অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল জিম্বাবুয়ে

#
news image

বোলারদের নৈপুণ্যে, বিশেষ করে রায়ান বার্লের ঘুর্ণিতে, অস্ট্রেলিয়াকে ১৪১ রানে বেঁধে রেখে ইতিহাস গড়ার পথটা আগেই তৈরি করে ফেলেছিল জিম্বাবুয়ে। নড়বড়ে ব্যাটিং একটু শঙ্কা জাগাল বটে, তবে শেষ হাসিটা হাসল সফরকারীরাই। ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলল দলটি। বাংলাদেশকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে দেওয়াটা যে মোটেও ‘ঝড়ে বক পড়া’ ছিল না, অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাঠে হারিয়ে সেটাই যেন প্রমাণ করল ‘নতুন’ জিম্বাবুয়ে!

লক্ষ্যটা খুব বেশি ছিল না। মাত্র ১৪২ রান করতে হতো জিম্বাবুয়েকে। মামুলি লক্ষ্য সামনে রেখে টাউন্সভিলে সফরকারীদের শুরুটা নেহায়েত মন্দ হয়নি। জশ হেইজেলউডের বলে স্টিভেন স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে তাকুজওয়ানাশে কাইতানো যখন ফিরছেন, তার আগে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান পেয়ে গেছে দলটি।

তবে ১১তম ওভারে পরপর দুই বলে যখন ফিরলেন ওয়েসলি মাধেভেরে আর শন উইলিয়ামস, তখন ক্ষয়রোগের ভয়টা খানিকটা পেয়ে বসল জিম্বাবুয়েকে। যদি ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতো? দারুণ ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজাও ফিরলেন খানিক বাদে, একটু পর তার পথ ধরলেন তখন পর্যন্ত ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৫ রান করা তাদিওয়ানাশে মারুমানিও। ৭৭ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে জিম্বাবুয়ের ভয়টা ক্রমেই বাড়ছিল বৈকি!

তবে সফরকারীদের সে ভয় দূর হয়ে যায় রেজিস চাকাভার ব্যাটে। তাকে প্রথমে সঙ্গ দিয়েছেন টনি মুনইয়োঙ্গা। দলীয় ১১৫ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার বিদায়ের পর বল হাতে ভেল্কি দেখানো রায়ান বার্ল ব্যাট হাতে সঙ্গ দেন অধিনায়ককে। তাতেই একটু একটু করে জয়ের কাছে চলে যায় জিম্বাবুয়ে। জয় থেকে যখন কেবল ৫ রান দূরে দল, তখন বার্ল ফেরেন মিচেল স্টার্কের শিকার হয়ে। 

অজিদের ইনিংসের লেজটা মুড়ে দেওয়ার কাজ সেরেছিলেন বার্ল। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের লেজ গুটাতে অজিদের কেউ তেমন কিছু করতে পারেননি। পরের পাঁচ রান কোনো বিপদ ছাড়াই তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে। ৩ উইকেটের ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস গড়ে জিম্বাবুইয়ানরা।

এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। সিদ্ধান্তটা যে ভুল ছিল না, তা প্রথম থেকেই প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জিম্বাবুইয়ান বোলাররা। তারা ১০ রানেই তুলে নেন অস্ট্রেলিয়ার দুই উইকেট। এরপর থেকে অজিরা উইকেট খুইয়েছে নিয়মিত বিরতিতে। এক পর্যায়ে ৭২ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে ১০০ রানের আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় দলটি।

ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার একপাশ আগলে রেখে ৯৬ বলে ৯৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বলে বাঁচা। ষষ্ঠ উইকেটে তাকে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তাদের ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৭ রানের জুটিতে ভর করেই ১০০ রান ছাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ।

২৭তম ওভারে আক্রমণে আসা বার্লের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। বার্ল ম্যাক্সওয়েলকে ফেরান প্রথমে। এক বল পরই অ্যাশটন অ্যাগারকে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় করেন তিনি। ওয়ার্নার তখনো গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন জিম্বাবুয়ের। পরের ওভারে সেই ওয়ার্নারকেও বিদায় করেন তিনি। ৩১তম ওভারে আবারও আক্রমণে এসে মিচেল স্টার্ক আর জশ হেইজেলউডকেও বিদায় করেন বার্ল। ৩ ওভারে ১০ রান খরচায় বার্ল পান ৫ উইকেট। ১৪১ রানেই শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।

নিজেদের ইতিহাসে এর আগে অস্ট্রেলিয়াকে দুই বার হারাতে পেরেছিল জিম্বাবুয়ে। প্রথম জয়টা এসেছিল সেই ১৯৮৩ সালে, দুই দল যখন প্রথমবারের মুখোমুখি হয়েছিল একে অপরের। এরপর ২০১৪ সালে আরেকবার জিম্বাবুয়ের কাছে হারে অজিরা।

তবে সেই দুই জয়ের একটিও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আসেনি। প্রথমটি ছিল নিরপেক্ষ ভেন্যু নটিংহ্যামে, ১৯৮৩ বিশ্বকাপের ম্যাচে। দ্বিতীয়টি আসে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে, নিজেদের মাঠে।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এই প্রথম অস্ট্রেলিয়াকে হারাল জিম্বাবুয়ে। এই ইতিহাস যে জিম্বাবুয়ে মনের খাতায় যত্নে রাখবে বহুদিন, তা বলাই বাহুল্য! 

অনলাইন ডেস্ক

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২,  9:36 PM

news image

বোলারদের নৈপুণ্যে, বিশেষ করে রায়ান বার্লের ঘুর্ণিতে, অস্ট্রেলিয়াকে ১৪১ রানে বেঁধে রেখে ইতিহাস গড়ার পথটা আগেই তৈরি করে ফেলেছিল জিম্বাবুয়ে। নড়বড়ে ব্যাটিং একটু শঙ্কা জাগাল বটে, তবে শেষ হাসিটা হাসল সফরকারীরাই। ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলল দলটি। বাংলাদেশকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে দেওয়াটা যে মোটেও ‘ঝড়ে বক পড়া’ ছিল না, অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাঠে হারিয়ে সেটাই যেন প্রমাণ করল ‘নতুন’ জিম্বাবুয়ে!

লক্ষ্যটা খুব বেশি ছিল না। মাত্র ১৪২ রান করতে হতো জিম্বাবুয়েকে। মামুলি লক্ষ্য সামনে রেখে টাউন্সভিলে সফরকারীদের শুরুটা নেহায়েত মন্দ হয়নি। জশ হেইজেলউডের বলে স্টিভেন স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে তাকুজওয়ানাশে কাইতানো যখন ফিরছেন, তার আগে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান পেয়ে গেছে দলটি।

তবে ১১তম ওভারে পরপর দুই বলে যখন ফিরলেন ওয়েসলি মাধেভেরে আর শন উইলিয়ামস, তখন ক্ষয়রোগের ভয়টা খানিকটা পেয়ে বসল জিম্বাবুয়েকে। যদি ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতো? দারুণ ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজাও ফিরলেন খানিক বাদে, একটু পর তার পথ ধরলেন তখন পর্যন্ত ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৫ রান করা তাদিওয়ানাশে মারুমানিও। ৭৭ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে জিম্বাবুয়ের ভয়টা ক্রমেই বাড়ছিল বৈকি!

তবে সফরকারীদের সে ভয় দূর হয়ে যায় রেজিস চাকাভার ব্যাটে। তাকে প্রথমে সঙ্গ দিয়েছেন টনি মুনইয়োঙ্গা। দলীয় ১১৫ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার বিদায়ের পর বল হাতে ভেল্কি দেখানো রায়ান বার্ল ব্যাট হাতে সঙ্গ দেন অধিনায়ককে। তাতেই একটু একটু করে জয়ের কাছে চলে যায় জিম্বাবুয়ে। জয় থেকে যখন কেবল ৫ রান দূরে দল, তখন বার্ল ফেরেন মিচেল স্টার্কের শিকার হয়ে। 

অজিদের ইনিংসের লেজটা মুড়ে দেওয়ার কাজ সেরেছিলেন বার্ল। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের লেজ গুটাতে অজিদের কেউ তেমন কিছু করতে পারেননি। পরের পাঁচ রান কোনো বিপদ ছাড়াই তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে। ৩ উইকেটের ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস গড়ে জিম্বাবুইয়ানরা।

এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। সিদ্ধান্তটা যে ভুল ছিল না, তা প্রথম থেকেই প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জিম্বাবুইয়ান বোলাররা। তারা ১০ রানেই তুলে নেন অস্ট্রেলিয়ার দুই উইকেট। এরপর থেকে অজিরা উইকেট খুইয়েছে নিয়মিত বিরতিতে। এক পর্যায়ে ৭২ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে ১০০ রানের আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় দলটি।

ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার একপাশ আগলে রেখে ৯৬ বলে ৯৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বলে বাঁচা। ষষ্ঠ উইকেটে তাকে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তাদের ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৭ রানের জুটিতে ভর করেই ১০০ রান ছাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ।

২৭তম ওভারে আক্রমণে আসা বার্লের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। বার্ল ম্যাক্সওয়েলকে ফেরান প্রথমে। এক বল পরই অ্যাশটন অ্যাগারকে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় করেন তিনি। ওয়ার্নার তখনো গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন জিম্বাবুয়ের। পরের ওভারে সেই ওয়ার্নারকেও বিদায় করেন তিনি। ৩১তম ওভারে আবারও আক্রমণে এসে মিচেল স্টার্ক আর জশ হেইজেলউডকেও বিদায় করেন বার্ল। ৩ ওভারে ১০ রান খরচায় বার্ল পান ৫ উইকেট। ১৪১ রানেই শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।

নিজেদের ইতিহাসে এর আগে অস্ট্রেলিয়াকে দুই বার হারাতে পেরেছিল জিম্বাবুয়ে। প্রথম জয়টা এসেছিল সেই ১৯৮৩ সালে, দুই দল যখন প্রথমবারের মুখোমুখি হয়েছিল একে অপরের। এরপর ২০১৪ সালে আরেকবার জিম্বাবুয়ের কাছে হারে অজিরা।

তবে সেই দুই জয়ের একটিও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আসেনি। প্রথমটি ছিল নিরপেক্ষ ভেন্যু নটিংহ্যামে, ১৯৮৩ বিশ্বকাপের ম্যাচে। দ্বিতীয়টি আসে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে, নিজেদের মাঠে।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এই প্রথম অস্ট্রেলিয়াকে হারাল জিম্বাবুয়ে। এই ইতিহাস যে জিম্বাবুয়ে মনের খাতায় যত্নে রাখবে বহুদিন, তা বলাই বাহুল্য!