মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টিতে মনোযোগ দিন

#
news image

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটলেও আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ তালিকায় নেই। সামপ্রতিক কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ে এশিয়ার সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান স্থান পায়নি। এটি নিঃসন্দেহে হতাশাজনক এবং একই সঙ্গে সতর্কবার্তা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি দেশের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মূল চালিকাশক্তি।

আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে অবস্থান একটি দেশের শিক্ষা ও গবেষণার মানকে প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও মৌলিক গবেষণায় আমরা পিছিয়ে আছি। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন নেই, আধুনিক ল্যাবরেটরি ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরির অভাব রয়েছে। অনেক শিক্ষক গবেষণায় আগ্রহী হলেও উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় তারা নিরুৎসাহিত হন। একাডেমিক নেতৃত্বের সংকটও স্পষ্ট—যেখানে গবেষণায় উৎসাহ জাগাতে সক্ষম নেতৃত্বের অভাব দেখা যায়।

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা না হলে শিক্ষা প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আগ্রহ হারাচ্ছেন, কারণ পেশার মর্যাদা ও সুযোগ সীমিত। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

প্রথমত, গবেষণা বাজেট বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব ও লাইব্রেরি স্থাপন করতে হবে। 

দ্বিতীয়ত, শিক্ষকতায় মেধাবীদের আকর্ষণ করতে পেশার মর্যাদা ও সুযোগ বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, শিক্ষার্থীদের মৌলিক গবেষণায় উৎসাহ দিতে স্কুল পর্যায় থেকেই তাদের জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। 

চতুর্থত, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও যৌথ গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, যাতে বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হয়। বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ের সূচকগুলো- প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি, নিয়োগকর্তাদের মূল্যায়ন, গবেষণা প্রবন্ধের সাইটেশন, বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাফল্য এবং সাসটেইনেবিলিটি- সবই মৌলিকভাবে গবেষণা ও মানোন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। এসব ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ যদি মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টিতে পিছিয়ে থাকে, তবে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এখনই শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। দায়িত্বশীলতা, স্বচ্ছতা এবং যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে।

নাগরিক সংবাদ সম্পাদকীয়

১৩ নভেম্বর, ২০২৫,  11:51 PM

news image

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটলেও আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ তালিকায় নেই। সামপ্রতিক কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ে এশিয়ার সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান স্থান পায়নি। এটি নিঃসন্দেহে হতাশাজনক এবং একই সঙ্গে সতর্কবার্তা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি দেশের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মূল চালিকাশক্তি।

আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে অবস্থান একটি দেশের শিক্ষা ও গবেষণার মানকে প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও মৌলিক গবেষণায় আমরা পিছিয়ে আছি। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন নেই, আধুনিক ল্যাবরেটরি ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরির অভাব রয়েছে। অনেক শিক্ষক গবেষণায় আগ্রহী হলেও উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় তারা নিরুৎসাহিত হন। একাডেমিক নেতৃত্বের সংকটও স্পষ্ট—যেখানে গবেষণায় উৎসাহ জাগাতে সক্ষম নেতৃত্বের অভাব দেখা যায়।

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা না হলে শিক্ষা প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আগ্রহ হারাচ্ছেন, কারণ পেশার মর্যাদা ও সুযোগ সীমিত। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

প্রথমত, গবেষণা বাজেট বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব ও লাইব্রেরি স্থাপন করতে হবে। 

দ্বিতীয়ত, শিক্ষকতায় মেধাবীদের আকর্ষণ করতে পেশার মর্যাদা ও সুযোগ বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, শিক্ষার্থীদের মৌলিক গবেষণায় উৎসাহ দিতে স্কুল পর্যায় থেকেই তাদের জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। 

চতুর্থত, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও যৌথ গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, যাতে বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হয়। বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ের সূচকগুলো- প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি, নিয়োগকর্তাদের মূল্যায়ন, গবেষণা প্রবন্ধের সাইটেশন, বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাফল্য এবং সাসটেইনেবিলিটি- সবই মৌলিকভাবে গবেষণা ও মানোন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। এসব ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ যদি মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টিতে পিছিয়ে থাকে, তবে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এখনই শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। দায়িত্বশীলতা, স্বচ্ছতা এবং যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে।