টাঙ্গাইলে আনারসের বাম্পার ফলন

#
news image

টাঙ্গাইলের মধুপুর আনারসের জন্য বিখ্যাত। মধুপুরকে বলা হয় “আনারসের রাজধানী”। মধুপুরের পাশাপাশি ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকায় আনারসের প্রচুর চাষ হয়। কয়েক বছর ধরে চাষীরা আনারসের ভালো দাম পাচ্ছেন। টানা দাবদাহে গরমের কারণে এ বছর আনারসের দাম আরও বেড়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় পাহাড়ে আনারসের আবাদও বেড়েছে বলে জানিয়েছে চাষীরা। 

আনারস চাষীরা জানান, মধুপুর, ঘাটাইল ও সখীপুর এলাকার পাহাড়ি এলাকায় জলডগি বা হানি কুইন ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারসই বেশি আবাদ হয়। সাধারণত আনারসের চারা রোপণের দুই বছর পর পরিপক্ক হয় এবং ফল আসে। বর্তমানে চাষীরা নানা রকমের রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের কারণে চারা রোপণের এক বছরের মধ্যেই ফল আসে। তবে ওই সব আনারসে প্রকৃত স্বাদ থাকে না।

চাষীরা জানান, বিষমুক্ত আনারস আকারে অনেক ছোট আর এর রং দেখে ক্রেতারা কিনতে চায় না। এ আনারস বাগান থেকে কেটে দুই-তিনদিনের বেশি রাখা যায় না, পচে য়ায়। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত আনারস সাত/আটদিন রাখা যায়। আর অন্যান্য রাসায়নিক দিলে আনারসে আকারও অনেক বড় হয়, আবার রং গাঢ হলুদ হয়। ফলে সহজেই সাধারণ ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, টাঙ্গাইলে এ বছর ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। অধিকাংশই মধুপুরে আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার জেলায় ৪৫৫ হেক্টর জমিতে বেশি আনারস আবাদ হয়েছে। মধুপুরে এ বছর ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আনাস আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে। 

হানি কুইন্ট ও জায়ান্ট কিউ জাতের বেশি আনারস চাষ হয়। এছাড়া স্থানীয় আরও কয়েকটি জাত রয়েছে। 

মধুপুর উপজেলার আনারসের সবচেয়ে বড় বাজার জলছত্র ও গারোবাজার। ভোর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে এখানকার আনারস বিক্রেতারা। শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসে মধুপুরের সুমিষ্ট আনারস ক্রয় করতে। 

সরেজমিনে বাজার জলছত্র এলাকায় দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে আনারস সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আনারস চাষীরা কেউ ভ্যানে করে, কেউবা সাইকেল আবার কেউবা ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি আনারস নিয়ে বসে আছেন।  পাইকাররা তাদের কাছ থেকে আনারস ক্রয় করে নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করছেন। পরে তা ট্রাকভর্তি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা আনারস ক্রয় করে অটোরিকশা ও ছোট পিকআপযোগে যার যার গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলার আউশনারা গ্রামের আনারস বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত জুড়ে আনারস বাগান। রাস্তার দুই পাশেই আনারস চাষ করা হয়েছে। এ যেনো আনারসের গ্রাম। আনারসের পাশাপাশি একইসঙ্গে অনেকেই কলা ও অন্যন্য ফসল চাষাবাদ করেছেন। 

গারোবাজারের আনারসের পাইকার আয়নাল হক বলেন, “প্রতিটি আনারস ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। ক্রয়কৃত আনারস তিনি ঢাকার কাওরান বাজার পাঠানো হয়। দাবদাহের গরমের কারণে আনারসের চাহিদা বাড়ায় এবারও ভালো দাম পাচ্ছেন চাষীরা। এতে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। দাম ভালো পাওয়ায় পাহাড়ে আনারসের আবাদও বেড়েছে।”

গারোবাজারের স্কুলশিক্ষক সাজ্জাদ রহমান বলেন, “দাম ভালো পাওয়ায় আনারস চাষীরা খুশি। তারা লাভবান হওয়ায় আনারসের আবাদও বেড়েছে। তবে বিপণন খরচ, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

ঘাটাইল উপজেলার লখিন্দর ইউনিয়নের সানবান্ধা গ্রামের কৃষক ছামাদ মিয়া বলেন, “কয়েক বছর ধরেই আনারসের দাম ভালো যাচ্ছে। তিনি এ বছরে ৯ হাজার চারা লাগিয়েছিলেন। চাষে খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। আনারস বিক্রি করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকার।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার বলেন,  “আশা করছি এবার মধুপুর থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক ট্রন আনারস উৎপাদিত হবে। সংরক্ষণ সময় কম থাকায় বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও আনারস বিদেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এ বছর ফিলিপাইন থেকে আনা ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০টি এমডি-২ জাতের আনারসের চারা মধুপুরের ১০৭ জন চাষীকে বিতরণ করা হয়েছে। এই জাতের চারা আন্তর্জাতিক মানের। এর ‘সেভ লাইভ’ বেশি রয়েছে। হারভেস্টের পরেও প্রায় ১ মাস এ জাতের আনারস সংরক্ষণে রাখা যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “আনারস দ্রুত পাকানো এবং বড় করার জন্য অনেকেই হরমন প্রয়োগ করেন। হরমন প্রয়োগ অনুমোদিত, এর প্রয়োগের নিদিষ্ট মাত্রা রয়েছে। তবে চাষীরা দ্রুত পাকানোর জন্য অতিরিক্ত হরমন ব্যবহার করেন। যেকোনো অতিরিক্ত রাসায়নিক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আমরা চেষ্টা করছি চাষীরা আনারসে অতিরিক্ত হরমন ব্যবহার না করে।”

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ আগস্ট, ২০২২,  11:13 PM

news image

টাঙ্গাইলের মধুপুর আনারসের জন্য বিখ্যাত। মধুপুরকে বলা হয় “আনারসের রাজধানী”। মধুপুরের পাশাপাশি ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকায় আনারসের প্রচুর চাষ হয়। কয়েক বছর ধরে চাষীরা আনারসের ভালো দাম পাচ্ছেন। টানা দাবদাহে গরমের কারণে এ বছর আনারসের দাম আরও বেড়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় পাহাড়ে আনারসের আবাদও বেড়েছে বলে জানিয়েছে চাষীরা। 

আনারস চাষীরা জানান, মধুপুর, ঘাটাইল ও সখীপুর এলাকার পাহাড়ি এলাকায় জলডগি বা হানি কুইন ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারসই বেশি আবাদ হয়। সাধারণত আনারসের চারা রোপণের দুই বছর পর পরিপক্ক হয় এবং ফল আসে। বর্তমানে চাষীরা নানা রকমের রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের কারণে চারা রোপণের এক বছরের মধ্যেই ফল আসে। তবে ওই সব আনারসে প্রকৃত স্বাদ থাকে না।

চাষীরা জানান, বিষমুক্ত আনারস আকারে অনেক ছোট আর এর রং দেখে ক্রেতারা কিনতে চায় না। এ আনারস বাগান থেকে কেটে দুই-তিনদিনের বেশি রাখা যায় না, পচে য়ায়। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত আনারস সাত/আটদিন রাখা যায়। আর অন্যান্য রাসায়নিক দিলে আনারসে আকারও অনেক বড় হয়, আবার রং গাঢ হলুদ হয়। ফলে সহজেই সাধারণ ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, টাঙ্গাইলে এ বছর ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। অধিকাংশই মধুপুরে আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার জেলায় ৪৫৫ হেক্টর জমিতে বেশি আনারস আবাদ হয়েছে। মধুপুরে এ বছর ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আনাস আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে। 

হানি কুইন্ট ও জায়ান্ট কিউ জাতের বেশি আনারস চাষ হয়। এছাড়া স্থানীয় আরও কয়েকটি জাত রয়েছে। 

মধুপুর উপজেলার আনারসের সবচেয়ে বড় বাজার জলছত্র ও গারোবাজার। ভোর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে এখানকার আনারস বিক্রেতারা। শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসে মধুপুরের সুমিষ্ট আনারস ক্রয় করতে। 

সরেজমিনে বাজার জলছত্র এলাকায় দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে আনারস সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আনারস চাষীরা কেউ ভ্যানে করে, কেউবা সাইকেল আবার কেউবা ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি আনারস নিয়ে বসে আছেন।  পাইকাররা তাদের কাছ থেকে আনারস ক্রয় করে নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করছেন। পরে তা ট্রাকভর্তি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা আনারস ক্রয় করে অটোরিকশা ও ছোট পিকআপযোগে যার যার গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলার আউশনারা গ্রামের আনারস বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত জুড়ে আনারস বাগান। রাস্তার দুই পাশেই আনারস চাষ করা হয়েছে। এ যেনো আনারসের গ্রাম। আনারসের পাশাপাশি একইসঙ্গে অনেকেই কলা ও অন্যন্য ফসল চাষাবাদ করেছেন। 

গারোবাজারের আনারসের পাইকার আয়নাল হক বলেন, “প্রতিটি আনারস ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। ক্রয়কৃত আনারস তিনি ঢাকার কাওরান বাজার পাঠানো হয়। দাবদাহের গরমের কারণে আনারসের চাহিদা বাড়ায় এবারও ভালো দাম পাচ্ছেন চাষীরা। এতে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। দাম ভালো পাওয়ায় পাহাড়ে আনারসের আবাদও বেড়েছে।”

গারোবাজারের স্কুলশিক্ষক সাজ্জাদ রহমান বলেন, “দাম ভালো পাওয়ায় আনারস চাষীরা খুশি। তারা লাভবান হওয়ায় আনারসের আবাদও বেড়েছে। তবে বিপণন খরচ, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

ঘাটাইল উপজেলার লখিন্দর ইউনিয়নের সানবান্ধা গ্রামের কৃষক ছামাদ মিয়া বলেন, “কয়েক বছর ধরেই আনারসের দাম ভালো যাচ্ছে। তিনি এ বছরে ৯ হাজার চারা লাগিয়েছিলেন। চাষে খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। আনারস বিক্রি করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকার।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার বলেন,  “আশা করছি এবার মধুপুর থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক ট্রন আনারস উৎপাদিত হবে। সংরক্ষণ সময় কম থাকায় বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও আনারস বিদেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এ বছর ফিলিপাইন থেকে আনা ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০টি এমডি-২ জাতের আনারসের চারা মধুপুরের ১০৭ জন চাষীকে বিতরণ করা হয়েছে। এই জাতের চারা আন্তর্জাতিক মানের। এর ‘সেভ লাইভ’ বেশি রয়েছে। হারভেস্টের পরেও প্রায় ১ মাস এ জাতের আনারস সংরক্ষণে রাখা যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “আনারস দ্রুত পাকানো এবং বড় করার জন্য অনেকেই হরমন প্রয়োগ করেন। হরমন প্রয়োগ অনুমোদিত, এর প্রয়োগের নিদিষ্ট মাত্রা রয়েছে। তবে চাষীরা দ্রুত পাকানোর জন্য অতিরিক্ত হরমন ব্যবহার করেন। যেকোনো অতিরিক্ত রাসায়নিক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আমরা চেষ্টা করছি চাষীরা আনারসে অতিরিক্ত হরমন ব্যবহার না করে।”