আবারও ফিরছে হাতে আঁকা পোস্টার

#
news image

শুধু বাংলা সিনেমা নয়, গোটা বিশ্বের সিনেমা পোস্টার-ব্যানার একটা দীর্ঘ সময় তৈরি হতো রঙ-তুলিতে। যার প্রচলন ছিলো বাংলাদেশেও। বিশ্ব চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রাচীন এই শিল্পকর্ম বিলুপ্তির পথে। এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পীরাও প্রায় শেষের পথে। সেই শিল্পী ও শিল্প দুটোই আবার বাংলা চলচ্চিত্রে ফিরে আসছে আলোচিত সিনেমা ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সূত্রে। এরমধ্যে বড় আয়োজনে তৈরি হচ্ছে ছবিটির হাতে আঁকা পোস্টার ও ব্যানার। ছবির প্রযোজনা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলা সিনেমার সোনালী যুগে যাদের তুলির স্পর্শে পোস্টার আঁকা হতো, সেই শিল্পীদের খুঁজে বের করা হয়েছে। বিদেশ কুমার ধর নামের একজন জ্যেষ্ঠ শিল্পীর নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার নতুন পোস্টার-ব্যানার। যার হাত ধরে স্বাধীনতার আগে থেকেই প্রথমে কিছু উর্দু পরে বাংলা সিনেমার সিংহভাগ পোস্টার আঁকা হয়েছিলো। সিনেমাটির পরিচালক দীপংকর দীপন মনে করেন, এসব শিল্পীরা ঐতিহ্যের অংশ। তিনি বলেন, ‘কালের বিবর্তনে অনেক কিছুর পাশাপাশি সিনেমার এই শৈল্পিক ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ডিজিটাল সুবিধার চাপে সেটিকে পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে না পারলেও, এই শিল্পীদের আমরা স্মরণ করতে চেয়েছি। আমাদের প্রত্যাশা, আগামীর সিনেমাগুলোতে যদি একটি করে পোস্টারও তাদের হাতে তৈরি করা হয়, তাহলে এই মানুষগুলো যেমন বাঁচবেন আবার এই শিল্পটাও টিকে থাকবে।’ উদাহরণ টেনে ‘ঢাকা অ্যাটাক’খ্যাত এই পরিচালক জানান, জাপানে এখনও টুরিস্টদের জন্য বিভিন্ন থিয়েটারে বড় অংকের সম্মানী দিয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই ঐতিহ্য ধরে রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‘অপারেশন সুন্দরবন' নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে র‌্যাব ওয়েলফেয়ার কো অপারেটিভ সোসাইটি। র‌্যাবের মুখপাত্র লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আগে এই পেশাটি অনেক লুকরেটিভ ছিল। এসব শিল্পীদের পেছনে মানুষ ঘুরে বেড়াতো। নান্দনিক এসব পোস্টার দিয়ে আগে সিনেমার প্রচারণা হতো। এসব পোস্টার এতটাই নজর কাড়তো যে, দর্শক সিনেমা হলে আসতে বাধ্য হতো। কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে এভাবে হাতে আঁকা পোস্টার আর দেখা যায়নি। সেই ভাবনা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ।’ তিনি জানান, হাতে আঁকা পোস্টারের এই ঐতিহ্যকে আবার সামনে আনার চেষ্টা করছে র‌্যাব। সুভিন্যির হিসেবে হাতে আঁকা পোস্টার তৈরি হচ্ছে। যা প্রকাশ্যে আসবে শিগগিরই।  ১৯৬১ সাল থেকে দেয়াল-পোস্টার আকার মাধ্যমে জীবন শুরু করেন বিদেশ কুমার ধর। তিনি জানান, ১৯৬৫ সালে তিনিই প্রথম উর্দু সিনেমার ব্যানার নিজহাতে আঁকেন। তার বানানো প্রথম বাংলা ছবির রঙিন ব্যানার ছিল ‘গুনাইবিবি’। তার আঁকা প্রথম উর্দু সিনেমার পোস্টার ছিলো ‘পূনম কিরান’। বিদেশ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ষাট শতাংশ সিনেমার হাতে আঁকা পোস্টার আমারই আঁকা।’ বিদেশ কুমার ধর বলেন, ‘র‌্যাব আমাদের খুঁজে বের করে যে সম্মান দিয়েছে, এটা আজ পর্যন্ত কেউ দেয়নি। তারা জানতে চেয়েছে কেন সরে গিয়েছি, কোথায় আছি, কেন আমাদের মতো শিল্পীদের মূল্যায়ন নেই। হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকলে যে চিকিৎসা দেয়া হয় র‌্যাব আমাদের শেষ সময়ে পাশে এসে তেমনভাবে সেবা দিয়েছে। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা মিলিয়ে আধুনিক ও ঐতিহ্যের মিশেলে এই ছবির পোস্টার বানানোর চেষ্টা করছি।’ র‌্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. প্রযোজিত সিনেমা 'অপারেশন সুন্দরবন'। পরিচালক দীপংকর দীপন বলেন, ‘এটি পুরোপুরি মূল ধারার সিনেমা। এখানে অ্যাকশন, সাসপেন্স, আবেগ, প্রেম-গান সব আছে। গণমানুষকে কানেক্ট করার সিনেমা এটি। সেই সাথে ক্লাস পিপল যেন পছন্দ করে সেই চেষ্টাও ছিলো।’ এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন রিয়াজ, সিয়াম, রোশান, নুসরাত ফারিয়া, দর্শণা বণিক, সামিনা বাশার, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনির খান শিমুল, তাসকিন রহমান, মনোজ প্রামাণিক, দীপু ইমাম, এহসানুর রহমান প্রমুখ। ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ২৩ সেপ্টেম্বর দেশের বেশিরভাগ প্রেক্ষাগৃহে।

প্রভাতী খবর ডেস্ক

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২,  11:08 PM

news image

শুধু বাংলা সিনেমা নয়, গোটা বিশ্বের সিনেমা পোস্টার-ব্যানার একটা দীর্ঘ সময় তৈরি হতো রঙ-তুলিতে। যার প্রচলন ছিলো বাংলাদেশেও। বিশ্ব চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রাচীন এই শিল্পকর্ম বিলুপ্তির পথে। এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পীরাও প্রায় শেষের পথে। সেই শিল্পী ও শিল্প দুটোই আবার বাংলা চলচ্চিত্রে ফিরে আসছে আলোচিত সিনেমা ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সূত্রে। এরমধ্যে বড় আয়োজনে তৈরি হচ্ছে ছবিটির হাতে আঁকা পোস্টার ও ব্যানার। ছবির প্রযোজনা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলা সিনেমার সোনালী যুগে যাদের তুলির স্পর্শে পোস্টার আঁকা হতো, সেই শিল্পীদের খুঁজে বের করা হয়েছে। বিদেশ কুমার ধর নামের একজন জ্যেষ্ঠ শিল্পীর নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার নতুন পোস্টার-ব্যানার। যার হাত ধরে স্বাধীনতার আগে থেকেই প্রথমে কিছু উর্দু পরে বাংলা সিনেমার সিংহভাগ পোস্টার আঁকা হয়েছিলো। সিনেমাটির পরিচালক দীপংকর দীপন মনে করেন, এসব শিল্পীরা ঐতিহ্যের অংশ। তিনি বলেন, ‘কালের বিবর্তনে অনেক কিছুর পাশাপাশি সিনেমার এই শৈল্পিক ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ডিজিটাল সুবিধার চাপে সেটিকে পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে না পারলেও, এই শিল্পীদের আমরা স্মরণ করতে চেয়েছি। আমাদের প্রত্যাশা, আগামীর সিনেমাগুলোতে যদি একটি করে পোস্টারও তাদের হাতে তৈরি করা হয়, তাহলে এই মানুষগুলো যেমন বাঁচবেন আবার এই শিল্পটাও টিকে থাকবে।’ উদাহরণ টেনে ‘ঢাকা অ্যাটাক’খ্যাত এই পরিচালক জানান, জাপানে এখনও টুরিস্টদের জন্য বিভিন্ন থিয়েটারে বড় অংকের সম্মানী দিয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই ঐতিহ্য ধরে রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‘অপারেশন সুন্দরবন' নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে র‌্যাব ওয়েলফেয়ার কো অপারেটিভ সোসাইটি। র‌্যাবের মুখপাত্র লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আগে এই পেশাটি অনেক লুকরেটিভ ছিল। এসব শিল্পীদের পেছনে মানুষ ঘুরে বেড়াতো। নান্দনিক এসব পোস্টার দিয়ে আগে সিনেমার প্রচারণা হতো। এসব পোস্টার এতটাই নজর কাড়তো যে, দর্শক সিনেমা হলে আসতে বাধ্য হতো। কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে এভাবে হাতে আঁকা পোস্টার আর দেখা যায়নি। সেই ভাবনা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ।’ তিনি জানান, হাতে আঁকা পোস্টারের এই ঐতিহ্যকে আবার সামনে আনার চেষ্টা করছে র‌্যাব। সুভিন্যির হিসেবে হাতে আঁকা পোস্টার তৈরি হচ্ছে। যা প্রকাশ্যে আসবে শিগগিরই।  ১৯৬১ সাল থেকে দেয়াল-পোস্টার আকার মাধ্যমে জীবন শুরু করেন বিদেশ কুমার ধর। তিনি জানান, ১৯৬৫ সালে তিনিই প্রথম উর্দু সিনেমার ব্যানার নিজহাতে আঁকেন। তার বানানো প্রথম বাংলা ছবির রঙিন ব্যানার ছিল ‘গুনাইবিবি’। তার আঁকা প্রথম উর্দু সিনেমার পোস্টার ছিলো ‘পূনম কিরান’। বিদেশ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ষাট শতাংশ সিনেমার হাতে আঁকা পোস্টার আমারই আঁকা।’ বিদেশ কুমার ধর বলেন, ‘র‌্যাব আমাদের খুঁজে বের করে যে সম্মান দিয়েছে, এটা আজ পর্যন্ত কেউ দেয়নি। তারা জানতে চেয়েছে কেন সরে গিয়েছি, কোথায় আছি, কেন আমাদের মতো শিল্পীদের মূল্যায়ন নেই। হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকলে যে চিকিৎসা দেয়া হয় র‌্যাব আমাদের শেষ সময়ে পাশে এসে তেমনভাবে সেবা দিয়েছে। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা মিলিয়ে আধুনিক ও ঐতিহ্যের মিশেলে এই ছবির পোস্টার বানানোর চেষ্টা করছি।’ র‌্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. প্রযোজিত সিনেমা 'অপারেশন সুন্দরবন'। পরিচালক দীপংকর দীপন বলেন, ‘এটি পুরোপুরি মূল ধারার সিনেমা। এখানে অ্যাকশন, সাসপেন্স, আবেগ, প্রেম-গান সব আছে। গণমানুষকে কানেক্ট করার সিনেমা এটি। সেই সাথে ক্লাস পিপল যেন পছন্দ করে সেই চেষ্টাও ছিলো।’ এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন রিয়াজ, সিয়াম, রোশান, নুসরাত ফারিয়া, দর্শণা বণিক, সামিনা বাশার, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনির খান শিমুল, তাসকিন রহমান, মনোজ প্রামাণিক, দীপু ইমাম, এহসানুর রহমান প্রমুখ। ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ২৩ সেপ্টেম্বর দেশের বেশিরভাগ প্রেক্ষাগৃহে।