তাপপ্রবাহ আর গরম - খাবার স্যালাইন-সর্দি-কাশির ওষুধের চাহিদা বেড়েই চলেছে
নাগরিক প্রতিবেদন
২০ এপ্রিল, ২০২৪, 6:36 PM
তাপপ্রবাহ আর গরম - খাবার স্যালাইন-সর্দি-কাশির ওষুধের চাহিদা বেড়েই চলেছে
চলমান তাপপ্রবাহ আর অতিরিক্ত গরমের কারণে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, খাদ্যে বিষক্রিয়া এবং ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে বাজারে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এসব রোগের ওষুধের চাহিদাও। বিশেষ করে গত কয়েক দিনের প্রচণ্ড গরমে খাবার স্যালাইন ও গ্লুকোজ স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে অন্তত ২০ গুণ। এ ছাড়াও জ্বর, সর্দি ও ঠান্ডার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। গ্লুকোজ স্যালাইনেরও একই অবস্থা।
সরেজমিনে রাজধানীর মিটফোর্ড, বংশাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা, শাহবাগ এবং বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলির বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ফার্মেসির মালিক ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে দিনে দুই প্যাকেট স্যালাইন বিক্রি হলেও গরমের কারণে এখন বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ প্যাকেট। আবার নাপা, নাপা এক্সট্রা, এইচ প্লাস, নাপা সিরাপ আগে যদি ১০ জন ক্রেতা কিনতেন, সেখানে এখন ৩০ জন চাচ্ছেন। একই সঙ্গে সর্দি, চর্মরোগের জন্য অ্যান্টি হিস্টামিন (ওরাল) জেনেরিক ওষুধের চাহিদাও তিনগুণের মতো বেড়েছে। তবে কোনো সংকট না থাকলেও কিছু কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এদিকে গরমের কারণে অতিরিক্ত স্যালাইন না খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ডায়রিয়ার সময় প্রচুর লবণ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, এখন স্যালাইনের মধ্যে যে লবণ (সোডিয়াম) থাকে তা কোষের ভেতরে ঢোকাতে গ্লুকোজের সহায়তা লাগে। গ্লুকোজ তাকে এনার্জি দেয়। আর যে পানিতে গ্লুকোজ থাকে তা নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে জীবাণু বেড়ে ওঠার জন্য বিপজ্জনকভাবে কাজ করে। আর ১২ ঘণ্টা পর সেখানে জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। এ স্যালাইন খাওয়ালে শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। অনেক সময় মৃত্যুও হতে পারে। তাই ডায়রিয়া হলে বয়স অনুযায়ী নিয়ম করে স্যালাইনসহ সুষম খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ডায়রিয়ার জন্য বাজারে খাবার স্যালাইন এসএমসির ওরস্যালাইন-এন, এক্মি টেস্টি স্যালাইন, এসএমসির ফ্রুটি, বিভিন্ন অরেঞ্জ সফট ড্রিংক পাউডার এবং ইমোটিল, ফ্লাজিল বা মেট্রোনিডাজল ক্যাপসুল, মেট্রিল সিরাপের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে।
একইসঙ্গে সর্দি-জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, গলাব্যথা, বমি, ফুড পয়জনিংসহ নানা সমস্যার জন্য নাপা, নাপা এক্সট্রা, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ, নাপা সাপোজিটরি, ক্যাফেইন এইচপ্লাস ট্যাবলেট, সেফিক্সম সিরাপ, মন্ট্রিল, জয়ট্রিপ ট্যাবলেট, নাপা ইরাসেট সিরাপ, হিসটাল সিরাপ, ফেক্সো সিরাপ, মোনাস ট্যাবলেট এবং মোনাস সিরাপ টেন, মোনাস সিরাপ ৫, মোনাস সিরাপ ৪ (শিশুদের), ডকসি-এ, রেনোভা এক্সআর, সিপ্রোসিন, কিটোফ সিরাপ, নাকের অ্যান্টাজল নেজাল ড্রপ, সেফ-৩, সেফ-১০ এবং জি-ম্যাক্স পেডিয়ামিন অ্যান্টিবায়োটিক সিরাপ চিকিৎসকের কোনো ধরনের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই দেদার বিক্রি করতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে ইউনিভার্সাল টেস্টি স্যালাইনের সরবরাহ বন্ধ থাকায় এসএমসির ওরস্যালাইন-এন, এক্মি টেস্টি স্যালাইনের চাহিদা এখন শীর্ষে।
শুক্রবার বিকালে বংশালের লুৎফর রহমান লেনে এক ফার্মেসিতে ১৯ মাস বয়সি সামিয়াকে নিয়ে আসেন তার বাবা জহিরুল ইসলাম। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। গতরাত থেকে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছে। তাই বাচ্চাকে এখানে নেবুলাইজার করাতে এবং ওষুধ কিনতে এসেছি। তাকে তার বাচ্চার জন্য ফেক্সো সিরাপ, এইস্ সিরাপ এবং ইরাসেট সিরাপ কিনতে দেখা যায়। এ সময় তাকে ওষুধের দাম নিয়ে দোকানির সঙ্গে তর্ক করতেও দেখা গেছে।
জহিরুল বলেন, দিন দিন ওষুধের দাম বাড়ছে। কিছুদিন আগে যে ওষুধ ৩০ টাকা দিয়ে কিনেছি, আজ দাম রাখছে ৪৫ টাকা। আমরা তো সাধারণ মানুষ। সবকিছুর দাম বাড়ায় আমরা তো অসহায় হয়ে পড়েছি। এ এলাকার মেডিসিন কর্নারের মালিক আজিজুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, গত কয়েকদিনের গরমে স্যালাইনের অনেক চাহিদা বেড়েছে। আগে যদি দুই প্যাকেট বিক্রি হতো এখন প্রায় ৭-৮ প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। ঈদের ছুটি শেষে এখনও সবাই ঢাকায় ফেরেননি। সবাই থাকলে আরও বেশি বিক্রি হতো। তবে কোনো স্যালাইনের দাম বাড়েনি বলে জানান তিনি।
সিদ্দিক বাজার এলাকায় রাসেল ফার্মেসির দোকানি আলতাফ হোসেন বলেন, গরমে স্যালাইন, পেটের সমস্যা, সর্দি-জ্বর-কাশির বিভিন্ন ওষুধের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। শাহবাগের ভিআইপি ড্রাগ হাউসের মালিক এমএম কামাল বলেন, গত কয়েকদিনে স্যালাইনসহ অনেক ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। তবে কোনো সংকট নেই।
বাংলামোটর এলাকার মায়ের দোয়া ফার্মেসির মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, গরমের কারণে বাচ্চাসহ নানা বয়সি মানুষ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধের চাহিদা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আমার দোকানেও তা-ই হচ্ছে। কোনো ওষুধের দাম বেড়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্যালাইনের দাম বাড়েনি। তবে কিছু কিছু ওষুধের দাম তো বেড়েছেই। যেমন নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ রোধে ব্যবহৃত অ্যাজিন ক্যাপসুল (৫০০ এমজি) প্রতি পিস আগের দাম ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে। ছয়টির এক পাতার দাম ২৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৩০ টাকা হয়েছে।
অন্যদিকে, অসহনীয় গরমে শ্রমজীবী, শিশু ও বয়স্কদের অনেকেই ডায়রিয়া, আমাশয় ও জন্ডিসের মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার অতিরিক্ত ঘামে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় অনেকেই সুরক্ষিত থাকতে স্যালাইন কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) বা কলেরা হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্যালাইন খেতে হবে বয়সভেদে নিয়ম করে। আবার একবার গুলিয়ে নিলে ছয় ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না। নিয়ম না মেনে স্যালাইন খেলে বিশেষ করে শিশুদের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তবে বড়দের খুব একটা সমস্যা হয় না।
তিনি বলেন, বাজারে সাধারণ যেসব প্যাকেট জাতীয় ওআরএস বা ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট পাওয়া যায় তার মধ্যে থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, গ্লুকোজ এবং ট্রাইসোডিয়াম সাইট্রেট লবণ জাতীয় পদার্থ। খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, প্যাকেটের সবটুকু গুঁড়া আধা লিটার (ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নেওয়া) পানিতে ভালো করে গুলিয়ে খাওয়াতে হবে। কিন্তু কেউ যদি এর চেয়ে অল্প পানিতে স্যালাইন মিশিয়ে খাওয়ান, তাহলে স্বাভাবিকভাবে শরীরে লবণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে। এর প্রভাবে কোষ থেকে পানি বেরিয়ে আসবে, বিশেষ করে মস্তিষ্কের। একসময় কোষগুলো নষ্ট হবে এবং এর পরিণতিতে মৃত্যুও হতে পারে।
আর এ গরমে প্রচুর পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন, তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও উন্মুক্ত খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।
নাগরিক প্রতিবেদন
২০ এপ্রিল, ২০২৪, 6:36 PM
চলমান তাপপ্রবাহ আর অতিরিক্ত গরমের কারণে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, খাদ্যে বিষক্রিয়া এবং ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে বাজারে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এসব রোগের ওষুধের চাহিদাও। বিশেষ করে গত কয়েক দিনের প্রচণ্ড গরমে খাবার স্যালাইন ও গ্লুকোজ স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে অন্তত ২০ গুণ। এ ছাড়াও জ্বর, সর্দি ও ঠান্ডার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। গ্লুকোজ স্যালাইনেরও একই অবস্থা।
সরেজমিনে রাজধানীর মিটফোর্ড, বংশাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা, শাহবাগ এবং বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলির বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ফার্মেসির মালিক ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে দিনে দুই প্যাকেট স্যালাইন বিক্রি হলেও গরমের কারণে এখন বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ প্যাকেট। আবার নাপা, নাপা এক্সট্রা, এইচ প্লাস, নাপা সিরাপ আগে যদি ১০ জন ক্রেতা কিনতেন, সেখানে এখন ৩০ জন চাচ্ছেন। একই সঙ্গে সর্দি, চর্মরোগের জন্য অ্যান্টি হিস্টামিন (ওরাল) জেনেরিক ওষুধের চাহিদাও তিনগুণের মতো বেড়েছে। তবে কোনো সংকট না থাকলেও কিছু কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এদিকে গরমের কারণে অতিরিক্ত স্যালাইন না খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ডায়রিয়ার সময় প্রচুর লবণ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, এখন স্যালাইনের মধ্যে যে লবণ (সোডিয়াম) থাকে তা কোষের ভেতরে ঢোকাতে গ্লুকোজের সহায়তা লাগে। গ্লুকোজ তাকে এনার্জি দেয়। আর যে পানিতে গ্লুকোজ থাকে তা নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে জীবাণু বেড়ে ওঠার জন্য বিপজ্জনকভাবে কাজ করে। আর ১২ ঘণ্টা পর সেখানে জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। এ স্যালাইন খাওয়ালে শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। অনেক সময় মৃত্যুও হতে পারে। তাই ডায়রিয়া হলে বয়স অনুযায়ী নিয়ম করে স্যালাইনসহ সুষম খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ডায়রিয়ার জন্য বাজারে খাবার স্যালাইন এসএমসির ওরস্যালাইন-এন, এক্মি টেস্টি স্যালাইন, এসএমসির ফ্রুটি, বিভিন্ন অরেঞ্জ সফট ড্রিংক পাউডার এবং ইমোটিল, ফ্লাজিল বা মেট্রোনিডাজল ক্যাপসুল, মেট্রিল সিরাপের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে।
একইসঙ্গে সর্দি-জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, গলাব্যথা, বমি, ফুড পয়জনিংসহ নানা সমস্যার জন্য নাপা, নাপা এক্সট্রা, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ, নাপা সাপোজিটরি, ক্যাফেইন এইচপ্লাস ট্যাবলেট, সেফিক্সম সিরাপ, মন্ট্রিল, জয়ট্রিপ ট্যাবলেট, নাপা ইরাসেট সিরাপ, হিসটাল সিরাপ, ফেক্সো সিরাপ, মোনাস ট্যাবলেট এবং মোনাস সিরাপ টেন, মোনাস সিরাপ ৫, মোনাস সিরাপ ৪ (শিশুদের), ডকসি-এ, রেনোভা এক্সআর, সিপ্রোসিন, কিটোফ সিরাপ, নাকের অ্যান্টাজল নেজাল ড্রপ, সেফ-৩, সেফ-১০ এবং জি-ম্যাক্স পেডিয়ামিন অ্যান্টিবায়োটিক সিরাপ চিকিৎসকের কোনো ধরনের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই দেদার বিক্রি করতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে ইউনিভার্সাল টেস্টি স্যালাইনের সরবরাহ বন্ধ থাকায় এসএমসির ওরস্যালাইন-এন, এক্মি টেস্টি স্যালাইনের চাহিদা এখন শীর্ষে।
শুক্রবার বিকালে বংশালের লুৎফর রহমান লেনে এক ফার্মেসিতে ১৯ মাস বয়সি সামিয়াকে নিয়ে আসেন তার বাবা জহিরুল ইসলাম। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। গতরাত থেকে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছে। তাই বাচ্চাকে এখানে নেবুলাইজার করাতে এবং ওষুধ কিনতে এসেছি। তাকে তার বাচ্চার জন্য ফেক্সো সিরাপ, এইস্ সিরাপ এবং ইরাসেট সিরাপ কিনতে দেখা যায়। এ সময় তাকে ওষুধের দাম নিয়ে দোকানির সঙ্গে তর্ক করতেও দেখা গেছে।
জহিরুল বলেন, দিন দিন ওষুধের দাম বাড়ছে। কিছুদিন আগে যে ওষুধ ৩০ টাকা দিয়ে কিনেছি, আজ দাম রাখছে ৪৫ টাকা। আমরা তো সাধারণ মানুষ। সবকিছুর দাম বাড়ায় আমরা তো অসহায় হয়ে পড়েছি। এ এলাকার মেডিসিন কর্নারের মালিক আজিজুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, গত কয়েকদিনের গরমে স্যালাইনের অনেক চাহিদা বেড়েছে। আগে যদি দুই প্যাকেট বিক্রি হতো এখন প্রায় ৭-৮ প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। ঈদের ছুটি শেষে এখনও সবাই ঢাকায় ফেরেননি। সবাই থাকলে আরও বেশি বিক্রি হতো। তবে কোনো স্যালাইনের দাম বাড়েনি বলে জানান তিনি।
সিদ্দিক বাজার এলাকায় রাসেল ফার্মেসির দোকানি আলতাফ হোসেন বলেন, গরমে স্যালাইন, পেটের সমস্যা, সর্দি-জ্বর-কাশির বিভিন্ন ওষুধের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। শাহবাগের ভিআইপি ড্রাগ হাউসের মালিক এমএম কামাল বলেন, গত কয়েকদিনে স্যালাইনসহ অনেক ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। তবে কোনো সংকট নেই।
বাংলামোটর এলাকার মায়ের দোয়া ফার্মেসির মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, গরমের কারণে বাচ্চাসহ নানা বয়সি মানুষ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধের চাহিদা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আমার দোকানেও তা-ই হচ্ছে। কোনো ওষুধের দাম বেড়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্যালাইনের দাম বাড়েনি। তবে কিছু কিছু ওষুধের দাম তো বেড়েছেই। যেমন নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ রোধে ব্যবহৃত অ্যাজিন ক্যাপসুল (৫০০ এমজি) প্রতি পিস আগের দাম ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে। ছয়টির এক পাতার দাম ২৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৩০ টাকা হয়েছে।
অন্যদিকে, অসহনীয় গরমে শ্রমজীবী, শিশু ও বয়স্কদের অনেকেই ডায়রিয়া, আমাশয় ও জন্ডিসের মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার অতিরিক্ত ঘামে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় অনেকেই সুরক্ষিত থাকতে স্যালাইন কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) বা কলেরা হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্যালাইন খেতে হবে বয়সভেদে নিয়ম করে। আবার একবার গুলিয়ে নিলে ছয় ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না। নিয়ম না মেনে স্যালাইন খেলে বিশেষ করে শিশুদের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তবে বড়দের খুব একটা সমস্যা হয় না।
তিনি বলেন, বাজারে সাধারণ যেসব প্যাকেট জাতীয় ওআরএস বা ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট পাওয়া যায় তার মধ্যে থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, গ্লুকোজ এবং ট্রাইসোডিয়াম সাইট্রেট লবণ জাতীয় পদার্থ। খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, প্যাকেটের সবটুকু গুঁড়া আধা লিটার (ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নেওয়া) পানিতে ভালো করে গুলিয়ে খাওয়াতে হবে। কিন্তু কেউ যদি এর চেয়ে অল্প পানিতে স্যালাইন মিশিয়ে খাওয়ান, তাহলে স্বাভাবিকভাবে শরীরে লবণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে। এর প্রভাবে কোষ থেকে পানি বেরিয়ে আসবে, বিশেষ করে মস্তিষ্কের। একসময় কোষগুলো নষ্ট হবে এবং এর পরিণতিতে মৃত্যুও হতে পারে।
আর এ গরমে প্রচুর পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন, তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও উন্মুক্ত খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।