নতুন ফাইটার জেট টেম্পেস্ট পাইলটের ‘মনের কথা’ পড়বে

#
news image

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাইলটরা বলতেন, তাদের স্পিটফায়ারগুলো এতো দ্রুত সাড়া দেয়, যেন তাদের দেহেরই একটা অংশ প্লেনগুলো। চলতি দশকের শেষে পাইলট আর তার ফাইটার প্লেনের সম্পর্ক হয়তো হবে এর চেয়েও বেশি নিবিড়।

‘টেম্পেস্ট জেট’ নামের নতুন একটি ফাইটার জেটের নির্মাণকাজ চলছে ইউরোপে। নির্মাতারা বলছেন, পাইলটের ‘মনের কথা’ পড়তে পারবে টেম্পেস্ট।

বিবিসি জানিয়েছে, টেম্পেস্ট নির্মাণে একযোগে কাজ করছে যুক্তরাজ্যের বিএই সিস্টেমস, রোলস-রয়েস, ইউরোপিয়ান মিসাইল গ্রুপ, এমডিবিএ এবং ইতালিভিত্তিক সমরাস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি লিওনার্দো।

আগের প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলোর সঙ্গে টেম্পেস্ট জেটের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হবে সম্ভবত এর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম বা এআই। পাইলট চাপের মুখে দিশা হারিয়ে ফেললে অথবা মাধ্যাকর্ষণের টানে চেতনা হারিয়ে ফেললে পাইলটকে সহযোগিতা করবে এআই।

পাইলটের মস্তিষ্কের তরঙ্গ আর শারীরিক অবস্থার ওপর নজর রাখবে হেলমেটের সেন্সর। বারবার একটি টেম্পেস্ট জেট ওড়ালে পাইলটের বিপুল পরিমাণ বায়োমেট্রিক ও সাইকোমেট্রিক ডেটার বড় ডেটাবেইজ তৈরি হবে সেন্সর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।

আর ওই ডেটাবেইজের ভিত্তিতেই এআই সিদ্ধান্ত নেবে কখন পাইলটের সাহায্য দরকার; প্রয়োজনে জেটের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে পারবে এআইটি।

তবে, টেম্পেস্ট জেটের নকশার কাজ এখনও শেষ হয়নি। ২০১৮ সালে এর একটি মডেল দেখিয়েছিল জেটের নির্মাতারা। সে সময়ে ফাইটার জেটটিকে অনেকে ‘পেট মোটা পেলিক্যান’ পাখির সঙ্গে তুলনা করলেও, নকশা আর নির্মাণকাজের অগ্রগতির সঙ্গে বড় পরিবর্তন এসেছে এ জঙ্গি বিমানে।

বিবিসি জানিয়েছে, গেল চার বছরে এর ওজন কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে নির্মাতারা; বাহ্যিক নকশায় এসেছে একহারা ভাব।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ফার্নবোরো এয়ার শোতে বিএই সিস্টেম জানায়, টেম্পেস্ট জেটের কিছু প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখতে ২০২৭ সালে যুক্তরাজ্যের ওয়ার্টনের কারখানা থেকে ল্যাঙ্কাশায়ারে উড়িয়ে নেওয়া হবে এর একটি প্রোটোটাইপ।

ওই প্রোটোটাইপটির মাধ্যমে অন্তত ৬০টি নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পুরোপুরি সফটওয়্যার নির্ভর।

আর যখন আকাশে উড়বে, একা থাকবে না টেম্পেস্ট। একাধিক চালকবিহীন সামরিক ড্রোন টেম্পেস্টকে সঙ্গ দেবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।

কিন্তু টেম্পেস্ট আর এর চালকবিহীন সঙ্গীদের কার্যকর ব্যবহারের জন্য নির্মাতাদের একদম নতুন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি নির্মাণ করতে হচ্ছে।

“প্রযুক্তি যে গতির পরিবর্তিত হচ্ছে, আমাদেরও তার সঙ্গে তাল মেলাতে হচ্ছে,” অকপট স্বীকারোক্তি দিয়েছেন টেম্পেস্ট প্রকল্পের পরিচালক জন স্টোকার।

তিনি বলেন, “আগে প্রতিরক্ষা খাতের ব্যয় থেকেই প্রযুক্তির অগ্রগতি হত, আর বাণিজ্যিক প্রযুক্তি পরে তার সমপর্যায়ে আসত। কিন্তু এখন অনেক ক্ষেত্রেই বাণিজ্যিক প্রযুক্তি বেশি এগিয়ে আছে।”

স্টোকারের ভাবনায় টেম্পেস্ট আপগ্রেড করার বিষয়টি হবে স্মার্টফোনে নতুন সফটওয়্যার আপডেট ইনস্টল করার মতই সহজ।

অন্যদিকে, ফাইটার জেটটির নির্মাণ কাজের সিংহভাগ রোবটদের হাতে থাকবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সহজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পেতে সরাসরি সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে নির্মাণ কারখানার রোবটগুলো।

টেম্পেস্ট প্রকল্পের অংশ হিসেবে জাপানের মিতসুবিশিকেও সহযোগিতা করছে বিএই সিস্টেমস এবং লিওনার্দো। টেম্পেস্টের সঙ্গে মিল রয়েছে মিতসুবিশির ‘এফ-এক্স’ ফাইটার জেটের।

ইউরোপের প্রতিরক্ষা খাতের কোম্পানিগুলোর জন্যে এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। জাপানের সঙ্গে এই সহযোগিতা সম্ভব হচ্ছে কারণ ডিজিটাল জগতে উপস্থিতি আছে উভয় প্রকল্পের।

বিষয়টি নিয়ে রসিকতা করে স্টোকস বলেন, “ডিজিটাল জগতে এই কাজগুলো আপনি অনেক সহজে করতে পারবেন, কাজের সমন্বয় করা খুবই সহজ। টোকিও থেকে ওয়ার্টনের মধ্যে ব্রিফকেস টেনে নিচ্ছি না আমরা।”

মিতসুবিশির এফ-এক্স প্রকল্পের কর্মীদের সঙ্গে কারিগরি বিষয় নিয়ে যারা যোগাযোগ রাখছে, তারা ইংরেজি ও জাপানিজ উভয় ভাষাতেই সমান পারদর্শী বলে জানিয়েছে বিবিসি।

মিতসুবিশির সঙ্গে কাজ করছে ইউরোপভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষা সমরাস্ত্রের নির্মাতা কোম্পানি লিওনার্দোর রেডার বিভাগও।

টেম্পেস্ট এবং এফ-এক্সের বেলায় প্রথাগত রেডারের জায়গায় থাকবে সেন্সর থেকে পাওয়া ডিজিটাল ডেটা। তবে সেন্সর থেকে পাওয়া ডেটা বিশ্লেষণ করা মাঝ আকাশে থাকা একজন ফাইটার পাইলটের জন্য কেবল অযৌক্তিক নয়, প্রায় অসম্ভব। এ ক্ষেত্রেও সমাধান এআই প্রযুক্তি।

সেন্সর থেকে আসা ডেটা বিশ্লেষণ করে পাইলটের যখন যতটা জানা প্রয়োজন ততোটুকুই সরবরাহ করবে টেম্পেস্টের এআই।

আর পুরো প্রকল্পের কাজ চলছে সমরাস্ত্র নির্মাতা এমবিডিএ’র সঙ্গে সমন্বয় করে। বিবিসি জানিয়েছে, সম্ভবত এমবিডিএ’র তৈরি মিসাইল টেম্পেস্ট থেকে ছোড়া হলেও সেটিকে দিক নির্দশনা দিয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানার কাজ করবে টেম্পেস্টের সঙ্গী হিসেবে থাকা ড্রোনগুলোর একটি।

পুরো ব্যবস্থাটি নির্ভর করছে ফাইটার জেটের জন্য তৈরি নতুন ইঞ্জিনের ওপর। কেবল টেম্পেস্ট ফাইটার জেট নয়, এর সম্পূর্ণ ডিজিটাল অবকাঠামোর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে রোলস-রয়েসের তৈরি ইঞ্জিন থেকে। আর বিপুল পরিমান ডেটা বিশ্লেষণের চাপে ল্যাপটপ কম্পিউটারের মত ফাইটার প্লেনও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে।

তাই যথেষ্ট শক্তি সরবরাহ করার পাশাপাশি বাড়তি তাপ থেকে ফাইটার জেটকে রক্ষা করার কৌশল নিয়েও ভাবতে হচ্ছে রোলস-রয়েসের প্রকৌশলীদের।

তবে এতে রোলস রয়েসের প্রকৌশলীরা উদ্বিগ্ন বলে মনে হয়নি রোলস রয়েসের প্রকল্প পরিচালক জন ওয়ারডেলের কথায়। তিনি বলেছেন, “আমরা পুরো ব্যবস্থার সবকিছুর শক্তি সরবরাহ করতে চাই।”

ইতোমধ্যে টেম্পেস্ট প্রকল্পে দুই কোটি পাউন্ড তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। সামনের বছরগুলোতে প্রকল্পের খরচ সম্ভবত আরও বাড়বে।

তবে রপ্তানি সম্ভাবনার কথা ভেবেই হয়ত টেম্পেস্টে বিনিয়োগ করতে পিছপা হচ্ছে না দেশটির সরকার। চতুর্থ প্রজন্মের ‘টাইফুন’ ফাইটার জেট থেকে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি সাফল্য পেয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে অন্তত ২১০০ কোটি পাউন্ড যোগ করেছে ‘ইউরোফাইটার টাইফুন’; ২০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছেন ফাইটার জেটগুলোর নির্মাণে।

প্রভাতী খবর ডেস্ক

২৬ জুলাই, ২০২২,  9:24 PM

news image

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাইলটরা বলতেন, তাদের স্পিটফায়ারগুলো এতো দ্রুত সাড়া দেয়, যেন তাদের দেহেরই একটা অংশ প্লেনগুলো। চলতি দশকের শেষে পাইলট আর তার ফাইটার প্লেনের সম্পর্ক হয়তো হবে এর চেয়েও বেশি নিবিড়।

‘টেম্পেস্ট জেট’ নামের নতুন একটি ফাইটার জেটের নির্মাণকাজ চলছে ইউরোপে। নির্মাতারা বলছেন, পাইলটের ‘মনের কথা’ পড়তে পারবে টেম্পেস্ট।

বিবিসি জানিয়েছে, টেম্পেস্ট নির্মাণে একযোগে কাজ করছে যুক্তরাজ্যের বিএই সিস্টেমস, রোলস-রয়েস, ইউরোপিয়ান মিসাইল গ্রুপ, এমডিবিএ এবং ইতালিভিত্তিক সমরাস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি লিওনার্দো।

আগের প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলোর সঙ্গে টেম্পেস্ট জেটের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হবে সম্ভবত এর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম বা এআই। পাইলট চাপের মুখে দিশা হারিয়ে ফেললে অথবা মাধ্যাকর্ষণের টানে চেতনা হারিয়ে ফেললে পাইলটকে সহযোগিতা করবে এআই।

পাইলটের মস্তিষ্কের তরঙ্গ আর শারীরিক অবস্থার ওপর নজর রাখবে হেলমেটের সেন্সর। বারবার একটি টেম্পেস্ট জেট ওড়ালে পাইলটের বিপুল পরিমাণ বায়োমেট্রিক ও সাইকোমেট্রিক ডেটার বড় ডেটাবেইজ তৈরি হবে সেন্সর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।

আর ওই ডেটাবেইজের ভিত্তিতেই এআই সিদ্ধান্ত নেবে কখন পাইলটের সাহায্য দরকার; প্রয়োজনে জেটের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে পারবে এআইটি।

তবে, টেম্পেস্ট জেটের নকশার কাজ এখনও শেষ হয়নি। ২০১৮ সালে এর একটি মডেল দেখিয়েছিল জেটের নির্মাতারা। সে সময়ে ফাইটার জেটটিকে অনেকে ‘পেট মোটা পেলিক্যান’ পাখির সঙ্গে তুলনা করলেও, নকশা আর নির্মাণকাজের অগ্রগতির সঙ্গে বড় পরিবর্তন এসেছে এ জঙ্গি বিমানে।

বিবিসি জানিয়েছে, গেল চার বছরে এর ওজন কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে নির্মাতারা; বাহ্যিক নকশায় এসেছে একহারা ভাব।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ফার্নবোরো এয়ার শোতে বিএই সিস্টেম জানায়, টেম্পেস্ট জেটের কিছু প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখতে ২০২৭ সালে যুক্তরাজ্যের ওয়ার্টনের কারখানা থেকে ল্যাঙ্কাশায়ারে উড়িয়ে নেওয়া হবে এর একটি প্রোটোটাইপ।

ওই প্রোটোটাইপটির মাধ্যমে অন্তত ৬০টি নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পুরোপুরি সফটওয়্যার নির্ভর।

আর যখন আকাশে উড়বে, একা থাকবে না টেম্পেস্ট। একাধিক চালকবিহীন সামরিক ড্রোন টেম্পেস্টকে সঙ্গ দেবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।

কিন্তু টেম্পেস্ট আর এর চালকবিহীন সঙ্গীদের কার্যকর ব্যবহারের জন্য নির্মাতাদের একদম নতুন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি নির্মাণ করতে হচ্ছে।

“প্রযুক্তি যে গতির পরিবর্তিত হচ্ছে, আমাদেরও তার সঙ্গে তাল মেলাতে হচ্ছে,” অকপট স্বীকারোক্তি দিয়েছেন টেম্পেস্ট প্রকল্পের পরিচালক জন স্টোকার।

তিনি বলেন, “আগে প্রতিরক্ষা খাতের ব্যয় থেকেই প্রযুক্তির অগ্রগতি হত, আর বাণিজ্যিক প্রযুক্তি পরে তার সমপর্যায়ে আসত। কিন্তু এখন অনেক ক্ষেত্রেই বাণিজ্যিক প্রযুক্তি বেশি এগিয়ে আছে।”

স্টোকারের ভাবনায় টেম্পেস্ট আপগ্রেড করার বিষয়টি হবে স্মার্টফোনে নতুন সফটওয়্যার আপডেট ইনস্টল করার মতই সহজ।

অন্যদিকে, ফাইটার জেটটির নির্মাণ কাজের সিংহভাগ রোবটদের হাতে থাকবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সহজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পেতে সরাসরি সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে নির্মাণ কারখানার রোবটগুলো।

টেম্পেস্ট প্রকল্পের অংশ হিসেবে জাপানের মিতসুবিশিকেও সহযোগিতা করছে বিএই সিস্টেমস এবং লিওনার্দো। টেম্পেস্টের সঙ্গে মিল রয়েছে মিতসুবিশির ‘এফ-এক্স’ ফাইটার জেটের।

ইউরোপের প্রতিরক্ষা খাতের কোম্পানিগুলোর জন্যে এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। জাপানের সঙ্গে এই সহযোগিতা সম্ভব হচ্ছে কারণ ডিজিটাল জগতে উপস্থিতি আছে উভয় প্রকল্পের।

বিষয়টি নিয়ে রসিকতা করে স্টোকস বলেন, “ডিজিটাল জগতে এই কাজগুলো আপনি অনেক সহজে করতে পারবেন, কাজের সমন্বয় করা খুবই সহজ। টোকিও থেকে ওয়ার্টনের মধ্যে ব্রিফকেস টেনে নিচ্ছি না আমরা।”

মিতসুবিশির এফ-এক্স প্রকল্পের কর্মীদের সঙ্গে কারিগরি বিষয় নিয়ে যারা যোগাযোগ রাখছে, তারা ইংরেজি ও জাপানিজ উভয় ভাষাতেই সমান পারদর্শী বলে জানিয়েছে বিবিসি।

মিতসুবিশির সঙ্গে কাজ করছে ইউরোপভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষা সমরাস্ত্রের নির্মাতা কোম্পানি লিওনার্দোর রেডার বিভাগও।

টেম্পেস্ট এবং এফ-এক্সের বেলায় প্রথাগত রেডারের জায়গায় থাকবে সেন্সর থেকে পাওয়া ডিজিটাল ডেটা। তবে সেন্সর থেকে পাওয়া ডেটা বিশ্লেষণ করা মাঝ আকাশে থাকা একজন ফাইটার পাইলটের জন্য কেবল অযৌক্তিক নয়, প্রায় অসম্ভব। এ ক্ষেত্রেও সমাধান এআই প্রযুক্তি।

সেন্সর থেকে আসা ডেটা বিশ্লেষণ করে পাইলটের যখন যতটা জানা প্রয়োজন ততোটুকুই সরবরাহ করবে টেম্পেস্টের এআই।

আর পুরো প্রকল্পের কাজ চলছে সমরাস্ত্র নির্মাতা এমবিডিএ’র সঙ্গে সমন্বয় করে। বিবিসি জানিয়েছে, সম্ভবত এমবিডিএ’র তৈরি মিসাইল টেম্পেস্ট থেকে ছোড়া হলেও সেটিকে দিক নির্দশনা দিয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানার কাজ করবে টেম্পেস্টের সঙ্গী হিসেবে থাকা ড্রোনগুলোর একটি।

পুরো ব্যবস্থাটি নির্ভর করছে ফাইটার জেটের জন্য তৈরি নতুন ইঞ্জিনের ওপর। কেবল টেম্পেস্ট ফাইটার জেট নয়, এর সম্পূর্ণ ডিজিটাল অবকাঠামোর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে রোলস-রয়েসের তৈরি ইঞ্জিন থেকে। আর বিপুল পরিমান ডেটা বিশ্লেষণের চাপে ল্যাপটপ কম্পিউটারের মত ফাইটার প্লেনও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে।

তাই যথেষ্ট শক্তি সরবরাহ করার পাশাপাশি বাড়তি তাপ থেকে ফাইটার জেটকে রক্ষা করার কৌশল নিয়েও ভাবতে হচ্ছে রোলস-রয়েসের প্রকৌশলীদের।

তবে এতে রোলস রয়েসের প্রকৌশলীরা উদ্বিগ্ন বলে মনে হয়নি রোলস রয়েসের প্রকল্প পরিচালক জন ওয়ারডেলের কথায়। তিনি বলেছেন, “আমরা পুরো ব্যবস্থার সবকিছুর শক্তি সরবরাহ করতে চাই।”

ইতোমধ্যে টেম্পেস্ট প্রকল্পে দুই কোটি পাউন্ড তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। সামনের বছরগুলোতে প্রকল্পের খরচ সম্ভবত আরও বাড়বে।

তবে রপ্তানি সম্ভাবনার কথা ভেবেই হয়ত টেম্পেস্টে বিনিয়োগ করতে পিছপা হচ্ছে না দেশটির সরকার। চতুর্থ প্রজন্মের ‘টাইফুন’ ফাইটার জেট থেকে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি সাফল্য পেয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে অন্তত ২১০০ কোটি পাউন্ড যোগ করেছে ‘ইউরোফাইটার টাইফুন’; ২০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছেন ফাইটার জেটগুলোর নির্মাণে।