যৌবন হারিয়ে এখন মৃতপ্রায় ফুলবাড়ীর ছোট যমুনা নদী

মোকাররম হোসেন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
০১ মার্চ, ২০২৩, 5:44 PM

যৌবন হারিয়ে এখন মৃতপ্রায় ফুলবাড়ীর ছোট যমুনা নদী
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদী শুকিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন খনন কাজ না হওয়ায় নদীর গর্ভ ভরাট হয়ে ময়লার ভাগাড়, ফসল আবাদ ও দখল হতে বসেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে নদী খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি তীরবর্তী মানুষের।
নদী তীরের বাসিন্দাদের মতে, একসময় যাতায়াতের মাধ্যম ছিল এই নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করেই তীরে গড়ে উঠেছিল ফুলবাড়ী উপজেলা শহর। কয়েক বছর আগেও নদীর পানি দিয়েই তীরবর্তী জমির ফসলে সেচকার্য সম্পন্ন করত কৃষক। নদীর মাছ ধরে সংসার চলত জেলেদের। দীর্ঘ অবহেলা আর অব্যবস্থানায় খনন কাজ না হওয়ায় এই নদী এখন তার যৌবন হারিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীটি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্যাকুুড়ি নামক স্থানে ইছামতি নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী বিরামপুর উপজেলার কাটলা সীমান্ত ঘেঁষে হাকিমপুর উপজেলার হিলি সীমান্ত এলাকায় ঢুকে পড়ে নদীটি। এরপরে আবারও ঢুকে পড়ে ভারতের হিলি সীমান্ত এলাকায়। এরপর কিছু দূর প্রবাহিত হয়ে আবারও বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ত্রিমোহনী যমুনা ও আত্রাই নদীতে মিলিত হয়েছে। এর মধ্যে ছোট যমুনা ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৫৩ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে। জেলায় নদীটির দৈর্ঘ্য ৭০ কিলোমিটার। নদীটির গড় প্রস্থ ৮৫ মিটার। একটা সময় এই নদীর পানি দিয়ে চলতো এই অঞ্চলের কৃষকের চাষাবাদ। নদীর মাছ ধরে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন জীবিকা নির্বাহ করত। এলাকার মানুষের মাছের চাহিদা পূরণ হতো। বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় এ অঞ্চলে দেশি মাছের অভাব দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীটি ভরাট হয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হলেও নদীতে পানি থাকে মাত্র এক মাস। বর্ষা পরবর্তী সময়ে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে নদীর দু‘পাশে শস্য আবাদ করতে পারছেন না এলাকার কৃষকেরা। পরবর্তী সময়ে নদীটি মরা খালে বা নালায় পরিণত হয়।
উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান, বাবু, আতিয়ারসহ অনেকেই জানান, খয়েরবাড়ী, দৌলতপুর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীটি স্থানীয়দের জন্য ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। আগে নদী গভীর ছিল, নদীর পানি দিয়ে তীরবর্তী এলাকার জমিতে চাষাবাদ হতো। এখন নদীতে গভীরতা না থাকায় পানি থাকেনা। বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে ফসল ফলাতে হয়।
শিবনগর ইউপির দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের মো. আরিফুল ইসলাম, রাজিব হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এক সময় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন আর সম্ভব হয়না। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় নদীর গভীরতা নাই। নদীর কিছু অংশে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাঁটু পানি থাকলেও অদৃশ্য কারণে মাছ থাকেনা। ফলে জেলেরা অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন ।
এদিকে বর্ষাকাল বাদে বছরের অন্যান্য সময় পানি না থাকায় নদীর বুকে পতিত জমিতে অনেকেই ধানসহ নানা ধরনের চাষাবাদ করছেন। নদীর পাড় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের প্রবণতাও চোখে পড়ার মতই।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ফুলবাড়ী, বিরামপুর দিয়ে প্রাবাহিত ছোট যমুনা নদীর বিরামপুর অংশে ইতোমধ্যেই খননকাজ শুরু হয়েছে। এটি প্রথম পর্যায়ের। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৪ জেলা ছোট নদী, খাল, জলাশয় খনন প্রকল্প’র জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। প্রকল্প পেলে ফুলবাড়ী উপজেলা অংশ ছোট যমুনা নদীর খনন কাজ শুরু করা হবে।
মোকাররম হোসেন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
০১ মার্চ, ২০২৩, 5:44 PM

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদী শুকিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন খনন কাজ না হওয়ায় নদীর গর্ভ ভরাট হয়ে ময়লার ভাগাড়, ফসল আবাদ ও দখল হতে বসেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে নদী খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি তীরবর্তী মানুষের।
নদী তীরের বাসিন্দাদের মতে, একসময় যাতায়াতের মাধ্যম ছিল এই নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করেই তীরে গড়ে উঠেছিল ফুলবাড়ী উপজেলা শহর। কয়েক বছর আগেও নদীর পানি দিয়েই তীরবর্তী জমির ফসলে সেচকার্য সম্পন্ন করত কৃষক। নদীর মাছ ধরে সংসার চলত জেলেদের। দীর্ঘ অবহেলা আর অব্যবস্থানায় খনন কাজ না হওয়ায় এই নদী এখন তার যৌবন হারিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীটি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্যাকুুড়ি নামক স্থানে ইছামতি নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী বিরামপুর উপজেলার কাটলা সীমান্ত ঘেঁষে হাকিমপুর উপজেলার হিলি সীমান্ত এলাকায় ঢুকে পড়ে নদীটি। এরপরে আবারও ঢুকে পড়ে ভারতের হিলি সীমান্ত এলাকায়। এরপর কিছু দূর প্রবাহিত হয়ে আবারও বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ত্রিমোহনী যমুনা ও আত্রাই নদীতে মিলিত হয়েছে। এর মধ্যে ছোট যমুনা ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৫৩ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে। জেলায় নদীটির দৈর্ঘ্য ৭০ কিলোমিটার। নদীটির গড় প্রস্থ ৮৫ মিটার। একটা সময় এই নদীর পানি দিয়ে চলতো এই অঞ্চলের কৃষকের চাষাবাদ। নদীর মাছ ধরে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন জীবিকা নির্বাহ করত। এলাকার মানুষের মাছের চাহিদা পূরণ হতো। বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় এ অঞ্চলে দেশি মাছের অভাব দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীটি ভরাট হয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হলেও নদীতে পানি থাকে মাত্র এক মাস। বর্ষা পরবর্তী সময়ে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে নদীর দু‘পাশে শস্য আবাদ করতে পারছেন না এলাকার কৃষকেরা। পরবর্তী সময়ে নদীটি মরা খালে বা নালায় পরিণত হয়।
উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান, বাবু, আতিয়ারসহ অনেকেই জানান, খয়েরবাড়ী, দৌলতপুর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীটি স্থানীয়দের জন্য ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। আগে নদী গভীর ছিল, নদীর পানি দিয়ে তীরবর্তী এলাকার জমিতে চাষাবাদ হতো। এখন নদীতে গভীরতা না থাকায় পানি থাকেনা। বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে ফসল ফলাতে হয়।
শিবনগর ইউপির দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের মো. আরিফুল ইসলাম, রাজিব হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এক সময় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন আর সম্ভব হয়না। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় নদীর গভীরতা নাই। নদীর কিছু অংশে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাঁটু পানি থাকলেও অদৃশ্য কারণে মাছ থাকেনা। ফলে জেলেরা অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন ।
এদিকে বর্ষাকাল বাদে বছরের অন্যান্য সময় পানি না থাকায় নদীর বুকে পতিত জমিতে অনেকেই ধানসহ নানা ধরনের চাষাবাদ করছেন। নদীর পাড় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের প্রবণতাও চোখে পড়ার মতই।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ফুলবাড়ী, বিরামপুর দিয়ে প্রাবাহিত ছোট যমুনা নদীর বিরামপুর অংশে ইতোমধ্যেই খননকাজ শুরু হয়েছে। এটি প্রথম পর্যায়ের। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৪ জেলা ছোট নদী, খাল, জলাশয় খনন প্রকল্প’র জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। প্রকল্প পেলে ফুলবাড়ী উপজেলা অংশ ছোট যমুনা নদীর খনন কাজ শুরু করা হবে।