অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশের ‘মানুষের হক’, আর এই ‘হক’ তিনি ফিরিয়ে আনতে চান। যারা দেশ থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে সম্পদ গড়েছেন, তারা বাজেটে প্রস্তাবিত সুযোগ নিয়ে সেই টাকা ফিরিয়ে আনবেন বলেই তার বিশ্বাস।
জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করার পরদিন শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানেই তার এ ব্যাখ্যা আসে।
এ বাজেটের বিশাল ব্যয় মেটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহে অর্থমন্ত্রী নতুন একটি পথ খুঁজে বের করেছেন। বিদেশ থাকা সম্পদের ‘দায়মুক্তির’ দিয়ে তিনি তা দেশে আনার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর ফলে ১৫ থেকে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেশে সরকারের খাতায় বৈধ আয়ের তালিকায় যুক্ত করা যাবে, সেই অর্থ দেশেও আনা যাবে। ওই আয়ের উৎসব জানতে চাওয়া হবে না।
এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা হচ্ছে নানা মহল থেকে। অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান একে দেখছেন টাকা পাচারের ‘এক ধরনের স্বীকৃতি’ হিসেবে। আর সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এ প্রস্তাব নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, অর্থনৈতিকভাবে যৌক্তিক নয় এবং রাজনৈতিকভাবেও জনগণের কাছে উপস্থাপনযোগ্য নয়।
শুক্রবার বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও এ বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। উত্তরে মুস্তফা কামাল বলেন, টাকা যদি পাচার হয়ে থাকে, সরকার তা ফেরত আনার চেষ্টা করছে।
“যেটা পাচার হয়ে গেছে সেটা এদেশের মানুষের হক। যদি বাধা দিই তবে আসবে না। যদি না আসে আমাদের লাভটা কী? আমরা চাই, অন্য দেশ যা করে, আমরা তাই করতে যাচ্ছি। ১৭টা দেশ অ্যামনেস্টি দিয়ে টাকা ফেরত আনছে।”
এরকম ব্যবস্থা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, মালয়েশিয়া, নরওয়েতেও আছে বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “টাকার একটা ধর্ম আছে বা বৈশিষ্ট্য আছে। যেখানে রিটার্ন বেশি সেখানে চলে যায়। টাকা যারা পাচার করে সুটকেসে করে পাচার করে না। এখন ডিজিটাল যুগ। বিভিন্ন ভাবে পাচার করে।
“কখনো কখনো বিভিন্ন কারণে টাকা চলে যায়। আমি টাকা পাচার হয় না কখনও বলি না। প্রমাণ ছাড়া বললে মামলায় আসে না। এই মুহূর্তে দেশের ভিতর যারা এসব কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কোর্টে মামলা আছে।“
মুস্তফা কামাল বলেন, “সরকার তার কাজ করে। আপনারা জানেন, আমাদের প্রতিবন্ধ্বকতা আছে। আপনারা মিডিয়াতে রিপোর্ট করলেই সবসময় ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমাদের মাধ্যম যারা আছে, তাদের আমরা ব্যবহার করি। তাদের মাধ্যমে বিচারগুলো করি।”