অপরিকল্পিত কাজে সিলেট নগরে ভোগান্তি বেড়েছে

#
news image

সিলেট নগরীতে একসঙ্গে পাঁচটি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চলছে স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কার ও উন্নয়নকাজ। রমজানের কয়েক দিন আগ থেকেই শুরু হওয়া এ কাজের জন্য খেসারত দিতে হচ্ছে ওইসব সড়কে চলাচলকারী জনসাধারণকে। পাঁচটি রাস্তা বন্ধ থাকায় বিকল্প পথও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন আবাসিক এলাকার রাস্তাও গাড়ির চাপে পড়ছে। একদিকে তীব্র যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় যাচ্ছে, আর অন্যদিকে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

আগাম বৃষ্টির কারণে একসঙ্গে কাজ হচ্ছে বলে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্রের দাবি, জুনের মধ্যেই বিলের অর্থ তুলতে তড়িঘড়ি এ উন্নয়নকাজ হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অপরিকল্পিত।

এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. মো. জহির বিন আলম বলেন, ‘তাদের (সিসিক) উচিত ছিল একটা করে রাস্তা ধরে কাজ করা। কারণ যে রাস্তাগুলোয় কাজ শুরু করেছে, সবই হলো সিলেটের প্রধান রাস্তা। এটা নিয়ে আমি সিসিকের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছেন, জুনের মধ্যেই টাকাটা (বিল) তুলতে হবে, পেইড করতে হবে। এটার বাধ্য-বাধ্যকতা আছে। তাদের তো আগে থেকেই প্ল্যান করা উচিত ছিল। কারণ পুরো রমজান মাসে মানুষ খুব কষ্ট পাবে। খুব খারাপ একটা অবস্থা হবে।’

তবে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘একসঙ্গে পাঁচ রাস্তার কাজে বিল বা বাজেট উত্তোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। ওনাদের (জহির বিন আলম) সঙ্গে কাজের পরিকল্পনা নিয়ে আমরা বসেছিলাম, তবে এমন কোনো কথা হয়নি। সামনে বৃষ্টির দিন। এখন ভারি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি বেড়ে যায়। এজন্য বর্ষা মৌসুমের আগে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা ক্লিয়ার করতে একসঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। সাময়িক কষ্ট হচ্ছে ঠিকই, তবে ১৫ রমজানের মধ্যে রাস্তাগুলো খুলে দেয়া যাবে।’

তবে কর্মরত শ্রমিকদের দাবি, আম্বরখানা সড়কের কাজ শেষ হতে দেড় মাস এবং দরগা গেট সড়কের কাজ শেষ হতে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

সরজমিন দেখা গেছে, ‘উন্নয়নমূলক কাজ চলিতেছে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করুন। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত’— নগরীর আম্বরখানা-চৌহাট্টা সড়কে সিসিকের পক্ষ থেকে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। সড়কের আম্বরখানা পয়েন্টে রাস্তা খুঁড়ে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। আর দরগাহ গেট পয়েন্টে গ্যাসের পাইপলাইনের কাজ চলছে। এতদিন এ সড়কের এক পাশ বন্ধ রেখে অন্য পাশে কাজ চললেও বর্তমানে দুই পাশ বন্ধ রেখেই কাজ চলছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছেন সড়ক ব্যবহারকারীরা। তাদের বিকল্প পথ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। আর আগে যে গাড়িগুলো এ সড়ক দিয়ে যেত এখন সেগুলো যাচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও আম্বরখানা-টিলাগড় সড়ক দিয়ে। এতে বাড়তি চাপ পড়ছে ওই দুই ব্যস্ততম সড়কে। এ কারণে যানজটও লেগে আছে। আগে আম্বরখানা থেকে বন্দরবাজার গেলে ভাড়া দিতে হতো জনপ্রতি ১৫ টাকা করে। আর এখন দিতে হচ্ছে ২০ টাকা করে। অন্যদিকে ১৫ রমজান পরে বাড়বে ঈদের কেনাকাটা। তখন মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে একই সময়ে চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার সড়ক দিয়ে যেতে হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ব্যস্ততম এ সড়কেরও এক পাশে যান চলাচল বন্ধ রেখে চলছে পুরাতন কালভার্ট ভেঙে নতুন করে কালভার্ট নির্মাণের কাজ। এ কারণে তীব্র যানজটে পড়ছেন সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা। এছাড়া নগরীর নাইওরপুল-সুবহানীঘাট সড়ক বন্ধ রয়েছে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য। এজন্য সোবহানীঘাট পয়েন্টে যানজট লেগেই থাকে। আর নগরীর মেন্দিবাগ পয়েন্টেও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য যানজট লেগে থাকছে।

আম্বরখানা-চৌহাট্টা সড়ক দিয়ে চলাচল করা আব্দুল মুহিত দিদার বলেন, ‘রোজার দিনেও রাস্তা বন্ধ করে কাজ করছে। এখন গাড়িতে উঠে যদি বন্দরে যাই, তাহলে অর্ধেক সময়ই শেষ। আর সিএনজি ভাড়া তো বাড়ছেই। এমন অবস্থায় হাঁটা ছাড়া আর কিছু করার আছে। যে উন্নয়নে মানুষের কষ্ট হয়, এমন উন্নয়ন আমরা চাই না।’

আরিফ নামে এক সিএনজি অটেরিকশাচালক বলেন, ‘আগে ৫ মিনিটও লাগত না বন্দরে যেতে। আর এখন ঘুরে যেতে হয়, যানজট তো আছেই। একবার যানজটে পড়লে আর গাড়ি চালাতেই মন চায় না। ভাড়া একটু বাড়ালেই সব সমস্যা।’

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি সড়কে একযোগে উন্নয়নকাজ চলায় এখন আমাদের রেশনিং করতে হচ্ছে, ডাইভার্টিং করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে এসব সড়কে গাড়ির চাপ যেহেতু বেশি, এজন্য যানজট বেড়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিকল্প রাস্তার চিন্তা রেখে সড়কে কাজ করতে হয়। কিন্তু সিলেটে রাস্তার পরিমাণ কম হওয়ায় সেই সুযোগ কম। যে কারণে আমাদের বারবার ডাইভার্টিং করতে হচ্ছে।’

ভবিষ্যতে ট্রাফিক ব্যবস্থার বিষয়টি মাথায় রেখে উন্নয়নকাজ হাতে নেয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নাগরিক প্রতিনিধি,সিলেট

২৩ মার্চ, ২০২৪,  1:34 PM

news image

সিলেট নগরীতে একসঙ্গে পাঁচটি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চলছে স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কার ও উন্নয়নকাজ। রমজানের কয়েক দিন আগ থেকেই শুরু হওয়া এ কাজের জন্য খেসারত দিতে হচ্ছে ওইসব সড়কে চলাচলকারী জনসাধারণকে। পাঁচটি রাস্তা বন্ধ থাকায় বিকল্প পথও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন আবাসিক এলাকার রাস্তাও গাড়ির চাপে পড়ছে। একদিকে তীব্র যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় যাচ্ছে, আর অন্যদিকে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

আগাম বৃষ্টির কারণে একসঙ্গে কাজ হচ্ছে বলে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্রের দাবি, জুনের মধ্যেই বিলের অর্থ তুলতে তড়িঘড়ি এ উন্নয়নকাজ হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অপরিকল্পিত।

এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. মো. জহির বিন আলম বলেন, ‘তাদের (সিসিক) উচিত ছিল একটা করে রাস্তা ধরে কাজ করা। কারণ যে রাস্তাগুলোয় কাজ শুরু করেছে, সবই হলো সিলেটের প্রধান রাস্তা। এটা নিয়ে আমি সিসিকের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছেন, জুনের মধ্যেই টাকাটা (বিল) তুলতে হবে, পেইড করতে হবে। এটার বাধ্য-বাধ্যকতা আছে। তাদের তো আগে থেকেই প্ল্যান করা উচিত ছিল। কারণ পুরো রমজান মাসে মানুষ খুব কষ্ট পাবে। খুব খারাপ একটা অবস্থা হবে।’

তবে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘একসঙ্গে পাঁচ রাস্তার কাজে বিল বা বাজেট উত্তোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। ওনাদের (জহির বিন আলম) সঙ্গে কাজের পরিকল্পনা নিয়ে আমরা বসেছিলাম, তবে এমন কোনো কথা হয়নি। সামনে বৃষ্টির দিন। এখন ভারি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি বেড়ে যায়। এজন্য বর্ষা মৌসুমের আগে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা ক্লিয়ার করতে একসঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। সাময়িক কষ্ট হচ্ছে ঠিকই, তবে ১৫ রমজানের মধ্যে রাস্তাগুলো খুলে দেয়া যাবে।’

তবে কর্মরত শ্রমিকদের দাবি, আম্বরখানা সড়কের কাজ শেষ হতে দেড় মাস এবং দরগা গেট সড়কের কাজ শেষ হতে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

সরজমিন দেখা গেছে, ‘উন্নয়নমূলক কাজ চলিতেছে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করুন। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত’— নগরীর আম্বরখানা-চৌহাট্টা সড়কে সিসিকের পক্ষ থেকে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। সড়কের আম্বরখানা পয়েন্টে রাস্তা খুঁড়ে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। আর দরগাহ গেট পয়েন্টে গ্যাসের পাইপলাইনের কাজ চলছে। এতদিন এ সড়কের এক পাশ বন্ধ রেখে অন্য পাশে কাজ চললেও বর্তমানে দুই পাশ বন্ধ রেখেই কাজ চলছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছেন সড়ক ব্যবহারকারীরা। তাদের বিকল্প পথ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। আর আগে যে গাড়িগুলো এ সড়ক দিয়ে যেত এখন সেগুলো যাচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও আম্বরখানা-টিলাগড় সড়ক দিয়ে। এতে বাড়তি চাপ পড়ছে ওই দুই ব্যস্ততম সড়কে। এ কারণে যানজটও লেগে আছে। আগে আম্বরখানা থেকে বন্দরবাজার গেলে ভাড়া দিতে হতো জনপ্রতি ১৫ টাকা করে। আর এখন দিতে হচ্ছে ২০ টাকা করে। অন্যদিকে ১৫ রমজান পরে বাড়বে ঈদের কেনাকাটা। তখন মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে একই সময়ে চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার সড়ক দিয়ে যেতে হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ব্যস্ততম এ সড়কেরও এক পাশে যান চলাচল বন্ধ রেখে চলছে পুরাতন কালভার্ট ভেঙে নতুন করে কালভার্ট নির্মাণের কাজ। এ কারণে তীব্র যানজটে পড়ছেন সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা। এছাড়া নগরীর নাইওরপুল-সুবহানীঘাট সড়ক বন্ধ রয়েছে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য। এজন্য সোবহানীঘাট পয়েন্টে যানজট লেগেই থাকে। আর নগরীর মেন্দিবাগ পয়েন্টেও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য যানজট লেগে থাকছে।

আম্বরখানা-চৌহাট্টা সড়ক দিয়ে চলাচল করা আব্দুল মুহিত দিদার বলেন, ‘রোজার দিনেও রাস্তা বন্ধ করে কাজ করছে। এখন গাড়িতে উঠে যদি বন্দরে যাই, তাহলে অর্ধেক সময়ই শেষ। আর সিএনজি ভাড়া তো বাড়ছেই। এমন অবস্থায় হাঁটা ছাড়া আর কিছু করার আছে। যে উন্নয়নে মানুষের কষ্ট হয়, এমন উন্নয়ন আমরা চাই না।’

আরিফ নামে এক সিএনজি অটেরিকশাচালক বলেন, ‘আগে ৫ মিনিটও লাগত না বন্দরে যেতে। আর এখন ঘুরে যেতে হয়, যানজট তো আছেই। একবার যানজটে পড়লে আর গাড়ি চালাতেই মন চায় না। ভাড়া একটু বাড়ালেই সব সমস্যা।’

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি সড়কে একযোগে উন্নয়নকাজ চলায় এখন আমাদের রেশনিং করতে হচ্ছে, ডাইভার্টিং করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে এসব সড়কে গাড়ির চাপ যেহেতু বেশি, এজন্য যানজট বেড়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিকল্প রাস্তার চিন্তা রেখে সড়কে কাজ করতে হয়। কিন্তু সিলেটে রাস্তার পরিমাণ কম হওয়ায় সেই সুযোগ কম। যে কারণে আমাদের বারবার ডাইভার্টিং করতে হচ্ছে।’

ভবিষ্যতে ট্রাফিক ব্যবস্থার বিষয়টি মাথায় রেখে উন্নয়নকাজ হাতে নেয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।