এ সংক্রান্ত একটি রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে এ নির্দেশনা দেয়।
একত্রিশ ও ১৩ বছর আগের এ দুই ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াও রায়ে বলা হয়, ভেজাল ওষুধের কারণে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ঔষধ প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না।
ক্ষতিপূরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও ব্যক্তিদের থেকে আদায় করতে অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এমন অপরাধের ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ধারা অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
১৯৯১ সালে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ৭৬ শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এরপর ২০০৯ সালে রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে আরও ২৮ শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগে মামলা হয়।
এ দুই ঘটনা নিয়ে ওই সময় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করে ঘটনার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি এবং যথাযথ নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
এ রিট আবেদনের বিষয়ে তখন শুনানি শেষে রুল জারি করে সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যাও নেয় আদালত। ইতোমধ্যে দুই মামলারই বিচারিক আদালতে রায় ঘোষণা হয়েছে।
এইচআরপিবির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ, এখলাছ উদ্দিন ভূইয়া, সঞ্জয় মণ্ডল।
মনজিল মোরসেদ বলেন, “আমরা আদালতে বলেছি- নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হল বেঁচে থাকার অধিকার, কিন্তু ভেজাল ওষুধের কারণে অনেককে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলেও তা প্রায়ই কার্যকর হয় না। আদালত আমাদের ব্যাখ্যা শুনে আজকে একটি সুন্দর রায় দিয়েছেন।”
রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ২০০৯ সালের জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশে ২৮টি শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকার ড্রাগ আদালতে একটি মামলা করেন। এতে রীড ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
পরে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ঔষধ আদালত এ মামলার রায় দেয়। রায়ে পাঁচ আসামির সবাই খালাস পেয়ে যান। বাকি চার আসামি হলেন- মিজানুরের স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আব্দুল গণি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক।
এ ঘটনার আরও দুই দশক আগে ১৯৯১ সালে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ৭৬ শিশু মারা যাওয়ার অভিযাগ উঠে।
ওই সময় অ্যাডফ্লেমের প্যারাসিটামলে বিষাক্ত উপাদান থাকায় বহু শিশু কিডনি সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে অন্তত ৭৬ জনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় মামলা হলে ১৯৯৩ সালে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারাসিটামল সিরাপে ডাই-ইথিলিন গ্লাইকলের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
ওই বছর জানুয়ারিতেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেন ওষুধ প্রশাসনের পরিদর্শক আবুল খায়ের চৌধুরী।
ড্রাগ আদালতের বিচারক ২০১৪ সালের ২২ জুলাই ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের অন্যতম মালিক, ব্যবস্থাপকসহ তিনজনের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়।