টাঙ্গাইলের মধুপুরে জৈবিক উপায়ে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ

#
news image

টাঙ্গাইলের মধুপুরে জৈবিক উপায়ে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু করেছে কৃষকরা। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছে তারা। পরিবেশ ও গুণগতমান সম্মত সবজি হওয়ায় স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে  ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রয় হচ্ছে  এখানকার সবজি। এতে দামও ভালো পাচ্ছে কৃষকরা। ফলে দিনদিন স্থানীয়দের মাঝে নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তবে কৃষকরা বলছে করোনার আগে এই এলাকার সবজি বিদেশে রপ্তানি করা হতো। করোনার পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে। পুণরায় বিদেশে সবজি রপ্তানি করতে সরকারের সহযোগিতা চান তারা। আর কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিষমুক্ত সবজি চাষ পরিদর্শনে এসে  বলছে বিদেশে সবজি রপ্তানি করতে পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।

 কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষকরা জানান, মধুপুরের লাল মাটিতে আনারস কলাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করা হতো। ধান পাট চাষ করে মূলধন ফিরে  পাওয়ায়ই কঠিন ছিল। মধুপুরের উত্তর এলাকায় কুড়াগাছা গ্রামে প্রথম বানিজ্যিক ভাবে সবজি চাষ শুরু হয়। মধুপুরে এ বছর বেগুন ২৩০ হে., ডাটা ১১২ হেক্টর, চাল কুমড়া ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৯০, ছ ৫০, ধুন্ধল ৭০, ঝিঙা ৫০, ঢেঁড়স ৭৬, পটল ৩৫, কাকরোল ২০, বরবটি ২৭, করলা ৮০, শসা ১২৫, কলমি শাক ৩০, পাট শাক ৬০, পুঁইশাক ৩৫ ও কচু ৩৩৫ হেক্টর সহ মোট ১৪ শ, ৮৫ হেক্টর সবজি চাষ হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরার্মশে  এ গ্রামের কুষক কৃষক আলমগীর হোসেন ২২ বছর যাবত  অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে যাচ্ছেন।  তিনি ২০১৪ সালে কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ ও ট্রেনিং নিয়ে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার ১৭ বিঘা জমিতে বেগুন, চিচিঙ্গা, পটল, ঢেঁড়স, শষা, মরিচসহ নানা সবজি চাষ করছেন ।

তিনি জানান, বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি হওয়ায় বিশ্বের ১৪টি দেশে সবজি রপ্তানি করেছেন তিনি। করোনার সময় থেকে তা বন্ধ থাকলেও বর্তমানে খরচ বাদে বছরে তার আয় প্রায় কোটি টাকা। 

আলমগীরের মতো এই এলাকায় অনেক কৃষক এখন কম্পোস্ট, গোবর সার, জৈবিক ভাবে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন। বিষমুক্ত সবজি হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপি। ফলে কৃষকরা দামও পাচ্ছে ভালো। এতে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। যে কারণে কুড়াগাছা একটি মডেল সবজি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এখানকার সবজি কীটনাশক বিষমুক্ত হওয়ায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে সবজি কিনে নিয়ে যায়।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, গড় এলাকার লাল মাটি আনারস, কলাসহ সবজি চাষের বিশেষ উপযোগি। এবার এ এলাকায় বেগুন, লাউ, শিম, চিচিঙ্গা, পটলসহ বিভিন্ন  ১৪ শ' ৮৫ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। এ বছর বিষমুক্ত সবজি চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে বলে তিনি জানান। টাঙ্গাইলের উপ পরিচালক আহসানুল বাসার জানান, টাঙ্গাইলে জৈবসার ও আইপিএমের মাধ্যমে সবজি চাষ করা হচ্ছে। এতে কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। বিষমুক্ত সবজি চাষ করে এলাকার কৃষকরা পরিবশে বান্ধব সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। এর ফলে এলাকার কৃষকদের সুনাম ও এলাকার সবজির মান সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। 

কৃষি মন্ত্রনালয়রর অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটোয়ারী জানান, মধুপুর গড় এলাকার বিষমুক্ত সবজির গুনগত মান ভালো থাকার কারণে দেশ ও বিদেশেও চাহিদা রয়েছে। যাতে এ এলাকার সবজি রপ্তানি করা যায় কৃষি মন্ত্রীর সহযোগিতায় আমরা কাজ করবো। তিনি সবজি ক্ষেত পরিদর্শন করে খুশি হয়েছেন বলে জানান। করোনার সময় থেকে বিদেশে সবজি রপ্তানি বন্ধ থাকায় কিছুটা হতাশ কৃষকরা। সরকারের  সহযোগিতায় খুব শীগ্রই আবারো বিদেশে সবজি রপ্তানি করতে পারবেন এমনিই আশা এ এলাকার কৃষকদের ।

নাজিবুল বাশার, মধুপুর (টাঙ্গাইল)

২২ মে, ২০২৩,  6:58 PM

news image

টাঙ্গাইলের মধুপুরে জৈবিক উপায়ে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু করেছে কৃষকরা। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছে তারা। পরিবেশ ও গুণগতমান সম্মত সবজি হওয়ায় স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে  ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রয় হচ্ছে  এখানকার সবজি। এতে দামও ভালো পাচ্ছে কৃষকরা। ফলে দিনদিন স্থানীয়দের মাঝে নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তবে কৃষকরা বলছে করোনার আগে এই এলাকার সবজি বিদেশে রপ্তানি করা হতো। করোনার পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে। পুণরায় বিদেশে সবজি রপ্তানি করতে সরকারের সহযোগিতা চান তারা। আর কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিষমুক্ত সবজি চাষ পরিদর্শনে এসে  বলছে বিদেশে সবজি রপ্তানি করতে পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।

 কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষকরা জানান, মধুপুরের লাল মাটিতে আনারস কলাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করা হতো। ধান পাট চাষ করে মূলধন ফিরে  পাওয়ায়ই কঠিন ছিল। মধুপুরের উত্তর এলাকায় কুড়াগাছা গ্রামে প্রথম বানিজ্যিক ভাবে সবজি চাষ শুরু হয়। মধুপুরে এ বছর বেগুন ২৩০ হে., ডাটা ১১২ হেক্টর, চাল কুমড়া ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৯০, ছ ৫০, ধুন্ধল ৭০, ঝিঙা ৫০, ঢেঁড়স ৭৬, পটল ৩৫, কাকরোল ২০, বরবটি ২৭, করলা ৮০, শসা ১২৫, কলমি শাক ৩০, পাট শাক ৬০, পুঁইশাক ৩৫ ও কচু ৩৩৫ হেক্টর সহ মোট ১৪ শ, ৮৫ হেক্টর সবজি চাষ হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরার্মশে  এ গ্রামের কুষক কৃষক আলমগীর হোসেন ২২ বছর যাবত  অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে যাচ্ছেন।  তিনি ২০১৪ সালে কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ ও ট্রেনিং নিয়ে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার ১৭ বিঘা জমিতে বেগুন, চিচিঙ্গা, পটল, ঢেঁড়স, শষা, মরিচসহ নানা সবজি চাষ করছেন ।

তিনি জানান, বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি হওয়ায় বিশ্বের ১৪টি দেশে সবজি রপ্তানি করেছেন তিনি। করোনার সময় থেকে তা বন্ধ থাকলেও বর্তমানে খরচ বাদে বছরে তার আয় প্রায় কোটি টাকা। 

আলমগীরের মতো এই এলাকায় অনেক কৃষক এখন কম্পোস্ট, গোবর সার, জৈবিক ভাবে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন। বিষমুক্ত সবজি হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপি। ফলে কৃষকরা দামও পাচ্ছে ভালো। এতে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। যে কারণে কুড়াগাছা একটি মডেল সবজি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এখানকার সবজি কীটনাশক বিষমুক্ত হওয়ায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে সবজি কিনে নিয়ে যায়।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, গড় এলাকার লাল মাটি আনারস, কলাসহ সবজি চাষের বিশেষ উপযোগি। এবার এ এলাকায় বেগুন, লাউ, শিম, চিচিঙ্গা, পটলসহ বিভিন্ন  ১৪ শ' ৮৫ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। এ বছর বিষমুক্ত সবজি চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে বলে তিনি জানান। টাঙ্গাইলের উপ পরিচালক আহসানুল বাসার জানান, টাঙ্গাইলে জৈবসার ও আইপিএমের মাধ্যমে সবজি চাষ করা হচ্ছে। এতে কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। বিষমুক্ত সবজি চাষ করে এলাকার কৃষকরা পরিবশে বান্ধব সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। এর ফলে এলাকার কৃষকদের সুনাম ও এলাকার সবজির মান সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। 

কৃষি মন্ত্রনালয়রর অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটোয়ারী জানান, মধুপুর গড় এলাকার বিষমুক্ত সবজির গুনগত মান ভালো থাকার কারণে দেশ ও বিদেশেও চাহিদা রয়েছে। যাতে এ এলাকার সবজি রপ্তানি করা যায় কৃষি মন্ত্রীর সহযোগিতায় আমরা কাজ করবো। তিনি সবজি ক্ষেত পরিদর্শন করে খুশি হয়েছেন বলে জানান। করোনার সময় থেকে বিদেশে সবজি রপ্তানি বন্ধ থাকায় কিছুটা হতাশ কৃষকরা। সরকারের  সহযোগিতায় খুব শীগ্রই আবারো বিদেশে সবজি রপ্তানি করতে পারবেন এমনিই আশা এ এলাকার কৃষকদের ।