চায়ের সবুজ পাতায় পঞ্চগড়ে ঘুরে যাবে অর্থনীতির চাকা

নাগরিক প্রতিবেদক, পঞ্চগড়
১২ মে, ২০২৪, 2:03 PM

চায়ের সবুজ পাতায় পঞ্চগড়ে ঘুরে যাবে অর্থনীতির চাকা
চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় চায়ের সবুজ পাতায়,পঞ্চগড়ে ঘুরে যাবে অর্থনীতির চাকা। এর আগে চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র চালু ছিল। গত সেপ্টেম্বরে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র পঞ্চগড়ে চালু হয়েছে। যার কারণে তৈরি করা চায়ের পরিবহন খরচ কবে যাবে। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। চায়ের উন্মুক্ত বেচাকেনায় ক্ষুদ্র চা চাষিরা চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্য মূল্য পাবে। বদলে যাবে উত্তারাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় জেলার চা চাষের সাথে জড়িতদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ কাজ করছে। ওয়ার হাউজ, ব্রোকার হাউজ নির্মাণসহ বায়ারদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনলাইন অ্যাপস তৈরিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আঞ্চলিক চা বোর্ড সূত্রে প্রকাশ,পঞ্চগড়ে ২০০০ সাল থেকে চা চাষ শুরু হয় জেলার বিভিন্ন এলাকার নদীসংলগ্ন পতিত জমিতে প্রতিনিয়ত চা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দিগন্ত জোড়া মাঠে চায়ের সবুজ পাতায় ভরে উঠেছে। এ জেলায় প্রায় ১১ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৯৪ একর জমিতে চা চাষ করা হচ্ছে। ৮টি নিবন্ধিত, ২০টি অনিবন্ধিত চা বাগান, ৭ হাজার ৩৩৮টি ক্ষুদ্রায়তন এবং ১ হাজার ৩৬৮টি ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে।
পঞ্চগড়ের মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানকার চা বাগানকে অনুসরণ করে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী এবং লালমনির হাট চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার ৪৫৭ দশমিক ২৯ একর লালমনিরহাট ২২২ দশমিকক ৩৮ একর দিনাজপুর ৮৯ একর এবং নীলফামারীতে ৭০ দশমিক ৫৯ একর জমিতে চা চাষ করা হয়েছে। পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১২ হাজার ৭৯ দশমিক ৬ একর জমিতে প্রায় ৩০টি চা বাগান এবং ৮ হাজারের বেশি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান গড়ে উঠেছে। পঞ্চগড়ের উৎপাদিত চা চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে পঞ্চগড়ে চা আবাদে জমির পরিমাণ ১১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৯৪ একর। উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা। পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় ৩২ লাখ ১৯ হাজার ২২৬ কেজি, যা দেশের মোট উৎপাদনের ১৯ শতাংশের বেশি। বৈশি^ক মহামারী উপেক্ষা করে জেলার ২৫টি চা কারখানায় উৎপাদিত চা নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৬০ কোটি টাকা মুল্যে বিক্রি করা হয়েছে।
চা বাগান আর চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে কয়েক বছর ধরে চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষুদ্র চা চাষিদের লোকসান গুনতে হয়। হতাশা দেখা দেয় চাষিদের মাঝে। কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটির নির্ধারিত ২৮ টাকা কেজি দরে কারখানায় পাতা বিক্রি করতে পারেন না চাষিরা। বাধ্য হয়ে ১২ টাকা থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। এর বাইরে নানান অজুহাতে কাঁচা পাতার ওজন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করে কারখানার মালিকরা মূল্য পরিশোধ করেন। তবে এখানে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় চা চাষিরা কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা করেন।
পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের চা চাষি এ এম এন গোলাম রব্বানী মানিক বলেন, আমিসহ চা চাষিরা প্রায় পাঁচ বছর ধরে চা আবাদ করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে কাঁচা পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ ১৮ টাকা দরে কাঁচা পাতা কেনার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে ১২ টাকা থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে কাঁচা পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার পাতার ওজন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করেন কারখানা মালিকরা। এখানে চা নিলাম কেন্দ্রটি চালু হওয়ায় আমরা চাষিরা কাঁচা পাতার ন্যায্যমুল্য পাব বলে আশা করি। চা অফিস সূত্রে প্রকাশ, পঞ্চগড় থেকে ব্রোকার হাউজের জন্য ৭টি প্রতিষ্ঠান চা বোর্ডে আবেদন করেছে। ৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে ২৪ জনকে চট্রগ্রামে চা বোর্ডের প্রধান কার্যলয়ে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে ওয়ার হাউজ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। চা বোর্ড কর্মকর্তা জানান, পাক-ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে চায়ের নিলাম কেন্দ্র। ২০১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্র গড়ে উঠে। চায়ের চলতি মৌসুম শুরু হয় মার্চ মাসে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যলয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে সমতল ভুমিতে চা চাষ শুরু হয়। তারপর ২০০৭ সালে ঠাকুরগাঁও ও লালমনির হাট এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারীতে চা চাষ শুরু হয়। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের ৫টি জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত ৯টি, অনিবন্ধিত ২১টি বড় (২৫ একরের উপরে) চা বাগান রয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৭৪৫টি নিবন্ধিত ও ৮ হাজার ৬৭টি অনিবন্ধিত ছোট (২৫ একরের নিচে) চা বাগান রয়েছে। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ১ কোটি ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এ বছরে এই চা অঞ্চল থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ কেজি উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৯৪ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডাসের সহসভাপতি মতিয়ার রহমান জানান, পঞ্চগড়ে প্রতি বছর চা চাষ ও চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারখানা থেকে কত টাকা কেজি দরে চা বিক্রি করছে তা আমরা জানতে পারব। সব কিছু মিলে চাষিরা কাঁচা চা পাতার ন্যায্য মূল্যে পাবে।
উত্তরাঞ্চলে এ পর্যন্ত ৪৮টি চা প্রক্র্রিয়াজাতকরণ কারখানার লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ২৪টি ও ঠাকুরগাঁও একটি কারখানা চালু রয়েছে। কারখানাগুলো চা চাষিদের কাছ থেকে সবুজ পাতা কিনে তৈরি চা (মেড চা) বানায়। কারখানা মালিকরা পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চা চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলে নিলামে বাজারে বিক্রি করেন। গত মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনির হাট) সমতল ভূমিতে কাঁচা চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার কেজি এবং সেখান থেকে তৈরি চা উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি। এবার পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে ১ কোটি ৭০ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশ টি বোর্ডের নর্দান বাংলাদেশ চা প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, এ জেলায় সমতলের চা বাগান ঘিরে টি ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কাঁচা চা পাতার দাম বর্তমানে ঠিকই আছে। সাজেদা রফিক চা কারখানার মালিক মো: আরিফুজ্জামান সুমন বলেন, এখানে চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় আমাদের পরিবহন খরচ কমে যাবে। আমাদের উৎপাদিত চা বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্রে পাঠাতে হবে না। আমাদের পরিবহন খরচ কমলে চা চাষিরাও বেশি দাম পাবেন। তবে চা চাষিরা ভালো মানের কাঁচা পাতা সরবরাহ করতে পারলে আমরাও ভালো মানের চা উৎপাদন করতে পারব। এতে চা চাষিরাও কাঁচা পাতার ভালো দাম পাবেন।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো: জহুরুল ইসলাম বলেন, অনলাইন চা নিলাম কেন্দ্রটি পঞ্চগড়ে চালু হলো। এখানকার চা শিল্পের সাথে জড়িত সবাই উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। চাষিরা নিজেরাই দেখতে পাবেন চায়ের মূল্য এখন কোথায় কি রকম চলছে? কারখানার মালিকরা ন্যায্যমূল্যের বাইরে কাঁচাপাতা কেনার সুযোগ থাকবে না।
নাগরিক প্রতিবেদক, পঞ্চগড়
১২ মে, ২০২৪, 2:03 PM

চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় চায়ের সবুজ পাতায়,পঞ্চগড়ে ঘুরে যাবে অর্থনীতির চাকা। এর আগে চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র চালু ছিল। গত সেপ্টেম্বরে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র পঞ্চগড়ে চালু হয়েছে। যার কারণে তৈরি করা চায়ের পরিবহন খরচ কবে যাবে। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। চায়ের উন্মুক্ত বেচাকেনায় ক্ষুদ্র চা চাষিরা চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্য মূল্য পাবে। বদলে যাবে উত্তারাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় জেলার চা চাষের সাথে জড়িতদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ কাজ করছে। ওয়ার হাউজ, ব্রোকার হাউজ নির্মাণসহ বায়ারদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনলাইন অ্যাপস তৈরিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আঞ্চলিক চা বোর্ড সূত্রে প্রকাশ,পঞ্চগড়ে ২০০০ সাল থেকে চা চাষ শুরু হয় জেলার বিভিন্ন এলাকার নদীসংলগ্ন পতিত জমিতে প্রতিনিয়ত চা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দিগন্ত জোড়া মাঠে চায়ের সবুজ পাতায় ভরে উঠেছে। এ জেলায় প্রায় ১১ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৯৪ একর জমিতে চা চাষ করা হচ্ছে। ৮টি নিবন্ধিত, ২০টি অনিবন্ধিত চা বাগান, ৭ হাজার ৩৩৮টি ক্ষুদ্রায়তন এবং ১ হাজার ৩৬৮টি ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে।
পঞ্চগড়ের মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানকার চা বাগানকে অনুসরণ করে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী এবং লালমনির হাট চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার ৪৫৭ দশমিক ২৯ একর লালমনিরহাট ২২২ দশমিকক ৩৮ একর দিনাজপুর ৮৯ একর এবং নীলফামারীতে ৭০ দশমিক ৫৯ একর জমিতে চা চাষ করা হয়েছে। পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১২ হাজার ৭৯ দশমিক ৬ একর জমিতে প্রায় ৩০টি চা বাগান এবং ৮ হাজারের বেশি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান গড়ে উঠেছে। পঞ্চগড়ের উৎপাদিত চা চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে পঞ্চগড়ে চা আবাদে জমির পরিমাণ ১১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৯৪ একর। উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা। পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় ৩২ লাখ ১৯ হাজার ২২৬ কেজি, যা দেশের মোট উৎপাদনের ১৯ শতাংশের বেশি। বৈশি^ক মহামারী উপেক্ষা করে জেলার ২৫টি চা কারখানায় উৎপাদিত চা নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৬০ কোটি টাকা মুল্যে বিক্রি করা হয়েছে।
চা বাগান আর চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে কয়েক বছর ধরে চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষুদ্র চা চাষিদের লোকসান গুনতে হয়। হতাশা দেখা দেয় চাষিদের মাঝে। কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটির নির্ধারিত ২৮ টাকা কেজি দরে কারখানায় পাতা বিক্রি করতে পারেন না চাষিরা। বাধ্য হয়ে ১২ টাকা থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। এর বাইরে নানান অজুহাতে কাঁচা পাতার ওজন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করে কারখানার মালিকরা মূল্য পরিশোধ করেন। তবে এখানে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় চা চাষিরা কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা করেন।
পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের চা চাষি এ এম এন গোলাম রব্বানী মানিক বলেন, আমিসহ চা চাষিরা প্রায় পাঁচ বছর ধরে চা আবাদ করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে কাঁচা পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ ১৮ টাকা দরে কাঁচা পাতা কেনার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে ১২ টাকা থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে কাঁচা পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার পাতার ওজন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করেন কারখানা মালিকরা। এখানে চা নিলাম কেন্দ্রটি চালু হওয়ায় আমরা চাষিরা কাঁচা পাতার ন্যায্যমুল্য পাব বলে আশা করি। চা অফিস সূত্রে প্রকাশ, পঞ্চগড় থেকে ব্রোকার হাউজের জন্য ৭টি প্রতিষ্ঠান চা বোর্ডে আবেদন করেছে। ৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে ২৪ জনকে চট্রগ্রামে চা বোর্ডের প্রধান কার্যলয়ে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে ওয়ার হাউজ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। চা বোর্ড কর্মকর্তা জানান, পাক-ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে চায়ের নিলাম কেন্দ্র। ২০১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্র গড়ে উঠে। চায়ের চলতি মৌসুম শুরু হয় মার্চ মাসে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যলয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে সমতল ভুমিতে চা চাষ শুরু হয়। তারপর ২০০৭ সালে ঠাকুরগাঁও ও লালমনির হাট এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারীতে চা চাষ শুরু হয়। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের ৫টি জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত ৯টি, অনিবন্ধিত ২১টি বড় (২৫ একরের উপরে) চা বাগান রয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৭৪৫টি নিবন্ধিত ও ৮ হাজার ৬৭টি অনিবন্ধিত ছোট (২৫ একরের নিচে) চা বাগান রয়েছে। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ১ কোটি ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এ বছরে এই চা অঞ্চল থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ কেজি উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৯৪ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডাসের সহসভাপতি মতিয়ার রহমান জানান, পঞ্চগড়ে প্রতি বছর চা চাষ ও চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারখানা থেকে কত টাকা কেজি দরে চা বিক্রি করছে তা আমরা জানতে পারব। সব কিছু মিলে চাষিরা কাঁচা চা পাতার ন্যায্য মূল্যে পাবে।
উত্তরাঞ্চলে এ পর্যন্ত ৪৮টি চা প্রক্র্রিয়াজাতকরণ কারখানার লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ২৪টি ও ঠাকুরগাঁও একটি কারখানা চালু রয়েছে। কারখানাগুলো চা চাষিদের কাছ থেকে সবুজ পাতা কিনে তৈরি চা (মেড চা) বানায়। কারখানা মালিকরা পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চা চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলে নিলামে বাজারে বিক্রি করেন। গত মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনির হাট) সমতল ভূমিতে কাঁচা চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার কেজি এবং সেখান থেকে তৈরি চা উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি। এবার পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে ১ কোটি ৭০ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশ টি বোর্ডের নর্দান বাংলাদেশ চা প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, এ জেলায় সমতলের চা বাগান ঘিরে টি ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কাঁচা চা পাতার দাম বর্তমানে ঠিকই আছে। সাজেদা রফিক চা কারখানার মালিক মো: আরিফুজ্জামান সুমন বলেন, এখানে চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় আমাদের পরিবহন খরচ কমে যাবে। আমাদের উৎপাদিত চা বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্রে পাঠাতে হবে না। আমাদের পরিবহন খরচ কমলে চা চাষিরাও বেশি দাম পাবেন। তবে চা চাষিরা ভালো মানের কাঁচা পাতা সরবরাহ করতে পারলে আমরাও ভালো মানের চা উৎপাদন করতে পারব। এতে চা চাষিরাও কাঁচা পাতার ভালো দাম পাবেন।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো: জহুরুল ইসলাম বলেন, অনলাইন চা নিলাম কেন্দ্রটি পঞ্চগড়ে চালু হলো। এখানকার চা শিল্পের সাথে জড়িত সবাই উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। চাষিরা নিজেরাই দেখতে পাবেন চায়ের মূল্য এখন কোথায় কি রকম চলছে? কারখানার মালিকরা ন্যায্যমূল্যের বাইরে কাঁচাপাতা কেনার সুযোগ থাকবে না।