কৌশলে গাজার খাদ্যব্যবস্থা ধ্বংস করছে ইসরায়েল

#
news image

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বৃহত্তর ‘অনাহার অভিযানের’ অংশ হিসেবে ইসরায়েল গাজার খাদ্যব্যবস্থা ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেছেনজাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ। এ নিয়ে তেমন কিছু না করার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন তিনি। এদিকে ত্রাণ সরবরাহ করতে গাজা উপকূলে অস্থায়ী একটি বন্দর গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অস্থায়ী এই বন্দর স্থাপন করা হলে গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে গাজায় প্রতিদিন ৬৩ জন নারী মারা যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে দেওয়া এক বক্তৃতায় বিশ্ব সংস্থাটির খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক, লেবাননি বংশোদ্ভূত কানাডীয় আইনের অধ্যাপক মাইকেল ফখরি বলেন, গাজায় অনাহারের চিত্রগুলো অসহনীয় অথচ আপনারা কিছুই করছেন না। চারদিক থেকে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে পাঁচ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত ও প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে।

অবিরাম বোমা ও গোলা হামলায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ত্রাণ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েলের কঠোর অবরোধ ও হামলার কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন। গাজার বাকি অংশ থেকে গাজা সিটিসহ উত্তরাংশ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে হানাদার ইসরায়েলি বাহিনী। উত্তরাংশের হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাচ্ছে। ফখরি কাউন্সিলকে বলেন, ইসরায়েল গাজার খাদ্যব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল একটি অনাহার অভিযান চাপিয়ে দিয়েছে। গাজার ছোট জেলে সম্প্রদায়কেও লক্ষ্যস্থল করেছে তারা। বিশ্বের সুনির্দিষ্ট ইস্যু ও সংকটগুলো নিয়ে জাতিসংঘকে পরামর্শ ও প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নিযুক্ত কয়েক ডজন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞের একজন ফখরি তার বক্তৃতায় ৪৭ সদস্যের জেনেভা কাউন্সিলে অভিযোগ করে বলেন, ইসরায়েল গাজার জেলেদের সাগরে নামতে তো দিচ্ছেই না তাদের নৌকা ও কুটিরগুলোও ধ্বংস করে দিচ্ছে।

তিনি জানান, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর থেকে গাজার মত্স্য খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার সিটির প্রধান বন্দরের প্রত্যেকটি নৌকা ধ্বংস করে দিয়েছে। ফখরি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য দেশগুলোর প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ও অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের বিষয়গুলো বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে নিজের বক্তৃতা শেষ করেন। বলেন, ‘এগুলো দেখছেন আপনারা। অনুগ্রহ করে আপনাদের কথাকে পদক্ষেপে পরিণত করুন। গাজায় অনাহার বাড়তে থাকায় মিশর ও ইরাকসহ বেশ কিছু দেশ ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের ইসরায়েলি মিশনের আইন উপদেষ্টা ইয়েলা সেট্রিন ফখরির অভিযোগগুলোকে ‘নির্জলা মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে গাজা উপকূলে অস্থায়ী বন্দর গড়বে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় সমুদ্রপথে মানবিক ত্রাণ সরবরাহ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী একটি বন্দর নির্মাণ করবে—এমন ঘোষণা দিতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন। জানা যায়, স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে বাইডেন এ ঘোষণা দেবেন। অস্থায়ী এই বন্দর স্থাপন করা হলে মানবিক ত্রাণ সহায়তা বেড়ে যাবে। প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের জন্য বাড়তি শত শত ট্রাক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে বন্দর স্থাপন করতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনে ৩ হাজার ৪০০টিরও বেশি নতুন বাড়ি স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ি তৈরি করা হবে জেরুজালেমের পূর্বে মা’লে আদুমিমে। বাকিগুলো বেথলেহেমের দক্ষিণে কাছাকাছি কেদার ও এফরাতে। নাম না প্রকাশের শর্তে ইসরায়েলের এক মন্ত্রী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঐ মন্ত্রী বলেছেন, দুই সপ্তাহ আগে মালে আদুমিমের কাছে ফিলিস্তিনের হামলার জবাবে এ নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। এদিকে, দলখদার রাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের চরম নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ অংশই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের বিষয়টির বিরোধিতা করে আসছে। কিন্তু ইসরায়েল কারো আপত্তি না মেনে বসতি স্থাপন করেই চলেছে।

নাগরিক ডেস্ক

০৯ মার্চ, ২০২৪,  4:26 PM

news image

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বৃহত্তর ‘অনাহার অভিযানের’ অংশ হিসেবে ইসরায়েল গাজার খাদ্যব্যবস্থা ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেছেনজাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ। এ নিয়ে তেমন কিছু না করার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন তিনি। এদিকে ত্রাণ সরবরাহ করতে গাজা উপকূলে অস্থায়ী একটি বন্দর গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অস্থায়ী এই বন্দর স্থাপন করা হলে গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে গাজায় প্রতিদিন ৬৩ জন নারী মারা যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে দেওয়া এক বক্তৃতায় বিশ্ব সংস্থাটির খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক, লেবাননি বংশোদ্ভূত কানাডীয় আইনের অধ্যাপক মাইকেল ফখরি বলেন, গাজায় অনাহারের চিত্রগুলো অসহনীয় অথচ আপনারা কিছুই করছেন না। চারদিক থেকে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে পাঁচ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত ও প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে।

অবিরাম বোমা ও গোলা হামলায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ত্রাণ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েলের কঠোর অবরোধ ও হামলার কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন। গাজার বাকি অংশ থেকে গাজা সিটিসহ উত্তরাংশ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে হানাদার ইসরায়েলি বাহিনী। উত্তরাংশের হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাচ্ছে। ফখরি কাউন্সিলকে বলেন, ইসরায়েল গাজার খাদ্যব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল একটি অনাহার অভিযান চাপিয়ে দিয়েছে। গাজার ছোট জেলে সম্প্রদায়কেও লক্ষ্যস্থল করেছে তারা। বিশ্বের সুনির্দিষ্ট ইস্যু ও সংকটগুলো নিয়ে জাতিসংঘকে পরামর্শ ও প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নিযুক্ত কয়েক ডজন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞের একজন ফখরি তার বক্তৃতায় ৪৭ সদস্যের জেনেভা কাউন্সিলে অভিযোগ করে বলেন, ইসরায়েল গাজার জেলেদের সাগরে নামতে তো দিচ্ছেই না তাদের নৌকা ও কুটিরগুলোও ধ্বংস করে দিচ্ছে।

তিনি জানান, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর থেকে গাজার মত্স্য খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার সিটির প্রধান বন্দরের প্রত্যেকটি নৌকা ধ্বংস করে দিয়েছে। ফখরি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য দেশগুলোর প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ও অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের বিষয়গুলো বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে নিজের বক্তৃতা শেষ করেন। বলেন, ‘এগুলো দেখছেন আপনারা। অনুগ্রহ করে আপনাদের কথাকে পদক্ষেপে পরিণত করুন। গাজায় অনাহার বাড়তে থাকায় মিশর ও ইরাকসহ বেশ কিছু দেশ ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের ইসরায়েলি মিশনের আইন উপদেষ্টা ইয়েলা সেট্রিন ফখরির অভিযোগগুলোকে ‘নির্জলা মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে গাজা উপকূলে অস্থায়ী বন্দর গড়বে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় সমুদ্রপথে মানবিক ত্রাণ সরবরাহ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী একটি বন্দর নির্মাণ করবে—এমন ঘোষণা দিতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন। জানা যায়, স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে বাইডেন এ ঘোষণা দেবেন। অস্থায়ী এই বন্দর স্থাপন করা হলে মানবিক ত্রাণ সহায়তা বেড়ে যাবে। প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের জন্য বাড়তি শত শত ট্রাক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে বন্দর স্থাপন করতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনে ৩ হাজার ৪০০টিরও বেশি নতুন বাড়ি স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ি তৈরি করা হবে জেরুজালেমের পূর্বে মা’লে আদুমিমে। বাকিগুলো বেথলেহেমের দক্ষিণে কাছাকাছি কেদার ও এফরাতে। নাম না প্রকাশের শর্তে ইসরায়েলের এক মন্ত্রী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঐ মন্ত্রী বলেছেন, দুই সপ্তাহ আগে মালে আদুমিমের কাছে ফিলিস্তিনের হামলার জবাবে এ নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। এদিকে, দলখদার রাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের চরম নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ অংশই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের বিষয়টির বিরোধিতা করে আসছে। কিন্তু ইসরায়েল কারো আপত্তি না মেনে বসতি স্থাপন করেই চলেছে।