ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সেতু এলাকায়

#
news image

নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হচ্ছে পদ্মা সেতু এলাকায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে জলে-স্থলে-আকাশ পথে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। 
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তায় আকাশে থাকবে র‌্যাবের হেলিকপ্টারের টহল আর নদীতে কোস্ট গার্ডের। সড়কে টহল তো থাকবেই। নজিরবিহীন এই নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে পাঁচ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী। পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করবেন তারা। এই ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাইবার ওয়ার্ল্ড মনিটরিংসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাজানো হচ্ছে নিরাপত্তা পরিকল্পনা। ইতিমধ্যে নানান কার্যক্রম শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলো। আশপাশের সড়কে এবং সড়কের বাইরেও বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার ও ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতা ও নজরদারি শুরু হয়েছে আগেই। পুলিশ, র‌্যাব, সোয়াত টিম, হাইওয়ে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ট্রাফিক পুলিশ, নৌ পুলিশ, আনসার, কোস্ট গার্ডসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরা পুরো সেতু এলাকায় সেনা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। আশপাশের সড়কে এবং সড়কের বাইরেও বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি টিভি)। কঠোর তদারকির মধ্যে নেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সেতু এলাকায় যানবাহন এবং নদীতে নৌযান চলাচল আগের দিন রাত থেকেই বন্ধ থাকবে। উদ্বোধন পরবর্তীতেও জোরদার থাকবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 
সেতুর দুই পাড়ে নব গঠিত দুটি থানাও যুক্ত হবে এই নিরাপত্তায়। আজ মঙ্গলবার থানা দুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিরাপত্তা ব্যবস্থার কর্মপন্থা নির্ধারণে গতকাল একটি সভাও করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২৫ জুন শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গমনাগমন ও অবস্থানকালে নিñিদ্র নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাশাপাশি পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে।
সভায় জানানো হয়, অনুষ্ঠানস্থল বা পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক নাশকতা প্রতিরোধে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সেতু উদ্বোধনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক ভলেনটিয়ার থাকবে। জরুরি সেবা যেমন, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, পানি, মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ উপলক্ষে সেতুসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
এর আগেও সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব অংশ এবং পুরো সেতু এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৩ জুনের ওই বৈঠকে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। পদ্মার দুই পাড়ে নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতু ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে। এই সেতু নির্মাণ বর্তমান সরকারের একটি বড় সাফল্য। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারবিরোধী একটি চক্র এবং দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল নানা অপপ্রচারে লিপ্ত। মহলটি জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এবং একইসঙ্গে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে সারা দেশে, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা যাচ্ছে। এই উৎসবমুখর পরিবেশকে ম্লান করে দিতে এবং জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে দেশে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চলছে, যা প্রধানমন্ত্রী নিজেও বারবার বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে সরকারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, যখনই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয় থাকে তখনই কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি সরকারের নজরে আনি। পদ্মা সেতু যেহেতু বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের একটি যুগান্তকারী মাইলফলক, তাই এটিকে ঘিরে যাতে কোনও অপশক্তি তৎপর হতে না পারে সে বিষয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির নজরদারি রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন সকাল দশটায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এসে উপস্থিত হবেন। এখানে সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন ও সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন তিনি। পরবর্তীতে সেখান থেকে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুর অংশে দলীয় একটি জনসভায় অংশ নেবেন।
পুলিশ সদর দফতর বলছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক লোক অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপস্থিতির বিষয়টি সম্পর্কে আগাম ধারণা নিয়ে যেসব রুট দিয়ে তারা আসবেন সেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেশ কয়েক দফা নিরাপত্তা তল্লাশি পার হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে হবে আগত অতিথিদের। পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তাদেরকে যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে হবে। কেউ যেন কোনও ধরনের অপতৎপরতা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে থাকবে কঠোর নজরদারি। 
পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক প্রভাতী খবরকে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাঁচ হাজারেরও বেশি সদস্য একযোগে মোতায়েন থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কেউ যাতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান কিংবা পদ্মা সেতুকে ঘিরে কোনও ধরনের গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছেন তারা। এছাড়াও সারা দেশের নিরাপত্তার বিষয়টিও নজরে নেওয়া হয়েছে। 
পদ্মা-সেতুর নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। সংস্থাটির গণমাধ্যম ও আইন শাখা জাানয়, সেতুর নিরাপত্তায় বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। তাছাড়া ফুট পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, বোম স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড থাকবে। স্পেশাল ফোর্স নিয়ে প্রস্তুত থাকবে হেলিকপ্টার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ পরবর্তীতে সেতুর নিরাপত্তায় র‌্যাবের নজরদারি থাকবে। থাকবে পেট্রোলিং টিম। এছাড়া পদ্মা সেতুকে ঘিরে কেউ যেনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য বাড়ানো হয়েছে সাইবার মনিটরিং। 
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলের বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখা হবে। প্রতিনিয়ত চেকপোস্ট পরিচালনা করা হবে বলেও জানায় র‌্যাব।
নৌ পুলিশ এরইমধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে নদী পার হয়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশে আসা মানুষদের ক্ষেত্রে বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। মাওয়া থেকে শুরু করে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে নৌপথের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন টহল চলমান রয়েছে। অনুষ্ঠানের আগেরদিন রাত বারোটার পর থেকে বন্ধ থাকবে ফেরি ও সব ধরনের নৌযান চলাচল। অনুষ্ঠানে আগত অতিথি এবং উপস্থিতিদের বিষয়টি বিবেচনা করে কি ধরনের নৌযান চলাচল করা হবে সে অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুষ্ঠানের আগে ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় ঘাটের দুই পাশে অতিরিক্ত নৌ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হবে যারা ২৪ ঘণ্টা পদ্মা সেতু নিরাপত্তায় কাজ করবেন।
মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান এবং মাদারীপুরের পুলিশ সুপর গোলাম মোস্তফা রাসেল জানিয়েছেন, উদ্বোধনী দিনে বড় আকারের জনসভাসহ সেতুর দুই পাড়ে প্রধানমন্ত্রীর ৫টি কর্মসূচি সফল করতে কাজ করছি। পুলিশ সদর দফতর থেকেও সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাই কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখা হয়েছে পুরো সেতু এলাকা। সেতু সংশ্লিষ্ট তিন জেলাসহ বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা পুলিশও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।

হরলাল রায় সাগর

২১ জুন, ২০২২,  1:43 AM

news image

নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হচ্ছে পদ্মা সেতু এলাকায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে জলে-স্থলে-আকাশ পথে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। 
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তায় আকাশে থাকবে র‌্যাবের হেলিকপ্টারের টহল আর নদীতে কোস্ট গার্ডের। সড়কে টহল তো থাকবেই। নজিরবিহীন এই নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে পাঁচ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী। পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করবেন তারা। এই ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাইবার ওয়ার্ল্ড মনিটরিংসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাজানো হচ্ছে নিরাপত্তা পরিকল্পনা। ইতিমধ্যে নানান কার্যক্রম শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলো। আশপাশের সড়কে এবং সড়কের বাইরেও বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার ও ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতা ও নজরদারি শুরু হয়েছে আগেই। পুলিশ, র‌্যাব, সোয়াত টিম, হাইওয়ে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ট্রাফিক পুলিশ, নৌ পুলিশ, আনসার, কোস্ট গার্ডসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরা পুরো সেতু এলাকায় সেনা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। আশপাশের সড়কে এবং সড়কের বাইরেও বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি টিভি)। কঠোর তদারকির মধ্যে নেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সেতু এলাকায় যানবাহন এবং নদীতে নৌযান চলাচল আগের দিন রাত থেকেই বন্ধ থাকবে। উদ্বোধন পরবর্তীতেও জোরদার থাকবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 
সেতুর দুই পাড়ে নব গঠিত দুটি থানাও যুক্ত হবে এই নিরাপত্তায়। আজ মঙ্গলবার থানা দুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিরাপত্তা ব্যবস্থার কর্মপন্থা নির্ধারণে গতকাল একটি সভাও করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২৫ জুন শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গমনাগমন ও অবস্থানকালে নিñিদ্র নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাশাপাশি পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে।
সভায় জানানো হয়, অনুষ্ঠানস্থল বা পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক নাশকতা প্রতিরোধে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সেতু উদ্বোধনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক ভলেনটিয়ার থাকবে। জরুরি সেবা যেমন, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, পানি, মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ উপলক্ষে সেতুসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
এর আগেও সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব অংশ এবং পুরো সেতু এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৩ জুনের ওই বৈঠকে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। পদ্মার দুই পাড়ে নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতু ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে। এই সেতু নির্মাণ বর্তমান সরকারের একটি বড় সাফল্য। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারবিরোধী একটি চক্র এবং দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল নানা অপপ্রচারে লিপ্ত। মহলটি জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এবং একইসঙ্গে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে সারা দেশে, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা যাচ্ছে। এই উৎসবমুখর পরিবেশকে ম্লান করে দিতে এবং জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে দেশে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চলছে, যা প্রধানমন্ত্রী নিজেও বারবার বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে সরকারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, যখনই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয় থাকে তখনই কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি সরকারের নজরে আনি। পদ্মা সেতু যেহেতু বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের একটি যুগান্তকারী মাইলফলক, তাই এটিকে ঘিরে যাতে কোনও অপশক্তি তৎপর হতে না পারে সে বিষয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির নজরদারি রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন সকাল দশটায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এসে উপস্থিত হবেন। এখানে সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন ও সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন তিনি। পরবর্তীতে সেখান থেকে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুর অংশে দলীয় একটি জনসভায় অংশ নেবেন।
পুলিশ সদর দফতর বলছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক লোক অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপস্থিতির বিষয়টি সম্পর্কে আগাম ধারণা নিয়ে যেসব রুট দিয়ে তারা আসবেন সেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেশ কয়েক দফা নিরাপত্তা তল্লাশি পার হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে হবে আগত অতিথিদের। পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তাদেরকে যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে হবে। কেউ যেন কোনও ধরনের অপতৎপরতা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে থাকবে কঠোর নজরদারি। 
পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক প্রভাতী খবরকে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাঁচ হাজারেরও বেশি সদস্য একযোগে মোতায়েন থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কেউ যাতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান কিংবা পদ্মা সেতুকে ঘিরে কোনও ধরনের গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছেন তারা। এছাড়াও সারা দেশের নিরাপত্তার বিষয়টিও নজরে নেওয়া হয়েছে। 
পদ্মা-সেতুর নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। সংস্থাটির গণমাধ্যম ও আইন শাখা জাানয়, সেতুর নিরাপত্তায় বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। তাছাড়া ফুট পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, বোম স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড থাকবে। স্পেশাল ফোর্স নিয়ে প্রস্তুত থাকবে হেলিকপ্টার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ পরবর্তীতে সেতুর নিরাপত্তায় র‌্যাবের নজরদারি থাকবে। থাকবে পেট্রোলিং টিম। এছাড়া পদ্মা সেতুকে ঘিরে কেউ যেনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য বাড়ানো হয়েছে সাইবার মনিটরিং। 
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলের বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখা হবে। প্রতিনিয়ত চেকপোস্ট পরিচালনা করা হবে বলেও জানায় র‌্যাব।
নৌ পুলিশ এরইমধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে নদী পার হয়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশে আসা মানুষদের ক্ষেত্রে বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। মাওয়া থেকে শুরু করে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে নৌপথের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন টহল চলমান রয়েছে। অনুষ্ঠানের আগেরদিন রাত বারোটার পর থেকে বন্ধ থাকবে ফেরি ও সব ধরনের নৌযান চলাচল। অনুষ্ঠানে আগত অতিথি এবং উপস্থিতিদের বিষয়টি বিবেচনা করে কি ধরনের নৌযান চলাচল করা হবে সে অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুষ্ঠানের আগে ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় ঘাটের দুই পাশে অতিরিক্ত নৌ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হবে যারা ২৪ ঘণ্টা পদ্মা সেতু নিরাপত্তায় কাজ করবেন।
মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান এবং মাদারীপুরের পুলিশ সুপর গোলাম মোস্তফা রাসেল জানিয়েছেন, উদ্বোধনী দিনে বড় আকারের জনসভাসহ সেতুর দুই পাড়ে প্রধানমন্ত্রীর ৫টি কর্মসূচি সফল করতে কাজ করছি। পুলিশ সদর দফতর থেকেও সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাই কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখা হয়েছে পুরো সেতু এলাকা। সেতু সংশ্লিষ্ট তিন জেলাসহ বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা পুলিশও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।