পর্যটন খাতের আয়ের সুফল থেকে বঞ্চিত বাংলাদেশ

#
news image

পর্যটন খাতে আয় করেও তা সুফল থেকে বঞ্চিত রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতি বছর পর্যটক বাড়লেও এর আয়ের বড় অংশ গিলে খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বুকিং সাইট বুকিং ডটকম। এতে পর্যটন খাতে ব্যাপক সম্ভাবনার পর দেশের অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক কোনো অবদান থাকছে না। ট্যুরিজম বোর্ডের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে দেশে প্রায় ৩ লাখ পর্যটক বাড়লেও এ খাতে আয় বাড়েনি। আর বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড পর্যটন খাত নিয়ে যে মহাপরিকল্পনা করছে তাতে তুলে ধরা তথ্যে বলা হয়, সারা দেশে ১ হাজার ৪৯৭টি পর্যটন স্পট রয়েছে। সে হিসেবে দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান থাকার কথা থাকলেও মাত্র ৩ শতাংশ অবদান রাখছে এই খাত। এতেই প্রমাণিত এ খাতে পর্যটক বাড়ার সাথে আয় বাড়লেও তার সুফল থেকে বাদ পড়ছে বাংলাদেশ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশী হয়েও বাংলাদেশে এখন বেশ প্রভাব ছড়িয়েছে বুকিং ডটকম। বলা যায়, নেট দুনিয়ায় ট্যুরিজম খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে এই প্রতিষ্ঠান। তাই বাংলাদেশে তাদের কোনো অফিস না থাকার পরও হোটেল মোটেল বিমান টিকিট থেকে শুরু করে এ খাতে তারা দাপটের সাথে এজেন্টের মাধ্যমে ব্যবসা করছে। স্তরভেদে ট্যুরিস্ট প্রতি ১৫ শতাংশ এবং এজেন্টের মাধ্যমে হলে ২০শতাংশ কমিশন নেয় বুকিং ডটকম। এ ক্ষেত্রে ট্যুরিস্টের কাছ থেকে দেশের হোটেলগুলো টাকা নিলেও মাস শেষে কমিশন হিসেব করে বুকিং ডটকমকে তারা টাকাগুলো পাঠিয়ে দেয়। এতে করে দেশ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যাচ্ছে। যার বড় আয় থেকে বাদ পড়ছে দেশ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের আয় ছিল এক হাজার ৮৬০ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালের আয়ের পরিমাণ না জানালেও সে বছর বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ৩.০২ শতাংশ ছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। সে হিসেবে ৩ লাখ ২৩ হাজার পর্যটক আসা ২০১৯ সালের পর্যটনে জিডিপি আয় ছিল ২০২২ সালের মতোই ৩.০২ শতাংশ! এতে প্রমাণিত দেশে পর্যটক বাড়লেও আয় বাড়েনি। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক আসার সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে তাদের ভ্রমণের কোনো টাকাই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ওই সব পর্যটক হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং দেন বিদেশী ট্যুর অপারেটর ও হোটেল বুকিং ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে। কিন্তু ওইসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশী ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন না করায় এই খাতে বিপুল অঙ্কের টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। যার বড় অংশই যাচ্ছে অবৈধ পথে।

অনুসন্ধান বলছে, বাংলাদেশের বাজারে রাজত্ব করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হোটেল বুকিং ও পর্যটন সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান বুকিং ডটকম ও আগোডা ডটকম। সেই সাথে দাপট দেখাচ্ছে মার্কিন আরেক প্রতিষ্ঠান এয়ার বিএনবি, বিল গেটসের মালিকানাধীন এক্সপেডিয়া ডট এমএক্স, ভারতীয় কোম্পানি মাইট্রিপ, চীনা কোম্পানি সিট্রিপসহ আরো বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বুকিং সাইট। অনলাইনভিত্তিক এসব পর্যটন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে জড়িত বাংলাদেশের অন্তত ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল বা পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

বাংলাদেশে বিদেশী ট্যুরিস্ট আকর্ষণে কাজ করা দেশীয় ট্যুর অপারেটরদের অভিযোগ, বিদেশী এজেন্সিগুলোর এই তৎপরতার কারণে শুধু সরকারের আয় কমাই নয়, দেশের পর্যটন সেক্টরে কর্মহীনতা সৃষ্টির শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পর্যটন সংক্রান্ত বিভিন্ন দফতরে অভিযোগও করেছেন তারা। একাধিক তথ্য বলছে, দেশের অধিকাংশ তারকা মানের হোটেলের ৩০-৪০ শতাংশ রুমই বুকিং হয় বিদেশী অনলাইন বুকিং সাইটের মাধ্যমে। তারকা ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড মানের হোটেলগুলোও একই পদ্ধতিতে যুক্ত রয়েছে বিদেশী সাইটগুলোর সাথে। এসব রুম বুকিংয়ের ক্ষেত্রে বিদেশী বুকিং সাইটগুলোকে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিচ্ছে হোটেলগুলো।

নাগরিক প্রতিবেদক  

০৭ মে, ২০২৪,  2:08 PM

news image

পর্যটন খাতে আয় করেও তা সুফল থেকে বঞ্চিত রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতি বছর পর্যটক বাড়লেও এর আয়ের বড় অংশ গিলে খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বুকিং সাইট বুকিং ডটকম। এতে পর্যটন খাতে ব্যাপক সম্ভাবনার পর দেশের অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক কোনো অবদান থাকছে না। ট্যুরিজম বোর্ডের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে দেশে প্রায় ৩ লাখ পর্যটক বাড়লেও এ খাতে আয় বাড়েনি। আর বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড পর্যটন খাত নিয়ে যে মহাপরিকল্পনা করছে তাতে তুলে ধরা তথ্যে বলা হয়, সারা দেশে ১ হাজার ৪৯৭টি পর্যটন স্পট রয়েছে। সে হিসেবে দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান থাকার কথা থাকলেও মাত্র ৩ শতাংশ অবদান রাখছে এই খাত। এতেই প্রমাণিত এ খাতে পর্যটক বাড়ার সাথে আয় বাড়লেও তার সুফল থেকে বাদ পড়ছে বাংলাদেশ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশী হয়েও বাংলাদেশে এখন বেশ প্রভাব ছড়িয়েছে বুকিং ডটকম। বলা যায়, নেট দুনিয়ায় ট্যুরিজম খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে এই প্রতিষ্ঠান। তাই বাংলাদেশে তাদের কোনো অফিস না থাকার পরও হোটেল মোটেল বিমান টিকিট থেকে শুরু করে এ খাতে তারা দাপটের সাথে এজেন্টের মাধ্যমে ব্যবসা করছে। স্তরভেদে ট্যুরিস্ট প্রতি ১৫ শতাংশ এবং এজেন্টের মাধ্যমে হলে ২০শতাংশ কমিশন নেয় বুকিং ডটকম। এ ক্ষেত্রে ট্যুরিস্টের কাছ থেকে দেশের হোটেলগুলো টাকা নিলেও মাস শেষে কমিশন হিসেব করে বুকিং ডটকমকে তারা টাকাগুলো পাঠিয়ে দেয়। এতে করে দেশ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যাচ্ছে। যার বড় আয় থেকে বাদ পড়ছে দেশ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের আয় ছিল এক হাজার ৮৬০ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালের আয়ের পরিমাণ না জানালেও সে বছর বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ৩.০২ শতাংশ ছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। সে হিসেবে ৩ লাখ ২৩ হাজার পর্যটক আসা ২০১৯ সালের পর্যটনে জিডিপি আয় ছিল ২০২২ সালের মতোই ৩.০২ শতাংশ! এতে প্রমাণিত দেশে পর্যটক বাড়লেও আয় বাড়েনি। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক আসার সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে তাদের ভ্রমণের কোনো টাকাই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ওই সব পর্যটক হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং দেন বিদেশী ট্যুর অপারেটর ও হোটেল বুকিং ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে। কিন্তু ওইসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশী ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন না করায় এই খাতে বিপুল অঙ্কের টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। যার বড় অংশই যাচ্ছে অবৈধ পথে।

অনুসন্ধান বলছে, বাংলাদেশের বাজারে রাজত্ব করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হোটেল বুকিং ও পর্যটন সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান বুকিং ডটকম ও আগোডা ডটকম। সেই সাথে দাপট দেখাচ্ছে মার্কিন আরেক প্রতিষ্ঠান এয়ার বিএনবি, বিল গেটসের মালিকানাধীন এক্সপেডিয়া ডট এমএক্স, ভারতীয় কোম্পানি মাইট্রিপ, চীনা কোম্পানি সিট্রিপসহ আরো বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বুকিং সাইট। অনলাইনভিত্তিক এসব পর্যটন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে জড়িত বাংলাদেশের অন্তত ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল বা পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

বাংলাদেশে বিদেশী ট্যুরিস্ট আকর্ষণে কাজ করা দেশীয় ট্যুর অপারেটরদের অভিযোগ, বিদেশী এজেন্সিগুলোর এই তৎপরতার কারণে শুধু সরকারের আয় কমাই নয়, দেশের পর্যটন সেক্টরে কর্মহীনতা সৃষ্টির শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পর্যটন সংক্রান্ত বিভিন্ন দফতরে অভিযোগও করেছেন তারা। একাধিক তথ্য বলছে, দেশের অধিকাংশ তারকা মানের হোটেলের ৩০-৪০ শতাংশ রুমই বুকিং হয় বিদেশী অনলাইন বুকিং সাইটের মাধ্যমে। তারকা ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড মানের হোটেলগুলোও একই পদ্ধতিতে যুক্ত রয়েছে বিদেশী সাইটগুলোর সাথে। এসব রুম বুকিংয়ের ক্ষেত্রে বিদেশী বুকিং সাইটগুলোকে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিচ্ছে হোটেলগুলো।