কচুরিপানার কাছে জিম্মি শীতলক্ষ্যা

নাগরিক প্রতিবেদন
০৪ মে, ২০২৪, 12:53 PM

কচুরিপানার কাছে জিম্মি শীতলক্ষ্যা
হাওর-বিলঝিলের কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে শান্ত নদী শীতলক্ষ্যা। জোয়ারের ধাক্কায় কচুরিপানা প্রবেশ করছে শীতলক্ষ্যার উজান পর্যন্ত। এতে প্রায় বন্ধের পথে নৌ-চলাচল। বিপত্তি ঘটছে নদী পারাপারে, দুর্ভোগে পড়েছেন নদীর দুই পাড়ের বহু মানুষ। শ্রীপুরের বরমী বাজার থেকে কাপাসিয়ার সিংহশ্রী কুরিয়াদি পর্যন্ত সেতু নির্মাণের দাবি তুলেছেন শ্রীপুর ও কাপাসিয়াবাসী। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন বাদামতলী ঘাট ঢাকার মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) খন্দকার মুহাম্মদ তানভীর হোসেন বলেন, বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের। ওই সংস্থা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মো. শাহজাহান জানান, এ সময়টাতে বিলঝিলের কচুরি নদীতে চলে আসে। এসব কচুরি কে বন্ধ করবে? এ ছাড়া শিল্প বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেনের বর্জ্য নদীর পানি দূষিত করছে। তিনি আরও বলেন, নদীর কচুরি বন্ধে আমাদের কাছে কোনো প্রযুক্তি কিংবা কৌশল নেই।
ভুক্তভোগীরা জানান , কচুরিপানা ঠেলে অনেক কষ্টে খেয়াঘাটে এসে পৌঁছাতে হচ্ছে ট্রলারগুলোকে। আগে যেখানে মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিটে যাওয়া যেত, এখন কচুরিপানা ঠেলে যেতে সময় লাগবে অন্তত ২৫-৩০ মিনিট। শীতলক্ষ্যা নদীতে কচুরিপানার এমন বিস্তার আগে কেউ দেখেনি। বর্তমানে কচুরিপানায় যেন জিম্মি করে রেখেছে এই শীতলক্ষ্যা নদীটিকে ৷ বড় বড় তেলের জাহাজ, বালুবাহী ট্রলারকেও ধীর গতিতে যেতে দেখা যায় ৷ সময় সময় এই কচুরিপানা ট্রলারের পাখায় আটকে যায়, এই আটকে যাওয়ার কারণে নদীর মাঝপথে ট্রলারের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে খেটে খাওয়া দিনমজুর নৌকার মাঝিদের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন ৷ আগে একজন মাঝির দৈনিক আয় হতো তিনশ থেকে চারশ টাকা। এখন কচুরিপানা ঠেলে আগের মত আর তেমন আয় হয় না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শীতলক্ষ্যা নদীর দু'পাড়ে জেলেরা জাল ফেলে মাছ শিকার করে। আবার মাছ ধরার জন্য বাঁশ-মূলি দিয়ে ঘোর বা চাক তৈরি করে রাখে। সেই ঘোরের বাঁশ-মূলির মধ্যে কচুরিপানাগুলে আটকে থাকে দিনের পর দিন৷ এই আটকে থাকা অবস্থায় কচুরিপানাগুলো বংশবৃদ্ধিও করে। সরেজমিন দেখা যায়, গফরগাঁও সীমান্তের ত্রিমোহনীর সুতিয়া ও বানার নদী থেকে ঘোড়াশাল সেতু পর্যন্ত শীতলক্ষ্যায় ভাসছে অজস্র কচুরিপানা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌ-চলাচল। ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে খেয়া নৌকা। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও গফরগাঁও উপজেলার হাজার হাজার নৌ-যাত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে শীতলক্ষ্যা নদীতে তীব্র স্রোত থাকে। ওই সময় নদীতে কচুরিপানা থাকে না। কিন্তু শুকনো মৌসুমে নদী ভরে যায় কচুরিপানায়। গত কয়েক বছর ধরেই চলছে এ অবস্থা। গত বছর শুকনো মৌসুমে শীতলক্ষ্যা নদী কচুরিপানার দখলে চলে যাওয়ায় নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চলতি মৌসুমে তরতর করে কমে গেছে শীতলক্ষ্যার পানি। বিভিন্ন হাওর-বিলঝিলের কচুরি গড়িয়ে পড়েছে শীতলক্ষ্যায়। জোয়ারের ধাক্কায় সেগুলো পৌঁছে যাচ্ছে উজানের গফরগাঁওয়ের দিকেও। জোয়ার-ভাটার টানে ক্রমেই শীতলক্ষ্যা নদীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে কচুরিপানা। ঘোড়াশাল সেতু থেকে গফরগাঁও পর্যন্ত পুরো নদী কচুরিপানায় ভরে গেছে। ফলে নদীতে স্বাভাবিক নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলছে খেয়ার নৌকা।
স্থানীয়রা জানান, বরমী বাজার সংলগ্ন ত্রিমোহনী থেকে ঘোড়াশাল সেতু পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিমি নদী পথজুড়ে রয়েছে কচুরিপানার বিস্তার। এর মধ্যে বরমী, গোসিংগা, কাপাসিয়া, রানীগঞ্জ, তারাগঞ্জ, জামালপুর, চরসিন্দুর ও ঘোড়াশালের মতো গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজারসহ অন্তত বিশটি খেয়া ঘাট রয়েছে। এসব ঘাট দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ নদী পার হন। নদীতে চাল, সার, সিমেন্ট, বালু, পাথর, বাঁশসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে জাহাজ, ট্রলার ও নৌকা চলাচল করে। কিন্তু শীতলক্ষ্যা নদী কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাপাসিয়ার কুরিয়াদী গ্রামের ইব্রাহিম খলিল বলেন, কচুরিপানায় ভরে গেছে নদী। আমাদের প্রতিদিন কয়েকবার বরমী বাজারে যেতে হয়। প্রায়ই কচুরিপানার জন্য নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে খুবই বিপদে পড়তে হয় আমাদের। এর একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য বরমী-কুরিয়াদি সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি। এ স্থানে একটি সেতু আমাদের প্রাণের দাবি।
শ্রীপুর গোসিংগা বাজারের ব্যবসায়ী আল-আমিন তপু বলেন, গফরগাঁওয়ের ত্রিমোহনী থেকে ঘোড়াশাল পর্যন্ত নদীতে প্রচুর কচুরিপানা হয়েছে। এতে নদীতে নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কয়েক দিন পরই নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বরমী-কুরিয়াদি ঘাটের ইজারাদার তৌহিদ মিয়া বলেন, গত বছরও কচুরিপানার কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। নৌকা চালানো বন্ধ ছিল।
নাগরিক প্রতিবেদন
০৪ মে, ২০২৪, 12:53 PM

হাওর-বিলঝিলের কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে শান্ত নদী শীতলক্ষ্যা। জোয়ারের ধাক্কায় কচুরিপানা প্রবেশ করছে শীতলক্ষ্যার উজান পর্যন্ত। এতে প্রায় বন্ধের পথে নৌ-চলাচল। বিপত্তি ঘটছে নদী পারাপারে, দুর্ভোগে পড়েছেন নদীর দুই পাড়ের বহু মানুষ। শ্রীপুরের বরমী বাজার থেকে কাপাসিয়ার সিংহশ্রী কুরিয়াদি পর্যন্ত সেতু নির্মাণের দাবি তুলেছেন শ্রীপুর ও কাপাসিয়াবাসী। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন বাদামতলী ঘাট ঢাকার মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) খন্দকার মুহাম্মদ তানভীর হোসেন বলেন, বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের। ওই সংস্থা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মো. শাহজাহান জানান, এ সময়টাতে বিলঝিলের কচুরি নদীতে চলে আসে। এসব কচুরি কে বন্ধ করবে? এ ছাড়া শিল্প বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেনের বর্জ্য নদীর পানি দূষিত করছে। তিনি আরও বলেন, নদীর কচুরি বন্ধে আমাদের কাছে কোনো প্রযুক্তি কিংবা কৌশল নেই।
ভুক্তভোগীরা জানান , কচুরিপানা ঠেলে অনেক কষ্টে খেয়াঘাটে এসে পৌঁছাতে হচ্ছে ট্রলারগুলোকে। আগে যেখানে মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিটে যাওয়া যেত, এখন কচুরিপানা ঠেলে যেতে সময় লাগবে অন্তত ২৫-৩০ মিনিট। শীতলক্ষ্যা নদীতে কচুরিপানার এমন বিস্তার আগে কেউ দেখেনি। বর্তমানে কচুরিপানায় যেন জিম্মি করে রেখেছে এই শীতলক্ষ্যা নদীটিকে ৷ বড় বড় তেলের জাহাজ, বালুবাহী ট্রলারকেও ধীর গতিতে যেতে দেখা যায় ৷ সময় সময় এই কচুরিপানা ট্রলারের পাখায় আটকে যায়, এই আটকে যাওয়ার কারণে নদীর মাঝপথে ট্রলারের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে খেটে খাওয়া দিনমজুর নৌকার মাঝিদের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন ৷ আগে একজন মাঝির দৈনিক আয় হতো তিনশ থেকে চারশ টাকা। এখন কচুরিপানা ঠেলে আগের মত আর তেমন আয় হয় না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শীতলক্ষ্যা নদীর দু'পাড়ে জেলেরা জাল ফেলে মাছ শিকার করে। আবার মাছ ধরার জন্য বাঁশ-মূলি দিয়ে ঘোর বা চাক তৈরি করে রাখে। সেই ঘোরের বাঁশ-মূলির মধ্যে কচুরিপানাগুলে আটকে থাকে দিনের পর দিন৷ এই আটকে থাকা অবস্থায় কচুরিপানাগুলো বংশবৃদ্ধিও করে। সরেজমিন দেখা যায়, গফরগাঁও সীমান্তের ত্রিমোহনীর সুতিয়া ও বানার নদী থেকে ঘোড়াশাল সেতু পর্যন্ত শীতলক্ষ্যায় ভাসছে অজস্র কচুরিপানা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌ-চলাচল। ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে খেয়া নৌকা। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও গফরগাঁও উপজেলার হাজার হাজার নৌ-যাত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে শীতলক্ষ্যা নদীতে তীব্র স্রোত থাকে। ওই সময় নদীতে কচুরিপানা থাকে না। কিন্তু শুকনো মৌসুমে নদী ভরে যায় কচুরিপানায়। গত কয়েক বছর ধরেই চলছে এ অবস্থা। গত বছর শুকনো মৌসুমে শীতলক্ষ্যা নদী কচুরিপানার দখলে চলে যাওয়ায় নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চলতি মৌসুমে তরতর করে কমে গেছে শীতলক্ষ্যার পানি। বিভিন্ন হাওর-বিলঝিলের কচুরি গড়িয়ে পড়েছে শীতলক্ষ্যায়। জোয়ারের ধাক্কায় সেগুলো পৌঁছে যাচ্ছে উজানের গফরগাঁওয়ের দিকেও। জোয়ার-ভাটার টানে ক্রমেই শীতলক্ষ্যা নদীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে কচুরিপানা। ঘোড়াশাল সেতু থেকে গফরগাঁও পর্যন্ত পুরো নদী কচুরিপানায় ভরে গেছে। ফলে নদীতে স্বাভাবিক নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলছে খেয়ার নৌকা।
স্থানীয়রা জানান, বরমী বাজার সংলগ্ন ত্রিমোহনী থেকে ঘোড়াশাল সেতু পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিমি নদী পথজুড়ে রয়েছে কচুরিপানার বিস্তার। এর মধ্যে বরমী, গোসিংগা, কাপাসিয়া, রানীগঞ্জ, তারাগঞ্জ, জামালপুর, চরসিন্দুর ও ঘোড়াশালের মতো গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজারসহ অন্তত বিশটি খেয়া ঘাট রয়েছে। এসব ঘাট দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ নদী পার হন। নদীতে চাল, সার, সিমেন্ট, বালু, পাথর, বাঁশসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে জাহাজ, ট্রলার ও নৌকা চলাচল করে। কিন্তু শীতলক্ষ্যা নদী কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাপাসিয়ার কুরিয়াদী গ্রামের ইব্রাহিম খলিল বলেন, কচুরিপানায় ভরে গেছে নদী। আমাদের প্রতিদিন কয়েকবার বরমী বাজারে যেতে হয়। প্রায়ই কচুরিপানার জন্য নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে খুবই বিপদে পড়তে হয় আমাদের। এর একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য বরমী-কুরিয়াদি সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি। এ স্থানে একটি সেতু আমাদের প্রাণের দাবি।
শ্রীপুর গোসিংগা বাজারের ব্যবসায়ী আল-আমিন তপু বলেন, গফরগাঁওয়ের ত্রিমোহনী থেকে ঘোড়াশাল পর্যন্ত নদীতে প্রচুর কচুরিপানা হয়েছে। এতে নদীতে নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কয়েক দিন পরই নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বরমী-কুরিয়াদি ঘাটের ইজারাদার তৌহিদ মিয়া বলেন, গত বছরও কচুরিপানার কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। নৌকা চালানো বন্ধ ছিল।