প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রগুলো করছে বাজার নিয়ন্ত্রণ

#
news image

চিনির দাম কমাতে তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফায় কমানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। এর পরও কমেনি দাম। সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি আমদানি শুল্ক কমানোর পর উল্টো দাম বেড়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে পণ্যটির মণপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, আসন্ন রোজা ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে বাড়ছে দাম।

জানা যায়, দেশে বর্তমানে সরবরাহ সংকট না থাকলেও কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ রমজানকে সামনে রেখে বাড়তি মুনাফা পেতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দাম বাড়ানোর এই প্রবণতা আগামী ১১ মার্চ থেকে শুরু হতে হওয়া পবিত্র রমজানে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে রোজার মাসে বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আসন্ন রমজান মাসকে ঘিরে প্রয়োজনীয় সব নিত্যপণ্য নিয়ে চলছে কারসাজি। রমজান মাস আসার আগেই ব্যবসায়ীদের ‘রোজার ব্যবসা’ এখনই শুরু হয়ে গেছে। সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষ নানা আশ্বাস দিয়েছে; বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। দফায় দফায় অভিযান, জরিমানা এমনকি শুল্ক কমিয়েও নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাজার। পণ্যের দাম না কমে উল্টো বাড়ছে। সরকারের হুঁশিয়ারিতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

নিত্যপণ্যের বাজারের শীর্ষ সিন্ডিকেট বহালই রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ যথাযথ নয়। ডলার সংকটে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এতদিন ভোগ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারেনি। তখন সরকার নজর দেয়নি। ফলে রমজানের এসব ভোগ্যপণ্য আমদানির সুযোগ নিয়েছেন সীমিত কয়েকজন আমদানিকারক। রমজানের আগমুহূর্তে আমদানিতে শুল্ককর কমানোর অর্থ অনেকটা বড় আমদানিকারকদের বাড়তি সুবিধা দেয়ার মতো বলে মন্তব্য করেন তারা।

সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো ইতিবাচক হলেও ভোক্তাপর্যায় পর্যন্ত তার সুফল পৌঁছায় না। তদারকি, অভিযান, জরিমানায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বড়রা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। চাহিদা জোগানের সূত্র মেনে নয়, প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রগুলোই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে করে সিন্ডিকেটের খপ্পর থেকে রেহাই পাঁচ্ছেন না ভোক্তারা।

কয়েক বছর ধরে দেশীয় চিনি উৎপাদন কম হচ্ছে। সারা দেশে বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশনের নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে চার হাজার ডিলারকে প্রায় প্রতি মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চিনি সরবরাহ দিলেও বর্তমানে সেটি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। কয়েক মাস সরবরাহ বন্ধ থাকার পর গত ১ জানুয়ারি ডিলারপ্রতি ৫০০ কেজি করে চিনি বরাদ্দ দেয়া হয়। কেজিপ্রতি ১২৫ টাকা পাইকারি দরে দেয়া ওই চিনি খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৩২ টাকা দামে বিক্রির নির্দেশনা দেয়া আছে বরাদ্দপত্রে।

সীমিত পরিমাণ বরাদ্দের কারণে উত্তরবঙ্গের মিলগুলো থেকে চিনি সংগ্রহ ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় খুচরা পর্যায়ে এসে দেশীয় মিলের এসব চিনি উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। ফলে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকা চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশীয় মিলগুলো কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। সরকারের উচিত দেশীয় মিলের উৎপাদন বৃদ্ধি কিংবা আমদানি বাড়িয়ে ডিলার পর্যায়ে চিনি সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়া।’ এ ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিদপ্তর, বাণিজ্য বা প্রতিযোগিতা কমিশনের আরো সক্রিয় ভূমিকা দরকার।

এ ছাড়া উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে, পাশাপাশি বাজার মনিটরিং আরো শক্তিশালী করতে হবে। রমজান আসার আগেই এ বিষয়টি নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্রেতাদের প্রতারণা থেকে বাঁচাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।

নাগরিক ডেস্ক

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪,  11:07 PM

news image

চিনির দাম কমাতে তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফায় কমানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। এর পরও কমেনি দাম। সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি আমদানি শুল্ক কমানোর পর উল্টো দাম বেড়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে পণ্যটির মণপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, আসন্ন রোজা ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে বাড়ছে দাম।

জানা যায়, দেশে বর্তমানে সরবরাহ সংকট না থাকলেও কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ রমজানকে সামনে রেখে বাড়তি মুনাফা পেতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দাম বাড়ানোর এই প্রবণতা আগামী ১১ মার্চ থেকে শুরু হতে হওয়া পবিত্র রমজানে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে রোজার মাসে বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আসন্ন রমজান মাসকে ঘিরে প্রয়োজনীয় সব নিত্যপণ্য নিয়ে চলছে কারসাজি। রমজান মাস আসার আগেই ব্যবসায়ীদের ‘রোজার ব্যবসা’ এখনই শুরু হয়ে গেছে। সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষ নানা আশ্বাস দিয়েছে; বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। দফায় দফায় অভিযান, জরিমানা এমনকি শুল্ক কমিয়েও নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাজার। পণ্যের দাম না কমে উল্টো বাড়ছে। সরকারের হুঁশিয়ারিতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

নিত্যপণ্যের বাজারের শীর্ষ সিন্ডিকেট বহালই রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ যথাযথ নয়। ডলার সংকটে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এতদিন ভোগ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারেনি। তখন সরকার নজর দেয়নি। ফলে রমজানের এসব ভোগ্যপণ্য আমদানির সুযোগ নিয়েছেন সীমিত কয়েকজন আমদানিকারক। রমজানের আগমুহূর্তে আমদানিতে শুল্ককর কমানোর অর্থ অনেকটা বড় আমদানিকারকদের বাড়তি সুবিধা দেয়ার মতো বলে মন্তব্য করেন তারা।

সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো ইতিবাচক হলেও ভোক্তাপর্যায় পর্যন্ত তার সুফল পৌঁছায় না। তদারকি, অভিযান, জরিমানায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বড়রা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। চাহিদা জোগানের সূত্র মেনে নয়, প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রগুলোই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে করে সিন্ডিকেটের খপ্পর থেকে রেহাই পাঁচ্ছেন না ভোক্তারা।

কয়েক বছর ধরে দেশীয় চিনি উৎপাদন কম হচ্ছে। সারা দেশে বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশনের নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে চার হাজার ডিলারকে প্রায় প্রতি মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চিনি সরবরাহ দিলেও বর্তমানে সেটি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। কয়েক মাস সরবরাহ বন্ধ থাকার পর গত ১ জানুয়ারি ডিলারপ্রতি ৫০০ কেজি করে চিনি বরাদ্দ দেয়া হয়। কেজিপ্রতি ১২৫ টাকা পাইকারি দরে দেয়া ওই চিনি খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৩২ টাকা দামে বিক্রির নির্দেশনা দেয়া আছে বরাদ্দপত্রে।

সীমিত পরিমাণ বরাদ্দের কারণে উত্তরবঙ্গের মিলগুলো থেকে চিনি সংগ্রহ ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় খুচরা পর্যায়ে এসে দেশীয় মিলের এসব চিনি উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। ফলে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকা চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশীয় মিলগুলো কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। সরকারের উচিত দেশীয় মিলের উৎপাদন বৃদ্ধি কিংবা আমদানি বাড়িয়ে ডিলার পর্যায়ে চিনি সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়া।’ এ ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিদপ্তর, বাণিজ্য বা প্রতিযোগিতা কমিশনের আরো সক্রিয় ভূমিকা দরকার।

এ ছাড়া উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে, পাশাপাশি বাজার মনিটরিং আরো শক্তিশালী করতে হবে। রমজান আসার আগেই এ বিষয়টি নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্রেতাদের প্রতারণা থেকে বাঁচাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।