অসুস্থ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ক্ষুব্ধ অভিভাবক - স্কুল বন্ধের পক্ষে বিশেষজ্ঞরা
নাগরিক প্রতিবেদন
২৯ এপ্রিল, ২০২৪, 5:26 PM
অসুস্থ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ক্ষুব্ধ অভিভাবক - স্কুল বন্ধের পক্ষে বিশেষজ্ঞরা
হিট অ্যালার্টের মধ্যেই গতকাল রবিবার খুলে দেওয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।দুর্বিষহ গরমের মধ্যে এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। তারা বলছেন, জীবনের জন্য পড়াশোনা, পড়াশোনার জন্য জীবন নয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছে, দাবদাহে শিক্ষার্থীদের কেউ অসুস্থ হলে কিংবা মারা গেলে এর দায় নিতে হবে সরকারকেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি।
এদিকে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। কারণ, যে তীব্র গরমের কারণে গত এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, সেই গরম এখনও বিদ্যমান। সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় দুর্বিষহ গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। এ অবস্থায় রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের গেটে দেখা যায়, অভিভাবকরা তাদের সন্তান পৌঁছে দিচ্ছেন। সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছেন পানি ও জুস। রোদের মধ্যে বাইরে যাতে খেলাধুলা না করে, নিয়ম করে যাতে পানি খায়, দিয়ে দিচ্ছেন সেই পরামর্শও।
সন্তানকে ক্লাসে পাঠিয়ে স্কুলের সামনেই অপেক্ষারত অভিভাবকদের মধ্যে ছিল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। তাদের আলাপজুড়ে ছিল তাপপ্রবাহ। সেন্ট ফ্রান্সিস গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়ার মা সুলতানা রাজিয়া বলেন, এ গরমে ক্লাস শুরু হওয়ায় উদ্বিগ্ন। আগে ক্লাসে দিয়ে চলে যেতাম। আবার নিতে আসতাম। আজ অপেক্ষা করছি। গরম তো অনেক। কী জানি কী হয়।
অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা বন্ধ রেখে অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা তীব্র তাপপ্রবাহ চলমান থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য দেশের সব মানুষ। তীব্র তাপপ্রবাহে সরকারি সিদ্ধান্তে দেশের কোথাও যদি কোনো শিক্ষার্থীর কোনোরকম জীবন বিপন্ন ঘটে বা কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার সব ধরনের দায়ভার সরকার ও সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, প্রচণ্ড গরমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা। এই সময়ে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশির রোগীতে ভরপুর থাকে। যেহেতু এই সময়ের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বেশি করে লেবুর পানি বা স্যালাইন খাওয়াতে হবে, ঢিলেঢালা জামা পরাতে হবে, সু-জুতা না পরালেই ভালো হয়। আর তাদের কোনো অবস্থাতেই খেলার মাঠে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। স্কুলে এসে শিশুরা পিপাসা মেটাতে রাস্তাঘাটের লেবুর শরবত, আখের শরবত, আইসক্রিমসহ নানা ধরনের পানীয় খেতে চাইবে, মোটেও সেগুলো তাদের খেতে দেওয়া যাবে না। কারণ, এগুলোতে ব্যবহার করা পানি বিশুদ্ধ কি না, আমরা কেউই জানি না। শুধু পানি আর শরবতই নয়, এই সময়টাতে বাইরের সব ধরনের খোলা খাবার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হলে দায় সরকারের
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, কোনো নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রার জন্য সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যায় না। তিনি বলেন, কোনো কোনো জেলায় যদি তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে যায়, সেখানে বিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনা করে সেই জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারেন।
গতকাল এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি বা তারও বেশি হলে করণীয় কি হবে? জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও একটি নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেটি তারাও সমন্বয় করেন। এলাকাভিত্তিক যদি ৪২ ডিগ্রির ওপর তাপমাত্রা যায়, তা হলে সেখানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন, তারা আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনা করে সেই জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারেন এবং সময়সীমাও পরিবর্তন করতে পারেন। এটি অঞ্চলভেদে।
নাগরিক প্রতিবেদন
২৯ এপ্রিল, ২০২৪, 5:26 PM
হিট অ্যালার্টের মধ্যেই গতকাল রবিবার খুলে দেওয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।দুর্বিষহ গরমের মধ্যে এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। তারা বলছেন, জীবনের জন্য পড়াশোনা, পড়াশোনার জন্য জীবন নয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছে, দাবদাহে শিক্ষার্থীদের কেউ অসুস্থ হলে কিংবা মারা গেলে এর দায় নিতে হবে সরকারকেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি।
এদিকে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। কারণ, যে তীব্র গরমের কারণে গত এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, সেই গরম এখনও বিদ্যমান। সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় দুর্বিষহ গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। এ অবস্থায় রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের গেটে দেখা যায়, অভিভাবকরা তাদের সন্তান পৌঁছে দিচ্ছেন। সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছেন পানি ও জুস। রোদের মধ্যে বাইরে যাতে খেলাধুলা না করে, নিয়ম করে যাতে পানি খায়, দিয়ে দিচ্ছেন সেই পরামর্শও।
সন্তানকে ক্লাসে পাঠিয়ে স্কুলের সামনেই অপেক্ষারত অভিভাবকদের মধ্যে ছিল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। তাদের আলাপজুড়ে ছিল তাপপ্রবাহ। সেন্ট ফ্রান্সিস গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়ার মা সুলতানা রাজিয়া বলেন, এ গরমে ক্লাস শুরু হওয়ায় উদ্বিগ্ন। আগে ক্লাসে দিয়ে চলে যেতাম। আবার নিতে আসতাম। আজ অপেক্ষা করছি। গরম তো অনেক। কী জানি কী হয়।
অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা বন্ধ রেখে অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা তীব্র তাপপ্রবাহ চলমান থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য দেশের সব মানুষ। তীব্র তাপপ্রবাহে সরকারি সিদ্ধান্তে দেশের কোথাও যদি কোনো শিক্ষার্থীর কোনোরকম জীবন বিপন্ন ঘটে বা কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার সব ধরনের দায়ভার সরকার ও সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, প্রচণ্ড গরমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা। এই সময়ে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশির রোগীতে ভরপুর থাকে। যেহেতু এই সময়ের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বেশি করে লেবুর পানি বা স্যালাইন খাওয়াতে হবে, ঢিলেঢালা জামা পরাতে হবে, সু-জুতা না পরালেই ভালো হয়। আর তাদের কোনো অবস্থাতেই খেলার মাঠে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। স্কুলে এসে শিশুরা পিপাসা মেটাতে রাস্তাঘাটের লেবুর শরবত, আখের শরবত, আইসক্রিমসহ নানা ধরনের পানীয় খেতে চাইবে, মোটেও সেগুলো তাদের খেতে দেওয়া যাবে না। কারণ, এগুলোতে ব্যবহার করা পানি বিশুদ্ধ কি না, আমরা কেউই জানি না। শুধু পানি আর শরবতই নয়, এই সময়টাতে বাইরের সব ধরনের খোলা খাবার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হলে দায় সরকারের
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, কোনো নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রার জন্য সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যায় না। তিনি বলেন, কোনো কোনো জেলায় যদি তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে যায়, সেখানে বিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনা করে সেই জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারেন।
গতকাল এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি বা তারও বেশি হলে করণীয় কি হবে? জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও একটি নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেটি তারাও সমন্বয় করেন। এলাকাভিত্তিক যদি ৪২ ডিগ্রির ওপর তাপমাত্রা যায়, তা হলে সেখানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন, তারা আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনা করে সেই জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারেন এবং সময়সীমাও পরিবর্তন করতে পারেন। এটি অঞ্চলভেদে।