ধান বেচে উঠছে না উৎপাদন খরচ
নাগরিক প্রতিবেদক , দিনাজপুর
২৪ মে, ২০২৪, 6:09 PM
ধান বেচে উঠছে না উৎপাদন খরচ
প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকা ও আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় দিনাজপুরে এবার বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। তার পরও কৃষকের মুখে হাসি নেই। উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজার মূল্য কম থাকায় বোরো আবাদ করে এক প্রকার লোকসানের মুখে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। তারা জানান, বাজারে দাম না বাড়লে এবার চরম লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের। দিনাজপুর সদর উপজেলার নশীপুর ফার্ম হাটে বিআর-৮৮ জাতের ১০ বস্তা (প্রতি বস্তা ২ মণ) ধান বিক্রি করতে আসেন পার্শ্ববর্তী বিরল উপজেলার আজিমপুর গ্রামের কৃষক বিধান চন্দ্র রায়। হাটে প্রতি বস্তা ধান বিক্রি করেন ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে। মানে প্রতি মণ ৯৫০ টাকা দরে। তিনি বলেন, ‘এই দামে ধান বিক্রি করে কোনো মতে উৎপাদন খরচ উঠছে। কিন্তু লাভের দেখা মিলছে না।’
কৃষক বিধান চন্দ্র রায় জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি খরচ পড়েছে প্রায় ২৮ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা জমির বর্গাবাবদ জমির মালিককে দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। এতে বিঘায় তার উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার টাকা। তিনি জানান, প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ৪০ মণ ধান। বাজারের বর্তমান মুল্য অনুযায়ী এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে তিনি পাচ্ছেন ৩৮ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খরচই তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তিনি জানান, প্রতি বছরই কম দামে ধান বিক্রি করে বেশি দামে চাল কিনে খেতে হয় তাদের। কৃষকরা ধানের প্রকৃত দাম পাচ্ছেন না।
শুধু এই এলাকা নয়, দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং সেই তুলনায় বাজারে দাম না থাকায় উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের। দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বড় গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এবার বর্গা নিয়ে ছয় বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু ধানের যে বাজার মূল্য, তাতে খরচই উঠছে না।’ আউলিয়া পুকুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ছয় বিঘা জমিতে চিকন জাতের ধান আবাদ করেছি। ইতিমধ্যে ৪ বিঘা জমির ধান কেটেছি। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ৪৫ মণ।’ তিনি বলেন, ‘বিঘাপ্রতি জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে ধানের দাম নেই। এক মণ ধান বিক্রি করছি মাত্র ৯৫০ দরে। এতে উত্পাদন খরচ তোলা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
নশীপুর ফার্ম হাটের ধানক্রেতা বিভাকর বসাক জানান, দিনাজপুরে সবেমাত্র বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। মিল মালিকরা এখনো পুরোপুরি ধান কিনতে শুরু করেননি। এ কারণে বাজার কিছুটা কম। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, জেলায় এবার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চাইতে ৭১০ হেক্টর বেশি। এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন (চালের আকারে)।
নাগরিক প্রতিবেদক , দিনাজপুর
২৪ মে, ২০২৪, 6:09 PM
প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকা ও আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় দিনাজপুরে এবার বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। তার পরও কৃষকের মুখে হাসি নেই। উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজার মূল্য কম থাকায় বোরো আবাদ করে এক প্রকার লোকসানের মুখে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। তারা জানান, বাজারে দাম না বাড়লে এবার চরম লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের। দিনাজপুর সদর উপজেলার নশীপুর ফার্ম হাটে বিআর-৮৮ জাতের ১০ বস্তা (প্রতি বস্তা ২ মণ) ধান বিক্রি করতে আসেন পার্শ্ববর্তী বিরল উপজেলার আজিমপুর গ্রামের কৃষক বিধান চন্দ্র রায়। হাটে প্রতি বস্তা ধান বিক্রি করেন ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে। মানে প্রতি মণ ৯৫০ টাকা দরে। তিনি বলেন, ‘এই দামে ধান বিক্রি করে কোনো মতে উৎপাদন খরচ উঠছে। কিন্তু লাভের দেখা মিলছে না।’
কৃষক বিধান চন্দ্র রায় জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি খরচ পড়েছে প্রায় ২৮ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা জমির বর্গাবাবদ জমির মালিককে দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। এতে বিঘায় তার উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার টাকা। তিনি জানান, প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ৪০ মণ ধান। বাজারের বর্তমান মুল্য অনুযায়ী এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে তিনি পাচ্ছেন ৩৮ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খরচই তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তিনি জানান, প্রতি বছরই কম দামে ধান বিক্রি করে বেশি দামে চাল কিনে খেতে হয় তাদের। কৃষকরা ধানের প্রকৃত দাম পাচ্ছেন না।
শুধু এই এলাকা নয়, দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং সেই তুলনায় বাজারে দাম না থাকায় উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের। দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বড় গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এবার বর্গা নিয়ে ছয় বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু ধানের যে বাজার মূল্য, তাতে খরচই উঠছে না।’ আউলিয়া পুকুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ছয় বিঘা জমিতে চিকন জাতের ধান আবাদ করেছি। ইতিমধ্যে ৪ বিঘা জমির ধান কেটেছি। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ৪৫ মণ।’ তিনি বলেন, ‘বিঘাপ্রতি জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে ধানের দাম নেই। এক মণ ধান বিক্রি করছি মাত্র ৯৫০ দরে। এতে উত্পাদন খরচ তোলা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
নশীপুর ফার্ম হাটের ধানক্রেতা বিভাকর বসাক জানান, দিনাজপুরে সবেমাত্র বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। মিল মালিকরা এখনো পুরোপুরি ধান কিনতে শুরু করেননি। এ কারণে বাজার কিছুটা কম। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, জেলায় এবার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চাইতে ৭১০ হেক্টর বেশি। এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন (চালের আকারে)।