি না এবং কীভাবে তার মরদেহ নদীতে গেল এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
এদিকে, ফারদিনের প্রথম জানাজা গতকাল বেলা দুইটায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তার হত্যার প্রতিবাদে এবং দ্রুত তদন্তের দাবিতে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে তার সহপাঠীরা মানববন্ধন করেন। এরপর ডেমরার কোনাবাড়িতে (তার পরিবার সেখানে থাকে) বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা শেষে লাশ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকার তাদের পারিবারিক গ্রামের বাড়ির কবর স্থানে দাফন করা হয়। বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত ফারদিন সাংবাদিক কাজী নুর উদ্দিনের ছেলে এবং তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ফারদিন বুয়েট ডিবেটিং ক্লাবেরও যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। 
বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে সহপাঠীদের করা মানববন্ধনে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এটি স্বাভাবিক নয়। এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। আমি আমার সন্তানকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু আমি এর বিচার চাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার ছেলেকে কেউ হত্যা করে থাকতে পারে। তার মরদেহ পচে ফুলে গেছে। আমার ধারণা, তাকে শুক্রবার হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তার ব্যবহৃত ফোন, ঘড়ি ও মানিব্যাগ সঙ্গেই পাওয়া গেছে। “আমার ছেলে খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি ডিবেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ডিসেম্বরে (আগামী মাসে) স্পেনের মাদ্রিদে একটি ডিবেটিং প্রতিযোগিতায় তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। সেই জন্য পাসপোর্টসহ সকল কাগজপত্র রেডি করেছে।” ছেলের হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবি করে তিনি বলেন, দেশের তিনটি শীর্ষ বিদ্যাপীঠে সুযোগ পাওয়ার পর সে বুয়েটে ভর্তি হয়। তবে আবাসিক হলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সে হলে যেতে চায়নি। ফারদিন বাসায় থেকেই তার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, এভাবে দেশের মেধাবীদের টার্গেট করে হত্যা করা হলে আর কোন বাবা-মা তাদের সন্তানকে বুয়েটে দেবে না। ‘মেধাবী ছাত্রদের এভাবে মেরে ফেললে দেশের ভবিষ্যত কি দাঁড়াবে? ২৫ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্ন আমার, আজ হত্যাকাণ্ডের শিকার’।
ফারহানের স্বজনরা জানান, গত শুক্রবার রাত থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। শনিবার রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় নৌ পুলিশের ফোন পেয়ে নারায়ণগঞ্জে এসে ফারদিনের লাশ শনাক্ত করেন স্বজনরা। 

এসএম শামসুজ্জোহা

০৯ নভেম্বর, ২০২২,  12:27 AM

news image

রাজধানীর রামপুরা থেকে নিখোঁজের তিনদিন পর সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪)-এর মরদেহ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বনানীঘাট থেকে উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। তার শরীর ও মাথায় আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে এটাকে হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। 
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের   আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. শেখ ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, “সোমবার রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতাল মর্গে আসে। মঙ্গলবার সকালে আমরা তিন সদস্যের একটি বোর্ড ময়নাতদন্তে তার মাথায় এবং বুকে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি।”
“তবে সেই আঘাত কোন ধারালো অস্ত্রের নয়। আঘাতের চিহ্ন দেখে এটাকে হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। পুলিশের চাহিদা ও অধিকতর তথ্যের জন্য তথ্য উপাত্ত ও আলামত মহাখালি ভিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকে কীভাবে মারা হয়েছে,” বলেন চিকিৎসক ফরহাদ।
অপরদিকে ফারদিন পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়েছে নাকি অন্য কোনো কারণে মৃত্যু- সেই রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব।  নিখোঁজ ও পরে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ফারদিনের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ইতোমধ্যে বন্ধু-বান্ধবিসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে ফারদিনের পরিবারের দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। 
এ ব্যাপারে মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান প্রভাতী খবরকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এ ঘটনার পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। এ মুহূর্তে আসলে তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা অনেক ঘটনা সামনে রেখেই কাজ করছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফারদিনের মোবাইল ফোনের লোকেশন চেক করে দেখা গেছে, সোমবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিচরণ। তবে তা ফারদিনসহ নাকি ফারদিন ছাড়াই তার মোবাইল অন্য কেউ ক্যারি করেছে তা তদন্ত সাপেক্ষ বলা যাবে।
এরমধ্যে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একাধিক ঘটনা সামনে রেখে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে র‌্যাবের একাধিক গোয়েন্দা টিম মাঠে রয়েছে। গতকাল বাহিনীটির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রভাতী খবরকে বলেন, পরশের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই এর রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে র‌্যাব। তাকে কেউ হত্যা করেছে কি না এবং কীভাবে তার মরদেহ নদীতে গেল এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
এদিকে, ফারদিনের প্রথম জানাজা গতকাল বেলা দুইটায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তার হত্যার প্রতিবাদে এবং দ্রুত তদন্তের দাবিতে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে তার সহপাঠীরা মানববন্ধন করেন। এরপর ডেমরার কোনাবাড়িতে (তার পরিবার সেখানে থাকে) বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা শেষে লাশ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকার তাদের পারিবারিক গ্রামের বাড়ির কবর স্থানে দাফন করা হয়। বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত ফারদিন সাংবাদিক কাজী নুর উদ্দিনের ছেলে এবং তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ফারদিন বুয়েট ডিবেটিং ক্লাবেরও যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। 
বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে সহপাঠীদের করা মানববন্ধনে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এটি স্বাভাবিক নয়। এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। আমি আমার সন্তানকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু আমি এর বিচার চাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার ছেলেকে কেউ হত্যা করে থাকতে পারে। তার মরদেহ পচে ফুলে গেছে। আমার ধারণা, তাকে শুক্রবার হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তার ব্যবহৃত ফোন, ঘড়ি ও মানিব্যাগ সঙ্গেই পাওয়া গেছে। “আমার ছেলে খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি ডিবেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ডিসেম্বরে (আগামী মাসে) স্পেনের মাদ্রিদে একটি ডিবেটিং প্রতিযোগিতায় তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। সেই জন্য পাসপোর্টসহ সকল কাগজপত্র রেডি করেছে।” ছেলের হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবি করে তিনি বলেন, দেশের তিনটি শীর্ষ বিদ্যাপীঠে সুযোগ পাওয়ার পর সে বুয়েটে ভর্তি হয়। তবে আবাসিক হলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সে হলে যেতে চায়নি। ফারদিন বাসায় থেকেই তার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, এভাবে দেশের মেধাবীদের টার্গেট করে হত্যা করা হলে আর কোন বাবা-মা তাদের সন্তানকে বুয়েটে দেবে না। ‘মেধাবী ছাত্রদের এভাবে মেরে ফেললে দেশের ভবিষ্যত কি দাঁড়াবে? ২৫ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্ন আমার, আজ হত্যাকাণ্ডের শিকার’।
ফারহানের স্বজনরা জানান, গত শুক্রবার রাত থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। শনিবার রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় নৌ পুলিশের ফোন পেয়ে নারায়ণগঞ্জে এসে ফারদিনের লাশ শনাক্ত করেন স্বজনরা।