বগুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মৌ-চাষ

#
news image

জেলায় মৌমাছিকে বাক্সে রেখে মধু সংগ্রহ জনপ্রিয় উঠছে। মৌসুমে ১০০ বাক্সে মৌমাছি চাষ করে  ১  থেকে দেড়  টন মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌ-চাষিরা। বগুড়ার সংগৃহীত মধু দেশের ও পার্শবর্তী দেশের কোম্পানি কিনে পরিশোধন করে প্যাকেট জাত করে থাকে। মৌ-চাষিরা জানান, সংগৃহিত মধু প্রাণ, ডাবর’র মত বড় প্রতিষ্ঠান তদের কাছ থেকে মধু কিনে থাকে। তারা ওই সব কোম্পানির মত মধু পরিশোধন করা ব্যবস্থা করতে পারলে অনেক লাভবান হতেন এমনটি জানালেন মৌ খামারীরা।

বগুড়ার মৌচাষি নজরুল ইসলাম জানান, একসময় তারা দেশের এনজিওদের অধিনে মৌমাছি চাষের চাকরি করতো। চাকরি ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এখন স্বাবলম্বী। প্রথম দিকে ৩/৪ জন বাক্সে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ করতো। এখন তা বেড়ে ১৪ জন মৌ-চাষি মধু সংগ্রহের কাজ করছেন। মৌ-চাষীরা জানান, তারা মৌসুমের ৬ মাস মধু সংগ্রহ করে অবশিষ্ট ৬ মাস তাদের অলস সময় পার করতে হয়। এই সময়টাতে তারা বাক্সে মৌমাছি লালন পালন করে থাকেন। তখন তারা মৌমাছিদের বাঁচিয়ে রাখার কৌশল রপ্ত করে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। মৌমাছিদের নিয়ন্ত্রণে এনে মৌ-চাষিরা তাদের বাক্সে থেকে সবটুকু মধু নিংড়ে নেয়। আর তা বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে।

মে মাস থেকে নভেম্বর মাস মাঠে ও গাছে-গাছে ফুল ফোটে না। তখন তারা মৌমাছিকে কৃত্রিম উপায়ে লালন-পালন করেন। তখন মৌমাছিদের বাঁচিয়ে রাখতে তারা বাক্সে চিনির রস একটি পাত্রে রাখে। মৌমাছিকে সেই রস খেয়ে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখেন। এ সময় মৌমাছি প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণ করতে পারেনা তাই তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। 

এখন আধুনিক উপায়ে মৌ-চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানান- আর এক চাষি আজাহার আলী। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে মৌ-চাষ করে আসছেন। তিনি জানান, অতীতে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির বাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করতে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়েছেন। সরিষা চাষিদের ধারণা ছিল মৌমাছিতে তাদের সরিষার ফলন কমে যাচ্ছে। সরিষা চাষিদের তারা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে পরাগায়নের ফলে সরিষার আবদ বৃদ্ধি পাবে। পরে তারা হাতে-হাতে ফল পাওয়ায়  সেই প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। সরিষা চাষিরা এখন সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বাক্স স্থাপনে তাগাদা দেন মৌ-চাষিদের। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত তারা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন। এর পর জুন মাসে থেকে নভেম্বর মাস চাষিরা মৌ-মাছি লালন-পালন করেন বাক্সে। 

আগে মৌমাছি গাছের মগ ডলে মৌচাক তৈরী করতো। কিন্তু এখন মধু সংরক্ষণের জন্য আদর্শ চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে মৌ-মাছি চাষ করে অধিকাংশ চাষি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে মৌ চাষের জন্য এনজিও এবং বিসিকের স্মরণাপন্ন হতো। বগুড়ার বেশীর ভাগ চাষি অনেকে ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে মৌ-চাষ করে এখন স্বাবলম্বী।

আজাহার আলী জানান, তারা প্রতি বাক্স থেকে প্রায় ৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করেন। জেলায় প্রায় ১০ জন মৌ চাষি প্রশিক্ষণ নিয়ে মধুর চাষ করেন। বছরে ১০০ বাক্স থেকে বছরে সাড়ে তিন টন থেকে ৪ টন মধু সংগ্রহ করতে থকেন। এ  থেকে বছরে তারা ৬ লাখ টাকা আয় করেন। কিন্তু এ সব লালন পালনের জন্য শ্রমিকদের খরচ, মৌমাছিদের লালন-পালন করতে প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যায় হয়। তবে ৬ মাসে তারা ৪ লাখ টাকার মত লাভ করে থাকেন।  চাষি নজরুল বলেন- তাদের কাছে কালো জিরার ফুলের মধু সব চেয়ে দামি। এই মধু তারা ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকেন। মাঠে গাছের ফুল থেকে সংগৃহীত মধু তারা ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়ে থাকে। ১০ জন মৌ-চাষি মৌসুমে ১০ টন মধু সংগ্রহ করে থাকেন।  খরচ বাদ দিয়ে (শ্রমিক, অফ সিজেনে মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে চিনি, মৌ-খামরে বাক্স সংরক্ষণ খরচ) বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে বলে জানান মৌ-খামারীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ নভেম্বর, ২০২২,  12:51 AM

news image

জেলায় মৌমাছিকে বাক্সে রেখে মধু সংগ্রহ জনপ্রিয় উঠছে। মৌসুমে ১০০ বাক্সে মৌমাছি চাষ করে  ১  থেকে দেড়  টন মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌ-চাষিরা। বগুড়ার সংগৃহীত মধু দেশের ও পার্শবর্তী দেশের কোম্পানি কিনে পরিশোধন করে প্যাকেট জাত করে থাকে। মৌ-চাষিরা জানান, সংগৃহিত মধু প্রাণ, ডাবর’র মত বড় প্রতিষ্ঠান তদের কাছ থেকে মধু কিনে থাকে। তারা ওই সব কোম্পানির মত মধু পরিশোধন করা ব্যবস্থা করতে পারলে অনেক লাভবান হতেন এমনটি জানালেন মৌ খামারীরা।

বগুড়ার মৌচাষি নজরুল ইসলাম জানান, একসময় তারা দেশের এনজিওদের অধিনে মৌমাছি চাষের চাকরি করতো। চাকরি ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এখন স্বাবলম্বী। প্রথম দিকে ৩/৪ জন বাক্সে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ করতো। এখন তা বেড়ে ১৪ জন মৌ-চাষি মধু সংগ্রহের কাজ করছেন। মৌ-চাষীরা জানান, তারা মৌসুমের ৬ মাস মধু সংগ্রহ করে অবশিষ্ট ৬ মাস তাদের অলস সময় পার করতে হয়। এই সময়টাতে তারা বাক্সে মৌমাছি লালন পালন করে থাকেন। তখন তারা মৌমাছিদের বাঁচিয়ে রাখার কৌশল রপ্ত করে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। মৌমাছিদের নিয়ন্ত্রণে এনে মৌ-চাষিরা তাদের বাক্সে থেকে সবটুকু মধু নিংড়ে নেয়। আর তা বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে।

মে মাস থেকে নভেম্বর মাস মাঠে ও গাছে-গাছে ফুল ফোটে না। তখন তারা মৌমাছিকে কৃত্রিম উপায়ে লালন-পালন করেন। তখন মৌমাছিদের বাঁচিয়ে রাখতে তারা বাক্সে চিনির রস একটি পাত্রে রাখে। মৌমাছিকে সেই রস খেয়ে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখেন। এ সময় মৌমাছি প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণ করতে পারেনা তাই তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। 

এখন আধুনিক উপায়ে মৌ-চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানান- আর এক চাষি আজাহার আলী। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে মৌ-চাষ করে আসছেন। তিনি জানান, অতীতে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির বাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করতে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়েছেন। সরিষা চাষিদের ধারণা ছিল মৌমাছিতে তাদের সরিষার ফলন কমে যাচ্ছে। সরিষা চাষিদের তারা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে পরাগায়নের ফলে সরিষার আবদ বৃদ্ধি পাবে। পরে তারা হাতে-হাতে ফল পাওয়ায়  সেই প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। সরিষা চাষিরা এখন সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বাক্স স্থাপনে তাগাদা দেন মৌ-চাষিদের। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত তারা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন। এর পর জুন মাসে থেকে নভেম্বর মাস চাষিরা মৌ-মাছি লালন-পালন করেন বাক্সে। 

আগে মৌমাছি গাছের মগ ডলে মৌচাক তৈরী করতো। কিন্তু এখন মধু সংরক্ষণের জন্য আদর্শ চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে মৌ-মাছি চাষ করে অধিকাংশ চাষি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে মৌ চাষের জন্য এনজিও এবং বিসিকের স্মরণাপন্ন হতো। বগুড়ার বেশীর ভাগ চাষি অনেকে ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে মৌ-চাষ করে এখন স্বাবলম্বী।

আজাহার আলী জানান, তারা প্রতি বাক্স থেকে প্রায় ৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করেন। জেলায় প্রায় ১০ জন মৌ চাষি প্রশিক্ষণ নিয়ে মধুর চাষ করেন। বছরে ১০০ বাক্স থেকে বছরে সাড়ে তিন টন থেকে ৪ টন মধু সংগ্রহ করতে থকেন। এ  থেকে বছরে তারা ৬ লাখ টাকা আয় করেন। কিন্তু এ সব লালন পালনের জন্য শ্রমিকদের খরচ, মৌমাছিদের লালন-পালন করতে প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যায় হয়। তবে ৬ মাসে তারা ৪ লাখ টাকার মত লাভ করে থাকেন।  চাষি নজরুল বলেন- তাদের কাছে কালো জিরার ফুলের মধু সব চেয়ে দামি। এই মধু তারা ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকেন। মাঠে গাছের ফুল থেকে সংগৃহীত মধু তারা ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়ে থাকে। ১০ জন মৌ-চাষি মৌসুমে ১০ টন মধু সংগ্রহ করে থাকেন।  খরচ বাদ দিয়ে (শ্রমিক, অফ সিজেনে মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে চিনি, মৌ-খামরে বাক্স সংরক্ষণ খরচ) বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে বলে জানান মৌ-খামারীরা।