নদী ভরাট বন্ধে এখনি পদক্ষেপ নিতে হবে

#
news image

নদীমাতৃক বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ইছামতী, কর্ণফুলী ছাড়াও অসংখ্য ছোট-বড় নদী আছে। নদীর প্রাণোচ্ছলভাবে বয়ে চলার মাঝেই ফুটে ওঠে এদেশের আসল সৌন্দর্য। আর সেই নদীকেই তার নিজস্ব সৌন্দর্য হারাতে আমরা বাধ্য করি। আমরা আমাদের প্রয়োজনের স্বার্থে অনবরতভাবে নদী ভরাট করে চলেছি, যার ফলে নদী তার স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে। এসব নদী আস্তে আস্তে মানুষের দখলের কারণে মরে যাচ্ছে। দেশে নদী দখল, পাহাড় ধ্বংস ও নির্বিচারে গাছ কাটা চলছেই।

অবস্থাভেদে স্থানীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালীদের নামে-বেনামে চলছে পরিবেশ ধ্বংসের এই কাজ। দখল-দূষণের পাশাপাশি নদী ভরাট এখন সহ্যের বাইরে চলে গিয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও সরকার তা বাস্তবায়ন করছে না। নদী রক্ষার জন্য একটি কর্মকৌশল প্রণয়নে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও, দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ খুবই উদাসীন। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় সীমানা পিলার বসানোর পরও বুড়িগঙ্গা নদীর ২ তীরের প্রায় ১০০ একর জায়গা মাটি ভরাট অবস্থায় রয়ে গেছে।

দেশে একটা প্রবাদ আছে,নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে কিন্তু এটি মোটেও কথার কথা নয়, পুরোপুরি বাস্তবভিত্তিক এবং এর পেছনে অনেক বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। নদী ভরাট হয়ে গেলে উজানের পানি ও বৃষ্টির পানি গ্রাম-শহর-ফসলের মাঠ ভাসিয়ে বন্যায় পরিণত হবে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাবে। বর্ষা শেষ হতেই মৃতপ্রায় নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়বে।

ভূগর্ভে যথেষ্ট পানি প্রবেশ করতে পারবে না। পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাবে ফলে চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্রমে মরুকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে। আবার ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে গেলে দেশে ঘনঘন ভূমিকম্প সৃষ্টি হবে। নদীর ধারে গড়ে উঠেছে কলকারখানা, দেওয়া হচ্ছে শত শত বাঁধ। সবাই যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করছে। নদী ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালী থেকে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ যে একটি নদীমাতৃক দেশ এই কথা এখন আর বলার কোন উপায় নেই। নদীমাতৃক থেকে দেশ এখন নদীবৈরীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার।

বর্তমানে পলি ও বালি দ্বারা ভরাট হতে হতে সেই নৌপথ কমতে কমতে চার হাজার কিলোমিটারে ঠেকেছে। নদীর নাব্য রক্ষার জন্য বছরে ৭০-৮০ লাখ ঘনমিটার পলি-বালি ড্রেজিং বা খনন করার প্রয়োজন হলেও বিআইডব্লিউটিএ মাত্র ৩০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করতে পারে। এই নদী ভরাট বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে না। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে নদনদী বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নিতে হবে।

নদীর সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখলদার চিহ্নিতকরণ, দখলদার উচ্ছেদ ও নদী উদ্ধারে কমিশন ৩১টি সুপারিশ করেছে। যথাযথ নির্দেশনা মেনে আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে এবং অবৈধ দখলদার চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি নদ ও নদীর প্রতি সবার মমত্ববোধ থাকতে হবে তাই সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও সচেতন হতে হবে।

নাগরিক ডেস্ক

০৬ মার্চ, ২০২৩,  11:04 AM

news image

নদীমাতৃক বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ইছামতী, কর্ণফুলী ছাড়াও অসংখ্য ছোট-বড় নদী আছে। নদীর প্রাণোচ্ছলভাবে বয়ে চলার মাঝেই ফুটে ওঠে এদেশের আসল সৌন্দর্য। আর সেই নদীকেই তার নিজস্ব সৌন্দর্য হারাতে আমরা বাধ্য করি। আমরা আমাদের প্রয়োজনের স্বার্থে অনবরতভাবে নদী ভরাট করে চলেছি, যার ফলে নদী তার স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে। এসব নদী আস্তে আস্তে মানুষের দখলের কারণে মরে যাচ্ছে। দেশে নদী দখল, পাহাড় ধ্বংস ও নির্বিচারে গাছ কাটা চলছেই।

অবস্থাভেদে স্থানীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালীদের নামে-বেনামে চলছে পরিবেশ ধ্বংসের এই কাজ। দখল-দূষণের পাশাপাশি নদী ভরাট এখন সহ্যের বাইরে চলে গিয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও সরকার তা বাস্তবায়ন করছে না। নদী রক্ষার জন্য একটি কর্মকৌশল প্রণয়নে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও, দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ খুবই উদাসীন। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় সীমানা পিলার বসানোর পরও বুড়িগঙ্গা নদীর ২ তীরের প্রায় ১০০ একর জায়গা মাটি ভরাট অবস্থায় রয়ে গেছে।

দেশে একটা প্রবাদ আছে,নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে কিন্তু এটি মোটেও কথার কথা নয়, পুরোপুরি বাস্তবভিত্তিক এবং এর পেছনে অনেক বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। নদী ভরাট হয়ে গেলে উজানের পানি ও বৃষ্টির পানি গ্রাম-শহর-ফসলের মাঠ ভাসিয়ে বন্যায় পরিণত হবে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাবে। বর্ষা শেষ হতেই মৃতপ্রায় নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়বে।

ভূগর্ভে যথেষ্ট পানি প্রবেশ করতে পারবে না। পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাবে ফলে চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্রমে মরুকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে। আবার ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে গেলে দেশে ঘনঘন ভূমিকম্প সৃষ্টি হবে। নদীর ধারে গড়ে উঠেছে কলকারখানা, দেওয়া হচ্ছে শত শত বাঁধ। সবাই যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করছে। নদী ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালী থেকে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ যে একটি নদীমাতৃক দেশ এই কথা এখন আর বলার কোন উপায় নেই। নদীমাতৃক থেকে দেশ এখন নদীবৈরীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার।

বর্তমানে পলি ও বালি দ্বারা ভরাট হতে হতে সেই নৌপথ কমতে কমতে চার হাজার কিলোমিটারে ঠেকেছে। নদীর নাব্য রক্ষার জন্য বছরে ৭০-৮০ লাখ ঘনমিটার পলি-বালি ড্রেজিং বা খনন করার প্রয়োজন হলেও বিআইডব্লিউটিএ মাত্র ৩০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করতে পারে। এই নদী ভরাট বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে না। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে নদনদী বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নিতে হবে।

নদীর সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখলদার চিহ্নিতকরণ, দখলদার উচ্ছেদ ও নদী উদ্ধারে কমিশন ৩১টি সুপারিশ করেছে। যথাযথ নির্দেশনা মেনে আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে এবং অবৈধ দখলদার চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি নদ ও নদীর প্রতি সবার মমত্ববোধ থাকতে হবে তাই সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও সচেতন হতে হবে।