নদী খনন করে সেই মাটি নদীতেই ফেলছে

#
news image

নদী খনন করে সেই মাটি নদীতেই ফেলা হচ্ছে। ফলে লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। খননের নামে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এমনই অনিয়ম ঘটেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বৌলাই নদীর খনন কাজে। মাটি স¤পূর্ণ সরিয়ে ফেলা হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুর উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান সেলিম দাবি করলেও স্থানীয়রা বিশ্বাস করতে চাইছে না।

স্থানীয়রা বলছেন, এ নদী খননের জন্য চার বছর যাবৎ নদীতে ড্রেজার মেশিন দেখা যাচ্ছে। তারা মাঝে মাঝে মেশিন চালিয়ে খনন কাজ করে আবার বেশির ভাগ সময়েই ড্রেজার মেশিন বন্ধ থাকে। এতে যে অংশ খনন করে সেই অংশ আবার পলি পরে ভরাট হয়ে যায়। সময় পেরিয়ে গেলেও খনন কাজ শেষ হচ্ছে না। এখন কয়েক দিন ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সভেটর মেশিন (মাটিকাটার মেশিন) দিয়ে নদী থেকে মাটি তুলে নদীর মাটি নদীর পাড়েই রাখছে। এতে আবার এই মাটি নদীতে পরে ভরাট হবে। এই খনন করার চেয়ে না করাই ভালো বলে জানিয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এ.আর.কে নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৯-২০অর্থবছরে তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন সংলগ্ন বৌলাই নদীর ৬৭০০মিটার খননের কাজ পায়। ওই খনন কাজে ৭কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই বছর মেয়াদে এই খনন কাজ চার বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টি। খননের বাকি আরও  ১৪০০মিটার। যার ৭০০মিটার ড্রেজারে আর বাকি ৭০০মিটার এক্সভেটর মেশিন দিয়ে খনন করা হবে বলে জানাযায়। সরজমিন গিয়ে দেখ যায়, এক্সভেটর মেশিন দিয়ে নদী খননের মাটি নদীর পাড়েই ফেলা হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। নদীর পাড় ঘেষা রতনশ্রী গ্রামের আশিক নুর মিয়া, জানে আলম ও বিল্লাল মিয়া জানান, এক্সভেটর মেশিনে মাটি খনন করে নদীর মাটি নদীর পাড়ে রাখা হচ্ছে।

এই মাটি আবার নদীতেই পড়বে। এবাবে খনন করে সরকারী টাকা নষ্ট করার চেয়ে না করাই ভালো। তারা আরও জানান, আমাদের রতনশ্রী গ্রাম টি নদীর পাড় ঘেষা। নদী খননে আমাদের গ্রামটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। তাই নদী খননের মাটি যদি আমাদের গ্রামের উত্তর দিকে দেয়া হয় তাহলে আমাদের ঝুঁকিতে পড়তে হবেনা। চার বছর আগে উপজেলা পরিষদ রেজুলেশনে নদী খননের মাটি আমাদের গ্রামের উত্তর দিকে দেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। তাহিরপুর সদর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান তুজাম্মিল হক নাছরুম বলেন, নদী খননের মাটি নদীর পাড়ে রাখলে বর্ষাকালে ওই মাটি স্রোতে ভেসে আবারো ভরাট হয়ে যাবে। তাই জনস্বার্থে এভাবে খনন না করে নদীর পাড় ঘেষা গ্রামের পেছনের দিকে ড্রেজিং করে ফেললে ভালো হবে বলে জানান তিনি। হাওর, নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশ এর আহবায়ক মিজানুর রহমান রাসেল বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে এক্সভেটর মেশিন দিয়ে নদীর বালু বা মাটি নদীর পাড়ে ফেলে দেয়, সেভাবে এখানে নদী খনন হচ্ছে না।

এক্সভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নদীর মধ্যেই ফেলে রাখার চেয়ে এ ধরনের নদী খনন না করাই ভালো। খননের মাটি নদীর ওপরে ফেলে বেঁধে দিলে খননের উপকারিতা মিলবে কিন্তু এতে শুধু টাকাই গচ্চা যাবে, সুফল আসবে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের একাংশের সাইড ম্যানেজার অরুন দাবি করেন, নদীর মাটি কেটে আপাদত নদীর পাড়ে রাখা হচ্ছে। কেউ যদি বেঁধে রাখতে পারে তাহলে থাকবে। তা নাহলে মাটি নির্ধারিত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুর উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ সহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, নদী খননের কোনো মাটি নদীর মধ্যে থাকবে না। সব সরিয়ে নেয়া হবে। এতে নদী প্রশস্ত হবে এবং গভীরতাও বাড়বে।

 

অরুন চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ

১২ মার্চ, ২০২৩,  5:09 PM

news image

নদী খনন করে সেই মাটি নদীতেই ফেলা হচ্ছে। ফলে লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। খননের নামে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এমনই অনিয়ম ঘটেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বৌলাই নদীর খনন কাজে। মাটি স¤পূর্ণ সরিয়ে ফেলা হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুর উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান সেলিম দাবি করলেও স্থানীয়রা বিশ্বাস করতে চাইছে না।

স্থানীয়রা বলছেন, এ নদী খননের জন্য চার বছর যাবৎ নদীতে ড্রেজার মেশিন দেখা যাচ্ছে। তারা মাঝে মাঝে মেশিন চালিয়ে খনন কাজ করে আবার বেশির ভাগ সময়েই ড্রেজার মেশিন বন্ধ থাকে। এতে যে অংশ খনন করে সেই অংশ আবার পলি পরে ভরাট হয়ে যায়। সময় পেরিয়ে গেলেও খনন কাজ শেষ হচ্ছে না। এখন কয়েক দিন ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সভেটর মেশিন (মাটিকাটার মেশিন) দিয়ে নদী থেকে মাটি তুলে নদীর মাটি নদীর পাড়েই রাখছে। এতে আবার এই মাটি নদীতে পরে ভরাট হবে। এই খনন করার চেয়ে না করাই ভালো বলে জানিয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এ.আর.কে নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৯-২০অর্থবছরে তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন সংলগ্ন বৌলাই নদীর ৬৭০০মিটার খননের কাজ পায়। ওই খনন কাজে ৭কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই বছর মেয়াদে এই খনন কাজ চার বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টি। খননের বাকি আরও  ১৪০০মিটার। যার ৭০০মিটার ড্রেজারে আর বাকি ৭০০মিটার এক্সভেটর মেশিন দিয়ে খনন করা হবে বলে জানাযায়। সরজমিন গিয়ে দেখ যায়, এক্সভেটর মেশিন দিয়ে নদী খননের মাটি নদীর পাড়েই ফেলা হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। নদীর পাড় ঘেষা রতনশ্রী গ্রামের আশিক নুর মিয়া, জানে আলম ও বিল্লাল মিয়া জানান, এক্সভেটর মেশিনে মাটি খনন করে নদীর মাটি নদীর পাড়ে রাখা হচ্ছে।

এই মাটি আবার নদীতেই পড়বে। এবাবে খনন করে সরকারী টাকা নষ্ট করার চেয়ে না করাই ভালো। তারা আরও জানান, আমাদের রতনশ্রী গ্রাম টি নদীর পাড় ঘেষা। নদী খননে আমাদের গ্রামটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। তাই নদী খননের মাটি যদি আমাদের গ্রামের উত্তর দিকে দেয়া হয় তাহলে আমাদের ঝুঁকিতে পড়তে হবেনা। চার বছর আগে উপজেলা পরিষদ রেজুলেশনে নদী খননের মাটি আমাদের গ্রামের উত্তর দিকে দেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। তাহিরপুর সদর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান তুজাম্মিল হক নাছরুম বলেন, নদী খননের মাটি নদীর পাড়ে রাখলে বর্ষাকালে ওই মাটি স্রোতে ভেসে আবারো ভরাট হয়ে যাবে। তাই জনস্বার্থে এভাবে খনন না করে নদীর পাড় ঘেষা গ্রামের পেছনের দিকে ড্রেজিং করে ফেললে ভালো হবে বলে জানান তিনি। হাওর, নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশ এর আহবায়ক মিজানুর রহমান রাসেল বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে এক্সভেটর মেশিন দিয়ে নদীর বালু বা মাটি নদীর পাড়ে ফেলে দেয়, সেভাবে এখানে নদী খনন হচ্ছে না।

এক্সভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নদীর মধ্যেই ফেলে রাখার চেয়ে এ ধরনের নদী খনন না করাই ভালো। খননের মাটি নদীর ওপরে ফেলে বেঁধে দিলে খননের উপকারিতা মিলবে কিন্তু এতে শুধু টাকাই গচ্চা যাবে, সুফল আসবে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের একাংশের সাইড ম্যানেজার অরুন দাবি করেন, নদীর মাটি কেটে আপাদত নদীর পাড়ে রাখা হচ্ছে। কেউ যদি বেঁধে রাখতে পারে তাহলে থাকবে। তা নাহলে মাটি নির্ধারিত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুর উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ সহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, নদী খননের কোনো মাটি নদীর মধ্যে থাকবে না। সব সরিয়ে নেয়া হবে। এতে নদী প্রশস্ত হবে এবং গভীরতাও বাড়বে।