নবী (সা.) কেন সপ্তাহে দুইদিন রোজা রাখতেন?

#
news image

ইবাদত-বন্দেগী ইসলামি জীবনের মূল ভিত্তি। একজন মুমিনের জীবন ইবাদতের ছায়ায় পরিপূর্ণ থাকে, নামাজ, রোজা, জাকাত, হজসহ নানা উপায়ে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। তবে ইবাদতের ক্ষেত্র কেবল ফরয বা বাধ্যতামূলক আমলে সীমাবদ্ধ নয়; বরং ইসলাম নফল বা ঐচ্ছিক ইবাদতের দ্বারও উন্মুক্ত রেখেছে, যাতে বান্দা সর্বদা রবের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারে।

এই নফল ইবাদতসমূহের মধ্যে রয়েছে এমন অনেক আমল, বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে, হৃদয়ে প্রশান্তি আনে এবং গোনাহ মোচনের কারণ হয়। এর মধ্যেই সোমবার ও বৃহস্পতিবারের নফল রোজা একটি বিশেষ আমল, যা নবী করিম সা. নিজে নিয়মিত পালন করতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকেও উৎসাহ দিতেন। এই রোজা কেবল শারীরিক ত্যাগ নয়; এটি আত্মিক পরিশুদ্ধির এক মহৎ মাধ্যম। এসব দিনে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়, আর নবীজি সা. চেয়েছেন যেন তার আমল পেশ হয় রোযাদার অবস্থায়।

তাছাড়া সোমবারের দিনেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এই দিনেই তার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে, ফলে এই দিনটি ইসলামি ইতিহাসে একটি মহিমান্বিত দিন হিসেবে চিহ্নিত। এই আলোচনায় সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজার ফজিলত, নবীজির আমল এবং এর আত্মিক তাৎপর্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে আমাদের হৃদয়ে এই নফল আমলের প্রতি আগ্রহ জাগে এবং আমরা এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হতে পারি।

ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যে মূলত দুটি প্রকার রয়েছে

১. অবশ্যপালনীয় (ফরজ) ইবাদত,

২. ঐচ্ছিক (নফল) ইবাদত।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ফরজ ইবাদতের মর্যাদা ও গুরুত্ব নফল ইবাদতের চেয়ে অসীমভাবে বেশি। রসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, বান্দা আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জন করে ফরয ইবাদতের মাধ্যমে। তবে নফল বা ঐচ্ছিক ইবাদতের ফযীলতও অপরিসীম। এগুলো মুমিনের অন্তরে আল্লাহর নৈকট্যের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে এবং আমলের প্রতি উৎসাহিত করে। এমন অনেক নফল ইবাদতের মধ্যে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ।

রসুলুল্লাহ সা. নিজে নিয়মিত এসব দিনে রোযা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে এর ফযীলত বর্ণনা করতেন। এ দুই দিনের রোযার অন্যতম বড় ফযীলত হলো-এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এ দুই দিনে রোযা রাখেন কেন? নবীজি সা. উত্তরে বললেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহ তাআলা সব মুসলমানকে ক্ষমা করেন, তবে দু’জন ব্যতীত, যারা পরস্পর সম্পর্কচ্ছেদ করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তারা একে অপরের সঙ্গে মিলে না যাওয়া পর্যন্ত আমি তাদের ছেড়ে দিই। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৪০)

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখার প্রতি বিশেষ যত্ন নিতেন। (জামে তিরমিজি: ৭৪৫)

আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমি চাই, আমার আমল যেন পেশ করা হয়, যখন আমি রোযাদার থাকি। জামে তিরমিজি: ৭৪৭)

সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। যদিও আমলের জন্য প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ, তবুও কিছু দিন রয়েছে যা অতিরিক্ত কল্যাণ ও বরকতের অধিকারী।

সোমবারের বিশেষ গুরুত্ব

সোমবার এমন একটি দিন, যা ইসলামের ইতিহাসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী। এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছেন মানবতার শ্রেষ্ঠ নেতা, বিশ্বজগতের রহমত, সায়্যিদুল মুরসালীন মুহাম্মাদ সা.। এই দিনেই তাঁর প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয় এবং তিনি নবুয়তের মর্যাদায় ভূষিত হন। হজরত আবু কাতাদা আনসারী রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা.-কে সোমবারের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এই দিনেই আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে। (মুসলিম: ১১৬২) সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা এমন এক নফল আমল, যা নবীজির সুন্নত, গোনাহ মাফের মাধ্যম এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উত্তম পথ।

নাগরিক সংবাদ অনলাইন

১৩ নভেম্বর, ২০২৫,  11:58 PM

news image

ইবাদত-বন্দেগী ইসলামি জীবনের মূল ভিত্তি। একজন মুমিনের জীবন ইবাদতের ছায়ায় পরিপূর্ণ থাকে, নামাজ, রোজা, জাকাত, হজসহ নানা উপায়ে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। তবে ইবাদতের ক্ষেত্র কেবল ফরয বা বাধ্যতামূলক আমলে সীমাবদ্ধ নয়; বরং ইসলাম নফল বা ঐচ্ছিক ইবাদতের দ্বারও উন্মুক্ত রেখেছে, যাতে বান্দা সর্বদা রবের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারে।

এই নফল ইবাদতসমূহের মধ্যে রয়েছে এমন অনেক আমল, বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে, হৃদয়ে প্রশান্তি আনে এবং গোনাহ মোচনের কারণ হয়। এর মধ্যেই সোমবার ও বৃহস্পতিবারের নফল রোজা একটি বিশেষ আমল, যা নবী করিম সা. নিজে নিয়মিত পালন করতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকেও উৎসাহ দিতেন। এই রোজা কেবল শারীরিক ত্যাগ নয়; এটি আত্মিক পরিশুদ্ধির এক মহৎ মাধ্যম। এসব দিনে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়, আর নবীজি সা. চেয়েছেন যেন তার আমল পেশ হয় রোযাদার অবস্থায়।

তাছাড়া সোমবারের দিনেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এই দিনেই তার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে, ফলে এই দিনটি ইসলামি ইতিহাসে একটি মহিমান্বিত দিন হিসেবে চিহ্নিত। এই আলোচনায় সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজার ফজিলত, নবীজির আমল এবং এর আত্মিক তাৎপর্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে আমাদের হৃদয়ে এই নফল আমলের প্রতি আগ্রহ জাগে এবং আমরা এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হতে পারি।

ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যে মূলত দুটি প্রকার রয়েছে

১. অবশ্যপালনীয় (ফরজ) ইবাদত,

২. ঐচ্ছিক (নফল) ইবাদত।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ফরজ ইবাদতের মর্যাদা ও গুরুত্ব নফল ইবাদতের চেয়ে অসীমভাবে বেশি। রসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, বান্দা আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জন করে ফরয ইবাদতের মাধ্যমে। তবে নফল বা ঐচ্ছিক ইবাদতের ফযীলতও অপরিসীম। এগুলো মুমিনের অন্তরে আল্লাহর নৈকট্যের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে এবং আমলের প্রতি উৎসাহিত করে। এমন অনেক নফল ইবাদতের মধ্যে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ।

রসুলুল্লাহ সা. নিজে নিয়মিত এসব দিনে রোযা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে এর ফযীলত বর্ণনা করতেন। এ দুই দিনের রোযার অন্যতম বড় ফযীলত হলো-এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এ দুই দিনে রোযা রাখেন কেন? নবীজি সা. উত্তরে বললেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহ তাআলা সব মুসলমানকে ক্ষমা করেন, তবে দু’জন ব্যতীত, যারা পরস্পর সম্পর্কচ্ছেদ করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তারা একে অপরের সঙ্গে মিলে না যাওয়া পর্যন্ত আমি তাদের ছেড়ে দিই। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৪০)

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখার প্রতি বিশেষ যত্ন নিতেন। (জামে তিরমিজি: ৭৪৫)

আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমি চাই, আমার আমল যেন পেশ করা হয়, যখন আমি রোযাদার থাকি। জামে তিরমিজি: ৭৪৭)

সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। যদিও আমলের জন্য প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ, তবুও কিছু দিন রয়েছে যা অতিরিক্ত কল্যাণ ও বরকতের অধিকারী।

সোমবারের বিশেষ গুরুত্ব

সোমবার এমন একটি দিন, যা ইসলামের ইতিহাসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী। এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছেন মানবতার শ্রেষ্ঠ নেতা, বিশ্বজগতের রহমত, সায়্যিদুল মুরসালীন মুহাম্মাদ সা.। এই দিনেই তাঁর প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয় এবং তিনি নবুয়তের মর্যাদায় ভূষিত হন। হজরত আবু কাতাদা আনসারী রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা.-কে সোমবারের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এই দিনেই আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে। (মুসলিম: ১১৬২) সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা এমন এক নফল আমল, যা নবীজির সুন্নত, গোনাহ মাফের মাধ্যম এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উত্তম পথ।