পাহাড়জুড়ে ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে বারোমাসি ‘কাটিমন’

#
news image

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের সমতলের বাসিন্দা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন ১৯৯২ সালে। কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে কৃষিকাজেই তার নেশা। চেষ্টারও কোনো কমতি নেই। খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় উঁচু-নিচু পাহাড়ে বারোমাসি কাটিমন জাতের আম চাষ করেছেন তিনি। দারুণ সাফল্যও পেয়েছেন। বাগানের গাছে গাছে এখন দুলছে আম। আমে ছেয়ে গেছে পুরো বাগান এলাকা। তার আমের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। ছয় বছর আগে পাহাড়ে আম চাষ শুরু করেন তিনি। বাগান করে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী উচ্চশিক্ষিত এই আমচাষি।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বশিরুল আলম বলেন, এই জাতের আম চাষে অনেকেই আগ্রহী। অনেকে সফলও হয়েছেন। চাষিরা এই জাতের আম চাষ করলে ভালো ফলাফল পাবেন। পাহাড়ে আম চাষে কেউ আগ্রহ দেখালে সহযোগিতারও আশ^াস দেন এই সরকারি কর্মকর্তা। পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্র, খাগড়াছড়ির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাফ হোসেন বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে আসছে। পাহাড়ি আম সুস্বাদু হওয়ার কারণে মানুষ দেদার কিনছে। পরীক্ষার মাধ্যমে মিষ্টতা, ফলনসহ অন্যান্য গুণগতমান যাচাই করে চাষ করতে পারলে কৃষক আরও লাভবান হবেন।

আমচাষি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, বারোমাসি কাটিমন আমে ফলন বেশি। এ আমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একসঙ্গে গাছে গুটি ও মুকুল ধরে। একেকটি থোকায় একাধিক আম থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে দুই বছর বয়সি গাছে প্রতি থোকায় ৪-৫টি করেও আম ধরে। ২০১৮ সালে দেশের চুয়াডাঙ্গা থেকে কাটিমন জাতের সাত হাজার চারা সংগ্রহ করি। অধিক ঘনত্বে টিলায় লাগানো গাছে ফলন হবে কি না সেটি নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। তবে চারা লাগানোর কয়েক মাস পরেই গাছে মুকুল আসে। এরপরের কয়েক মাসে ৩-৪ বার মুকুল ভেঙে দিই। এভাবে গাছে যখন ৫-৬ বার মুকুল আসে তখন গাছে আম ধরতে শুরু করে। এতে গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং ফলনও বেশি হয়। নেজাম আরও বলেন, গাছগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিনিয়ত মুকুল আসে। থোকায় অনেক আম ধরে। ভেতরে আঁশ নেই, খেতে সুস্বাদু এবং মিষ্টি।

একেকটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। আম পরিপক্ব হয়ে হলুদ রঙ হলে খাওয়ার উপযোগী হয়। আমগুলো পরিপক্ব হতে সাধারণত দুই-আড়াই মাস সময় লাগে। সময় করে প্রতিটি আমকে ব্যাগযুক্ত করে নিরাপদে আম সরবরাহ করি। তাই এ আমের চাহিদাও প্রচুর। লোকজন একদিকে যেমন বিষমুক্ত আম পাচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের চাহিদাও মিটছে। কৃষি ও প্রকৃতিপ্রেমী নেজাম উদ্দিন জানান, এই আম সারা বছর উৎপাদন হওয়ায় চাহিদা বেশি। অপরদিকে বাজার মূল্যও সন্তোষজনক। প্রতিমণ কাটিমন আমের দাম ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে চাষে আগ্রহ থাকে অনেকের।

এই জাতের আম পাহাড়ের উঁচু-নিচু মাটির সঙ্গে খুব সহজেই খাপ খাইয়ে নেয়। খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার খাগড়াছড়ি জেলায় ৪ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫১১ টন।

জাফর আলম, চট্টগ্রাম

০৯ জুলাই, ২০২৪,  4:55 PM

news image

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের সমতলের বাসিন্দা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন ১৯৯২ সালে। কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে কৃষিকাজেই তার নেশা। চেষ্টারও কোনো কমতি নেই। খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় উঁচু-নিচু পাহাড়ে বারোমাসি কাটিমন জাতের আম চাষ করেছেন তিনি। দারুণ সাফল্যও পেয়েছেন। বাগানের গাছে গাছে এখন দুলছে আম। আমে ছেয়ে গেছে পুরো বাগান এলাকা। তার আমের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। ছয় বছর আগে পাহাড়ে আম চাষ শুরু করেন তিনি। বাগান করে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী উচ্চশিক্ষিত এই আমচাষি।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বশিরুল আলম বলেন, এই জাতের আম চাষে অনেকেই আগ্রহী। অনেকে সফলও হয়েছেন। চাষিরা এই জাতের আম চাষ করলে ভালো ফলাফল পাবেন। পাহাড়ে আম চাষে কেউ আগ্রহ দেখালে সহযোগিতারও আশ^াস দেন এই সরকারি কর্মকর্তা। পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্র, খাগড়াছড়ির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাফ হোসেন বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে আসছে। পাহাড়ি আম সুস্বাদু হওয়ার কারণে মানুষ দেদার কিনছে। পরীক্ষার মাধ্যমে মিষ্টতা, ফলনসহ অন্যান্য গুণগতমান যাচাই করে চাষ করতে পারলে কৃষক আরও লাভবান হবেন।

আমচাষি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, বারোমাসি কাটিমন আমে ফলন বেশি। এ আমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একসঙ্গে গাছে গুটি ও মুকুল ধরে। একেকটি থোকায় একাধিক আম থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে দুই বছর বয়সি গাছে প্রতি থোকায় ৪-৫টি করেও আম ধরে। ২০১৮ সালে দেশের চুয়াডাঙ্গা থেকে কাটিমন জাতের সাত হাজার চারা সংগ্রহ করি। অধিক ঘনত্বে টিলায় লাগানো গাছে ফলন হবে কি না সেটি নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। তবে চারা লাগানোর কয়েক মাস পরেই গাছে মুকুল আসে। এরপরের কয়েক মাসে ৩-৪ বার মুকুল ভেঙে দিই। এভাবে গাছে যখন ৫-৬ বার মুকুল আসে তখন গাছে আম ধরতে শুরু করে। এতে গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং ফলনও বেশি হয়। নেজাম আরও বলেন, গাছগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিনিয়ত মুকুল আসে। থোকায় অনেক আম ধরে। ভেতরে আঁশ নেই, খেতে সুস্বাদু এবং মিষ্টি।

একেকটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। আম পরিপক্ব হয়ে হলুদ রঙ হলে খাওয়ার উপযোগী হয়। আমগুলো পরিপক্ব হতে সাধারণত দুই-আড়াই মাস সময় লাগে। সময় করে প্রতিটি আমকে ব্যাগযুক্ত করে নিরাপদে আম সরবরাহ করি। তাই এ আমের চাহিদাও প্রচুর। লোকজন একদিকে যেমন বিষমুক্ত আম পাচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের চাহিদাও মিটছে। কৃষি ও প্রকৃতিপ্রেমী নেজাম উদ্দিন জানান, এই আম সারা বছর উৎপাদন হওয়ায় চাহিদা বেশি। অপরদিকে বাজার মূল্যও সন্তোষজনক। প্রতিমণ কাটিমন আমের দাম ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে চাষে আগ্রহ থাকে অনেকের।

এই জাতের আম পাহাড়ের উঁচু-নিচু মাটির সঙ্গে খুব সহজেই খাপ খাইয়ে নেয়। খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার খাগড়াছড়ি জেলায় ৪ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫১১ টন।