ব্রাজিলে আনন্দ-বেদনায় বিশ্বকাপ

#
news image

পঞ্চম বারের মতো ব্রাজিলের হেক্সা স্বপ্ন থেমে গিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালেই। ফুটবল প্রেমী ব্রাজিলীয়দের আবারো চার বছরের লম্বা অপেক্ষা শুরু হচ্ছে। ‘হেক্সা ঘরে আসবে’ গত একমাসে সবচেয়ে বেশি গাওয়া এই গানের তালে এবার ও হেক্সা ঘরে আসেনি। আর এতো অসাধারণ একটি দল নিয়েও আশায় বুক বাঁধা ব্রাজিলীয়দের দীর্ঘশ্বাস নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে।

হাজারো ফুটবল বোদ্ধাদের ভবিষ্যদ্বাণীকে উপেক্ষা করে ব্রাজিলের হেক্সা স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি নেইমার, রিচার্লিসন, থিয়াগো সিলভারা। স্বাভাবিক ভাবেই ব্রাজিলীয়রা হতাশ। সেই হতাশা তাদের দৈনন্দিন জীবনের দিকে ভালোভাবে তাকালে সহজেই বুঝা যায়। আমুদে ব্রাজিলীয়ানদের কেমন যেন নাচের ছন্দ কেটে গেছে।

কিন্তু কেউ যদি ভেবে থাকেন যে, এমন অকালেই হেক্সা স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মনে হয় ব্রাজিলে কান্নার রোল উঠেছে তাহলে একেবারেই ভুল ভাবছেন। এমন একটা ম্যাচ হারার পরেও যে ব্রাজিলের পার্টি বন্ধ হয়েছে এমন ভাবারও কোনই কারণ নেই। এমনকি তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু চোখ বুলালেই তাদের এ কথার সত্যতা পাওয়া যাবে অনেকটা। সম্ভবত তারা আনন্দ-কষ্টের অভিন্ন উদযাপন রীতিতেই বিশ্বাসী। 

তাহলে কি বলতে হবে আমাদের দেশের মতো ব্রাজিল তাদের নিজের দেশকে নিয়েও আবেগী না? অবশ্যই গল্পটা তেমন না। জাতিগত পার্থক্যের কারণেই হয়তো তাদের হতাশার বহিঃপ্রকাশটা আমাদের মতো অতি আবেগী না। খেলার সময়ও একইভাবে তাদের সমর্থন খানিকটা অবাক করে। আমরা যখন একটা সুযোগ নষ্ট হলে মাথায় হাত দিয়ে হতাশা দেখাই, তখন তারা আরো দ্বিগুণ স্বরে গর্জন করে। যেন তারা তাদের স্বপ্নসারথিদের বোঝাতে চাচ্ছে, ‘তোমরা তোমাদের সবটুকু দিয়ে লড়ছ, হয়তো এর পরের টাই হয়ে যাবে, চালিয়ে যাও।’

আর সেই গর্জনেই হয়তো, নেইমার সেদিন তাদের আস্থার প্রতিদান ও দিয়েছিল। কিন্তু দিনটা যে ব্রাজিলের ছিল না, ফুটবল রাজপুত্রের ও হয়তো ছিল না। কিন্তু আসলেই কি ছিল না? আমার কাছে মনে হয়েছে ছিল। এদিন রাজপুত্র তার স্বদেশীদের ভালবাসার যতটুকু হাতছাড়া হয়েছিল তা আবার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেছেন। তারা নেইমারের নামে উল্লাস করেছেন, যখনই তার পায়ে বল গিয়েছে। চারপাশে নেইমারের জার্সি পরা তরুণ যুবকদেরই বেশি দেখা গিয়েছে। ফুটবলটা যে তাদের কাছে রাজনীতির চেয়ে বড় সেটাও ব্রাজিলীয়রা দেখিয়ে দিয়েছে।

তবে ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য অবশ্য আবেগটাকে ধরে রাখা এতো সহজ নয়। বাঁধ ভাঙা কান্না বলতে ওদের চোখেই দেখলাম আর দু একজন মেয়ের চোখ গড়িয়ে গালে আঁকা ব্রাজিলের পতাকার রঙে মিলিয়ে যাচ্ছে। হারের সাথে সাথেই তরুণদের গ্রুপ গুলোকে হতাশায় মাটিতে বসে পরতে দেখলাম। ছলছল চোখ গুলো মনে হয় বলছিল, আমাদের প্রজন্ম তো ওই পাঁচটা কাপের উচ্ছাস দেখতে পায় নি, আমরা কবে সেই অতৃপ্তির থেকে মুক্তি পাব? বয়স্করা অবশ্য খানিকটা মেজাজ খারাপ করেই মুখ চালাতে চালাতে এগোচ্ছে। হতাশার প্রকাশের সকল ভাষা বোঝা গেল না, তবে মনে হয় না তারা আর ধৈর্য্য ধরতে আগ্রহী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২,  10:24 PM

news image

পঞ্চম বারের মতো ব্রাজিলের হেক্সা স্বপ্ন থেমে গিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালেই। ফুটবল প্রেমী ব্রাজিলীয়দের আবারো চার বছরের লম্বা অপেক্ষা শুরু হচ্ছে। ‘হেক্সা ঘরে আসবে’ গত একমাসে সবচেয়ে বেশি গাওয়া এই গানের তালে এবার ও হেক্সা ঘরে আসেনি। আর এতো অসাধারণ একটি দল নিয়েও আশায় বুক বাঁধা ব্রাজিলীয়দের দীর্ঘশ্বাস নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে।

হাজারো ফুটবল বোদ্ধাদের ভবিষ্যদ্বাণীকে উপেক্ষা করে ব্রাজিলের হেক্সা স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি নেইমার, রিচার্লিসন, থিয়াগো সিলভারা। স্বাভাবিক ভাবেই ব্রাজিলীয়রা হতাশ। সেই হতাশা তাদের দৈনন্দিন জীবনের দিকে ভালোভাবে তাকালে সহজেই বুঝা যায়। আমুদে ব্রাজিলীয়ানদের কেমন যেন নাচের ছন্দ কেটে গেছে।

কিন্তু কেউ যদি ভেবে থাকেন যে, এমন অকালেই হেক্সা স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মনে হয় ব্রাজিলে কান্নার রোল উঠেছে তাহলে একেবারেই ভুল ভাবছেন। এমন একটা ম্যাচ হারার পরেও যে ব্রাজিলের পার্টি বন্ধ হয়েছে এমন ভাবারও কোনই কারণ নেই। এমনকি তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু চোখ বুলালেই তাদের এ কথার সত্যতা পাওয়া যাবে অনেকটা। সম্ভবত তারা আনন্দ-কষ্টের অভিন্ন উদযাপন রীতিতেই বিশ্বাসী। 

তাহলে কি বলতে হবে আমাদের দেশের মতো ব্রাজিল তাদের নিজের দেশকে নিয়েও আবেগী না? অবশ্যই গল্পটা তেমন না। জাতিগত পার্থক্যের কারণেই হয়তো তাদের হতাশার বহিঃপ্রকাশটা আমাদের মতো অতি আবেগী না। খেলার সময়ও একইভাবে তাদের সমর্থন খানিকটা অবাক করে। আমরা যখন একটা সুযোগ নষ্ট হলে মাথায় হাত দিয়ে হতাশা দেখাই, তখন তারা আরো দ্বিগুণ স্বরে গর্জন করে। যেন তারা তাদের স্বপ্নসারথিদের বোঝাতে চাচ্ছে, ‘তোমরা তোমাদের সবটুকু দিয়ে লড়ছ, হয়তো এর পরের টাই হয়ে যাবে, চালিয়ে যাও।’

আর সেই গর্জনেই হয়তো, নেইমার সেদিন তাদের আস্থার প্রতিদান ও দিয়েছিল। কিন্তু দিনটা যে ব্রাজিলের ছিল না, ফুটবল রাজপুত্রের ও হয়তো ছিল না। কিন্তু আসলেই কি ছিল না? আমার কাছে মনে হয়েছে ছিল। এদিন রাজপুত্র তার স্বদেশীদের ভালবাসার যতটুকু হাতছাড়া হয়েছিল তা আবার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেছেন। তারা নেইমারের নামে উল্লাস করেছেন, যখনই তার পায়ে বল গিয়েছে। চারপাশে নেইমারের জার্সি পরা তরুণ যুবকদেরই বেশি দেখা গিয়েছে। ফুটবলটা যে তাদের কাছে রাজনীতির চেয়ে বড় সেটাও ব্রাজিলীয়রা দেখিয়ে দিয়েছে।

তবে ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য অবশ্য আবেগটাকে ধরে রাখা এতো সহজ নয়। বাঁধ ভাঙা কান্না বলতে ওদের চোখেই দেখলাম আর দু একজন মেয়ের চোখ গড়িয়ে গালে আঁকা ব্রাজিলের পতাকার রঙে মিলিয়ে যাচ্ছে। হারের সাথে সাথেই তরুণদের গ্রুপ গুলোকে হতাশায় মাটিতে বসে পরতে দেখলাম। ছলছল চোখ গুলো মনে হয় বলছিল, আমাদের প্রজন্ম তো ওই পাঁচটা কাপের উচ্ছাস দেখতে পায় নি, আমরা কবে সেই অতৃপ্তির থেকে মুক্তি পাব? বয়স্করা অবশ্য খানিকটা মেজাজ খারাপ করেই মুখ চালাতে চালাতে এগোচ্ছে। হতাশার প্রকাশের সকল ভাষা বোঝা গেল না, তবে মনে হয় না তারা আর ধৈর্য্য ধরতে আগ্রহী।