অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভারে অসহনীয় বাংলাদেশ
নাগরিক ডেস্ক
০৮ মার্চ, ২০২৩, 10:06 AM
অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভারে অসহনীয় বাংলাদেশ
রাষ্ট্র গঠনের একটি মৌল উপাদান জনগণ। জনগণ ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। পৃথিবীর মাঝে বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্রায়তনের দেশ। এ দেশটির আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার তবে অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভার যেন অসহনীয় হয়ে উঠেছে দেশটি। বহুবিধ কারণেই জনসংখ্যা সমস্যা বাংলাদেশে জটিল সামাজিক সমস্যার আকার ধারণ করছে।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কোন একক কারণ দায়ী নয়, রয়েছে বহু কারণ। দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, জলবায়ু, শিক্ষার অভাব, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, পুত্র সন্তানের আকাঙ্খা, খাদ্যাভ্যাস প্রভৃতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বর্তমানে দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,১১৯ জন মানুষ বাস করে। ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯৭৬ জন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহ-গণনা ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশে জনসংখ্যা বর্তমানে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। বর্তমানে জনসংখ্যা পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। সরকারি হিসেবে ১১ বছরে দেশের জনসংখ্যা দুই কোটি ১১ লাখ বেড়ে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন হয়েছে।
যে কোনে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সে দেশের জনসংখ্যার ওপর নির্ভর করে। দেশের সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধার চেয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি হলে জনসংখ্যাস্ফীতি দেখা দেয় এবং দেশকে ক্রমেই জনবিস্ফোরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন শুমারিতে দেশের ৭ বছরের বেশি বয়সীদের সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ২০১১ সালের শুমারিতে এই হার ছিল ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ১০ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বিবাহিত, ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ অবিবাহিত, ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বিধবা/বিপতিœক, ০.৪২ শতাংশ তালাক-প্রাপ্ত এবং দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন ০.৩৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশের পল্লী এলাকার জনসংখ্যা ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের শুমারিতে ২০১১ সালে গ্রামাঞ্চলের জনসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১১ কোটি ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন, আর শহরে এখন বাস করেন ৫ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭২ জন বা মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের শুমারিতে শহরের জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৩ জন।
অধিক জনসংখ্যার কারণে দেশের খাদ্য চাহিদা মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছর বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। এছাড়াও অধিক জনসংখ্যার কারণে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। জনসংখ্যার বিস্ফোরণের কারণে বাংলাদেশ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র হতে বের হতে পারছে না। একক ও স্বল্পকালীন কর্মসূচির মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য ব্যাপক ও বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে জনসংখ্যাকে জলসম্পদে পরিণত করতে হবে- এজন্য প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা। আমাদেরকে ভাবতে হবে যে, কেবল আমরা নই আমাদের বংশধরেরাও যেন খেতে ও পরে ভালো থাকতে পারে। যদিও একসময় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্য উন্নয়নে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি কেড়েছিল।
কিন্তু সেই সাফল্য বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারছে না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম যেভাবে বাংলাদেশে গুরুত্ব হারাচ্ছে, তাতে দেশটির সাফল্য ভেস্তে যেতে পারে। তাই পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনায়ও এখন পরিবর্তন আনা দরকার। তার চেয়ে যেটা বেশি দরকার, তা হলো স্বল্প মেয়াদী পদ্ধতির বদলে দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি বা স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণে সবাইকে উৎসাহিত করা এবং দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গরীবদের জন্য। এই ভুলটিও ভেঙ্গে দিতে হবে।”
নাগরিক ডেস্ক
০৮ মার্চ, ২০২৩, 10:06 AM
রাষ্ট্র গঠনের একটি মৌল উপাদান জনগণ। জনগণ ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। পৃথিবীর মাঝে বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্রায়তনের দেশ। এ দেশটির আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার তবে অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভার যেন অসহনীয় হয়ে উঠেছে দেশটি। বহুবিধ কারণেই জনসংখ্যা সমস্যা বাংলাদেশে জটিল সামাজিক সমস্যার আকার ধারণ করছে।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কোন একক কারণ দায়ী নয়, রয়েছে বহু কারণ। দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, জলবায়ু, শিক্ষার অভাব, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, পুত্র সন্তানের আকাঙ্খা, খাদ্যাভ্যাস প্রভৃতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বর্তমানে দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,১১৯ জন মানুষ বাস করে। ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯৭৬ জন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহ-গণনা ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশে জনসংখ্যা বর্তমানে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। বর্তমানে জনসংখ্যা পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। সরকারি হিসেবে ১১ বছরে দেশের জনসংখ্যা দুই কোটি ১১ লাখ বেড়ে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন হয়েছে।
যে কোনে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সে দেশের জনসংখ্যার ওপর নির্ভর করে। দেশের সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধার চেয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি হলে জনসংখ্যাস্ফীতি দেখা দেয় এবং দেশকে ক্রমেই জনবিস্ফোরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন শুমারিতে দেশের ৭ বছরের বেশি বয়সীদের সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ২০১১ সালের শুমারিতে এই হার ছিল ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ১০ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বিবাহিত, ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ অবিবাহিত, ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বিধবা/বিপতিœক, ০.৪২ শতাংশ তালাক-প্রাপ্ত এবং দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন ০.৩৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশের পল্লী এলাকার জনসংখ্যা ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের শুমারিতে ২০১১ সালে গ্রামাঞ্চলের জনসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১১ কোটি ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন, আর শহরে এখন বাস করেন ৫ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭২ জন বা মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের শুমারিতে শহরের জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৩ জন।
অধিক জনসংখ্যার কারণে দেশের খাদ্য চাহিদা মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছর বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। এছাড়াও অধিক জনসংখ্যার কারণে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। জনসংখ্যার বিস্ফোরণের কারণে বাংলাদেশ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র হতে বের হতে পারছে না। একক ও স্বল্পকালীন কর্মসূচির মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য ব্যাপক ও বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে জনসংখ্যাকে জলসম্পদে পরিণত করতে হবে- এজন্য প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা। আমাদেরকে ভাবতে হবে যে, কেবল আমরা নই আমাদের বংশধরেরাও যেন খেতে ও পরে ভালো থাকতে পারে। যদিও একসময় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্য উন্নয়নে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি কেড়েছিল।
কিন্তু সেই সাফল্য বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারছে না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম যেভাবে বাংলাদেশে গুরুত্ব হারাচ্ছে, তাতে দেশটির সাফল্য ভেস্তে যেতে পারে। তাই পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনায়ও এখন পরিবর্তন আনা দরকার। তার চেয়ে যেটা বেশি দরকার, তা হলো স্বল্প মেয়াদী পদ্ধতির বদলে দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি বা স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণে সবাইকে উৎসাহিত করা এবং দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গরীবদের জন্য। এই ভুলটিও ভেঙ্গে দিতে হবে।”