ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে,নিয়ন্ত্রণে নতুন উপায় খুঁজছে কর্তিপক্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ নভেম্বর, ২০২২, 10:36 PM
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে,নিয়ন্ত্রণে নতুন উপায় খুঁজছে কর্তিপক্ষ
সারাদেশে এডিস মশা বাহিত রোগ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কর্তৃপক্ষের গৃহীত কোনো পদক্ষেপই এডিসের নিয়ন্ত্রণ, বংশবৃদ্ধি ও দমনে কোনো কাজে আসছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ হাজার ৯৩৪ জন। যদিও দেশের বেশিরভাগ হাসাপাতালের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পায় না।
প্রতিবছর যেখানে নভেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করে, সেখানে এ বছর নভেম্বরের ২৫ দিনে ১০১ জনের মৃত্যুই হয়েছে। এর আগে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল ২০১৯ সালে। এদিকে এডিস নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি নতুন উপায় খুঁজছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওলবাকিয়া নামে ব্যাকটেরিয়া সংযোজিত পুরুষ মশা এনে এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা করছেন তারা। অপরদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায় নিয়ে গবেষণা দরকার। প্রয়োজনে তিনি গবেষকদের অর্থায়ন করতে রাজি আছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান জানান, এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ওলবাকিয়া সংযোজিত পুরুষ মশা পালন ও এ বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্ট ও জিওলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সঙ্গে দূদফা বৈঠক করেছেন।
তিনি বলেন, তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের টিম বাংলাদেশে আমাদের উত্তর সিটির একটা অংশে ওলবাকিয়া পদ্ধতির ওপরে একটা পাইলটিং করতে চাচ্ছে। আমরা রাজি হয়েছি। এ পদ্ধতি সম্পর্কে জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘এটা পুরুষ মশাকে জম্মদানে অক্ষম করার করার পদ্ধতি। ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া যখন প্রকৃতিতে ছাড়া হবে, তখন মূলত স্ত্রী অ্যাসিড মশার সঙ্গে মিলিত হবে, যারা ডেঙ্গু ছড়ায়। এ মিলনে ফলের স্ত্রীর আর বাচ্চা উৎপাদন হবে না। ফলে আস্তে আস্তে স্ত্রী মশাগুলো যখন মারা যাবে, তখন ডেঙ্গু একেবারে কমে যাবে।’
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখছি। কীটপতঙ্গের বা এডিস মশার বিবর্তনের পরিবর্তন দেখছি এবং সময়সীমার পরিবর্তন দেখছি। এ বিষয়ে আমাদের পূর্বাভাস পাওয়া প্রয়োজন। আপনার লক্ষ্য করছেন যে, এবার এডিস মশার প্রাদুর্ভাব অক্টোবর ছাড়িয়ে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় চলমান রয়েছে। এখন কার্তিক মাসের শেষ। এতদিন এডিস মশার প্রাদুর্ভাব থাকার কথা ছিল না। এখন আমরা শুষ্ক মৌসুমে চলে এসেছি। কিন্তু তারপরও আমরা এডিস মশার বিস্তার লক্ষ্য করছি।’
তিনি জানান, মৌসুমের পরেও এডিস এবং মৌসুমের আগে কিউলেক্স মশার বিস্তার হওয়ার কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের আরও কার্যকর গবেষণা দরকার। তাপস বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সেজন্য যদি কোনো বরাদ্দ প্রয়োজন হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তা দিতেও প্রস্তুত আছে। কারণ, আমরা ঢাকাবাসীকে মশক নিয়ন্ত্রণের সুফল পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
দুই সিটির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘গবেষণা করা সিটি করপোরেশনের কাজ নয়। তাদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণায় সহযোগিতা করা, যেটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়ে থাকে।’
এডিস নিয়ন্ত্রণে ওলবাকিয়া পদ্ধতির বিষয়ে তিনি জানান, তার বিশ্বাস, বিদেশ থেকে মশা এনে বাংলাদেশে পালন ও স্ত্রী মশাকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে এসিডের জম্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাংলাদেশে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তিনি বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভালো বিষয়। ওলবাকিয়া পদ্ধতি সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে বাংলাদেশে যেকোনও একটি ছোট জায়গায় পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। আর একটি বিষয় হচ্ছে- ওলবাকিয়া ইনফেক্টেট মশা বাংলাদেশে না এনে, দেশীয় গবেষকদের নিয়ে নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে দেশীয় মশায় এ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করিয়ে প্রকৃতিতে ছাড়া হোক।’
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ নভেম্বর, ২০২২, 10:36 PM
সারাদেশে এডিস মশা বাহিত রোগ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কর্তৃপক্ষের গৃহীত কোনো পদক্ষেপই এডিসের নিয়ন্ত্রণ, বংশবৃদ্ধি ও দমনে কোনো কাজে আসছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ হাজার ৯৩৪ জন। যদিও দেশের বেশিরভাগ হাসাপাতালের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পায় না।
প্রতিবছর যেখানে নভেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করে, সেখানে এ বছর নভেম্বরের ২৫ দিনে ১০১ জনের মৃত্যুই হয়েছে। এর আগে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল ২০১৯ সালে। এদিকে এডিস নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি নতুন উপায় খুঁজছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওলবাকিয়া নামে ব্যাকটেরিয়া সংযোজিত পুরুষ মশা এনে এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা করছেন তারা। অপরদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায় নিয়ে গবেষণা দরকার। প্রয়োজনে তিনি গবেষকদের অর্থায়ন করতে রাজি আছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান জানান, এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ওলবাকিয়া সংযোজিত পুরুষ মশা পালন ও এ বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্ট ও জিওলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সঙ্গে দূদফা বৈঠক করেছেন।
তিনি বলেন, তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের টিম বাংলাদেশে আমাদের উত্তর সিটির একটা অংশে ওলবাকিয়া পদ্ধতির ওপরে একটা পাইলটিং করতে চাচ্ছে। আমরা রাজি হয়েছি। এ পদ্ধতি সম্পর্কে জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘এটা পুরুষ মশাকে জম্মদানে অক্ষম করার করার পদ্ধতি। ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া যখন প্রকৃতিতে ছাড়া হবে, তখন মূলত স্ত্রী অ্যাসিড মশার সঙ্গে মিলিত হবে, যারা ডেঙ্গু ছড়ায়। এ মিলনে ফলের স্ত্রীর আর বাচ্চা উৎপাদন হবে না। ফলে আস্তে আস্তে স্ত্রী মশাগুলো যখন মারা যাবে, তখন ডেঙ্গু একেবারে কমে যাবে।’
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখছি। কীটপতঙ্গের বা এডিস মশার বিবর্তনের পরিবর্তন দেখছি এবং সময়সীমার পরিবর্তন দেখছি। এ বিষয়ে আমাদের পূর্বাভাস পাওয়া প্রয়োজন। আপনার লক্ষ্য করছেন যে, এবার এডিস মশার প্রাদুর্ভাব অক্টোবর ছাড়িয়ে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় চলমান রয়েছে। এখন কার্তিক মাসের শেষ। এতদিন এডিস মশার প্রাদুর্ভাব থাকার কথা ছিল না। এখন আমরা শুষ্ক মৌসুমে চলে এসেছি। কিন্তু তারপরও আমরা এডিস মশার বিস্তার লক্ষ্য করছি।’
তিনি জানান, মৌসুমের পরেও এডিস এবং মৌসুমের আগে কিউলেক্স মশার বিস্তার হওয়ার কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের আরও কার্যকর গবেষণা দরকার। তাপস বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সেজন্য যদি কোনো বরাদ্দ প্রয়োজন হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তা দিতেও প্রস্তুত আছে। কারণ, আমরা ঢাকাবাসীকে মশক নিয়ন্ত্রণের সুফল পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
দুই সিটির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘গবেষণা করা সিটি করপোরেশনের কাজ নয়। তাদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণায় সহযোগিতা করা, যেটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়ে থাকে।’
এডিস নিয়ন্ত্রণে ওলবাকিয়া পদ্ধতির বিষয়ে তিনি জানান, তার বিশ্বাস, বিদেশ থেকে মশা এনে বাংলাদেশে পালন ও স্ত্রী মশাকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে এসিডের জম্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাংলাদেশে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তিনি বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভালো বিষয়। ওলবাকিয়া পদ্ধতি সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে বাংলাদেশে যেকোনও একটি ছোট জায়গায় পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। আর একটি বিষয় হচ্ছে- ওলবাকিয়া ইনফেক্টেট মশা বাংলাদেশে না এনে, দেশীয় গবেষকদের নিয়ে নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে দেশীয় মশায় এ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করিয়ে প্রকৃতিতে ছাড়া হোক।’