বেড়েই চলেছে বোয়িংয়ের সংকট

#
news image

পরপর ঘটা কয়েকটি বিপত্তির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ছিল মাঝ আকাশে আলাস্কা এয়ারলাইনসের ফ্লাইটের প্যানেল খুলে যাওয়ার ঘটনা। এ কারণে বিস্তৃত তদন্তের মুখোমুখি হয় বোয়িং। কমে যায় এ উড়োজাহাজ নির্মাতা জায়ান্টের ক্রয়াদেশ ও সরবরাহ। এত সব সংকটের মধ্যে এবার জানা গেল, ফৌজদারি তদন্তের মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া কারখানার নথিসংক্রান্ত বিষয়ে গাফিলতি উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক চিঠিতে।

মার্কিন বিচার বিভাগ এরই মধ্যে ৫ জানুয়ারির ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে উড়োজাহাজ কর্মীসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। ঘটনার শিকার আলাস্কা এয়ারলাইনসও ফৌজদারি তদন্তে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে ফ্লাইট পরিষেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এ ধরনের ঘটনায় বিচার বিভাগ তদন্ত করবে তা স্বাভাবিক। আমরা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি ও এটাও বিশ্বাস করি না যে আমরাই এ তদন্তের লক্ষ্য।

বোয়িংয়ের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে আছে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সংঘটিত ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজের দুটি দুর্ঘটনা। লায়ন এয়ার ও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের ওই দুর্ঘটনার তদন্ত নিষ্পত্তি করতে ২০২১ সালে বোয়িং ২৪ কোটি ৪০ লাখ জরিমানাসহ ২৫০ কোটি ডলার অর্থ পরিশোধে সম্মত হয়েছিল। তখন ফ্লাইট-কন্ট্রোল সিস্টেমের ত্রুটি বিষয়ে দুই কর্মচারীকে দায়ী করা হয়েছিল। এবারের তদন্তে ওই ঘটনাগুলোরও মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

এদিকে যথাযথভাবে নথি সংরক্ষণে বোয়িংয়ের গাফিলতি দেখা গেছে। সম্প্রতি কংগ্রেসের কাছে এক চিঠিতে বোয়িং স্বীকার করেছে যে তারা আলাস্কা এয়ারলাইনসের বিমানের দরজার প্যানেল লাগানোর রেকর্ড খুঁজে পাচ্ছে না। বোয়িংয়ের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়াদ ওজাকলি ওই চিঠিতে লেখেন, ‘আমরা বিস্তৃতভাবে খুঁজে দেখেছি, কিন্তু ওই ধরনের কোনো নথি পাইনি।’

জানুয়ারির ঘটনার পর থেকে এভিয়েশন খাতে নতুন ধরনের সংকট শুরু হয়েছে। ওই সময় আলাস্কা এয়ারলাইনস ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের শিডিউলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে শিডিউল স্বাভাবিক হয়ে এলেও সম্প্রতি ইউনাইটেড এয়ারলাইনস জানায়, বোয়িং থেকে প্রয়োজনীয় সরবরাহ না আসার আশঙ্কায় মে ও জুনে নতুন পাইলট নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে না।

এদিকে সুরক্ষা বিষয়ে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) বিস্তৃত তদন্ত শুরু করেছে। সম্প্রতি তারা বোয়িংকে সুরক্ষা নীতি তৈরি করতে সময় বেঁধে দিয়েছে। এমনকি নিরাপত্তার স্বার্থে ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের উড়োজাহাজ তৈরি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। পাশাপাশি উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমান সময়ের তুলনায় আর বাড়াতে পারবে না বলেও জানায় সংস্থাটি। এফএএ জানায়, বোয়িংকে বিমানের উৎপাদন বাড়ানোর অনুমতি আপাতত আর দেয়া হবে না।

গত পাঁচ বছর উড্ডয়নে আস্থা হারাচ্ছে বোয়িং। প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের সঙ্গে বাড়ছে শেয়ারের ব্যবধানও। প্রতি বছরই কমছে বিমানের ক্রয়াদেশ ও সরবরাহের পরিমাণ। এয়ারক্রাফটের মান ধরে রাখার পাশাপাশি মুনাফা করতে বেগ পেতে হচ্ছে বোয়িংকে। এমন সময় পরপর বিপত্তি আইনি ও ব্যবসায়িক সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাসকে টেক্কা দেয়ার পরিকল্পনা থেকে সর্বাধিক বিক্রীত ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের এয়ারক্রাফট উৎপাদন বাড়িয়েছিল বোয়িং। প্রায় এক দশক ধরে গ্রাহকদের দ্রুত উড়োজাহাজ সরবরাহে গুরুত্ব দিচ্ছে কোম্পানিটি। ফলে দ্রুত সরবরাহ করতে গিয়ে থেকে যাচ্ছে নানা ত্রুটি। গত বছর বেশ কয়েকবার বোয়িংয়ের তৈরি এয়ারক্রাফটের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এয়ারবাসের সঙ্গে টেক্কা দিতে ২০২৩ সালের অক্টোবরে বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী ডেভিড কালহোন জানান, প্রতি মাসে ম্যাক্স মডেলের ৩৮টি এয়ারক্রাফট তৈরি করা হবে। কিন্তু এরপর বোয়িংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় ২০২৪ ও ২০২৫ সালে উৎপাদন সক্ষমতা আরো বাড়ানোর কথা। এ বিষয়ে বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়।

সাম্প্রতিক একাধিক দুর্ঘটনার পর গত মাসে ২৭টি উড়োজাহাজ সরবরাহ করেছে বোয়িং, যা সেপ্টেম্বরের পর থেকে সর্বনিম্ন। এছাড়া বোয়িং ম্যাক্স উড়োজাহাজ বিক্রি করেছে মাত্র তিনটি। তবে অন্য তিনটি ক্রয়াদেশ বাতিলও হয়েছে কোম্পানিটির।

নাগরিক ডেস্ক রিপোর্ট

১১ মার্চ, ২০২৪,  12:25 PM

news image

পরপর ঘটা কয়েকটি বিপত্তির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ছিল মাঝ আকাশে আলাস্কা এয়ারলাইনসের ফ্লাইটের প্যানেল খুলে যাওয়ার ঘটনা। এ কারণে বিস্তৃত তদন্তের মুখোমুখি হয় বোয়িং। কমে যায় এ উড়োজাহাজ নির্মাতা জায়ান্টের ক্রয়াদেশ ও সরবরাহ। এত সব সংকটের মধ্যে এবার জানা গেল, ফৌজদারি তদন্তের মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া কারখানার নথিসংক্রান্ত বিষয়ে গাফিলতি উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক চিঠিতে।

মার্কিন বিচার বিভাগ এরই মধ্যে ৫ জানুয়ারির ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে উড়োজাহাজ কর্মীসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। ঘটনার শিকার আলাস্কা এয়ারলাইনসও ফৌজদারি তদন্তে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে ফ্লাইট পরিষেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এ ধরনের ঘটনায় বিচার বিভাগ তদন্ত করবে তা স্বাভাবিক। আমরা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি ও এটাও বিশ্বাস করি না যে আমরাই এ তদন্তের লক্ষ্য।

বোয়িংয়ের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে আছে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সংঘটিত ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজের দুটি দুর্ঘটনা। লায়ন এয়ার ও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের ওই দুর্ঘটনার তদন্ত নিষ্পত্তি করতে ২০২১ সালে বোয়িং ২৪ কোটি ৪০ লাখ জরিমানাসহ ২৫০ কোটি ডলার অর্থ পরিশোধে সম্মত হয়েছিল। তখন ফ্লাইট-কন্ট্রোল সিস্টেমের ত্রুটি বিষয়ে দুই কর্মচারীকে দায়ী করা হয়েছিল। এবারের তদন্তে ওই ঘটনাগুলোরও মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

এদিকে যথাযথভাবে নথি সংরক্ষণে বোয়িংয়ের গাফিলতি দেখা গেছে। সম্প্রতি কংগ্রেসের কাছে এক চিঠিতে বোয়িং স্বীকার করেছে যে তারা আলাস্কা এয়ারলাইনসের বিমানের দরজার প্যানেল লাগানোর রেকর্ড খুঁজে পাচ্ছে না। বোয়িংয়ের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়াদ ওজাকলি ওই চিঠিতে লেখেন, ‘আমরা বিস্তৃতভাবে খুঁজে দেখেছি, কিন্তু ওই ধরনের কোনো নথি পাইনি।’

জানুয়ারির ঘটনার পর থেকে এভিয়েশন খাতে নতুন ধরনের সংকট শুরু হয়েছে। ওই সময় আলাস্কা এয়ারলাইনস ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের শিডিউলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে শিডিউল স্বাভাবিক হয়ে এলেও সম্প্রতি ইউনাইটেড এয়ারলাইনস জানায়, বোয়িং থেকে প্রয়োজনীয় সরবরাহ না আসার আশঙ্কায় মে ও জুনে নতুন পাইলট নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে না।

এদিকে সুরক্ষা বিষয়ে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) বিস্তৃত তদন্ত শুরু করেছে। সম্প্রতি তারা বোয়িংকে সুরক্ষা নীতি তৈরি করতে সময় বেঁধে দিয়েছে। এমনকি নিরাপত্তার স্বার্থে ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের উড়োজাহাজ তৈরি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। পাশাপাশি উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমান সময়ের তুলনায় আর বাড়াতে পারবে না বলেও জানায় সংস্থাটি। এফএএ জানায়, বোয়িংকে বিমানের উৎপাদন বাড়ানোর অনুমতি আপাতত আর দেয়া হবে না।

গত পাঁচ বছর উড্ডয়নে আস্থা হারাচ্ছে বোয়িং। প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের সঙ্গে বাড়ছে শেয়ারের ব্যবধানও। প্রতি বছরই কমছে বিমানের ক্রয়াদেশ ও সরবরাহের পরিমাণ। এয়ারক্রাফটের মান ধরে রাখার পাশাপাশি মুনাফা করতে বেগ পেতে হচ্ছে বোয়িংকে। এমন সময় পরপর বিপত্তি আইনি ও ব্যবসায়িক সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাসকে টেক্কা দেয়ার পরিকল্পনা থেকে সর্বাধিক বিক্রীত ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের এয়ারক্রাফট উৎপাদন বাড়িয়েছিল বোয়িং। প্রায় এক দশক ধরে গ্রাহকদের দ্রুত উড়োজাহাজ সরবরাহে গুরুত্ব দিচ্ছে কোম্পানিটি। ফলে দ্রুত সরবরাহ করতে গিয়ে থেকে যাচ্ছে নানা ত্রুটি। গত বছর বেশ কয়েকবার বোয়িংয়ের তৈরি এয়ারক্রাফটের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এয়ারবাসের সঙ্গে টেক্কা দিতে ২০২৩ সালের অক্টোবরে বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী ডেভিড কালহোন জানান, প্রতি মাসে ম্যাক্স মডেলের ৩৮টি এয়ারক্রাফট তৈরি করা হবে। কিন্তু এরপর বোয়িংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় ২০২৪ ও ২০২৫ সালে উৎপাদন সক্ষমতা আরো বাড়ানোর কথা। এ বিষয়ে বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়।

সাম্প্রতিক একাধিক দুর্ঘটনার পর গত মাসে ২৭টি উড়োজাহাজ সরবরাহ করেছে বোয়িং, যা সেপ্টেম্বরের পর থেকে সর্বনিম্ন। এছাড়া বোয়িং ম্যাক্স উড়োজাহাজ বিক্রি করেছে মাত্র তিনটি। তবে অন্য তিনটি ক্রয়াদেশ বাতিলও হয়েছে কোম্পানিটির।