তীব্র তাপদাহে বোরো ধানে হিটশকের শঙ্কা

#
news image

এ বছর বোরো আবাদের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ায় হিটশকে মাঠের বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, অধিকাংশ এলাকায় ধান পেকে ওঠায় তাপমাত্রা বাড়লেও ক্ষতির শঙ্কা কম।

কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, মূলত বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা প্রায়শই এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আগে এ সমস্যা কম দেখা গেলেও বর্তমানে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব এবং তৎসংলগ্ন সময়ে উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ এর অন্যতম কারণ। এ সময় ধানের যেসব জাত ফুল ফোটা পর্যায় বা ফুল ফোটা চলমান অথবা সামনে ফুল ফুটবে এ রকম অবস্থায় রয়েছে, সেই জাতগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান তারা।

বিজ্ঞানীরা আরও জানান, বোরো মৌসুম শুরু হয় নভেম্বরের শীতে আর শেষ হয় এপ্রিল-মে মাসের চরম গরমে। বোরো ধানের জন্য ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা অসহনীয়। ফুল ফোটার সময় ১ থেকে ২ ঘণ্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে ধানে মাত্রাতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়। একে বলে হিটশক। তারা জানান, ধানগাছে যখন ফুল ধরে, ধানের আকৃতি তৈরি হয় বা দুধ অবস্থায় থাকে, তখনই শিষ ব্লাস্টের সংক্রমণ বেড়ে যায়। শিষ ব্লাস্টের সংক্রমণ হলে গাছের গোড়া থেকে কোনো খাবার পায় না ধান। ফলে শুকিয়ে চিটা হয়ে যায়। এতে শতভাগ পর্যন্ত ফলন বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা থাকে।

কৃষকরা বলছেন, এ বছর বোরো আবাদের জন্য আবহাওয়া অনেকটা অনুকূলে ছিল, যে কারণে কোনো পোকামাকড়ে ক্ষতি করতে পারেনি। এ জন্য এ বছর বোরো আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শেষ সময়ে এ তাপমাত্রা আমাদের চিন্তায় ফেলেছে। হিটশকে বোরো আবাদের ক্ষতি হলে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এগোমেট ল্যাবের সমন্বয়ক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান বলেন, ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ধানের ফুল আসা, দানা গঠন এবং ভরাটে প্রভাব ফেলে। এটি সরাসরি ধানের ফলনকে প্রভাবিত করে। তিনি আরও বলেন, তাপমাত্রা যদি কয়েক ঘণ্টার জন্যও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, তবে পরাগরেণুর কার্যকারিতা হ্রাস পাবে। ফলে ধানের শীষে শুকনো বা অপূর্ণ ধানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, মানে ধান চিটা হয়ে যায়। এতে করে ফলনও কমে যাবে। তাপপ্রবাহের প্রভাব এড়াতে তিনি বলেন, এ সময় ধানক্ষেতে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি বা ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে।

এই কৃষিবিজ্ঞানী আরও বলেন, উচ্চ তাপমাত্রা ধানগাছকে নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের জন্য সংবেদনশীল করে তোলে। এটি প্রতিরোধ করতে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত। তাপপ্রবাহে ব্রির

সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ধানের ফুল ফোটা ও পরাগায়নের সময় ধানের যে শীষগুলোয় ফুল ফুটতে থাকে, তা খুবই সক্রিয় অবস্থায় থাকে। এ অবস্থায় ধানের শীষকে তপ্ত হাওয়ার (লু হাওয়া) ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য গাছ প্রচুর পরিমাণে পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বের করে দেয়। এ প্রস্বেদন অনেকটা গাছের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার কুলিং সিস্টেমের (শীতলীকরণ ব্যবস্থা) মতো কাজ করে। কাজেই এ সময় তীব্র দাবদাহের হিটশকের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার উপায় হচ্ছে বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে এবং ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। এ ছাড়া কিছু রাসায়নিক সারের পরিমিত ব্যবহার এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে ধানগাছকে রক্ষা করতে পারে।

 

নাগরিক প্রতিবেদন

২২ এপ্রিল, ২০২৪,  2:11 PM

news image

এ বছর বোরো আবাদের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ায় হিটশকে মাঠের বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, অধিকাংশ এলাকায় ধান পেকে ওঠায় তাপমাত্রা বাড়লেও ক্ষতির শঙ্কা কম।

কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, মূলত বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা প্রায়শই এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আগে এ সমস্যা কম দেখা গেলেও বর্তমানে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব এবং তৎসংলগ্ন সময়ে উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ এর অন্যতম কারণ। এ সময় ধানের যেসব জাত ফুল ফোটা পর্যায় বা ফুল ফোটা চলমান অথবা সামনে ফুল ফুটবে এ রকম অবস্থায় রয়েছে, সেই জাতগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান তারা।

বিজ্ঞানীরা আরও জানান, বোরো মৌসুম শুরু হয় নভেম্বরের শীতে আর শেষ হয় এপ্রিল-মে মাসের চরম গরমে। বোরো ধানের জন্য ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা অসহনীয়। ফুল ফোটার সময় ১ থেকে ২ ঘণ্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে ধানে মাত্রাতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়। একে বলে হিটশক। তারা জানান, ধানগাছে যখন ফুল ধরে, ধানের আকৃতি তৈরি হয় বা দুধ অবস্থায় থাকে, তখনই শিষ ব্লাস্টের সংক্রমণ বেড়ে যায়। শিষ ব্লাস্টের সংক্রমণ হলে গাছের গোড়া থেকে কোনো খাবার পায় না ধান। ফলে শুকিয়ে চিটা হয়ে যায়। এতে শতভাগ পর্যন্ত ফলন বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা থাকে।

কৃষকরা বলছেন, এ বছর বোরো আবাদের জন্য আবহাওয়া অনেকটা অনুকূলে ছিল, যে কারণে কোনো পোকামাকড়ে ক্ষতি করতে পারেনি। এ জন্য এ বছর বোরো আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শেষ সময়ে এ তাপমাত্রা আমাদের চিন্তায় ফেলেছে। হিটশকে বোরো আবাদের ক্ষতি হলে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এগোমেট ল্যাবের সমন্বয়ক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান বলেন, ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ধানের ফুল আসা, দানা গঠন এবং ভরাটে প্রভাব ফেলে। এটি সরাসরি ধানের ফলনকে প্রভাবিত করে। তিনি আরও বলেন, তাপমাত্রা যদি কয়েক ঘণ্টার জন্যও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, তবে পরাগরেণুর কার্যকারিতা হ্রাস পাবে। ফলে ধানের শীষে শুকনো বা অপূর্ণ ধানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, মানে ধান চিটা হয়ে যায়। এতে করে ফলনও কমে যাবে। তাপপ্রবাহের প্রভাব এড়াতে তিনি বলেন, এ সময় ধানক্ষেতে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি বা ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে।

এই কৃষিবিজ্ঞানী আরও বলেন, উচ্চ তাপমাত্রা ধানগাছকে নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের জন্য সংবেদনশীল করে তোলে। এটি প্রতিরোধ করতে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত। তাপপ্রবাহে ব্রির

সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ধানের ফুল ফোটা ও পরাগায়নের সময় ধানের যে শীষগুলোয় ফুল ফুটতে থাকে, তা খুবই সক্রিয় অবস্থায় থাকে। এ অবস্থায় ধানের শীষকে তপ্ত হাওয়ার (লু হাওয়া) ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য গাছ প্রচুর পরিমাণে পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বের করে দেয়। এ প্রস্বেদন অনেকটা গাছের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার কুলিং সিস্টেমের (শীতলীকরণ ব্যবস্থা) মতো কাজ করে। কাজেই এ সময় তীব্র দাবদাহের হিটশকের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার উপায় হচ্ছে বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে এবং ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। এ ছাড়া কিছু রাসায়নিক সারের পরিমিত ব্যবহার এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে ধানগাছকে রক্ষা করতে পারে।