নিষিদ্ধ নোট গাইড ধরাতে যশোরাঞ্চলে ১০কোটি টাকা ছড়ানো হচ্ছে!

#
news image

সহায়ক বইয়ের নামে ডজন দেড়েক পাবলিকেশন যশোরাঞ্চলে ৫০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ নোট গাইড বিক্রির টার্গেট নিয়ে মাঠ চষছে। যশোর জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা প্রশাসন তথা সরকারি নির্দেশনা ভুলুণ্ঠিত করে ওই নোট গাইড ছাত্রদের ধরাতে এ অঞ্চলের শিক্ষকদের ম্যানেজ করতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ছড়ানো হচ্ছে বলে তথ্য মিলেছে।

গত ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন পাবলিকেশনের শতাধিক কর্মী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-সভাপতি ও বিভিন্ন শিক্ষক সমিতির নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। আর নতুন বছরে ক্লাস শুরুর সাথে সাথেই শুরু হয়েছে টাকার ছড়াছড়ি। ইতিমধ্যে কয়েকটি পাবলিকেশনের কাছ থেকে গাইড চালানোর শর্তে আগাম উৎকোচ গ্রহণ করে ফেলেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অসাধু চক্র।

বৃহত্তর যশোরের ৪ জেলার প্রত্যকটি উপজেলায় বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়ে এখন ছুটছেন নিষিদ্ধ গাইড সরবরাহকারী পাবলিকেশনগুলোর লোকজন। অর্থ হাতিয়ে নীতিনৈতিকতা ভুলে শিক্ষার্থীদের গাইড কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন অনেক শিক্ষক। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যশোরের অভিভাবকরা।
যদিও যশোর জেলা ও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ ধরণের ঘটনা ঘটছে এমন সত্যতা স্বীকার করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

যশোর জেলা শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে দু-একটি বিষয় ছাড়া বেশির ভাগ বিষয় সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আনা হয়। শিক্ষার্থীদের মুখস্ত বিদ্যা পরিহার, গাইড বই ও কোচিং নির্ভরতা কমানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সৃজনশীল পদ্ধতির প্রচলন করলেও তা ভেস্তে দেয়ার চেষ্টা করছে চিহ্নিত সব প্রকাশনী ও তাদের সহযোগী কতিপয় অসাধু শিক্ষক।
শিক্ষা বিধি অনুযায়ী কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না, এই বিধান লঙ্ঘন করলে কারাদন্ড বা অর্থদন্ড করা যেতে পারে। নোট-গাইড বই অর্থে বোঝানো হয়েছে, ‘সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পুস্তক ব্যতিত বই।’

প্রস্তাবিত একটি শিক্ষা আইনের খসড়ার ১৬ ধারার ১ ও ২ উপধারায় বলা হয়েছে, নোট বই বা গাইড বই বাজারজাত করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।

মূলত: নোট গাইডের ব্যাপারে ২০১২ সাল থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসলেও তা মানছেন না অসাধু বই কারবারীরা। একই ধারবাহিকতায় প্রতি বছরের মত এবারও যথেচ্ছা চলছে অনেকগুলো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।  

যশোরের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল সূত্র ও বই ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মূলত নোট গাইড চালাতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন প্রকাশনা কোম্পানীর কর্মী বাহিনী মাঠে নেমে পড়েছে। তারা এখন ছুটছেন বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়ে। বিভিন্ন লাইব্রেরীতেও মোটা অংকের কমিশন ও উপঢৌকন দিয়ে এরা গাইড ঢোকাচ্ছেন। আর তা বিক্রি নিশ্চিত করতে এবার প্রায় ১০ কোটি টাকা উৎকোচ দেয়া হচ্ছে। টাকার বেশিরভাগ অংশ সরবরাহ করা হয়ে গেছে। চিহ্নিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বৃহত্তর যশোরের ৪ জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, এলাকার শিক্ষক নেতা, এমনকি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা পর্যায়ে ম্যানেজ করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যশোরাঞ্চলের অধিকাংশ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে পৌঁছে গেছে পাবলিকেশনের লোকজন। গাইড পড়তে বা কিনতে উৎসাহিত না করতে জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা আফিসারের সামনে সপথ করলেও শিক্ষক নেতা নামধারী চিহ্নিতর্ ানির্লজের মত তা ভুলে গিয়ে গাইড চালাতে জোর অতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। লেকচার পাবলিকেশন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন, পুথিনিলয় পাবলিকেশনের সংসদ, পপি পাবলিকেশন, গ্রালাক্সি পাবলিকশেনসহ ডজন দেড়েক পাবলিকেশন এখন মাঠে টাকা ছড়ানোর প্রতিযেগিতায় নেমেছে।

তথ্য মিলেছে, প্রত্যেক পাবলিকেশন ৪ জেলার প্রতিটি উপজেলায় লোক লাগিয়ে কম বেশি শিক্ষক ও স্কুলের সাথে অনৈতিক লেনদেন করেছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে মরিয়া পাবলিকেশনগুলো। এর মধ্যে টাকা ছড়ানোর নোংরামিতে এগিয়ে লেকচার পাবলিকেশনে যশোরাঞ্চলে কর্মরতরা। যশোর জেলার আট উপজেলার ছাত্র বেশি এমন ১৩ টি স্কুলের সাথে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত অলিখিত চুক্তি করেছে এমন অভিযোগও এসেছে। এমন স্কুলগুলোর মধ্যে চৌগাছার সিংহঝুলি মাধ্যমিক বিদ্যালয় একটি।

কোম্পানি গুলোর অপতৎপরতার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ আর্থিক লাভবান হলেও মেধা শূণ্য হতে যাচ্ছে যশোরাঞ্চলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকটি শিক্ষক সমিতি ইতিমধ্যে কয়েকটি পাবলিকেশনের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছে বলেও তথ্য মিলেছে। গাইডের মান যাই হোক না কেন, তা যে কোনো উপায়ে চালাতে ওই টাকা আগাম নিয়েছেন তারা। এনিয়ে নানামুখি বক্তব্য আসছে নানা মহল থেকে।

এদিকে অনেক অভিভাবক বলেছেন, পাবলিকেশনের প্রতিনিধিরা স্যাম্পল গাউড নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চেয়ারের পাশে বসে খোশগল্প করছেন এমন চিত্র চোখে পড়ছে প্রায়ই। তারা জানিয়েছেন, গাইডের দাম আকাশ ছোঁয়া হাঁকিয়ে মূলত পাবলিকেশনগুলো উৎকোচ দেয়া টাকা তুলে নিচ্ছে। কয়েকটি কোম্পানীর গাইড ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেলেও জিম্মি দশায় পড়ে সন্তানের পড়া লেখার কথা চিন্তা করে কষ্ট হলেও কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকেরা। অভিভাবকদের আরও অভিযোগ, শিক্ষাব্যবস্থা সৃজনশীল হলেও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের নিরবতার কারণে যশোরের বই বাজার গাইডে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা বছর শুরুর প্রথম থেকেই বাজারে ছাড়া বিভিন্ন প্রকাশনীর চড়া মূল্যের কথিত এ গাইড শিক্ষার্থীদের কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষকরা। একসেট গাইডের দামও তাদের মত গরীব অভিভাবকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। গাইড কেনার কারণে এনসিটিবির বইয়ের গুরুত্বও কমছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযমের সাথে। তিনি জানান, কোনো নোট গাইড বই গ্রহণযোগ্য নয়। কোন শিক্ষক গাইড বিক্রেতা বা প্রকাশনীর সাথে সখ্যতা গড়লে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাঠ্যপুস্তকই হোক একমাত্র সহায়ক এ শ্লোগানকে সামনে রেখে তিনি শিক্ষক অভিভাবক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের পথ চলার আহবান জানান। বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টাকায় ম্যানেজ হয়ে নোট গাইড চালাচ্ছে যা অপরাধের মধ্যে পড়ে। সরকার শিক্ষা সেক্টরের নানা বিষয় নিয়ে সুচিন্তিত চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণ করেছে। কাজেই নোট গাইড সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ব্যাপারে দ্রুতই কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, সব ধরনের নোট-গাইড নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু বিভিন্ন সময় অভিযোগ শুনতে হয় মোটা অংকের টাকা নিয়ে গাইড চালাচ্ছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই, যা খুবই বেদনাদায়ক। অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিচালনা কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুেেদ্ধ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

জেমস রহিম রানা, যশোর

১১ মার্চ, ২০২৩,  8:42 PM

news image

সহায়ক বইয়ের নামে ডজন দেড়েক পাবলিকেশন যশোরাঞ্চলে ৫০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ নোট গাইড বিক্রির টার্গেট নিয়ে মাঠ চষছে। যশোর জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা প্রশাসন তথা সরকারি নির্দেশনা ভুলুণ্ঠিত করে ওই নোট গাইড ছাত্রদের ধরাতে এ অঞ্চলের শিক্ষকদের ম্যানেজ করতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ছড়ানো হচ্ছে বলে তথ্য মিলেছে।

গত ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন পাবলিকেশনের শতাধিক কর্মী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-সভাপতি ও বিভিন্ন শিক্ষক সমিতির নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। আর নতুন বছরে ক্লাস শুরুর সাথে সাথেই শুরু হয়েছে টাকার ছড়াছড়ি। ইতিমধ্যে কয়েকটি পাবলিকেশনের কাছ থেকে গাইড চালানোর শর্তে আগাম উৎকোচ গ্রহণ করে ফেলেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অসাধু চক্র।

বৃহত্তর যশোরের ৪ জেলার প্রত্যকটি উপজেলায় বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়ে এখন ছুটছেন নিষিদ্ধ গাইড সরবরাহকারী পাবলিকেশনগুলোর লোকজন। অর্থ হাতিয়ে নীতিনৈতিকতা ভুলে শিক্ষার্থীদের গাইড কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন অনেক শিক্ষক। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যশোরের অভিভাবকরা।
যদিও যশোর জেলা ও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ ধরণের ঘটনা ঘটছে এমন সত্যতা স্বীকার করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

যশোর জেলা শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে দু-একটি বিষয় ছাড়া বেশির ভাগ বিষয় সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আনা হয়। শিক্ষার্থীদের মুখস্ত বিদ্যা পরিহার, গাইড বই ও কোচিং নির্ভরতা কমানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সৃজনশীল পদ্ধতির প্রচলন করলেও তা ভেস্তে দেয়ার চেষ্টা করছে চিহ্নিত সব প্রকাশনী ও তাদের সহযোগী কতিপয় অসাধু শিক্ষক।
শিক্ষা বিধি অনুযায়ী কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না, এই বিধান লঙ্ঘন করলে কারাদন্ড বা অর্থদন্ড করা যেতে পারে। নোট-গাইড বই অর্থে বোঝানো হয়েছে, ‘সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পুস্তক ব্যতিত বই।’

প্রস্তাবিত একটি শিক্ষা আইনের খসড়ার ১৬ ধারার ১ ও ২ উপধারায় বলা হয়েছে, নোট বই বা গাইড বই বাজারজাত করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।

মূলত: নোট গাইডের ব্যাপারে ২০১২ সাল থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসলেও তা মানছেন না অসাধু বই কারবারীরা। একই ধারবাহিকতায় প্রতি বছরের মত এবারও যথেচ্ছা চলছে অনেকগুলো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।  

যশোরের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল সূত্র ও বই ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মূলত নোট গাইড চালাতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন প্রকাশনা কোম্পানীর কর্মী বাহিনী মাঠে নেমে পড়েছে। তারা এখন ছুটছেন বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়ে। বিভিন্ন লাইব্রেরীতেও মোটা অংকের কমিশন ও উপঢৌকন দিয়ে এরা গাইড ঢোকাচ্ছেন। আর তা বিক্রি নিশ্চিত করতে এবার প্রায় ১০ কোটি টাকা উৎকোচ দেয়া হচ্ছে। টাকার বেশিরভাগ অংশ সরবরাহ করা হয়ে গেছে। চিহ্নিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বৃহত্তর যশোরের ৪ জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, এলাকার শিক্ষক নেতা, এমনকি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা পর্যায়ে ম্যানেজ করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যশোরাঞ্চলের অধিকাংশ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে পৌঁছে গেছে পাবলিকেশনের লোকজন। গাইড পড়তে বা কিনতে উৎসাহিত না করতে জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা আফিসারের সামনে সপথ করলেও শিক্ষক নেতা নামধারী চিহ্নিতর্ ানির্লজের মত তা ভুলে গিয়ে গাইড চালাতে জোর অতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। লেকচার পাবলিকেশন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন, পুথিনিলয় পাবলিকেশনের সংসদ, পপি পাবলিকেশন, গ্রালাক্সি পাবলিকশেনসহ ডজন দেড়েক পাবলিকেশন এখন মাঠে টাকা ছড়ানোর প্রতিযেগিতায় নেমেছে।

তথ্য মিলেছে, প্রত্যেক পাবলিকেশন ৪ জেলার প্রতিটি উপজেলায় লোক লাগিয়ে কম বেশি শিক্ষক ও স্কুলের সাথে অনৈতিক লেনদেন করেছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে মরিয়া পাবলিকেশনগুলো। এর মধ্যে টাকা ছড়ানোর নোংরামিতে এগিয়ে লেকচার পাবলিকেশনে যশোরাঞ্চলে কর্মরতরা। যশোর জেলার আট উপজেলার ছাত্র বেশি এমন ১৩ টি স্কুলের সাথে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত অলিখিত চুক্তি করেছে এমন অভিযোগও এসেছে। এমন স্কুলগুলোর মধ্যে চৌগাছার সিংহঝুলি মাধ্যমিক বিদ্যালয় একটি।

কোম্পানি গুলোর অপতৎপরতার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ আর্থিক লাভবান হলেও মেধা শূণ্য হতে যাচ্ছে যশোরাঞ্চলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকটি শিক্ষক সমিতি ইতিমধ্যে কয়েকটি পাবলিকেশনের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছে বলেও তথ্য মিলেছে। গাইডের মান যাই হোক না কেন, তা যে কোনো উপায়ে চালাতে ওই টাকা আগাম নিয়েছেন তারা। এনিয়ে নানামুখি বক্তব্য আসছে নানা মহল থেকে।

এদিকে অনেক অভিভাবক বলেছেন, পাবলিকেশনের প্রতিনিধিরা স্যাম্পল গাউড নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চেয়ারের পাশে বসে খোশগল্প করছেন এমন চিত্র চোখে পড়ছে প্রায়ই। তারা জানিয়েছেন, গাইডের দাম আকাশ ছোঁয়া হাঁকিয়ে মূলত পাবলিকেশনগুলো উৎকোচ দেয়া টাকা তুলে নিচ্ছে। কয়েকটি কোম্পানীর গাইড ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেলেও জিম্মি দশায় পড়ে সন্তানের পড়া লেখার কথা চিন্তা করে কষ্ট হলেও কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকেরা। অভিভাবকদের আরও অভিযোগ, শিক্ষাব্যবস্থা সৃজনশীল হলেও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের নিরবতার কারণে যশোরের বই বাজার গাইডে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা বছর শুরুর প্রথম থেকেই বাজারে ছাড়া বিভিন্ন প্রকাশনীর চড়া মূল্যের কথিত এ গাইড শিক্ষার্থীদের কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষকরা। একসেট গাইডের দামও তাদের মত গরীব অভিভাবকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। গাইড কেনার কারণে এনসিটিবির বইয়ের গুরুত্বও কমছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযমের সাথে। তিনি জানান, কোনো নোট গাইড বই গ্রহণযোগ্য নয়। কোন শিক্ষক গাইড বিক্রেতা বা প্রকাশনীর সাথে সখ্যতা গড়লে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাঠ্যপুস্তকই হোক একমাত্র সহায়ক এ শ্লোগানকে সামনে রেখে তিনি শিক্ষক অভিভাবক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের পথ চলার আহবান জানান। বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টাকায় ম্যানেজ হয়ে নোট গাইড চালাচ্ছে যা অপরাধের মধ্যে পড়ে। সরকার শিক্ষা সেক্টরের নানা বিষয় নিয়ে সুচিন্তিত চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণ করেছে। কাজেই নোট গাইড সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ব্যাপারে দ্রুতই কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, সব ধরনের নোট-গাইড নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু বিভিন্ন সময় অভিযোগ শুনতে হয় মোটা অংকের টাকা নিয়ে গাইড চালাচ্ছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই, যা খুবই বেদনাদায়ক। অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিচালনা কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুেেদ্ধ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।