আত্মঘাতী নারী স্কোয়াড তৈরি করতে: জঙ্গিরা বিয়ে করছে রোহিঙ্গা নারীদের

এসএম শামসুজ্জোহা
১৪ নভেম্বর, ২০২২, 12:55 AM

আত্মঘাতী নারী স্কোয়াড তৈরি করতে: জঙ্গিরা বিয়ে করছে রোহিঙ্গা নারীদের
পর্যটন জেলা কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সহিংসতার পেছনে শুধু আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি কিংবা মাদক ব্যবসাই জড়িত নয়, রয়েছে সমাজের ক্যান্সার হিসেবে পরিচিত ‘জঙ্গি তৎপরতা’। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের, বিশেষ করে নারীদের, অসহায়ত্ব, অভাব ও ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে একটি গোষ্ঠী শরণার্থী শিবিরগুলোতে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা আরও বলেন, ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় রয়েছে মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো।
রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কোনো রেজিস্ট্রি ছাড়াই মোবাইল ফোনে কিম্বা অন্য কায়দায় বিয়ে করছে বাঙালী যুবকরা যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন ও ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মী। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যের ধারনা আত্মঘাতী নারী জঙ্গী স্কোয়াড তৈরি করতেই এ ধরনের রোহিঙ্গা নারীকে টার্গেট করছে জঙ্গীরা।
র্যাবের গোয়েন্দা বলছে, নিঃস্ব রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে করে তাদের জঙ্গিবাদের দিকে টানার সাথে সাথে আত্মঘাতী নারী জঙ্গী স্কোয়াড তৈরি করতেই এমন বিয়ের ঘটনা ঘটছে।
অপরদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর পাশাপাশি সক্রিয় মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ এবং জমিয়াতুল মুজাহিদিনের পাশাপাশি কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন নতুন করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
গতমাসে ১১ অক্টোবর রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে জেএমবি সদস্য মো. মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতার হওয়া জেএমবি সদস্য মিজানকে নিয়ে র্যাব-১১ এর কমান্ডার লে.কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা প্রভাতী খবরকে জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে জঙ্গিবাদ ছড়াতেই রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করেছে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের অন্যতম সমন্বয়ক ও জেএমবি সদস্য মো. মিজানুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে আব্দুল্লাহ আল মিজান (৩৭)। তিনি তার স্ত্রীকে দিয়ে রোহিঙ্গা নারীদের জঙ্গিবাদ তৈরি করার পরিকল্পনা করছিলেন।
এই র্যাব কর্মকর্তা আরও জানায়, জেএমবি সদস্য মিজান টেকনাফের কুতুপালং এলাকায় জেএমবির দাওয়াতি কার্যক্রমের জন্য নিজস্ব একটা বলয় তৈরি করতে চেয়েছিল। এ জন্য একমাস আগে এক রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আসা শুরুর আগেও মিজান কুতুপালং গিয়েছিল। আবার রোহিঙ্গারা আসার পরও ক্যাম্পে গেছে এবং বেশ কয়েকবার সেখানে অব¯’ান করেছে। তার উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে জঙ্গিবাদ বিস্তার করা। তবে ওই রোহিঙ্গা নারীকে আটক করতে পারেননি বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা।
পুলিশ সদর দফতরের এক উধ্বর্তন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রোহিঙ্গাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন ও স্বাধীনতাবিরোধীরা নানাভাবে সহযোগিতা করছে। এমনকি অনেক জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা রোহিঙ্গা নারীকে ভুয়া বাঙালী পরিচয়ে বিয়ে করছে। গোয়েন্দাদের নজরদারির কারণে সম্প্রতি জঙ্গীরা রোহিঙ্গা নারীদের “জঙ্গীবাদের আদলে” বিয়ে করছে। এক্ষেত্রে কোন রেজিস্টার মানা হচ্ছে না। ইসলামের নামে তাদের খেজুর খাইয়ে বা কালেমা পড়িয়ে বিয়ে হচ্ছে। এদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এ ধরনের বিয়ের পরই ওইসব দম্পতি আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে।
যেসব যুবতী রোহিঙ্গা পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন, জঙ্গীরা বিয়ের ক্ষেত্রে তাদেরই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মঘাতী নারী জঙ্গী স্কোয়াড তৈরি করতেই এ ধরনের রোহিঙ্গা নারীকে টার্গেট করতে পারে জঙ্গীরা।
সম্প্রতি টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে রোহিঙ্গা নারী রোজিনা বেগম ও জান্নাতি আক্তার ওরফে জেমিকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। জান্নাতি আক্তারের স্বামী নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক নজরুল জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তিনি পঞ্চগড়ের পুরোহিত জজ্ঞেশ্বর রায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ।
র্যাব গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ সংগঠনের এসব সদস্যরা কৌশলে রোহিঙ্গা নারীদের ঘরছাড়া করছে। তাদের ভাষায় একে বলে ‘হিজরত’। এই কথিত হিজরত করা নারীদের জঙ্গি নেটওয়ার্কের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তারা জঙ্গি কর্মকাণ্ডের অনেক খবর রাখে। আর এ কারণেই স্বামীর মৃত্যুর পর তাদের নিজেদের (জঙ্গি) নেটওয়ার্কের বাইরে যেতে দেয়া হয় না। এটি নিশ্চিত করতেই কোনো নারী জঙ্গির স্বামী (জঙ্গি) পুলিশের হাতে ধরা পড়লে কিংবা নিহত হলে তার দায়িত্ব কে নেবে সেটা আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে। একইভাবে ওই নারীর দ্বিতীয় স্বামী মারা গেলে আবার তৃতীয় জনের (জঙ্গি) কাছে তাকে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রেও ওই জঙ্গি নারীর দ্বিতীয় স্বামী বিয়ের পরপরই নির্ধারণ করে রাখে মৃত্যুর পর কার সঙ্গে তার স্ত্রীর বিয়ে হবে। ওই নারী চাইলেও অন্যত্র বিয়ে করতে পারে না। সে অন্যত্র বিয়ে করলে তাদের নেটওয়ার্কের অনেক খবর বাইরে ফাঁস হওয়ার আশংকা থেকেই তারা এমনটি করে থাকে।
এসব বিষয়ে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর মেহেদী প্রভাতী খবরকে জানান, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাঙালীদের রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করতে কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলার কাজী অফিসের রেজিস্টার ঘন ঘন চেক করার কথা বলা হয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আত্মীয়তার সুবাদে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করার চিন্তাভাবনা চলছে।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দার দেওয়া তথ্য মতে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় ছোট বড় জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে শতাধিক। এসব গ্রুপগুলোর একেকটিতে আবার সদস্য রয়েছে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ জন। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর পাশাপাশি সক্রিয় মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ এবং জমিয়াতুল মুজাহিদিনের পাশাপাশি নতুন করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন। মাস্টার মহিবুল্লাহ খুনের পর আরসা ক্যাম্পে কোণঠাসা থাকলেও ফের তারা অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চারজন মাঝি খুনের ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে মোহাম্মদ হাশিম নামে এক রোহিঙ্গা যুবক। পিস্তল হাতে নিয়ে এই যুবক ফেসবুক লাইভে এসে নিজেকে ‘ইসলামী মাহাজ’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করে। হাশিম বর্ণনা দিয়েছে, কিভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চার মাঝিকে হত্যা করা হয়। সে জানায়, তার মতো আরও ২৫ জনকে অস্ত্র দিয়েছে ইসলামী মাহাজ। দেয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। তাদের কাজ হলো হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করা।
এ ব্যাপারে এলিট ফোর্স র্যাবের মুখপাত্র ও লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রভাতী খবরকে বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ ও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পেলেই আমরা অভিযান চালা”িছ। এর আগে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকটি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবাদের কোনো সুযোগ নেই। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ ও জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা দমনে আমরা সবসময় সতর্ক রয়েছি। জঙ্গিদের বিষয়ে সরকার ও প্রশাসন জিরো টলারেন্সে রয়েছে।
এসএম শামসুজ্জোহা
১৪ নভেম্বর, ২০২২, 12:55 AM

পর্যটন জেলা কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সহিংসতার পেছনে শুধু আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি কিংবা মাদক ব্যবসাই জড়িত নয়, রয়েছে সমাজের ক্যান্সার হিসেবে পরিচিত ‘জঙ্গি তৎপরতা’। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের, বিশেষ করে নারীদের, অসহায়ত্ব, অভাব ও ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে একটি গোষ্ঠী শরণার্থী শিবিরগুলোতে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা আরও বলেন, ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় রয়েছে মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো।
রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কোনো রেজিস্ট্রি ছাড়াই মোবাইল ফোনে কিম্বা অন্য কায়দায় বিয়ে করছে বাঙালী যুবকরা যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন ও ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মী। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যের ধারনা আত্মঘাতী নারী জঙ্গী স্কোয়াড তৈরি করতেই এ ধরনের রোহিঙ্গা নারীকে টার্গেট করছে জঙ্গীরা।
র্যাবের গোয়েন্দা বলছে, নিঃস্ব রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে করে তাদের জঙ্গিবাদের দিকে টানার সাথে সাথে আত্মঘাতী নারী জঙ্গী স্কোয়াড তৈরি করতেই এমন বিয়ের ঘটনা ঘটছে।
অপরদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর পাশাপাশি সক্রিয় মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ এবং জমিয়াতুল মুজাহিদিনের পাশাপাশি কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন নতুন করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
গতমাসে ১১ অক্টোবর রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে জেএমবি সদস্য মো. মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতার হওয়া জেএমবি সদস্য মিজানকে নিয়ে র্যাব-১১ এর কমান্ডার লে.কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা প্রভাতী খবরকে জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে জঙ্গিবাদ ছড়াতেই রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করেছে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের অন্যতম সমন্বয়ক ও জেএমবি সদস্য মো. মিজানুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে আব্দুল্লাহ আল মিজান (৩৭)। তিনি তার স্ত্রীকে দিয়ে রোহিঙ্গা নারীদের জঙ্গিবাদ তৈরি করার পরিকল্পনা করছিলেন।
এই র্যাব কর্মকর্তা আরও জানায়, জেএমবি সদস্য মিজান টেকনাফের কুতুপালং এলাকায় জেএমবির দাওয়াতি কার্যক্রমের জন্য নিজস্ব একটা বলয় তৈরি করতে চেয়েছিল। এ জন্য একমাস আগে এক রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আসা শুরুর আগেও মিজান কুতুপালং গিয়েছিল। আবার রোহিঙ্গারা আসার পরও ক্যাম্পে গেছে এবং বেশ কয়েকবার সেখানে অব¯’ান করেছে। তার উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে জঙ্গিবাদ বিস্তার করা। তবে ওই রোহিঙ্গা নারীকে আটক করতে পারেননি বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা।
পুলিশ সদর দফতরের এক উধ্বর্তন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রোহিঙ্গাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন ও স্বাধীনতাবিরোধীরা নানাভাবে সহযোগিতা করছে। এমনকি অনেক জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা রোহিঙ্গা নারীকে ভুয়া বাঙালী পরিচয়ে বিয়ে করছে। গোয়েন্দাদের নজরদারির কারণে সম্প্রতি জঙ্গীরা রোহিঙ্গা নারীদের “জঙ্গীবাদের আদলে” বিয়ে করছে। এক্ষেত্রে কোন রেজিস্টার মানা হচ্ছে না। ইসলামের নামে তাদের খেজুর খাইয়ে বা কালেমা পড়িয়ে বিয়ে হচ্ছে। এদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এ ধরনের বিয়ের পরই ওইসব দম্পতি আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে।
যেসব যুবতী রোহিঙ্গা পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন, জঙ্গীরা বিয়ের ক্ষেত্রে তাদেরই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মঘাতী নারী জঙ্গী স্কোয়াড তৈরি করতেই এ ধরনের রোহিঙ্গা নারীকে টার্গেট করতে পারে জঙ্গীরা।
সম্প্রতি টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে রোহিঙ্গা নারী রোজিনা বেগম ও জান্নাতি আক্তার ওরফে জেমিকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। জান্নাতি আক্তারের স্বামী নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক নজরুল জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তিনি পঞ্চগড়ের পুরোহিত জজ্ঞেশ্বর রায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ।
র্যাব গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ সংগঠনের এসব সদস্যরা কৌশলে রোহিঙ্গা নারীদের ঘরছাড়া করছে। তাদের ভাষায় একে বলে ‘হিজরত’। এই কথিত হিজরত করা নারীদের জঙ্গি নেটওয়ার্কের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তারা জঙ্গি কর্মকাণ্ডের অনেক খবর রাখে। আর এ কারণেই স্বামীর মৃত্যুর পর তাদের নিজেদের (জঙ্গি) নেটওয়ার্কের বাইরে যেতে দেয়া হয় না। এটি নিশ্চিত করতেই কোনো নারী জঙ্গির স্বামী (জঙ্গি) পুলিশের হাতে ধরা পড়লে কিংবা নিহত হলে তার দায়িত্ব কে নেবে সেটা আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে। একইভাবে ওই নারীর দ্বিতীয় স্বামী মারা গেলে আবার তৃতীয় জনের (জঙ্গি) কাছে তাকে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রেও ওই জঙ্গি নারীর দ্বিতীয় স্বামী বিয়ের পরপরই নির্ধারণ করে রাখে মৃত্যুর পর কার সঙ্গে তার স্ত্রীর বিয়ে হবে। ওই নারী চাইলেও অন্যত্র বিয়ে করতে পারে না। সে অন্যত্র বিয়ে করলে তাদের নেটওয়ার্কের অনেক খবর বাইরে ফাঁস হওয়ার আশংকা থেকেই তারা এমনটি করে থাকে।
এসব বিষয়ে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর মেহেদী প্রভাতী খবরকে জানান, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাঙালীদের রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করতে কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলার কাজী অফিসের রেজিস্টার ঘন ঘন চেক করার কথা বলা হয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আত্মীয়তার সুবাদে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করার চিন্তাভাবনা চলছে।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দার দেওয়া তথ্য মতে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় ছোট বড় জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে শতাধিক। এসব গ্রুপগুলোর একেকটিতে আবার সদস্য রয়েছে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ জন। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর পাশাপাশি সক্রিয় মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ এবং জমিয়াতুল মুজাহিদিনের পাশাপাশি নতুন করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন। মাস্টার মহিবুল্লাহ খুনের পর আরসা ক্যাম্পে কোণঠাসা থাকলেও ফের তারা অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চারজন মাঝি খুনের ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে মোহাম্মদ হাশিম নামে এক রোহিঙ্গা যুবক। পিস্তল হাতে নিয়ে এই যুবক ফেসবুক লাইভে এসে নিজেকে ‘ইসলামী মাহাজ’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করে। হাশিম বর্ণনা দিয়েছে, কিভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চার মাঝিকে হত্যা করা হয়। সে জানায়, তার মতো আরও ২৫ জনকে অস্ত্র দিয়েছে ইসলামী মাহাজ। দেয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। তাদের কাজ হলো হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করা।
এ ব্যাপারে এলিট ফোর্স র্যাবের মুখপাত্র ও লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রভাতী খবরকে বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ ও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পেলেই আমরা অভিযান চালা”িছ। এর আগে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকটি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবাদের কোনো সুযোগ নেই। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ ও জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা দমনে আমরা সবসময় সতর্ক রয়েছি। জঙ্গিদের বিষয়ে সরকার ও প্রশাসন জিরো টলারেন্সে রয়েছে।