মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায় ১৭ নভেম্বর
নাগরিক সংবাদ অনলাইন
১৪ নভেম্বর, ২০২৫, 12:08 AM
মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায় ১৭ নভেম্বর
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর)।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ তারিখ ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউশনের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম ও ফারুক আহম্মদসহ অন্যান্য আইনজীবীরা। গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। পরে আসামিপক্ষের বক্তব্যের জবাবে চিফ প্রসিকিউটরও একই দাবি জানান। অপরদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন তাদের খালাস প্রার্থনা করেন।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, রায়ে শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড হবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন। তবে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি মামুনের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন আদালত। তার ভাষায়, “ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগ দেশে-বিদেশে নানা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, কিন্তু বিচার তার নিজস্ব গতিতেই এগোচ্ছে।”
গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের হয়। সেই বছরের ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু করে এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে সহআসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই বছরের ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে, যা ট্রাইব্যুনাল আমলে নেয়। ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। একপর্যায়ে সাবেক আইজিপি মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হন এবং ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
প্রসিকিউশনের আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে আন্দোলন দমন অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে আক্রমণের নির্দেশ, এবং ছাত্রদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান। এসব অভিযোগে শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে “সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি” বা সর্বোচ্চ দায় আরোপ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত ও অন্তত ২৫ হাজার আহত হন।
তদন্ত সংস্থা গত বছরের ১২ মে ট্রাইব্যুনালে ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়। এর মধ্যে শহীদদের তালিকা, প্রমাণাদি, জব্দতালিকা ও তথ্যসূত্র সংযুক্ত ছিল।
এই মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে আইনজীবী মহলে মত দেওয়া হচ্ছে।
নাগরিক সংবাদ অনলাইন
১৪ নভেম্বর, ২০২৫, 12:08 AM
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর)।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ তারিখ ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউশনের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম ও ফারুক আহম্মদসহ অন্যান্য আইনজীবীরা। গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। পরে আসামিপক্ষের বক্তব্যের জবাবে চিফ প্রসিকিউটরও একই দাবি জানান। অপরদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন তাদের খালাস প্রার্থনা করেন।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, রায়ে শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড হবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন। তবে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি মামুনের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন আদালত। তার ভাষায়, “ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগ দেশে-বিদেশে নানা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, কিন্তু বিচার তার নিজস্ব গতিতেই এগোচ্ছে।”
গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের হয়। সেই বছরের ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু করে এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে সহআসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই বছরের ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে, যা ট্রাইব্যুনাল আমলে নেয়। ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। একপর্যায়ে সাবেক আইজিপি মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হন এবং ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
প্রসিকিউশনের আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে আন্দোলন দমন অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে আক্রমণের নির্দেশ, এবং ছাত্রদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান। এসব অভিযোগে শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে “সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি” বা সর্বোচ্চ দায় আরোপ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত ও অন্তত ২৫ হাজার আহত হন।
তদন্ত সংস্থা গত বছরের ১২ মে ট্রাইব্যুনালে ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়। এর মধ্যে শহীদদের তালিকা, প্রমাণাদি, জব্দতালিকা ও তথ্যসূত্র সংযুক্ত ছিল।
এই মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে আইনজীবী মহলে মত দেওয়া হচ্ছে।