হঠাৎই মেঘে হারিয়ে যায় রাইসির হেলিকপ্টার

#
news image

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ দুর্ঘটনা নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন। মঙ্গলবার ইরানের সংবাদমাধ্যম ইরনা এই তথ্য জানিয়েছে। প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি রাষ্ট্রীয় টিভির কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, যাত্রার শুরুতে ইরানের ভারজাকান প্রদেশের আবহাওয়া বেশ ভালো ছিল। তবে হঠাৎ করেই মেঘের মধ্যে রাইসির হেলিকপ্টার হারিয়ে যায়। ওই অঞ্চলেই রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সপ্তাহান্তে দেশের উত্তর-পশ্চিমে নিহত হওয়া ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্সিয়াল চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি। মূলত ঘটনার দিন রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির পাশেই আরেকটি হেলিকপ্টারে ছিলেন ইসমাইলি।

গত সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট রাইসির কপ্টার যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছিল ইরানের সেই ভারজাকান অঞ্চলের আবহাওয়া পরিস্থিতি উড্ডয়নের শুরুতে এবং বেশিরভাগ সময়জুড়েই ভালো ছিল। আজারবাইজানের সঙ্গে ইরানের সীমান্তে বাঁধ উদ্বোধনের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসার পথে প্রেসিডেন্ট রাইসির বহরে তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। এর একটিতেই ইসমাইলি ছিলেন। উড্ডয়নের একপর্যায়ে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হলেও অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে অবতরণ করে। ইসমাইলি জানান, ১৯ মে স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে হেলিকপ্টারগুলো যাত্রা শুরু করে। সে সময় আবহাওয়া স্বাভাবিক ছিল।

হেলিকপ্টার বহরের নেতৃত্বে ছিলেন রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন মোস্তাফাভি। যাত্রার ৪৫ মিনিট পর তিনি বাকিদের নির্দেশ দেন নিকটবর্তী একটি মেঘের সংস্পর্শ এড়ানোর জন্য হেলিকপ্টারগুলোকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে। ইসমাইলির বরাতে ইরনা জানাচ্ছে, প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের দুই পাশে বাকি দুটি হেলিকপ্টার উড়ছিল। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই চোখের আড়ালে চলে যায় প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার।’ ইসমাইলি বলেন, ‘মেঘের ওপর ৩০ সেকেন্ড ওড়ার পর আমাদের পাইলট লক্ষ করেন, মাঝখানের হেলিকপ্টারটি উধাও হয়ে গেছে।’

ইসমাইলির দাবি অনুযায়ী, এরপর তারা বেশ কয়েকবার রেডিওর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালান। তবে তা সম্ভব হয়নি। আবার মেঘের কারণে হেলিকপ্টারকে নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। ইসমাইলি জানান, এরপর তাদের হেলিকপ্টারটি সামনের দিকে আবারও যাত্রা শুরু করে এবং কিছু সময় পরই নিকটবর্তী একটি তামার খনিতে অবতরণ করে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমিরাব্দোল্লাহিয়ান ও প্রেসিডেন্টের সুরক্ষা ইউনিটের সদস্যদের বারবার কল করা হলেও তারা সাড়া দেননি। ইসমাইলি আরও বলেন, এরপর রেডিও ডিভাইসের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির সঙ্গে যোগাযোগ করার একাধিক প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি, আবার মেঘের কারণে তাদের হেলিকপ্টার আরও নিচে নামতে পারছিল না। এরপর তাদের হেলিকপ্টারটি সামনের দিকে আবারও যাত্রা শুরু করে এবং কিছু সময় পরই নিকটবর্তী একটি তামার খনিতে অবতরণ করে।’

ইসমাইলি জানান, দুই হেলিকপ্টারের পাইলট প্রেসিডেন্টের পাইলট ক্যাপ্টেন মোস্তাফাভির সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। তবে এক পর্যায়ে কল রিসিভ করেন তাবরিজের মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম। তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তিনি জানান, হেলিকপ্টারটি একটি উপত্যকায় বিধ্বস্ত হয়েছে। ইসমাইলি নিজেও আলি হাশেমের সঙ্গে কথা বলেন। তাকেও একই কথা জানান আলি হাশেম। প্রসঙ্গত, ইরানি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পরও কমপক্ষে ১ ঘণ্টার মতো বেঁচে ছিলেন আল-হাশেম। ইসমাইলি বলেন, ‘আমরা যখন দুর্ঘটনাস্থল খুঁজে পাই, তখন মরদেহের পরিস্থিতি দেখে আমাদের মনে হয়েছে রাইসি ও তার অন্য সহযোগীরা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রায় তাৎক্ষণিকভাবেই শহিদ হয়েছেন। কিন্তু আলি হাশেম আরও কয়েক ঘণ্টা পর শাহাদাৎ বরণ করেন।’

রাইসির মৃত্যুর আগে থেকেই ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। ৮৫ বছর বয়সি খামেনির স্বাস্থ্য ক্রমেই খারাপ হতে শুরু করায় দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে; তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল আগেই। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, রাইসির আকস্মিক মৃত্যুতে দেশটিতে অস্থিতিশীলতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এমন এক সময় রাইসির মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, যখন ইরান পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬৩ বছর বয়সি রাইসিকে এত দিন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরসূরি ভাবা হতো। তিনি দেশটির শক্তিশালী বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডসের কাছেও গ্রহণযোগ্য নেতা ছিলেন। তবে গত রোববার রাতে আকস্মিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন রাইসি। এখন দেশটির পরবর্তী ধর্মীয় নেতা কে হবেন বা দেশটির প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

নাগরিক ডেস্ক

২৩ মে, ২০২৪,  11:56 AM

news image

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ দুর্ঘটনা নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন। মঙ্গলবার ইরানের সংবাদমাধ্যম ইরনা এই তথ্য জানিয়েছে। প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি রাষ্ট্রীয় টিভির কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, যাত্রার শুরুতে ইরানের ভারজাকান প্রদেশের আবহাওয়া বেশ ভালো ছিল। তবে হঠাৎ করেই মেঘের মধ্যে রাইসির হেলিকপ্টার হারিয়ে যায়। ওই অঞ্চলেই রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সপ্তাহান্তে দেশের উত্তর-পশ্চিমে নিহত হওয়া ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্সিয়াল চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি। মূলত ঘটনার দিন রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির পাশেই আরেকটি হেলিকপ্টারে ছিলেন ইসমাইলি।

গত সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট রাইসির কপ্টার যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছিল ইরানের সেই ভারজাকান অঞ্চলের আবহাওয়া পরিস্থিতি উড্ডয়নের শুরুতে এবং বেশিরভাগ সময়জুড়েই ভালো ছিল। আজারবাইজানের সঙ্গে ইরানের সীমান্তে বাঁধ উদ্বোধনের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসার পথে প্রেসিডেন্ট রাইসির বহরে তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। এর একটিতেই ইসমাইলি ছিলেন। উড্ডয়নের একপর্যায়ে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হলেও অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে অবতরণ করে। ইসমাইলি জানান, ১৯ মে স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে হেলিকপ্টারগুলো যাত্রা শুরু করে। সে সময় আবহাওয়া স্বাভাবিক ছিল।

হেলিকপ্টার বহরের নেতৃত্বে ছিলেন রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন মোস্তাফাভি। যাত্রার ৪৫ মিনিট পর তিনি বাকিদের নির্দেশ দেন নিকটবর্তী একটি মেঘের সংস্পর্শ এড়ানোর জন্য হেলিকপ্টারগুলোকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে। ইসমাইলির বরাতে ইরনা জানাচ্ছে, প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের দুই পাশে বাকি দুটি হেলিকপ্টার উড়ছিল। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই চোখের আড়ালে চলে যায় প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার।’ ইসমাইলি বলেন, ‘মেঘের ওপর ৩০ সেকেন্ড ওড়ার পর আমাদের পাইলট লক্ষ করেন, মাঝখানের হেলিকপ্টারটি উধাও হয়ে গেছে।’

ইসমাইলির দাবি অনুযায়ী, এরপর তারা বেশ কয়েকবার রেডিওর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালান। তবে তা সম্ভব হয়নি। আবার মেঘের কারণে হেলিকপ্টারকে নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। ইসমাইলি জানান, এরপর তাদের হেলিকপ্টারটি সামনের দিকে আবারও যাত্রা শুরু করে এবং কিছু সময় পরই নিকটবর্তী একটি তামার খনিতে অবতরণ করে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমিরাব্দোল্লাহিয়ান ও প্রেসিডেন্টের সুরক্ষা ইউনিটের সদস্যদের বারবার কল করা হলেও তারা সাড়া দেননি। ইসমাইলি আরও বলেন, এরপর রেডিও ডিভাইসের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির সঙ্গে যোগাযোগ করার একাধিক প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি, আবার মেঘের কারণে তাদের হেলিকপ্টার আরও নিচে নামতে পারছিল না। এরপর তাদের হেলিকপ্টারটি সামনের দিকে আবারও যাত্রা শুরু করে এবং কিছু সময় পরই নিকটবর্তী একটি তামার খনিতে অবতরণ করে।’

ইসমাইলি জানান, দুই হেলিকপ্টারের পাইলট প্রেসিডেন্টের পাইলট ক্যাপ্টেন মোস্তাফাভির সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। তবে এক পর্যায়ে কল রিসিভ করেন তাবরিজের মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম। তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তিনি জানান, হেলিকপ্টারটি একটি উপত্যকায় বিধ্বস্ত হয়েছে। ইসমাইলি নিজেও আলি হাশেমের সঙ্গে কথা বলেন। তাকেও একই কথা জানান আলি হাশেম। প্রসঙ্গত, ইরানি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পরও কমপক্ষে ১ ঘণ্টার মতো বেঁচে ছিলেন আল-হাশেম। ইসমাইলি বলেন, ‘আমরা যখন দুর্ঘটনাস্থল খুঁজে পাই, তখন মরদেহের পরিস্থিতি দেখে আমাদের মনে হয়েছে রাইসি ও তার অন্য সহযোগীরা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রায় তাৎক্ষণিকভাবেই শহিদ হয়েছেন। কিন্তু আলি হাশেম আরও কয়েক ঘণ্টা পর শাহাদাৎ বরণ করেন।’

রাইসির মৃত্যুর আগে থেকেই ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। ৮৫ বছর বয়সি খামেনির স্বাস্থ্য ক্রমেই খারাপ হতে শুরু করায় দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে; তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল আগেই। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, রাইসির আকস্মিক মৃত্যুতে দেশটিতে অস্থিতিশীলতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এমন এক সময় রাইসির মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, যখন ইরান পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬৩ বছর বয়সি রাইসিকে এত দিন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরসূরি ভাবা হতো। তিনি দেশটির শক্তিশালী বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডসের কাছেও গ্রহণযোগ্য নেতা ছিলেন। তবে গত রোববার রাতে আকস্মিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন রাইসি। এখন দেশটির পরবর্তী ধর্মীয় নেতা কে হবেন বা দেশটির প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।