দুই উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে তোলপাড়, এবার আইনি নোটিশ

#
news image

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও শেখ বশীরউদ্দিনের নিয়োগ নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। 

উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও সেখ বশীরউদ্দিনের পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মো. সফিকুল ইসলাম সবুজ খান। নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে তাদের পদত্যাগ কার্যকরের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

নোটিশে বলা হয়, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও ব্যবসায়ী শেখ বশীরউদ্দিন গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় উপদেষ্টা হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। বিগত ১৬ বছর পর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যার নায়ক খুনি শেখ হাসিনার পতনের পর সাধারণ ছাত্র-জনতা ও দেশবাসী একটি সুন্দর সরকার চেয়েছিল, সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে একটি ক্লিন ইমেজ ও সজ্জন ও সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করবেন।
 
কিন্তু আমরা দেখছি ফ্যাসিস্ট সরকারের উপাদান বিদ্যমান এমন ব্যক্তিদের উপদেষ্টামণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা দুঃখজনক, অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। বিতর্কিত ও খুনি হাসিনার সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের উপদেষ্টা করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি নোবেলজয়ী ব্যক্তির উপদেষ্টামণ্ডলীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
  
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও তার স্ত্রী তিশা বিগত স্বৈরাচার সরকারের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে অনেক সুবিধার ভাগিদার হয়ে আজকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিজয়ের ভাগিদারও হতে চায় এবং অন্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিন খুনি শেখ হাসিনার নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার ৪৯ নম্বর এফআইআরভুক্ত অন্যতম আসামি এবং আওয়ামী সরকারের এমপির ভাই। বিতর্কিত ও বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাভোগী মুজিববাদ আদর্শের অনুসারীদের উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাই।
  
নোটিশে ওই আইনজীবী উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হওয়ারও অভিপ্রায় জানান। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‌‘স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতনের আন্দোলনে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে গত ১৭টি বছর নানা নির্যাতন হামলা মামলার স্বীকার হয়েছি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২৬ দিন গুলির মুখে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ বিদায় করার গর্বিত অংশীদার হিসেবে আমাকেও উপদেষ্টামণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানাই।’ 

ছাত্র-জনতার অংশীদারিবিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। উপদেষ্টা পরিষদ নতুন করে পুনর্গঠনের দাবি জানায় তারা। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশে থেকে এ দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

সরকারকে উদ্দেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার চাই, আপনারা অতি দ্রুততম সময়ে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং ছাত্র নাগরিকদের অংশীদারির বাইরে গিয়ে আপনারা যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

এছাড়া বিপ্লবের চেতনা নিয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে ফ্যাসিবাদী দোসরদের স্থান দিয়ে শহীদের রক্তের অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে অন্তর্বর্তী সরকারে নতুন ৩ উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন। নতুন উপদেষ্টারা হলেন- দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গোষ্ঠী আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিনের সন্তান ব্যবসায়ী শেখ বশিরউদ্দীন, চলচ্চিত্র জগতের পরিচিত মুখ মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। এর মধ্যে সেখ বশিরউদ্দীনের ভাই শেখ আফিল উদ্দিন যশোর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চার মেয়াদের সংসদ সদস্য।

ফ্যাসিস্ট–বিরোধিতার পুরস্কার হিসেবে তাঁর কোনো পদের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেছেন, ‘আমি ফ্যাসিস্ট–বিরোধিতা করেছি আমার বিবেকের কারণে। নিশ্চয়ই এই পদের জন্য নয়। সোমবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টের দোসর কি না, এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসর, হ্যাঁ, বলতে পারেন, বলতে ভালো লাগতে পারে; যাঁরা বলছেন। কিন্তু আমি এমনই দোসর যে ২০১৫ সালে একটা লেখা লিখেছিলাম—কিন্তু এবং যদির খোঁজে। যখন শাহবাগীদের কারণে “কিন্তু এবং যদি” বলা নিষিদ্ধ ছিল। ওই লেখা লেখার চার-পাঁচ দিনের মধ্যে তৎকালীন সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন সেল আমার সব ট্যাক্স ফাইল তলব করেছে।’

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, ‘আমি শুরু থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। তাদের সকল কার্যক্রমে আমাদের সম্মতি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘গত ২৩ জুলাই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যে বৈঠক হয়েছিল সেখানে আমি দাওয়াত পেলেও সেই ডাকে আমি সাড়া দেইনি। এমনকি ৫ আগস্ট রাস্তায় নেমে বিজয় মিছিলও করেছি। তিনি কখনোই আওয়ামী লীগের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। এমন কী কখনো আওয়ামী লীগের নির্বাচনে ভোটও দেননি।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্তে ছাত্র-জনতার মতামতকে উপেক্ষা করায় সিলেটে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে আন্দোলনের কর্মীরা সিলেট নগরের চৌহাট্টা থেকে শুরু করে জিন্দাবাজার পয়েন্ট হয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বক্তারা বলেন, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে। এই বিজয় হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত বিপ্লবের মূল চেতনার পরিপন্থি।

অর্ন্তবর্তি সরকারে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং ছাত্র-জনতার অংশীদারত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে রাজশাহীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার বিকেলে নগরির তালাইমারি মোড়ে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। সমাবেশ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো, এককেন্দ্রিকতা বাদ দিয়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এই আন্দোলনের সব অংশীদারকে রাষ্ট্রগঠনে সমানভাবে সুযোগ দিতে হবে। ছাত্র-জনতার মতামত না নিয়ে উপদেষ্টা নিয়োগের জবাবদিহি করতে হবে। কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন আঁধার ঘরে বসে সচিবালয়ে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয় তা অবিলম্বে জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে। ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে ছায়া সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যা এই সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের প্রতি দায়বদ্ধ করবে।

ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্বহীন সীদ্ধান্তে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদ, উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কার এবং উত্তরবঙ্গ থেকে যোগ্য উপদেষ্টা নিয়োগসহ ৩ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিরাজগঞ্জ কমিটি। মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ চৌরাস্তা মোড় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশে সমন্বয়ক যুবাইর আল ইসলাম, টিএম মুশফিক, ইয়াছির আরাফাত, সজিব সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

নাগরিক নিউজ ডেস্ক

১২ নভেম্বর, ২০২৪,  11:09 PM

news image

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও শেখ বশীরউদ্দিনের নিয়োগ নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। 

উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও সেখ বশীরউদ্দিনের পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মো. সফিকুল ইসলাম সবুজ খান। নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে তাদের পদত্যাগ কার্যকরের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

নোটিশে বলা হয়, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও ব্যবসায়ী শেখ বশীরউদ্দিন গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় উপদেষ্টা হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। বিগত ১৬ বছর পর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যার নায়ক খুনি শেখ হাসিনার পতনের পর সাধারণ ছাত্র-জনতা ও দেশবাসী একটি সুন্দর সরকার চেয়েছিল, সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে একটি ক্লিন ইমেজ ও সজ্জন ও সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করবেন।
 
কিন্তু আমরা দেখছি ফ্যাসিস্ট সরকারের উপাদান বিদ্যমান এমন ব্যক্তিদের উপদেষ্টামণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা দুঃখজনক, অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। বিতর্কিত ও খুনি হাসিনার সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের উপদেষ্টা করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি নোবেলজয়ী ব্যক্তির উপদেষ্টামণ্ডলীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
  
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও তার স্ত্রী তিশা বিগত স্বৈরাচার সরকারের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে অনেক সুবিধার ভাগিদার হয়ে আজকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিজয়ের ভাগিদারও হতে চায় এবং অন্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিন খুনি শেখ হাসিনার নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার ৪৯ নম্বর এফআইআরভুক্ত অন্যতম আসামি এবং আওয়ামী সরকারের এমপির ভাই। বিতর্কিত ও বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাভোগী মুজিববাদ আদর্শের অনুসারীদের উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাই।
  
নোটিশে ওই আইনজীবী উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হওয়ারও অভিপ্রায় জানান। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‌‘স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতনের আন্দোলনে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে গত ১৭টি বছর নানা নির্যাতন হামলা মামলার স্বীকার হয়েছি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২৬ দিন গুলির মুখে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ বিদায় করার গর্বিত অংশীদার হিসেবে আমাকেও উপদেষ্টামণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানাই।’ 

ছাত্র-জনতার অংশীদারিবিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। উপদেষ্টা পরিষদ নতুন করে পুনর্গঠনের দাবি জানায় তারা। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশে থেকে এ দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

সরকারকে উদ্দেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার চাই, আপনারা অতি দ্রুততম সময়ে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং ছাত্র নাগরিকদের অংশীদারির বাইরে গিয়ে আপনারা যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

এছাড়া বিপ্লবের চেতনা নিয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে ফ্যাসিবাদী দোসরদের স্থান দিয়ে শহীদের রক্তের অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে অন্তর্বর্তী সরকারে নতুন ৩ উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন। নতুন উপদেষ্টারা হলেন- দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গোষ্ঠী আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিনের সন্তান ব্যবসায়ী শেখ বশিরউদ্দীন, চলচ্চিত্র জগতের পরিচিত মুখ মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। এর মধ্যে সেখ বশিরউদ্দীনের ভাই শেখ আফিল উদ্দিন যশোর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চার মেয়াদের সংসদ সদস্য।

ফ্যাসিস্ট–বিরোধিতার পুরস্কার হিসেবে তাঁর কোনো পদের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেছেন, ‘আমি ফ্যাসিস্ট–বিরোধিতা করেছি আমার বিবেকের কারণে। নিশ্চয়ই এই পদের জন্য নয়। সোমবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টের দোসর কি না, এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসর, হ্যাঁ, বলতে পারেন, বলতে ভালো লাগতে পারে; যাঁরা বলছেন। কিন্তু আমি এমনই দোসর যে ২০১৫ সালে একটা লেখা লিখেছিলাম—কিন্তু এবং যদির খোঁজে। যখন শাহবাগীদের কারণে “কিন্তু এবং যদি” বলা নিষিদ্ধ ছিল। ওই লেখা লেখার চার-পাঁচ দিনের মধ্যে তৎকালীন সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন সেল আমার সব ট্যাক্স ফাইল তলব করেছে।’

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, ‘আমি শুরু থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। তাদের সকল কার্যক্রমে আমাদের সম্মতি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘গত ২৩ জুলাই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যে বৈঠক হয়েছিল সেখানে আমি দাওয়াত পেলেও সেই ডাকে আমি সাড়া দেইনি। এমনকি ৫ আগস্ট রাস্তায় নেমে বিজয় মিছিলও করেছি। তিনি কখনোই আওয়ামী লীগের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। এমন কী কখনো আওয়ামী লীগের নির্বাচনে ভোটও দেননি।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্তে ছাত্র-জনতার মতামতকে উপেক্ষা করায় সিলেটে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে আন্দোলনের কর্মীরা সিলেট নগরের চৌহাট্টা থেকে শুরু করে জিন্দাবাজার পয়েন্ট হয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বক্তারা বলেন, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে। এই বিজয় হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত বিপ্লবের মূল চেতনার পরিপন্থি।

অর্ন্তবর্তি সরকারে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং ছাত্র-জনতার অংশীদারত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে রাজশাহীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার বিকেলে নগরির তালাইমারি মোড়ে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। সমাবেশ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো, এককেন্দ্রিকতা বাদ দিয়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এই আন্দোলনের সব অংশীদারকে রাষ্ট্রগঠনে সমানভাবে সুযোগ দিতে হবে। ছাত্র-জনতার মতামত না নিয়ে উপদেষ্টা নিয়োগের জবাবদিহি করতে হবে। কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন আঁধার ঘরে বসে সচিবালয়ে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয় তা অবিলম্বে জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে। ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে ছায়া সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যা এই সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের প্রতি দায়বদ্ধ করবে।

ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্বহীন সীদ্ধান্তে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদ, উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কার এবং উত্তরবঙ্গ থেকে যোগ্য উপদেষ্টা নিয়োগসহ ৩ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিরাজগঞ্জ কমিটি। মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ চৌরাস্তা মোড় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশে সমন্বয়ক যুবাইর আল ইসলাম, টিএম মুশফিক, ইয়াছির আরাফাত, সজিব সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।