ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ

#
news image

ডিজিটাল বাংলাদেশ’ একটি প্রত্যয়, একটি স্বপ্ন। বিরাট এক পরিবর্তন ও ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে। গ্লোবাালাইজেশনের এই যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি সময়োপযোগী প্রগতিশীল পদক্ষেপ। গ্লোবাালাইজেশন বা বিশ্বায়ন হলো বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও পরিবেশের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দৃষ্টিকোণ থেকে একই দিকে উত্তরণ। আর সেই বৈশ্বিক উত্তরণের প্রেক্ষাপটে, তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক অঙ্গনে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর ধারনা একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সমগ্র বাংলাদেশের কর্মকান্ডকে আধুনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সিস্টেমের মাধ্যমে অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিয়ে কর্মকান্ডকে গতিশীল করায় হলো ডিজিটালাইজেশনের মূল লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি প্রেরণাদায়ী অঙ্গীকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেন। এ রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে বাংলাদেশ বিপ্লব সাধন করেছে। যে গতিতে বিশ্বে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে, তা সত্যিই অভাবনীয় কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় এবং আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ডিজিটাল অগ্রগতি থেকে একটুও পিছিয়ে নেই। অদম্যগতিতে আমরা চলছি তথ্যপ্রযুক্তির এক মহাসড়ক ধরে। বর্তমান সময়ে এসে আমরা প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটালাইজেশনের সুফল ভোগ করছি।

ডিজিটাল বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞান, কারিগরি ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের ভিত যাঁর হাত ধরে রচিত হয়েছিল, তা তুলে ধরাও আজ প্রাসঙ্গিক। ডিজিটাল বিপ্লবের শুরু ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে। ইন্টারনেটের সঙ্গে ডিভাইসের যুক্ততা মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে বিশ্বে উন্নয়ন দারুণ গতি পায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। কারণ, তিনি গড়তে চেয়েছিলেন সোনার বাংলা। তাঁর এ স্বপ্নের বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সময় পান মাত্র সাড়ে তিন বছর। এ সময়ে প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ এমন কোনো খাত নেই, যেখানে পরিকল্পিত উদ্যোগ ও কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করেননি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৫টি সংস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভ করে। আর্থসামাজিক জরিপ, আবহাওয়ার তথ্য আদান-প্রদানে আর্থ-রিসোর্স টেকনোলজি স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হয় তাঁরই নির্দেশে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইটের আর্থ স্টেশনের উদ্বোধন করেন। বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা ও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদার মতো বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রণয়ন এবং শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার করার লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা ছিল তাঁর অত্যন্ত সুচিন্তিত ও দূরদর্শী উদ্যোগ।বঙ্গবন্ধুর এই দূরদর্শী চিন্তার প্রতিফলন দেখতে পাই বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা চিন্তায়।২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর, যখন বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা গড়া’র দৃঢ় অঙ্গীকারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন রূপকল্প–২০২১’ ঘোষণা করেন।‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ‘ ধারণাটি তখন থেকেই সবার মনে গেঁথে যায়।প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সবার জন্য কানেকটিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশন—এ চারটি সুনির্দিষ্ট প্রধান স্তম্ভ নির্ধারণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন হয়েছে।সমগ্র দেশ শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। যেখানে ৫৬ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল, আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও সুপরামর্শে ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি এবং মুঠোফোন সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটির ওপর।

জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৮ হাজার ৮০০টি ডিজিটাল সেন্টারে ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা কাজ করছেন, যেখানে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর ফলে এক দিকে নারী-পুরুষের বৈষম্য, অপর দিকে ধনী ও দরিদ্রের এবং গ্রাম ও শহরের বৈষম্য দূর হয়েছে। বর্তমানে ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৭০ লাখের অধিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ডিজিটাল সেন্টার থেকে নাগরিকেরা প্রায় ৮০ কোটির অধিক সেবা গ্রহণ করেছেন। ফলে নাগরিকদের ৭৮ দশমিক ১৪ শতাংশ কর্মঘণ্টা, ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ ব্যয় এবং ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ যাতায়াত সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল সেন্টার সাধারণ মানুষের জীবনমান সহজ করার পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দিয়েছে। মানুষ এখন বিশ্বাস করে, ঘরের কাছেই সব ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব। মানুষের এই বিশ্বাস অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলায় সবচেয়ে বড় পাওয়া।

পেপারলেস কমিউনিকেশন চালু করার লক্ষ্যে সরকার ই-নথি চালু করে। চালু হওয়ার পর থেকে ই-নথিতে এ পর্যন্ত দুই কোটি চার লাখের বেশি ফাইলের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ই-নামজারি সিস্টেমে আগত ৫২ লাখের অধিক আবেদন মধ্যে ৪৫ দশমিক ৬৮ লাখের বেশি আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়েছে অনলাইনে। বিশ্বে অনলাইন শ্রমশক্তিতে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক ও অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই) সমীক্ষামতে, অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে দ্বিতীয়। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ প্রশিক্ষিত ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং খাত থেকে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছেন, যারা কিনা কোনো দিন আমেরিকায় যাননি, কোনো দিন ইংল্যান্ডে যাননি। কিন্তু প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওই দেশের কোম্পানিতে বাংলাদেশের তরুণেরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও আউটসোর্সিং করে হাজার হাজার–লাখ লাখ ডলার আয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। ইতিমধ্যে নির্মিত ১০টি হাই-টেক/আইটি পার্কে বিনিয়োগের পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ১৮ বছর আগে ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে তা ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সরকারের লক্ষ্য, ২০২৫ সালে আইসিটি রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে আইসিটি খাতে কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত করা। ১০৯টি হাইটেক/আইটি পার্কে/শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারের (১৭টি বেসরকারি আইটি পার্ক) মধ্যে নির্মিত ১০টি পার্কে দেশি-বিদেশি ১৯২টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রযুক্তিশিক্ষায় পারদর্শী করে তুলতে এবং ডিজরাপ্টেড টেকনোলজি সম্পর্কে ধারণা দিতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৩ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টি বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, ৫০০টি জয় ডি-সেট সেন্টার, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ৩৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে।

আমরা ই-নথি, জাতীয় তথ্য বাতায়ন, জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩, ই–নামজারি, আরএস খতিয়ান সিস্টেম, কৃষি বাতায়ন, ই–চালান, এক পে, এক শপ, এক সেবা, কিশোর বাতায়ন, মুক্ত পাঠ, শিক্ষক বাতায়ন, আই-ল্যাব, করোনা পোর্টাল, মা টেলি হেলথ সার্ভিস, প্রবাসবন্ধু কলসেন্টার, ভার্চ্যুয়াল কোর্ট সিস্টেম, ডিজিটাল ক্লাসরুমসহ অসংখ্য সেবা চালু করেছি। এর মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে। ফলে, করোনার মতো মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ দেখিয়েছে সাফল্য। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে, প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। প্রত্যেকের হাতে এখন অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন, দুনিয়ার সব প্রান্তের খবর মুহূর্তেই এসে যাচ্ছে হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশ সরকারের সেবামূলক সব ফরম পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। শুধু তা–ই নয়, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরির আবেদন, পড়াশোনা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফোন বিলসহ বিভিন্ন পরিষেবার বিল পরিশোধ, মোবাইল মানি ট্রান্সফার, ব্যাংকিং, পাসপোর্ট আবেদন, ভিসা প্রসেসিং, বিমানের টিকিট, রেলওয়ে টিকিটিং, ই–টেন্ডারিং, টিন সনদ, আয়কর রিটার্ন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন, জিডি, জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাচ্ছে অনলাইনে, অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ২০১৮ সালের ১১ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তের সূচনা করে। সরকার এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রূপকল্পের কথা সামনে আনছে।সেখানে চারটি বিষয় গুরুত্ব পাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, মাইক্রোচিপের নকশা করা ও উৎপাদন এবং সাইবার নিরাপত্তা। ২০৪১ সালে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সম্মৃদ্ধ দেশ তুলবে আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নিত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে জননেত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

সাবেক চেয়ারম্যান
ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

২৫ ডিসেম্বর, ২০২২,  12:13 AM

news image

ডিজিটাল বাংলাদেশ’ একটি প্রত্যয়, একটি স্বপ্ন। বিরাট এক পরিবর্তন ও ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে। গ্লোবাালাইজেশনের এই যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি সময়োপযোগী প্রগতিশীল পদক্ষেপ। গ্লোবাালাইজেশন বা বিশ্বায়ন হলো বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও পরিবেশের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দৃষ্টিকোণ থেকে একই দিকে উত্তরণ। আর সেই বৈশ্বিক উত্তরণের প্রেক্ষাপটে, তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক অঙ্গনে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর ধারনা একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সমগ্র বাংলাদেশের কর্মকান্ডকে আধুনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সিস্টেমের মাধ্যমে অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিয়ে কর্মকান্ডকে গতিশীল করায় হলো ডিজিটালাইজেশনের মূল লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি প্রেরণাদায়ী অঙ্গীকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেন। এ রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে বাংলাদেশ বিপ্লব সাধন করেছে। যে গতিতে বিশ্বে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে, তা সত্যিই অভাবনীয় কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় এবং আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ডিজিটাল অগ্রগতি থেকে একটুও পিছিয়ে নেই। অদম্যগতিতে আমরা চলছি তথ্যপ্রযুক্তির এক মহাসড়ক ধরে। বর্তমান সময়ে এসে আমরা প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটালাইজেশনের সুফল ভোগ করছি।

ডিজিটাল বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞান, কারিগরি ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের ভিত যাঁর হাত ধরে রচিত হয়েছিল, তা তুলে ধরাও আজ প্রাসঙ্গিক। ডিজিটাল বিপ্লবের শুরু ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে। ইন্টারনেটের সঙ্গে ডিভাইসের যুক্ততা মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে বিশ্বে উন্নয়ন দারুণ গতি পায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। কারণ, তিনি গড়তে চেয়েছিলেন সোনার বাংলা। তাঁর এ স্বপ্নের বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সময় পান মাত্র সাড়ে তিন বছর। এ সময়ে প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ এমন কোনো খাত নেই, যেখানে পরিকল্পিত উদ্যোগ ও কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করেননি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৫টি সংস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভ করে। আর্থসামাজিক জরিপ, আবহাওয়ার তথ্য আদান-প্রদানে আর্থ-রিসোর্স টেকনোলজি স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হয় তাঁরই নির্দেশে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইটের আর্থ স্টেশনের উদ্বোধন করেন। বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা ও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদার মতো বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রণয়ন এবং শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার করার লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা ছিল তাঁর অত্যন্ত সুচিন্তিত ও দূরদর্শী উদ্যোগ।বঙ্গবন্ধুর এই দূরদর্শী চিন্তার প্রতিফলন দেখতে পাই বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা চিন্তায়।২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর, যখন বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা গড়া’র দৃঢ় অঙ্গীকারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন রূপকল্প–২০২১’ ঘোষণা করেন।‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ‘ ধারণাটি তখন থেকেই সবার মনে গেঁথে যায়।প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সবার জন্য কানেকটিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশন—এ চারটি সুনির্দিষ্ট প্রধান স্তম্ভ নির্ধারণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন হয়েছে।সমগ্র দেশ শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। যেখানে ৫৬ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল, আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও সুপরামর্শে ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি এবং মুঠোফোন সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটির ওপর।

জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৮ হাজার ৮০০টি ডিজিটাল সেন্টারে ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা কাজ করছেন, যেখানে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর ফলে এক দিকে নারী-পুরুষের বৈষম্য, অপর দিকে ধনী ও দরিদ্রের এবং গ্রাম ও শহরের বৈষম্য দূর হয়েছে। বর্তমানে ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৭০ লাখের অধিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ডিজিটাল সেন্টার থেকে নাগরিকেরা প্রায় ৮০ কোটির অধিক সেবা গ্রহণ করেছেন। ফলে নাগরিকদের ৭৮ দশমিক ১৪ শতাংশ কর্মঘণ্টা, ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ ব্যয় এবং ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ যাতায়াত সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল সেন্টার সাধারণ মানুষের জীবনমান সহজ করার পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দিয়েছে। মানুষ এখন বিশ্বাস করে, ঘরের কাছেই সব ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব। মানুষের এই বিশ্বাস অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলায় সবচেয়ে বড় পাওয়া।

পেপারলেস কমিউনিকেশন চালু করার লক্ষ্যে সরকার ই-নথি চালু করে। চালু হওয়ার পর থেকে ই-নথিতে এ পর্যন্ত দুই কোটি চার লাখের বেশি ফাইলের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ই-নামজারি সিস্টেমে আগত ৫২ লাখের অধিক আবেদন মধ্যে ৪৫ দশমিক ৬৮ লাখের বেশি আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়েছে অনলাইনে। বিশ্বে অনলাইন শ্রমশক্তিতে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক ও অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই) সমীক্ষামতে, অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে দ্বিতীয়। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ প্রশিক্ষিত ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং খাত থেকে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছেন, যারা কিনা কোনো দিন আমেরিকায় যাননি, কোনো দিন ইংল্যান্ডে যাননি। কিন্তু প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওই দেশের কোম্পানিতে বাংলাদেশের তরুণেরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও আউটসোর্সিং করে হাজার হাজার–লাখ লাখ ডলার আয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। ইতিমধ্যে নির্মিত ১০টি হাই-টেক/আইটি পার্কে বিনিয়োগের পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ১৮ বছর আগে ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে তা ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সরকারের লক্ষ্য, ২০২৫ সালে আইসিটি রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে আইসিটি খাতে কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত করা। ১০৯টি হাইটেক/আইটি পার্কে/শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারের (১৭টি বেসরকারি আইটি পার্ক) মধ্যে নির্মিত ১০টি পার্কে দেশি-বিদেশি ১৯২টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রযুক্তিশিক্ষায় পারদর্শী করে তুলতে এবং ডিজরাপ্টেড টেকনোলজি সম্পর্কে ধারণা দিতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৩ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টি বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, ৫০০টি জয় ডি-সেট সেন্টার, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ৩৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে।

আমরা ই-নথি, জাতীয় তথ্য বাতায়ন, জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩, ই–নামজারি, আরএস খতিয়ান সিস্টেম, কৃষি বাতায়ন, ই–চালান, এক পে, এক শপ, এক সেবা, কিশোর বাতায়ন, মুক্ত পাঠ, শিক্ষক বাতায়ন, আই-ল্যাব, করোনা পোর্টাল, মা টেলি হেলথ সার্ভিস, প্রবাসবন্ধু কলসেন্টার, ভার্চ্যুয়াল কোর্ট সিস্টেম, ডিজিটাল ক্লাসরুমসহ অসংখ্য সেবা চালু করেছি। এর মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে। ফলে, করোনার মতো মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ দেখিয়েছে সাফল্য। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে, প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। প্রত্যেকের হাতে এখন অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন, দুনিয়ার সব প্রান্তের খবর মুহূর্তেই এসে যাচ্ছে হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশ সরকারের সেবামূলক সব ফরম পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। শুধু তা–ই নয়, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরির আবেদন, পড়াশোনা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফোন বিলসহ বিভিন্ন পরিষেবার বিল পরিশোধ, মোবাইল মানি ট্রান্সফার, ব্যাংকিং, পাসপোর্ট আবেদন, ভিসা প্রসেসিং, বিমানের টিকিট, রেলওয়ে টিকিটিং, ই–টেন্ডারিং, টিন সনদ, আয়কর রিটার্ন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন, জিডি, জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাচ্ছে অনলাইনে, অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ২০১৮ সালের ১১ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তের সূচনা করে। সরকার এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রূপকল্পের কথা সামনে আনছে।সেখানে চারটি বিষয় গুরুত্ব পাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, মাইক্রোচিপের নকশা করা ও উৎপাদন এবং সাইবার নিরাপত্তা। ২০৪১ সালে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সম্মৃদ্ধ দেশ তুলবে আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নিত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে জননেত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

সাবেক চেয়ারম্যান
ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।