মৌলভীবাজারে পাখির কলকাকলির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে ভিড় জমান পঙ্গি মিয়া বাড়িতে

#
news image

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাওয়াদিঘি হাওর পাড়ের বিরাইমবাদ গ্রামে পাখি প্রেমিক পরিবারের বাড়িটিতে সারা বছর জুড়েই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। পাখিগুলো বিগত ২৫/৩০বছর থেকে অন্য কোনো বাড়িতে কখনই আশ্রয় নেয় না। বাড়ি ও আশপাশের মানুষেরা সন্তানের মতো মানিয়ে নিয়েছেন। এই সৌন্দর্য বাঁচিয়ে রাখতে আর পাখিদের সুরক্ষায় বনবিভাগের সহযোগিতা চাইলেন পাখি প্রেমিক পঙ্গি মিয়া। লাখো লাখো পাখির কলকাকলির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পাখি প্রেমিরা ভিড় জমান।

সবুজ শ্যামল জীববৈচিত্রে ভরা বিশাল জলাধার কাউয়াদিঘি হাওড় এলাকার পঙ্কি মিয়ার বাড়িটি হাজারও পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। হাওড়ের বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা এখানে গড়ে তুলেছে তাদের আপন ঠিকানা।

হাওরপাড়ের বিরাইমবাদ গ্রামে নুরুল ইসলাম পঙ্গি মিয়া বাড়িতে ২০/২৫ অধিক সময় ধরে আশ্রয় নিয়েছে লাখো পাখি। গাছের ডালে ডালে পাতায় পাতায় পাখির কলকাখলীতে ভোর বেলা ঘুম ভাঙ্গে আর সন্ধায় নিজ বাসায় চারিদিক থেকে আগমনে বরন ঘটে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কলতানে আকৃষ্ট ও পাখিপ্রেমিরা। শিকারীদের উৎপাত থাকলেও বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশীদের ভালোবাসায় টিকে আছে পাখিরা। পাখি দেখে মুগ্ধ হন বেড়াতে আসা দর্শক।

গাছে গাছে সাদা-কালোসহ বিভিন্ন রঙের ছোপ বাড়তে শুরু করে। পাখির দল রাত কাটাতে পুরো বাড়িটিতে তখন তৈরি হয় প্রাণ-প্রকৃতির বুনো মেজাজ। উঁচু পাকা দেয়ালঘেরা বাড়ির ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই গাছে গাছে শুধু পাখিরই দেখা মেলে।

পাখি দেখতে আসা তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামির আহমদ জামি বলে, আমি চাচার সঙ্গে পাখি দেখতে এসেছি। পাখি দেখতে ভালো লাগে। আবারও আসব পাখি দেখতে। ‘পাখির বিষ্ঠার গন্ধ ছাড়া আর আমাদের কোনো সমস্যা নেই। পাখি আমাদের ভালোই লাগে। উঠানে বসে থাকি। প্রতিদিন অনেক মানুষ পাখি দেখতে আসছেন।

পাখির বাড়ি এর মালিক পঙ্কি মিয়া বলেন, ১৫ বছর আগে কয়েকটি পানকৌড়ি, শামুকখোল প্রথমে তার বাড়িতে বাসা বাঁধে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। এভাবেই এখন বাড়িটিতে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক পাখি।

তিনি জানান, পাখিগুলোকে তারা তাদের পরিবারের সদস্যের মতোই ভালোবাসেন। প্রতিদিন দলবেঁধে আসা এসব পাখির ডানার শব্দ আর কলতানে তাদের ঘুম ভাঙে। পাখিরা ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যায় খাবারের সন্ধানে। তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন এই দম্পতি। বিকেল হলেই ছোট ছোট দলে এই পাখিরা উড়ে আসতে থাকে বাড়িতে। এখন এ বাড়ির প্রতিটি সন্ধ্যা নামে সাদা বক ও কালো পানকৌড়ির কলতানে।

হাওড় রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর শাখার সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, হাওড়াঞ্চলের বসতবাড়িতে যারা পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছেন তাদেরকে যদি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ পুরস্কৃত করেন, তবে ভবিষ্যতে যাদের বসতবাড়িতে পাখি যাবে তারাও পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে উৎসাহিত হবেন।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন - পাখিরা নিজেদের যেখানে নিরাপদ মনে করবে তারা সেখানেই যাবে। যারা পাখিদের ভালবেসে নিরাপদ বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন তারা পরিবেশ ও পাখিবান্ধব মানুষ। সেই মহৎ ব্যক্তিদের জন্য আমাদের কিছু করার আছে। হাওর পারের এ এলাকার মানুষজন শান্তিপ্রিয় থাকায় পাখিরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। পাখিগুলোর নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতাসহ সংরক্ষনের জন্য প্রয়োজণীয় ব্যবস্থার আশ্বাস জানালেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।  

মনজু বিজয় চৌধুরী, মৌলভীবাজার

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩,  12:26 PM

news image

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাওয়াদিঘি হাওর পাড়ের বিরাইমবাদ গ্রামে পাখি প্রেমিক পরিবারের বাড়িটিতে সারা বছর জুড়েই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। পাখিগুলো বিগত ২৫/৩০বছর থেকে অন্য কোনো বাড়িতে কখনই আশ্রয় নেয় না। বাড়ি ও আশপাশের মানুষেরা সন্তানের মতো মানিয়ে নিয়েছেন। এই সৌন্দর্য বাঁচিয়ে রাখতে আর পাখিদের সুরক্ষায় বনবিভাগের সহযোগিতা চাইলেন পাখি প্রেমিক পঙ্গি মিয়া। লাখো লাখো পাখির কলকাকলির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পাখি প্রেমিরা ভিড় জমান।

সবুজ শ্যামল জীববৈচিত্রে ভরা বিশাল জলাধার কাউয়াদিঘি হাওড় এলাকার পঙ্কি মিয়ার বাড়িটি হাজারও পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। হাওড়ের বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা এখানে গড়ে তুলেছে তাদের আপন ঠিকানা।

হাওরপাড়ের বিরাইমবাদ গ্রামে নুরুল ইসলাম পঙ্গি মিয়া বাড়িতে ২০/২৫ অধিক সময় ধরে আশ্রয় নিয়েছে লাখো পাখি। গাছের ডালে ডালে পাতায় পাতায় পাখির কলকাখলীতে ভোর বেলা ঘুম ভাঙ্গে আর সন্ধায় নিজ বাসায় চারিদিক থেকে আগমনে বরন ঘটে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কলতানে আকৃষ্ট ও পাখিপ্রেমিরা। শিকারীদের উৎপাত থাকলেও বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশীদের ভালোবাসায় টিকে আছে পাখিরা। পাখি দেখে মুগ্ধ হন বেড়াতে আসা দর্শক।

গাছে গাছে সাদা-কালোসহ বিভিন্ন রঙের ছোপ বাড়তে শুরু করে। পাখির দল রাত কাটাতে পুরো বাড়িটিতে তখন তৈরি হয় প্রাণ-প্রকৃতির বুনো মেজাজ। উঁচু পাকা দেয়ালঘেরা বাড়ির ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই গাছে গাছে শুধু পাখিরই দেখা মেলে।

পাখি দেখতে আসা তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামির আহমদ জামি বলে, আমি চাচার সঙ্গে পাখি দেখতে এসেছি। পাখি দেখতে ভালো লাগে। আবারও আসব পাখি দেখতে। ‘পাখির বিষ্ঠার গন্ধ ছাড়া আর আমাদের কোনো সমস্যা নেই। পাখি আমাদের ভালোই লাগে। উঠানে বসে থাকি। প্রতিদিন অনেক মানুষ পাখি দেখতে আসছেন।

পাখির বাড়ি এর মালিক পঙ্কি মিয়া বলেন, ১৫ বছর আগে কয়েকটি পানকৌড়ি, শামুকখোল প্রথমে তার বাড়িতে বাসা বাঁধে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। এভাবেই এখন বাড়িটিতে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক পাখি।

তিনি জানান, পাখিগুলোকে তারা তাদের পরিবারের সদস্যের মতোই ভালোবাসেন। প্রতিদিন দলবেঁধে আসা এসব পাখির ডানার শব্দ আর কলতানে তাদের ঘুম ভাঙে। পাখিরা ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যায় খাবারের সন্ধানে। তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন এই দম্পতি। বিকেল হলেই ছোট ছোট দলে এই পাখিরা উড়ে আসতে থাকে বাড়িতে। এখন এ বাড়ির প্রতিটি সন্ধ্যা নামে সাদা বক ও কালো পানকৌড়ির কলতানে।

হাওড় রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর শাখার সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, হাওড়াঞ্চলের বসতবাড়িতে যারা পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছেন তাদেরকে যদি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ পুরস্কৃত করেন, তবে ভবিষ্যতে যাদের বসতবাড়িতে পাখি যাবে তারাও পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে উৎসাহিত হবেন।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন - পাখিরা নিজেদের যেখানে নিরাপদ মনে করবে তারা সেখানেই যাবে। যারা পাখিদের ভালবেসে নিরাপদ বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন তারা পরিবেশ ও পাখিবান্ধব মানুষ। সেই মহৎ ব্যক্তিদের জন্য আমাদের কিছু করার আছে। হাওর পারের এ এলাকার মানুষজন শান্তিপ্রিয় থাকায় পাখিরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। পাখিগুলোর নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতাসহ সংরক্ষনের জন্য প্রয়োজণীয় ব্যবস্থার আশ্বাস জানালেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।