এবছর আমের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা
নাগরিক প্রতিবেদন
০৯ মে, ২০২৪, 1:17 PM
এবছর আমের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা
জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যানুযায়ী আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে নবম। সংস্থাটির তথ্যমতে প্রথম অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) হিসাব অনুযায়ী, দেশে গত বছর আম উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২৭ লাখ টন। এবার এ উৎপাদন না বেড়ে বরং এক- তৃতীয়াংশ কমার শঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার মূল কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ডিএইর হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কে জে এম আবদুল আউয়াল গতকাল জানান, এবার আমের উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য গত এপ্রিলের তীব্র তাপমাত্রা এ জন্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করতে চান না তিনি।
এই কৃষিবিদ বলেন, এবার শীতের সময় বেশ দীর্ঘ ছিল। মুকুল আসতে সর্বনি¤œ ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে। মুকুল আসার সময় ১৫ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা ছিল। এ কারণে এবার আমের মুকুলই কম এসেছে। আবার যা মুকুল এসেছিল মাঝখানে হপার রোগে আক্রান্ত হয়েছিল বাগান। মুকুল কম এসেছে মূলত পারিবারিক এবং ভেরি ট্র্যাডিশনাল বাগানগুলোতে। যেখানে ম্যানেজমেন্টেরও ঘাটতি ছিল। তবে বাণিজ্যিক বাগানগুলোতে এর প্রভাব পড়েনি। দ্বিতীয়ত হলো আমের অফ ইয়ার, অন ইয়ার বলে কথা আছে। এবার আমে অফ ইয়ার ছিল। বলতে পারেন যে, এ বছর কমার্শিয়াল আমচাষিদের বছর। পারিবারিক ও ট্র্যাডিশনাল বাগানে আম কম। কিন্তু বাণিজ্যিক বাগানগুলোতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
কৃষিবিদরা বলছেন, সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই আমগাছে মুকুল আসা শুরু হয়। কিন্তু এবার এর ব্যতিক্রম হয়েছে। মুকুল আসতে আসতে ফেব্রুয়ারির শেষ এমনকি কোনো কোনো স্থানে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ লেগে যায়। এরপর মার্চের মাঝামাঝি সময়ে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে বিলম্বিত মুকুলের অনেকাংশ পচে যায়। সর্বশেষ গত এপ্রিলজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহে মুকুল থেকে গুটি ধরা বাধাগ্রস্ত হয়। কৃষিবিদ এবং আম বিষয়ে একাধিক বইয়ের লেখক মৃত্যুঞ্জয় রায়ের মতে ‘এবার আমের অফ ইয়ার। সঙ্গত কারণেই এবার ফলন কম হবে। এরপর বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতি নাজুক করে তুলেছে।’ ডিএই সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে গত বছর রেকর্ড তিন হাজার ৪৫ টন আম রফতানি হয়, যা আগের বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭৩ শতাংশ।
ডিএইর রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, এবার ফলন কম হলেও কৃষকদের আমরা মানসম্মত আম উৎপাদনের ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছি। এই সময়ে গাছে যে আমটি আছে, এটি যেন অপরিপক্ব অবস্থায় সংগ্রহ করা না হয়। এখনই আম বাড়ন্তের সময়। এখন সঠিক পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় সেচ দিলে আমের আকার বড় হবে এবং ওজন বাড়বে। আমের আকার ও ওজন বাড়াতে পারলে আমের সংখ্যা কম হলেও সার্বিকভাবে উৎপাদন ঘাটতি কমে আসবে।
চাষিরা বলছেন, চলতি বছর আমের ফলন খুবই কম হয়েছে। কারণ, মুকুল আসার সময়টায় এবার শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ ছিল। কৃষিবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে আমে মুকুল আসার সময়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রির মধ্যে থাকাই শ্রেয়। এর বেশি বা কম হলে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি বছর শীত মৌসুমে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রিরও নিচে নেমে আমারে মুকুলকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসময় ঘনঘন শৈত্যপ্রবাহ যেমন আমের মুকুল তৈরি ও গুটিতে বাধাগ্রস্ত করেছে তেমনি এপ্রিল জুড়ে অধিক তাপমাত্রার কারণে আমের গুটি থেকে ছোট আম ঝরে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, উৎপাদন কম হবে বিধায় এ বছর বাজারে আমের সঙ্কট থাকবে। ফলে দামও ‘আকাশচুম্বী’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়া দীর্ঘমেয়াদি হলে হয়তো সামনের বছরগুলোতেও আমের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
নাগরিক প্রতিবেদন
০৯ মে, ২০২৪, 1:17 PM
জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যানুযায়ী আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে নবম। সংস্থাটির তথ্যমতে প্রথম অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) হিসাব অনুযায়ী, দেশে গত বছর আম উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২৭ লাখ টন। এবার এ উৎপাদন না বেড়ে বরং এক- তৃতীয়াংশ কমার শঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার মূল কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ডিএইর হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কে জে এম আবদুল আউয়াল গতকাল জানান, এবার আমের উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য গত এপ্রিলের তীব্র তাপমাত্রা এ জন্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করতে চান না তিনি।
এই কৃষিবিদ বলেন, এবার শীতের সময় বেশ দীর্ঘ ছিল। মুকুল আসতে সর্বনি¤œ ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে। মুকুল আসার সময় ১৫ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা ছিল। এ কারণে এবার আমের মুকুলই কম এসেছে। আবার যা মুকুল এসেছিল মাঝখানে হপার রোগে আক্রান্ত হয়েছিল বাগান। মুকুল কম এসেছে মূলত পারিবারিক এবং ভেরি ট্র্যাডিশনাল বাগানগুলোতে। যেখানে ম্যানেজমেন্টেরও ঘাটতি ছিল। তবে বাণিজ্যিক বাগানগুলোতে এর প্রভাব পড়েনি। দ্বিতীয়ত হলো আমের অফ ইয়ার, অন ইয়ার বলে কথা আছে। এবার আমে অফ ইয়ার ছিল। বলতে পারেন যে, এ বছর কমার্শিয়াল আমচাষিদের বছর। পারিবারিক ও ট্র্যাডিশনাল বাগানে আম কম। কিন্তু বাণিজ্যিক বাগানগুলোতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
কৃষিবিদরা বলছেন, সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই আমগাছে মুকুল আসা শুরু হয়। কিন্তু এবার এর ব্যতিক্রম হয়েছে। মুকুল আসতে আসতে ফেব্রুয়ারির শেষ এমনকি কোনো কোনো স্থানে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ লেগে যায়। এরপর মার্চের মাঝামাঝি সময়ে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে বিলম্বিত মুকুলের অনেকাংশ পচে যায়। সর্বশেষ গত এপ্রিলজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহে মুকুল থেকে গুটি ধরা বাধাগ্রস্ত হয়। কৃষিবিদ এবং আম বিষয়ে একাধিক বইয়ের লেখক মৃত্যুঞ্জয় রায়ের মতে ‘এবার আমের অফ ইয়ার। সঙ্গত কারণেই এবার ফলন কম হবে। এরপর বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতি নাজুক করে তুলেছে।’ ডিএই সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে গত বছর রেকর্ড তিন হাজার ৪৫ টন আম রফতানি হয়, যা আগের বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭৩ শতাংশ।
ডিএইর রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, এবার ফলন কম হলেও কৃষকদের আমরা মানসম্মত আম উৎপাদনের ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছি। এই সময়ে গাছে যে আমটি আছে, এটি যেন অপরিপক্ব অবস্থায় সংগ্রহ করা না হয়। এখনই আম বাড়ন্তের সময়। এখন সঠিক পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় সেচ দিলে আমের আকার বড় হবে এবং ওজন বাড়বে। আমের আকার ও ওজন বাড়াতে পারলে আমের সংখ্যা কম হলেও সার্বিকভাবে উৎপাদন ঘাটতি কমে আসবে।
চাষিরা বলছেন, চলতি বছর আমের ফলন খুবই কম হয়েছে। কারণ, মুকুল আসার সময়টায় এবার শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ ছিল। কৃষিবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে আমে মুকুল আসার সময়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রির মধ্যে থাকাই শ্রেয়। এর বেশি বা কম হলে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি বছর শীত মৌসুমে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রিরও নিচে নেমে আমারে মুকুলকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসময় ঘনঘন শৈত্যপ্রবাহ যেমন আমের মুকুল তৈরি ও গুটিতে বাধাগ্রস্ত করেছে তেমনি এপ্রিল জুড়ে অধিক তাপমাত্রার কারণে আমের গুটি থেকে ছোট আম ঝরে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, উৎপাদন কম হবে বিধায় এ বছর বাজারে আমের সঙ্কট থাকবে। ফলে দামও ‘আকাশচুম্বী’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়া দীর্ঘমেয়াদি হলে হয়তো সামনের বছরগুলোতেও আমের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।