বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণের গুরুত্ব

নাগরিক ডেস্ক
০৭ মার্চ, ২০২৪, 2:07 AM
বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণের গুরুত্ব
সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ছিলো অলিখিত। তৎকালীন ছাত্রনেতারা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই দিনের মঞ্চে বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোনো বক্তাও ছিলো না।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীকের, ‘বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ও প্রেক্ষাপট’ প্রবন্ধে ঐতিহাসিক এই ভাষণের শব্দ ও ব্যাপ্তি সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ১ হাজার ১০৮ শব্দ, ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ড।
যদিও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের এক লেখা ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। তাঁর তথ্যমতে, সাত মার্চের ভাষণ ছিলো ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ড, শব্দ ছিলো ১ হাজার ৩৩৮টি।
বঙ্গবন্ধুর সেই অমর ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেসকো ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যুদ্ধ, সামাজিক বিপর্যয় ও সংরক্ষণের অভাবে বিশ্বজুড়ে ঝুঁকিতে থাকা নথিগুলোকে ২০ বছর ধরে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে ইউনেসকো। এ পর্যন্ত এসব স্বীকৃতির মধ্যে ইউনেসকো প্রথম কোনো ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়, যা ছিলো অলিখিত। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি ইউনেসকোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এমওডব্লিউ) কর্মসূচির অধীনে আন্তর্জাতিক তালিকায় (ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার) মোট ৭৮টি দলিলকে মনোনয়ন দেয়। এ তালিকায় ৪৮ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে স্থান দেওয়া হয়।
সাত মার্চের ভাষণটি রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের সরাসরি সম্প্রচার করার কথা ছিলো। রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা কেন্দ্রে তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রস্তুত ছিলো কিন্তু সামরিক শাসকরা শেষ মুহূর্তে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দেয়নি। ভাষণ রেকর্ড করার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রেডিও পাকিস্তান ঢাকা স্টেশনের বাংলা অনুষ্ঠান সংগঠক নাসার আহমেদ চৌধুরী বক্তৃতাটি সম্পূর্ণভাবে রেকর্ড করেন। বক্তৃতার সরাসরি সম্প্রচার বাতিলের প্রতিবাদে রেডিও স্টেশনের সকল বাঙালি কর্মী ও প্রযুক্তিবিদরা তাদের কাজ ছেড়ে দেন। নিয়মিত বেতার সম্প্রচার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের হুমকি দেন। পরে পাকিস্তান সরকারকে মাথা নত করতে বাধ্য হলে রেকর্ড করা ভাষণটি সম্প্রচারের অনুমতি দেয় ৮ মার্চ, ১৯৭১।
লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা অনেক ঐতিহাসিক ভাষণ ছেপেছে। যেমন আব্রাহাম লিংকনের গ্যাটিসবার্গ অ্যাড্রেস, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চার্চিলের বক্তৃতা। গার্ডিয়ানে চিহ্নিত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণটাও সেই পর্যায়ের। যে বক্তৃতাগুলো ইতিহাস সৃষ্টি করে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল সে রকমই ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণ।
বিবিসি বাংলাকে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সামরিক শাসন তুলে নেওয়া ও সৈন্যদের ব্যারাকে ফেরত নেওয়াসহ পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি চারটি শর্তের ব্যাপারেই শুধু বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। ভাষণ দিতে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শেখ মুজিবকে তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বলেছিলেন, ‘তুমি যা বিশ্বাস করো, তাই বলবে। ৭ মার্চের সেই ভাষণ তিনি নিজের চিন্তা থেকেই দিয়েছিলেন। ভাষণটি লিখিত ছিলনা।’
নাগরিক ডেস্ক
০৭ মার্চ, ২০২৪, 2:07 AM
সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ছিলো অলিখিত। তৎকালীন ছাত্রনেতারা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই দিনের মঞ্চে বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোনো বক্তাও ছিলো না।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীকের, ‘বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ও প্রেক্ষাপট’ প্রবন্ধে ঐতিহাসিক এই ভাষণের শব্দ ও ব্যাপ্তি সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ১ হাজার ১০৮ শব্দ, ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ড।
যদিও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের এক লেখা ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। তাঁর তথ্যমতে, সাত মার্চের ভাষণ ছিলো ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ড, শব্দ ছিলো ১ হাজার ৩৩৮টি।
বঙ্গবন্ধুর সেই অমর ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেসকো ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যুদ্ধ, সামাজিক বিপর্যয় ও সংরক্ষণের অভাবে বিশ্বজুড়ে ঝুঁকিতে থাকা নথিগুলোকে ২০ বছর ধরে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে ইউনেসকো। এ পর্যন্ত এসব স্বীকৃতির মধ্যে ইউনেসকো প্রথম কোনো ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়, যা ছিলো অলিখিত। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি ইউনেসকোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এমওডব্লিউ) কর্মসূচির অধীনে আন্তর্জাতিক তালিকায় (ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার) মোট ৭৮টি দলিলকে মনোনয়ন দেয়। এ তালিকায় ৪৮ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে স্থান দেওয়া হয়।
সাত মার্চের ভাষণটি রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের সরাসরি সম্প্রচার করার কথা ছিলো। রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা কেন্দ্রে তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রস্তুত ছিলো কিন্তু সামরিক শাসকরা শেষ মুহূর্তে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দেয়নি। ভাষণ রেকর্ড করার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রেডিও পাকিস্তান ঢাকা স্টেশনের বাংলা অনুষ্ঠান সংগঠক নাসার আহমেদ চৌধুরী বক্তৃতাটি সম্পূর্ণভাবে রেকর্ড করেন। বক্তৃতার সরাসরি সম্প্রচার বাতিলের প্রতিবাদে রেডিও স্টেশনের সকল বাঙালি কর্মী ও প্রযুক্তিবিদরা তাদের কাজ ছেড়ে দেন। নিয়মিত বেতার সম্প্রচার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের হুমকি দেন। পরে পাকিস্তান সরকারকে মাথা নত করতে বাধ্য হলে রেকর্ড করা ভাষণটি সম্প্রচারের অনুমতি দেয় ৮ মার্চ, ১৯৭১।
লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা অনেক ঐতিহাসিক ভাষণ ছেপেছে। যেমন আব্রাহাম লিংকনের গ্যাটিসবার্গ অ্যাড্রেস, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চার্চিলের বক্তৃতা। গার্ডিয়ানে চিহ্নিত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণটাও সেই পর্যায়ের। যে বক্তৃতাগুলো ইতিহাস সৃষ্টি করে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল সে রকমই ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণ।
বিবিসি বাংলাকে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সামরিক শাসন তুলে নেওয়া ও সৈন্যদের ব্যারাকে ফেরত নেওয়াসহ পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি চারটি শর্তের ব্যাপারেই শুধু বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। ভাষণ দিতে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শেখ মুজিবকে তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বলেছিলেন, ‘তুমি যা বিশ্বাস করো, তাই বলবে। ৭ মার্চের সেই ভাষণ তিনি নিজের চিন্তা থেকেই দিয়েছিলেন। ভাষণটি লিখিত ছিলনা।’