রাস্তার ধুলোয় মাইক্রোপ্লাস্টিক, মারাত্মক ঝুঁকিতে শিশুরা

#
news image

বর্তমান বিশ্বে গবেষকদের জন্য বহুল চর্চিত শব্দগুলোর অন্যতম হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক। মায়ের দুধ থেকে শুরু করে মানুষের রক্ত, লিভার, ফুসফুস, কিডনি এমনকি প্ল্যাসেন্টাল টিস্যুতেও পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব। মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে সারা পৃথিবীতেই চলছে নানা গবেষণা। সম্প্রতি দেশের ৮টি বিভাগের শহুরে রাস্তার ধুলায় (আউটডোর ডাস্ট) স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে এমন পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছেন যবিপ্রবির এক দল গবেষক। গবেষক দলটি দেশের ৮টি বিভাগ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে  সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন  ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ’ নমুনায়। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

সাধারণত যে সব প্লাস্টিকের আকার ৫ মিলিমিটারের চেয়ে কম, সেগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। মাইক্রোপ্লাস্টিক যেকোনো প্লাস্টিক পলিমার হতে পারে। প্লাস্টিকের গঠন, রং ও পলিমারের ওপর ভিত্তি করে মাইক্রোপ্লাস্টিককে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। বিভাগীয় শহরগুলোতে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন কারণে রাস্তা, হাট-বাজার, বাসস্টপ এবং রেলস্টেশনে অনেকটা সময় অতিবাহিত করে। যেখান থেকে রাস্তার ধুলাবালির মতোই এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা শ্বাস-প্রশ্বাসসহ অন্যান্য মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে, যা মানুষের শরীরে ক্যানসার এবং ননক্যানসারজনিত নানা সমস্যার জন্য দায়ী । মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশ থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নিজের দেহে শোষণ ও জমা করতে সক্ষম হয়। পরবর্তী সময়ে  বিভিন্ন উপায়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহে প্রবেশ করে এ বিষাক্ত পদার্থগুলো মানব শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছানোর বাহক হিসেবে কাজ করে। কিছু মাইক্রোপ্লাস্টিক এন্ডোক্রাইন-ব্যাহত রাসায়নিক ধারণ করে যা হরমোনের ভারসাম্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি দ্বারা ট্রিগার হতে পারে এবং সামগ্রিক ইমিউন ফাংশনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। মানব শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রবেশ ভ্রূণের বিকাশে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষক দলটি মূলত বিভাগীয় শহুরে রাস্তায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ এবং মানবদেহ ও পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নির্ণয়ের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। গবেষণাপত্র অনুসারে, বিভাগীয় শহরগুলোর রাস্তার ধুলার নমুনায় গড়ে প্রতি গ্রামে ৫২টি করে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ প্রতি গ্রামে প্রায় ১০৬টি এবং সিলেটে সর্বনিম্ন ৩৫টি মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। গবেষক দলটি মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংখ্যা ও এদের পলিমারের ওপর ভিত্তি করে মানুষের দেহের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি ও এর মাত্রা নির্ণয় করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভৌগোলিক তথ্যব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা দেশের অভ্যন্তরে প্রতিটি বিভাগভিত্তিক শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করেন ও তার স্থানিক বিতরণ দেখিয়েছেন।

এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাপস কুমার চক্রবর্তী বলেন, বর্তমান বিশ্বে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ পরিবেশ এবং মানবজাতির জন্য অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা ও হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদিতে আমাদের চলাচল নিত্যদিনের রুটিনের অন্তর্ভুক্ত। এ সময় আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসসহ অন্য মাধ্যমে রাস্তায় ধুলা ও বাতাসে থাকা  মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ, অ্যালার্জি, এন্ডোক্রাইন-ডিসঅর্ডার, মানব প্রজননে ব্যাঘাতসহ ক্যানসার সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার পর আমরা মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ ও পলিমারের ওপর ভিত্তি করে মানবদেহে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ইকোলজিক্যাল রিস্ক নির্ণয় করেছি। যেখানে আমরা দেখেছি সারা দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জেলা ব্যতীত বাকি সব বিভাগের শিশুরা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের প্রাপ্ত বয়স্করা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁঁকির মধ্যে রয়েছে। দূষণের দিক থেকে ঢাকা বিভাগ সবার থেকে এগিয়ে এবং দ্বিতীয় স্থানে আছে বরিশাল বিভাগ। দেশের ৮টি বিভাগেই সহনশীল থেকে উচ্চ পর্যায়ে পলিমার রিস্ক রয়েছে যা, হতে পারে মানবদেহে ক্যানসার সৃষ্টির কারণ।
 
তাপস কুমার চক্রবর্তী আরও বলেন, রাস্তার পাশাপাশি আমরা বাসাবাড়ির ধুলাতেও (ইনডোর ডাস্ট) মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আরেকটি গবেষণা চালিয়েছি যেখানে আমরা প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছি এবং সেখানে রয়েছে মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি। গবেষণাপত্রটি পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে। আশা করি, অতি শিগগির সেটিও পাবলিশ হবে।

নাগরিক প্রতিবেদন

২৭ এপ্রিল, ২০২৪,  5:41 PM

news image

বর্তমান বিশ্বে গবেষকদের জন্য বহুল চর্চিত শব্দগুলোর অন্যতম হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক। মায়ের দুধ থেকে শুরু করে মানুষের রক্ত, লিভার, ফুসফুস, কিডনি এমনকি প্ল্যাসেন্টাল টিস্যুতেও পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব। মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে সারা পৃথিবীতেই চলছে নানা গবেষণা। সম্প্রতি দেশের ৮টি বিভাগের শহুরে রাস্তার ধুলায় (আউটডোর ডাস্ট) স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে এমন পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছেন যবিপ্রবির এক দল গবেষক। গবেষক দলটি দেশের ৮টি বিভাগ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে  সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন  ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ’ নমুনায়। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

সাধারণত যে সব প্লাস্টিকের আকার ৫ মিলিমিটারের চেয়ে কম, সেগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। মাইক্রোপ্লাস্টিক যেকোনো প্লাস্টিক পলিমার হতে পারে। প্লাস্টিকের গঠন, রং ও পলিমারের ওপর ভিত্তি করে মাইক্রোপ্লাস্টিককে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। বিভাগীয় শহরগুলোতে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন কারণে রাস্তা, হাট-বাজার, বাসস্টপ এবং রেলস্টেশনে অনেকটা সময় অতিবাহিত করে। যেখান থেকে রাস্তার ধুলাবালির মতোই এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা শ্বাস-প্রশ্বাসসহ অন্যান্য মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে, যা মানুষের শরীরে ক্যানসার এবং ননক্যানসারজনিত নানা সমস্যার জন্য দায়ী । মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশ থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নিজের দেহে শোষণ ও জমা করতে সক্ষম হয়। পরবর্তী সময়ে  বিভিন্ন উপায়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহে প্রবেশ করে এ বিষাক্ত পদার্থগুলো মানব শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছানোর বাহক হিসেবে কাজ করে। কিছু মাইক্রোপ্লাস্টিক এন্ডোক্রাইন-ব্যাহত রাসায়নিক ধারণ করে যা হরমোনের ভারসাম্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি দ্বারা ট্রিগার হতে পারে এবং সামগ্রিক ইমিউন ফাংশনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। মানব শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রবেশ ভ্রূণের বিকাশে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষক দলটি মূলত বিভাগীয় শহুরে রাস্তায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ এবং মানবদেহ ও পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নির্ণয়ের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। গবেষণাপত্র অনুসারে, বিভাগীয় শহরগুলোর রাস্তার ধুলার নমুনায় গড়ে প্রতি গ্রামে ৫২টি করে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ প্রতি গ্রামে প্রায় ১০৬টি এবং সিলেটে সর্বনিম্ন ৩৫টি মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। গবেষক দলটি মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংখ্যা ও এদের পলিমারের ওপর ভিত্তি করে মানুষের দেহের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি ও এর মাত্রা নির্ণয় করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভৌগোলিক তথ্যব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা দেশের অভ্যন্তরে প্রতিটি বিভাগভিত্তিক শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করেন ও তার স্থানিক বিতরণ দেখিয়েছেন।

এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাপস কুমার চক্রবর্তী বলেন, বর্তমান বিশ্বে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ পরিবেশ এবং মানবজাতির জন্য অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা ও হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদিতে আমাদের চলাচল নিত্যদিনের রুটিনের অন্তর্ভুক্ত। এ সময় আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসসহ অন্য মাধ্যমে রাস্তায় ধুলা ও বাতাসে থাকা  মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ, অ্যালার্জি, এন্ডোক্রাইন-ডিসঅর্ডার, মানব প্রজননে ব্যাঘাতসহ ক্যানসার সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার পর আমরা মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ ও পলিমারের ওপর ভিত্তি করে মানবদেহে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ইকোলজিক্যাল রিস্ক নির্ণয় করেছি। যেখানে আমরা দেখেছি সারা দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জেলা ব্যতীত বাকি সব বিভাগের শিশুরা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের প্রাপ্ত বয়স্করা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁঁকির মধ্যে রয়েছে। দূষণের দিক থেকে ঢাকা বিভাগ সবার থেকে এগিয়ে এবং দ্বিতীয় স্থানে আছে বরিশাল বিভাগ। দেশের ৮টি বিভাগেই সহনশীল থেকে উচ্চ পর্যায়ে পলিমার রিস্ক রয়েছে যা, হতে পারে মানবদেহে ক্যানসার সৃষ্টির কারণ।
 
তাপস কুমার চক্রবর্তী আরও বলেন, রাস্তার পাশাপাশি আমরা বাসাবাড়ির ধুলাতেও (ইনডোর ডাস্ট) মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আরেকটি গবেষণা চালিয়েছি যেখানে আমরা প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছি এবং সেখানে রয়েছে মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি। গবেষণাপত্রটি পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে। আশা করি, অতি শিগগির সেটিও পাবলিশ হবে।