মতপ্রকাশে স্বাধীনতা থাকা দরকার
নাগরিক ডেস্ক
১২ মার্চ, ২০২৩, 4:49 PM
মতপ্রকাশে স্বাধীনতা থাকা দরকার
ইতিহাসে মতপ্রকাশের অধিকার কেবল ক্ষমতাসীন অভিজাতদের জন্য একচেটিয়াভাবে সংরক্ষিত ছিল। মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার এবং পরবর্তীকালে আমেরিকান স্বাধীনতা, ফরাসী বিপ্লবের মাধ্যমে সকলের জন্য মতপ্রকাশের অধিকারের ধারণা সামনে আসে এবং ১৯৪৮ সালের সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের মাধ্যমে তা সাধারণ স্বীকৃতিলাভ করে।
‘বর্তমানে ভিন্ন ধর্ম তো বটেই, নিজের আচরিত ধর্ম নিয়েও কোনো ভিন্নমত সহ্য করা হয় না। ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। সরকার দাবি করছে, জনগণের ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং তরুণরা যাতে বিপথে না যেতে পারে এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হয় তার জন্য এরকম আইনের প্রয়োজন রয়েছে। তাতে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা কমছে না। সরকারের উচিত সেই ভয় তাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া এবং এটা মাথায় রাখা যে, কোনো আইনের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করা মানেই সেই আইনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা নয়।’ বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ আরও কড়াকড়ি করার পথে হাঁটছে সরকার। এর ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম এবং ওটিটিসহ ইন্টারনেটভিত্তিক বিনোদনমূলক প্ল্যাটফর্মে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ আরও সংকুচিত হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আলাদা দুটি খসড়া নীতিমালা এমন আশঙ্কাই তৈরি করেছে। এই দুটি খসড়া নীতিমালায় এমন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বহুল আলোচিত-সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বাংলাদেশে নীতিমালার নামে নানা রকম বিধিনিষেধ বা বাধ্যবাধকতা আরোপ করার বিষয়টি নতুন কিছু নয়।
কিন্তু একদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের কথা বলা, আবার সেই আইনের বিভিন্ন ধারার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করা-এতে সরকারের উদ্দেশ্য ও অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। সরকারের এই দ্বিমুখী আচরণ দেখে মনে হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থেকে সহসাই আমাদের মুক্তি নেই, বরং নানা রকম নিয়মনীতির মোড়কে আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরও বেশি হুমকির মুখে পড়ছে। সাইবার ক্রাইমসহ ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ, হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধের উদ্দেশ্যের কথা বলে প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তি আইন এবং পরে তা সংশোধন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। এরইমধ্যে আইনটি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটি ‘আতঙ্ক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই আইনে এমন অনেক বিষয়কে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা খুবই আপেক্ষিক এবং যেগুলোর কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আইনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত-ভাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আইন প্রণেতা ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সুতরাং সবাইকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে তাহলে এ অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব।
নাগরিক ডেস্ক
১২ মার্চ, ২০২৩, 4:49 PM
ইতিহাসে মতপ্রকাশের অধিকার কেবল ক্ষমতাসীন অভিজাতদের জন্য একচেটিয়াভাবে সংরক্ষিত ছিল। মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার এবং পরবর্তীকালে আমেরিকান স্বাধীনতা, ফরাসী বিপ্লবের মাধ্যমে সকলের জন্য মতপ্রকাশের অধিকারের ধারণা সামনে আসে এবং ১৯৪৮ সালের সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের মাধ্যমে তা সাধারণ স্বীকৃতিলাভ করে।
‘বর্তমানে ভিন্ন ধর্ম তো বটেই, নিজের আচরিত ধর্ম নিয়েও কোনো ভিন্নমত সহ্য করা হয় না। ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। সরকার দাবি করছে, জনগণের ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং তরুণরা যাতে বিপথে না যেতে পারে এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হয় তার জন্য এরকম আইনের প্রয়োজন রয়েছে। তাতে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা কমছে না। সরকারের উচিত সেই ভয় তাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া এবং এটা মাথায় রাখা যে, কোনো আইনের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করা মানেই সেই আইনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা নয়।’ বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ আরও কড়াকড়ি করার পথে হাঁটছে সরকার। এর ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম এবং ওটিটিসহ ইন্টারনেটভিত্তিক বিনোদনমূলক প্ল্যাটফর্মে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ আরও সংকুচিত হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আলাদা দুটি খসড়া নীতিমালা এমন আশঙ্কাই তৈরি করেছে। এই দুটি খসড়া নীতিমালায় এমন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বহুল আলোচিত-সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বাংলাদেশে নীতিমালার নামে নানা রকম বিধিনিষেধ বা বাধ্যবাধকতা আরোপ করার বিষয়টি নতুন কিছু নয়।
কিন্তু একদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের কথা বলা, আবার সেই আইনের বিভিন্ন ধারার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করা-এতে সরকারের উদ্দেশ্য ও অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। সরকারের এই দ্বিমুখী আচরণ দেখে মনে হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থেকে সহসাই আমাদের মুক্তি নেই, বরং নানা রকম নিয়মনীতির মোড়কে আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরও বেশি হুমকির মুখে পড়ছে। সাইবার ক্রাইমসহ ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ, হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধের উদ্দেশ্যের কথা বলে প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তি আইন এবং পরে তা সংশোধন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। এরইমধ্যে আইনটি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটি ‘আতঙ্ক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই আইনে এমন অনেক বিষয়কে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা খুবই আপেক্ষিক এবং যেগুলোর কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আইনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত-ভাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আইন প্রণেতা ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সুতরাং সবাইকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে তাহলে এ অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব।