পদ্মায় পানি নেই, বন্ধ সেচ - মাঠ ফেটে চৌচির

#
news image

পদ্মা নদীতে পানিস্বল্পতায় চালানো যাচ্ছে না দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) সচল থাকা একমাত্র পাম্প। জিকে খালে পানি না থাকায় এবং বৃষ্টি না হওয়ায় অকেজো হয়ে পড়েছে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার ২ লাখেরও বেশি টিউবওয়েল। পানির অভাবে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৪ জেলার প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ১০৭ হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রায় দেড়শ টন খাদ্য ঘটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্রধান পাম্প ও ১২টি সাবসিডিয়ারি পাম্পের সাহায্যে খালে পানি দেওয়া হয়। প্রধান দুটি মেশিন আগে থেকে নষ্ট থাকায় চলতি বোরো মৌসুমে ১নং পাম্পটি দিয়ে সর্বোচ্চ ৯৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সেই পাম্পটির সার্কিট নষ্ট হলে অচল হয়ে যায়। এপ্রিলে পাম্পটি সচল করা হলেও পানি সরবরাহে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পদ্মার পানিস্বল্পতা।

সেচ প্রকল্পের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পাম্প চালুর জন্য প্রকল্পের ইনটেক চ্যানেলে কমপক্ষে ১৪ ফুট উচ্চতায় পানি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ওই চ্যানেলে এখন পানির উচ্চতা মাত্র ১১ ফুট। ফলে পাম্প চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ৪ জেলার কয়েক লাখ কৃষক। জানা গেছে, পদ্মায় পানির স্তর স্বাভাবিক থাকলে প্রকল্পের একেকটি পাম্প প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২৮ হাজার ৩১৬ দশমিক ৮৫ লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে। প্রকল্পটি সচল থাকলে প্রতি বিঘায় মাত্র দুইশ টাকা সেচ খরচে চাষাবাদ করতে পারেন কুষ্টিয়া অঞ্চলের কৃষকরা। তবে প্রকল্পের পানি না পাওয়ায় এবার শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ বাবদ প্রতি বিঘায় খরচ পড়ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।

ভেড়ামার কৃষক আবেদ আলী জানান, সেচ প্রকল্পের প্রধান এবং শাখা খালে পানি থাকলে আশপাশের নলকূপ ও পুকুরে পানি স্বাভাবিক থাকে। সেচ খালে পানি না থাকায় নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকে ধান আবাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু পানি সরবরাহ শুরুর ১৯ দিনের মাথায় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বোরো মৌসুমে সেচের পানি আর পাওয়া যাবে না বলে তথ্য থাকার কথা জানিয়েছেন জিকে কৃষক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা এখন শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে ধান রোপণ করছি। এতে উৎপাদন ব্যয় অনেক বাড়বে। বাড়তি খরচের আশঙ্কায় অনেক কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

পানির অভাবে কুষ্টিয়া অঞ্চলে ৫৪৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান। তিনি দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, এতে কুষ্টিয়া অঞ্চলে প্রায় ২৫শ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। ৪ জেলা মিলে একশ থেকে দেড়শ টন খাদ্য ঘাটতি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, পানির কারণে এবার ফলন কম হবে। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে ধান রোপণে কৃষকদের অনেক ব্যয় বাড়বে।

জিকে সেচ প্রকল্পের ৩নং পাম্পটি ২০১৭ সালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২নং পাম্পে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় ২০২১ সালে। সেই থেকে পাম্প দুটি বন্ধ রয়েছে বলে জানান জিকে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। সেচ প্রকল্পে জটিলতার বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করা হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পানি সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিক। এ সমস্যা হয়তো বেশি দিন থাকবে না।’

প্রকল্পের পানি সংকট নিয়ে জাতীয় সংসদে কথা বলেছেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন। তিনি দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, এ অঞ্চলের সুপেয় পানির সংকট সমাধানে কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে আর পানির সমস্যা থাকবে না।

 

নাগরিক প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া

০৭ মে, ২০২৪,  2:06 PM

news image

পদ্মা নদীতে পানিস্বল্পতায় চালানো যাচ্ছে না দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) সচল থাকা একমাত্র পাম্প। জিকে খালে পানি না থাকায় এবং বৃষ্টি না হওয়ায় অকেজো হয়ে পড়েছে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার ২ লাখেরও বেশি টিউবওয়েল। পানির অভাবে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৪ জেলার প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ১০৭ হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রায় দেড়শ টন খাদ্য ঘটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্রধান পাম্প ও ১২টি সাবসিডিয়ারি পাম্পের সাহায্যে খালে পানি দেওয়া হয়। প্রধান দুটি মেশিন আগে থেকে নষ্ট থাকায় চলতি বোরো মৌসুমে ১নং পাম্পটি দিয়ে সর্বোচ্চ ৯৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সেই পাম্পটির সার্কিট নষ্ট হলে অচল হয়ে যায়। এপ্রিলে পাম্পটি সচল করা হলেও পানি সরবরাহে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পদ্মার পানিস্বল্পতা।

সেচ প্রকল্পের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পাম্প চালুর জন্য প্রকল্পের ইনটেক চ্যানেলে কমপক্ষে ১৪ ফুট উচ্চতায় পানি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ওই চ্যানেলে এখন পানির উচ্চতা মাত্র ১১ ফুট। ফলে পাম্প চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ৪ জেলার কয়েক লাখ কৃষক। জানা গেছে, পদ্মায় পানির স্তর স্বাভাবিক থাকলে প্রকল্পের একেকটি পাম্প প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২৮ হাজার ৩১৬ দশমিক ৮৫ লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে। প্রকল্পটি সচল থাকলে প্রতি বিঘায় মাত্র দুইশ টাকা সেচ খরচে চাষাবাদ করতে পারেন কুষ্টিয়া অঞ্চলের কৃষকরা। তবে প্রকল্পের পানি না পাওয়ায় এবার শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ বাবদ প্রতি বিঘায় খরচ পড়ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।

ভেড়ামার কৃষক আবেদ আলী জানান, সেচ প্রকল্পের প্রধান এবং শাখা খালে পানি থাকলে আশপাশের নলকূপ ও পুকুরে পানি স্বাভাবিক থাকে। সেচ খালে পানি না থাকায় নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকে ধান আবাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু পানি সরবরাহ শুরুর ১৯ দিনের মাথায় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বোরো মৌসুমে সেচের পানি আর পাওয়া যাবে না বলে তথ্য থাকার কথা জানিয়েছেন জিকে কৃষক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা এখন শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে ধান রোপণ করছি। এতে উৎপাদন ব্যয় অনেক বাড়বে। বাড়তি খরচের আশঙ্কায় অনেক কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

পানির অভাবে কুষ্টিয়া অঞ্চলে ৫৪৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান। তিনি দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, এতে কুষ্টিয়া অঞ্চলে প্রায় ২৫শ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। ৪ জেলা মিলে একশ থেকে দেড়শ টন খাদ্য ঘাটতি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, পানির কারণে এবার ফলন কম হবে। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে ধান রোপণে কৃষকদের অনেক ব্যয় বাড়বে।

জিকে সেচ প্রকল্পের ৩নং পাম্পটি ২০১৭ সালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২নং পাম্পে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় ২০২১ সালে। সেই থেকে পাম্প দুটি বন্ধ রয়েছে বলে জানান জিকে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। সেচ প্রকল্পে জটিলতার বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করা হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পানি সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিক। এ সমস্যা হয়তো বেশি দিন থাকবে না।’

প্রকল্পের পানি সংকট নিয়ে জাতীয় সংসদে কথা বলেছেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন। তিনি দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, এ অঞ্চলের সুপেয় পানির সংকট সমাধানে কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে আর পানির সমস্যা থাকবে না।