পদ্মার চরে কৃষিবিপ্লবের হাতছানি, বছরে ২০ ধরনের ফসল উৎপাদন

#
news image

রাজশাহীর পদ্মা নদীর ৪৩টি চরে ফসলের সমারোহ। এক সময়ের পতিত ও গো-চারণভূমি চরগুলোতে এখন ফলছে বিভিন্ন ফসল। এসব ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে এসব চরে বছরে ২০ ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এতে চাঙ্গা হচ্ছে চরাঞ্চলের অর্থনীতি। বিভাগের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর জেলার চরাঞ্চলে ব্যাপক হারে ধান, পাট, বাদাম ও মিষ্টিকুমড়া চাষ হচ্ছে। চরের জমিতে বছরে তিনবার ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে, যা কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।  

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় জেগে ওঠা চরের জমি চাষাবাদের উপযোগী করতে ৫ বছরের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ সালে শুরু হয়েছে। শেষ হবে ২০২৮-২৯ সালে। ‘বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বিভাগের তিন জেলার ৪৩টি চরের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হলে চরের প্রায় শতভাগ জমিকে কৃষি উৎপাদনের জন্য তৈরি করা সম্ভব হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি ২০-২৫ শতাংশ। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ চরাঞ্চলের কৃষিব্যবস্থায় একটি বিপ্লব ঘটাবে। কৃষকদের জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আধুনিক কৃষিতে চর অঞ্চলের কৃষকদের দক্ষতা বাড়বে। মাঠ দিবস, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় ঘটানোই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। থাকবে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী, সোলার আলোক ফাঁদ, এলএলপি বিতরণ এবং ফার্মারস ফ্যাসিলিটিস শেড নির্মাণ। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, চর এলাকার উপযোগী আখ, পাট, কালোজিরা, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখী, মরিচ, মটরশুঁটি, মুগ, সরিষা, মসুর, সয়াবিন, তরমুজ, মাল্টা, পেয়ারা ও আম চাষের ফলন বাড়ানো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পবা, বাঘা ও গোদাগাড়ী উপজেলার ১৮টি চর, নাটোরের লালপুর উপজেলার ৫টি চর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ২০টি চরে এই প্রকল্প চালু রয়েছে। এসব চরে মোট কৃষি জমি ছিল ১৭ হাজার ২৩ হেক্টর। এই প্রকল্পের ফলে ৪৩টি চরে জমি বেড়েছে ৪৩১ হেক্টর। সেই সঙ্গে বেড়েছে ফসল। এক সময় ১০ থেকে ১২ ধরনের ফসল চাষ হলেও বর্তমানে ২০ ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পবা, গোদাগাড়ী, বাঘায় এই প্রকল্প চালু আছে। এসব উপজেলার পবার চর খিদিরপুর, চরমাঝারদিয়ার, হরিপুর, আলীমগঞ্জ। বাঘা উপজেলার কালদাসখালী, দাদপুর, পলাশী ফতেপুর, বারশাদিয়ার, গাওপাড়া, ফতেপুর পলাশী, মশিদপুর। এছাড়া গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, মাটিকাটা, রাজাবাড়ী, গোগ্রাম, পৌরসভা। এসব চরে সুবিধাভোগী কৃষকের সংখ্যা ১৫ হাজার ১৭১ জন।

একসময় এসব চরে ধান বোরো, মাসকলাই, মসুর, গম, সরিষা, রাই সরিষা, খেসারি, পাট, তিল, ধনিয়া, টমেটো, বেগুন, মটর শুঁটি, আম, মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টি আলু, ভুট্টোর চাষ হতো। বর্তমানে কালোজিরা, পটল, চিনাবাদাম, ভুট্টা, মিষ্টিকুমড়া, পাট, বোরো ধান, মটর শুটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, তরমুজ, বাঙ্গি, খিরা, রসুনের চাষ হচ্ছে। প্রকল্পের আগে চরে আবাদি জমি ছিল ১৬ হাজার ৪৮৫ হেক্টর। বর্তমানে চরে আবাদি জমি ১৬ হাজার ৯০৫ হেক্টর। এরফলে জমি বেড়েছে ৪২০ হেক্টর জমি। সকল চর আবাদের আওতায়ে এসেছে। গবাদি পশু পালন বেড়েছে।

চরের কৃষক সবুর আলী বলেন, আগে মাত্র কয়েকটি ফসল ফলতো চরের জমিতে। এখন ফুলকটি, বাঁধাকপি ছাড়াও কালোজিরা, তরমুজ, বাঙ্গি ও খিরার চাষ হচ্ছে। চরের জমিতে তুলনামূলক চাষাবাদ খরচ কম। এছাড়া ফলনও ভালো হয়। জসিম নামের আরেক চাষি বলেন, চরে প্রচুর গবাদিপশু পালন হয়ে থাকে। চরের প্রতিটা বাড়িতে গবাদিপশু রয়েছে। এই চরের উৎপাদিত ফসলের খড় দিয়ে হয় পশুর খাদ্য। চরের জমিতে আমসহ বিভিন্ন ফল ও ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে নতুন নতুন ফসল ফলছে চরে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, রাজশাহীর যে চর এলাকাগুলো রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ফল ও ফসল উৎপাদন হয় বাঘায়। অন্য জমির তুলনায় চরের জমিতে ফসল উৎপাদনের খরচ কম ও ফলন ভালো হয়। বাঘা আরও একটি নতুন চর জেগেছে। আমরা সেই চর চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসব। চরে চলমান প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পের আলোকে চরে চাষযোগ্য জমি বেড়েছে। একসময় চরের জমিগুলোতে ৫ থেকে ৬ ধরনের ফসল হতো। এখন তার থেকে বেশি ফসল ফলছে। চরাঞ্চল কৃষি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। 

এছাড়া নাটোর জেলার লালপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর ৫টি চর রয়েছে। এরমধ্যে বিলমাড়ীয়ায় ৪ হেক্টর, নাগশোয্য ১২ হেক্টর, বালতিতা না থাকলেও জোতদৈবকীতে ১০ হেক্টর, তিলকপুরে ৭ হেক্টর। সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা ৩৩৮ জন। একসময় আখ, মসুর, পেয়াজ, গম, মটর, শাকসবজির চাষ হতো। এখন হয়- কালোজিরা, চিয়াসিড, কুসুমফুল, সূর্যমুখী, পাটের চাষ হচ্ছে।

অপরদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ২০টি চরে এই প্রকল্প চালু রয়েছে। এসব চরে সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭০ জন। এরমধ্যে শাহজাহানপুর ১৩ হেক্টর, আলাতুলিতে ৬৬০ হেক্টর, চরবাগডাঙ্গায় ১৫০ হেক্টর. চরঅনুপনগরে ১১ হেক্টর, নারায়নপুর ৫ হেক্টর, মনোহরপুর-বাদশাপাড়ায় ৮ হেক্টর, উত্তর উজিরপুরে ১০ হেক্টর, গঙ্গাধায়পুরে ৭ হেক্টর, সেতারাপাড়ায় ১২ হেক্টর, কদমতলা-শশীতলা ১০ হেক্টর, দেবজর ঘোড়াগালিরা ১৫ হেক্টর, পারঘোড়াপাখিয়া ৪ হেক্টর, দক্ষিণ পাকাচরে ৪ হেক্টর, তেলখাড়ীতে ৫ হেক্টর, দশরশিয়ায় ৩ হেক্টর, চর পশ্চিম পাকায় ৫ হেক্টর, চরহাসানপুরে ৭ হেক্টর। সর্বমোট ৪৯৫ হেক্টর জমি।

তবে প্রকল্পের পরে জমি বেড়েছে ১১ হেক্টর। প্রকল্প শুরুর আগের গম, ভুট্টা, বোরো ধান, সরিষা, মাসকালাই, খেসায়ী, চিনা, আম, শাকসবজী, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ, কলা, বরই, ধৈঞ্চার চাষ হতো। বর্তমানে তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া, তিল, আলু, সূর্যমুখী, স্ট্রবেরি, মসুর, মিষ্টি আলু, পটল, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, কালোজিরা, মটরশুটি, ও শীতকালীন পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, বিভাগের রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এরমধ্যেমে চরাঞ্চলে বেড়েছে কৃষি জমির পরিমাণ। একই সঙ্গে বেড়েছে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন। এ প্রকল্পের লক্ষ্য খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং চরে শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, শস্য বৈচিত্র ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ বৃদ্ধি। আবাদি জমি বৃদ্ধি বহুমুখী চাষাবাদ। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আতোয়ার রহমান বলেন, চরে পশু পালন আগের তুলনায় বেড়েছে। চরের পশুগুলোর স্বাস্থ্য কম হলেও ভালো। সেগুলো মোটাতাজা করা না। এই চরে পশুপালন অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। আগামীতে আরও বাড়বে চরে পশু পালন।

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

২৫ জুন, ২০২৫,  9:39 AM

news image

রাজশাহীর পদ্মা নদীর ৪৩টি চরে ফসলের সমারোহ। এক সময়ের পতিত ও গো-চারণভূমি চরগুলোতে এখন ফলছে বিভিন্ন ফসল। এসব ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে এসব চরে বছরে ২০ ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এতে চাঙ্গা হচ্ছে চরাঞ্চলের অর্থনীতি। বিভাগের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর জেলার চরাঞ্চলে ব্যাপক হারে ধান, পাট, বাদাম ও মিষ্টিকুমড়া চাষ হচ্ছে। চরের জমিতে বছরে তিনবার ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে, যা কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।  

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় জেগে ওঠা চরের জমি চাষাবাদের উপযোগী করতে ৫ বছরের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ সালে শুরু হয়েছে। শেষ হবে ২০২৮-২৯ সালে। ‘বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বিভাগের তিন জেলার ৪৩টি চরের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হলে চরের প্রায় শতভাগ জমিকে কৃষি উৎপাদনের জন্য তৈরি করা সম্ভব হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি ২০-২৫ শতাংশ। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ চরাঞ্চলের কৃষিব্যবস্থায় একটি বিপ্লব ঘটাবে। কৃষকদের জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আধুনিক কৃষিতে চর অঞ্চলের কৃষকদের দক্ষতা বাড়বে। মাঠ দিবস, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় ঘটানোই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। থাকবে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী, সোলার আলোক ফাঁদ, এলএলপি বিতরণ এবং ফার্মারস ফ্যাসিলিটিস শেড নির্মাণ। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, চর এলাকার উপযোগী আখ, পাট, কালোজিরা, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখী, মরিচ, মটরশুঁটি, মুগ, সরিষা, মসুর, সয়াবিন, তরমুজ, মাল্টা, পেয়ারা ও আম চাষের ফলন বাড়ানো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পবা, বাঘা ও গোদাগাড়ী উপজেলার ১৮টি চর, নাটোরের লালপুর উপজেলার ৫টি চর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ২০টি চরে এই প্রকল্প চালু রয়েছে। এসব চরে মোট কৃষি জমি ছিল ১৭ হাজার ২৩ হেক্টর। এই প্রকল্পের ফলে ৪৩টি চরে জমি বেড়েছে ৪৩১ হেক্টর। সেই সঙ্গে বেড়েছে ফসল। এক সময় ১০ থেকে ১২ ধরনের ফসল চাষ হলেও বর্তমানে ২০ ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পবা, গোদাগাড়ী, বাঘায় এই প্রকল্প চালু আছে। এসব উপজেলার পবার চর খিদিরপুর, চরমাঝারদিয়ার, হরিপুর, আলীমগঞ্জ। বাঘা উপজেলার কালদাসখালী, দাদপুর, পলাশী ফতেপুর, বারশাদিয়ার, গাওপাড়া, ফতেপুর পলাশী, মশিদপুর। এছাড়া গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, মাটিকাটা, রাজাবাড়ী, গোগ্রাম, পৌরসভা। এসব চরে সুবিধাভোগী কৃষকের সংখ্যা ১৫ হাজার ১৭১ জন।

একসময় এসব চরে ধান বোরো, মাসকলাই, মসুর, গম, সরিষা, রাই সরিষা, খেসারি, পাট, তিল, ধনিয়া, টমেটো, বেগুন, মটর শুঁটি, আম, মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টি আলু, ভুট্টোর চাষ হতো। বর্তমানে কালোজিরা, পটল, চিনাবাদাম, ভুট্টা, মিষ্টিকুমড়া, পাট, বোরো ধান, মটর শুটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, তরমুজ, বাঙ্গি, খিরা, রসুনের চাষ হচ্ছে। প্রকল্পের আগে চরে আবাদি জমি ছিল ১৬ হাজার ৪৮৫ হেক্টর। বর্তমানে চরে আবাদি জমি ১৬ হাজার ৯০৫ হেক্টর। এরফলে জমি বেড়েছে ৪২০ হেক্টর জমি। সকল চর আবাদের আওতায়ে এসেছে। গবাদি পশু পালন বেড়েছে।

চরের কৃষক সবুর আলী বলেন, আগে মাত্র কয়েকটি ফসল ফলতো চরের জমিতে। এখন ফুলকটি, বাঁধাকপি ছাড়াও কালোজিরা, তরমুজ, বাঙ্গি ও খিরার চাষ হচ্ছে। চরের জমিতে তুলনামূলক চাষাবাদ খরচ কম। এছাড়া ফলনও ভালো হয়। জসিম নামের আরেক চাষি বলেন, চরে প্রচুর গবাদিপশু পালন হয়ে থাকে। চরের প্রতিটা বাড়িতে গবাদিপশু রয়েছে। এই চরের উৎপাদিত ফসলের খড় দিয়ে হয় পশুর খাদ্য। চরের জমিতে আমসহ বিভিন্ন ফল ও ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে নতুন নতুন ফসল ফলছে চরে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, রাজশাহীর যে চর এলাকাগুলো রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ফল ও ফসল উৎপাদন হয় বাঘায়। অন্য জমির তুলনায় চরের জমিতে ফসল উৎপাদনের খরচ কম ও ফলন ভালো হয়। বাঘা আরও একটি নতুন চর জেগেছে। আমরা সেই চর চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসব। চরে চলমান প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পের আলোকে চরে চাষযোগ্য জমি বেড়েছে। একসময় চরের জমিগুলোতে ৫ থেকে ৬ ধরনের ফসল হতো। এখন তার থেকে বেশি ফসল ফলছে। চরাঞ্চল কৃষি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। 

এছাড়া নাটোর জেলার লালপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর ৫টি চর রয়েছে। এরমধ্যে বিলমাড়ীয়ায় ৪ হেক্টর, নাগশোয্য ১২ হেক্টর, বালতিতা না থাকলেও জোতদৈবকীতে ১০ হেক্টর, তিলকপুরে ৭ হেক্টর। সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা ৩৩৮ জন। একসময় আখ, মসুর, পেয়াজ, গম, মটর, শাকসবজির চাষ হতো। এখন হয়- কালোজিরা, চিয়াসিড, কুসুমফুল, সূর্যমুখী, পাটের চাষ হচ্ছে।

অপরদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ২০টি চরে এই প্রকল্প চালু রয়েছে। এসব চরে সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭০ জন। এরমধ্যে শাহজাহানপুর ১৩ হেক্টর, আলাতুলিতে ৬৬০ হেক্টর, চরবাগডাঙ্গায় ১৫০ হেক্টর. চরঅনুপনগরে ১১ হেক্টর, নারায়নপুর ৫ হেক্টর, মনোহরপুর-বাদশাপাড়ায় ৮ হেক্টর, উত্তর উজিরপুরে ১০ হেক্টর, গঙ্গাধায়পুরে ৭ হেক্টর, সেতারাপাড়ায় ১২ হেক্টর, কদমতলা-শশীতলা ১০ হেক্টর, দেবজর ঘোড়াগালিরা ১৫ হেক্টর, পারঘোড়াপাখিয়া ৪ হেক্টর, দক্ষিণ পাকাচরে ৪ হেক্টর, তেলখাড়ীতে ৫ হেক্টর, দশরশিয়ায় ৩ হেক্টর, চর পশ্চিম পাকায় ৫ হেক্টর, চরহাসানপুরে ৭ হেক্টর। সর্বমোট ৪৯৫ হেক্টর জমি।

তবে প্রকল্পের পরে জমি বেড়েছে ১১ হেক্টর। প্রকল্প শুরুর আগের গম, ভুট্টা, বোরো ধান, সরিষা, মাসকালাই, খেসায়ী, চিনা, আম, শাকসবজী, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ, কলা, বরই, ধৈঞ্চার চাষ হতো। বর্তমানে তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া, তিল, আলু, সূর্যমুখী, স্ট্রবেরি, মসুর, মিষ্টি আলু, পটল, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, কালোজিরা, মটরশুটি, ও শীতকালীন পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, বিভাগের রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এরমধ্যেমে চরাঞ্চলে বেড়েছে কৃষি জমির পরিমাণ। একই সঙ্গে বেড়েছে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন। এ প্রকল্পের লক্ষ্য খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং চরে শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, শস্য বৈচিত্র ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ বৃদ্ধি। আবাদি জমি বৃদ্ধি বহুমুখী চাষাবাদ। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আতোয়ার রহমান বলেন, চরে পশু পালন আগের তুলনায় বেড়েছে। চরের পশুগুলোর স্বাস্থ্য কম হলেও ভালো। সেগুলো মোটাতাজা করা না। এই চরে পশুপালন অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। আগামীতে আরও বাড়বে চরে পশু পালন।