নাবিকদের মানবঢাল বানাচ্ছে জলদস্যুরা

নাগরিক প্রতিবেদন
২৩ মার্চ, ২০২৪, 1:35 PM

নাবিকদের মানবঢাল বানাচ্ছে জলদস্যুরা
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহকে নজরদারিতে রাখছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধজাহাজ। তবে এগুলো কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করলে নাবিকদের বানানো হচ্ছে মানবঢাল। জাহাজের ব্রিজে (জাহাজ চালানোর কক্ষ) তুলে নাবিকদের একে-৪৭ এর মুখোমুখি রাখা হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশি জাহাজটিতে সামরিক অভিযান নাবিকদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাহাজের মালিকপক্ষও বলেছে, তারা সশস্ত্র অভিযানের পক্ষে নন।
এমভি আব্দুল্লাহের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ইইউ য্দ্ধুজাহাজ ও হেলিকপ্টার কয়েকবারই এমভি আব্দুল্লাহর দেড় দুই মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। প্রতিবারই জিম্মি নাবিকদের ব্রিজে নিয়ে আসা হয়। বন্দুকের মুখে মানবঢাল বানিয়ে রাখা হয়। ইইউ নৌবাহিনী ১০/১৫ মাইল দূরে সরে গেলে তবেই নাবিকদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়।
আতিক ইউ এ খান বলেন, নাবিকরা যখন দেশে যোগাযোগ করতে পারছে না, তখন বুঝতে হবে তাদের ব্রিজে বন্দুকের মুখে রাখা হয়েছে। কারণ যোগাযোগের সব ব্যবস্থা ভেতরে। যুদ্ধ জাহাজের কর্মকা-ে কোনো লাভ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জলদস্যুদের কাছ থেকে আমেরিকা ও রাশিয়া জাহাজ উদ্ধার করেছে। অপহৃত জাহাজ তারা সোমালিয়ার উপকূল পর্যন্ত পৌঁছতে দেয়নি। তবে এ ধরনের অভিযানে ঝুঁকি থাকে। নাবিকদের একে-৪৭ এর মুখে রাখা হয়েছে। অভিযান চালাতে গেলে জলদস্যুরা গুলি করলে নাবিকরা মারা পড়তে পারে। তবে এ ধরনের টহল অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে জলদস্যুরা চাপে থাকে।
এদিকে, দস্যুতাবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ইইউ নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর কাছে অবস্থান নিয়েছে। মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে ইইউ নৌবাহিনী ইউনেভফোর। এতে দেখা গেছে, এমভি আব্দুল্লাহর কাছে অবস্থান নিয়েছে তাদের যুদ্ধজাহাজ। ওই সময় একটি হেলিকপ্টারকেও বাংলাদেশি জাহাজটির পাশ দিয়ে ঘুরপাক খেতে দেখা যায়। ইইউর যুদ্ধজাহাজ থেকে সেটি দুই নাবিককে পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়।
তবে বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া এমভি আবদুল্লাহতে অভিযান চালানোর সুযোগ কারো নেই বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কমডোর মোহাম্মদ মার্জিয়া মুমু। তিনি জানান, ইইউ নেভাল ফোর্সের তরফেও কেবল অবস্থান নেওয়ার কথাই জানানো হয়েছে, অভিযানের বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে ইউনেভফোরের তৎপরতা ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান বাহিনীর মতো শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি দস্যুদের ওপর একটা চাপ তৈরি করবে। যা সমঝোতার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এছাড়া পূর্ব আফ্রিকার ওই উপকূল থেকে নতুন কোনো দস্যুদল সাগরে প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে দস্যুদের তৎপরতা কমে আসবে।
গত বুধবার সেহরির পর এমভি আব্দুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন তার মা শাহনুর বেগম। শাহনুর জানান, নাবিকদের ঠিকমতো খাবার ও পানি দেওয়া হচ্ছে না। এক বেলা খেতে দিলে আরেক বেলা দিচ্ছে না। জলদস্যুরা জাহাজের খাবারও প্রায় শেষ করে ফেলেছে। তাদের কেবিনের পরিবর্তে এমনকি ঘুমের সময়েও ব্রিজেই অবস্থান করতে হচ্ছে।
জিম্মি করার আট দিন পর গত বুধবার দুপুরে প্রথমবারের মতো এমভি আব্দুল্লাহর মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমালি জলদস্যুরা। গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানিয়েছেন, জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। আমরা কোনোভাবে সশস্ত্র অভিযানের পক্ষে নই। নাবিকদের জীবন সংশয়ে পড়বে এমন কোনো কিছুর প্রতি আমাদের সমর্থন নেই। শান্তিপূর্ণ উপায়ে নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়া আনা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করছি।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি দখলে নেয় সোমালি জলদস্যুরা। সোমালিয়া উপকূলে প্রবেশের আগ পর্যন্ত জাহাজটিকে অনুসরণ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ।
নাগরিক প্রতিবেদন
২৩ মার্চ, ২০২৪, 1:35 PM

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহকে নজরদারিতে রাখছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধজাহাজ। তবে এগুলো কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করলে নাবিকদের বানানো হচ্ছে মানবঢাল। জাহাজের ব্রিজে (জাহাজ চালানোর কক্ষ) তুলে নাবিকদের একে-৪৭ এর মুখোমুখি রাখা হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশি জাহাজটিতে সামরিক অভিযান নাবিকদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাহাজের মালিকপক্ষও বলেছে, তারা সশস্ত্র অভিযানের পক্ষে নন।
এমভি আব্দুল্লাহের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ইইউ য্দ্ধুজাহাজ ও হেলিকপ্টার কয়েকবারই এমভি আব্দুল্লাহর দেড় দুই মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। প্রতিবারই জিম্মি নাবিকদের ব্রিজে নিয়ে আসা হয়। বন্দুকের মুখে মানবঢাল বানিয়ে রাখা হয়। ইইউ নৌবাহিনী ১০/১৫ মাইল দূরে সরে গেলে তবেই নাবিকদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়।
আতিক ইউ এ খান বলেন, নাবিকরা যখন দেশে যোগাযোগ করতে পারছে না, তখন বুঝতে হবে তাদের ব্রিজে বন্দুকের মুখে রাখা হয়েছে। কারণ যোগাযোগের সব ব্যবস্থা ভেতরে। যুদ্ধ জাহাজের কর্মকা-ে কোনো লাভ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জলদস্যুদের কাছ থেকে আমেরিকা ও রাশিয়া জাহাজ উদ্ধার করেছে। অপহৃত জাহাজ তারা সোমালিয়ার উপকূল পর্যন্ত পৌঁছতে দেয়নি। তবে এ ধরনের অভিযানে ঝুঁকি থাকে। নাবিকদের একে-৪৭ এর মুখে রাখা হয়েছে। অভিযান চালাতে গেলে জলদস্যুরা গুলি করলে নাবিকরা মারা পড়তে পারে। তবে এ ধরনের টহল অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে জলদস্যুরা চাপে থাকে।
এদিকে, দস্যুতাবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ইইউ নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর কাছে অবস্থান নিয়েছে। মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে ইইউ নৌবাহিনী ইউনেভফোর। এতে দেখা গেছে, এমভি আব্দুল্লাহর কাছে অবস্থান নিয়েছে তাদের যুদ্ধজাহাজ। ওই সময় একটি হেলিকপ্টারকেও বাংলাদেশি জাহাজটির পাশ দিয়ে ঘুরপাক খেতে দেখা যায়। ইইউর যুদ্ধজাহাজ থেকে সেটি দুই নাবিককে পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়।
তবে বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া এমভি আবদুল্লাহতে অভিযান চালানোর সুযোগ কারো নেই বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কমডোর মোহাম্মদ মার্জিয়া মুমু। তিনি জানান, ইইউ নেভাল ফোর্সের তরফেও কেবল অবস্থান নেওয়ার কথাই জানানো হয়েছে, অভিযানের বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে ইউনেভফোরের তৎপরতা ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান বাহিনীর মতো শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি দস্যুদের ওপর একটা চাপ তৈরি করবে। যা সমঝোতার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এছাড়া পূর্ব আফ্রিকার ওই উপকূল থেকে নতুন কোনো দস্যুদল সাগরে প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে দস্যুদের তৎপরতা কমে আসবে।
গত বুধবার সেহরির পর এমভি আব্দুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন তার মা শাহনুর বেগম। শাহনুর জানান, নাবিকদের ঠিকমতো খাবার ও পানি দেওয়া হচ্ছে না। এক বেলা খেতে দিলে আরেক বেলা দিচ্ছে না। জলদস্যুরা জাহাজের খাবারও প্রায় শেষ করে ফেলেছে। তাদের কেবিনের পরিবর্তে এমনকি ঘুমের সময়েও ব্রিজেই অবস্থান করতে হচ্ছে।
জিম্মি করার আট দিন পর গত বুধবার দুপুরে প্রথমবারের মতো এমভি আব্দুল্লাহর মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমালি জলদস্যুরা। গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানিয়েছেন, জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। আমরা কোনোভাবে সশস্ত্র অভিযানের পক্ষে নই। নাবিকদের জীবন সংশয়ে পড়বে এমন কোনো কিছুর প্রতি আমাদের সমর্থন নেই। শান্তিপূর্ণ উপায়ে নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়া আনা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করছি।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি দখলে নেয় সোমালি জলদস্যুরা। সোমালিয়া উপকূলে প্রবেশের আগ পর্যন্ত জাহাজটিকে অনুসরণ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ।