অচেনা নগরে পরিনত সিলেট, সুনামগঞ্জ

খালেদ আহমদ, সিলেট
২১ জুন, ২০২২, 1:38 AM

অচেনা নগরে পরিনত সিলেট, সুনামগঞ্জ
সিলেট আর সুনামগঞ্জ এখন অচেনা নগর, অচেনা শহর। বিদ্যুৎ নেই, রাত নামলেই ঘুটঘুটে আঁধার চারিদিক।
চারপাশে পানি খেলা করলেও নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি। চলছে খাবারের মহাসংকট। রেলপথ, সড়কপথ, আকাশপথ- সব পথেই বানের বাগড়া। বন্ধ হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন আস্তে আস্তে ঠিক হলেও ধুঁকছে নেটওয়ার্ক। বানের পানিতে সিলেট অঞ্চলের অন্তত অর্ধকোটি মানুষ বন্দি।
দুই জেলাতেই চলছে হাহাকার। কেউ কাউকে সাহায্য করার মতো অবস্থা নেই। রয়েছে খাবার সংকট। বেশি টাকা দিয়েও খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। এক প্যাকেট (৫টি) ছোট মোমবাতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে, সুরমার পানি এখনও বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫৩ মিলিমিটার। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে পানি কিছুটা কমলেও নিচু সড়ক ও ঘরবাড়ির পানি গতকাল পর্যন্ত নামেনি।
চলতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সিলেট সদরে তিনজন, সুনামগঞ্জের ছাতকে তিনজন, মৌলভীবাজারে এক শিশু ও টিলা ধসে আরেকজন মারা গেছেন।
উপদ্রুত অঞ্চলে তৎপরতা চালাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতায় সেনাবাহিনীর পর নৌ ও বিমানবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া কোস্টগার্ডকেও ডেকে পাঠানো হয়েছে উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতার জন্য।
তবে বিপন্ন মানুষের জন্য সরকারের ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল। সহায়সম্বল সব হারিয়ে বহু মানুষের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। চিকিৎসা সেবায় ঘটেছে বিঘ্ন। সবচেয়ে দুর্বিপাকে সুনামগঞ্জ।
পুরো জেলা ডুবে থাকায় প্রকৃত খবর জানার মাধ্যমগুলো স্তিমিত হয়ে আছে। মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ তাদের দুর্ভোগের কথা জানাতে পারছে না কাউকে। এতে দেশের অন্য প্রান্ত ও বিদেশে থাকা স্বজনরা সময় কাটাচ্ছেন উৎকণ্ঠায়। সরকারের জরুরি পরিষেবাও অনেকটা অচল। কয়েকটি স্থানে ইউএনও, ওসিসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফোনও কাজ করছে না। বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন ও বাস চলাচল। উড়ছে না উড়োজাহাজও। একমাত্র সম্বল নৌকা ভাড়া হয়েছে ১০ থেকে ২০ গুণ।
সুনামগঞ্জে বন্ধ হয়ে গেছে ব্যাংকিং সেবাও। সিলেটেও অনেকটা তাই। মানুষ সিলেট ও সুনামগঞ্জ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় সেটাও এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে।
গতকাল পর্যন্ত সুরমা নদীর পর কুশিয়ারা নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জসহ আশপাশ এলাকায় নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত ছিল।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ সংলগ্ন এলাকা থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও ট্রেন যোগাযোগও এখনও সেভাবে চালু হয়নি।
কুমারগাঁওয়ে জাতীয় গ্রিড উপকেন্দ্রসহ বিদ্যুৎ স্থাপনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনস্থাপিত হলেও অধিকাংশ এলাকা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল। বন্ধ হওয়া মোবাইল নেটওয়ার্ক এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। এদিকে, কদমতলীতে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পানি ওঠায় যে কোনো সময় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
পরিবহন নেতা আবদুল গফুর জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের পর সিলেট জেলার সবকটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঢাকা-সিলেটসহ দূরপাল্লার কিছু বাস এখনও চলছে। তবে পানি আবার বাড়লে যে কোনো সময় তা বন্ধ হয়ে যাবে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় চিকিৎসাসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে আইসিইউ ও অপারেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের বিশেষ জেনারেটরটি আনার চেষ্টা চলছে। হাসপাতালের নিচতলায় পানি ওঠায় নিজস্ব জেনারেটর চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে একই পরিস্থিতি হওয়ায় রোগী ও স্বজনরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য নগরীর হোটেল-রেস্টুরেন্টের সিংহভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন প্রভাতী খবরকে জানান, সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম আরো বাড়াচ্ছি।
তিনি বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় প্রচুর সংখ্যক মানুষ উদ্ধারের অপেক্ষায় আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বয় করে তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে চালিয়ে যাচ্ছে ।
খালেদ আহমদ, সিলেট
২১ জুন, ২০২২, 1:38 AM

সিলেট আর সুনামগঞ্জ এখন অচেনা নগর, অচেনা শহর। বিদ্যুৎ নেই, রাত নামলেই ঘুটঘুটে আঁধার চারিদিক।
চারপাশে পানি খেলা করলেও নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি। চলছে খাবারের মহাসংকট। রেলপথ, সড়কপথ, আকাশপথ- সব পথেই বানের বাগড়া। বন্ধ হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন আস্তে আস্তে ঠিক হলেও ধুঁকছে নেটওয়ার্ক। বানের পানিতে সিলেট অঞ্চলের অন্তত অর্ধকোটি মানুষ বন্দি।
দুই জেলাতেই চলছে হাহাকার। কেউ কাউকে সাহায্য করার মতো অবস্থা নেই। রয়েছে খাবার সংকট। বেশি টাকা দিয়েও খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। এক প্যাকেট (৫টি) ছোট মোমবাতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে, সুরমার পানি এখনও বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫৩ মিলিমিটার। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে পানি কিছুটা কমলেও নিচু সড়ক ও ঘরবাড়ির পানি গতকাল পর্যন্ত নামেনি।
চলতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সিলেট সদরে তিনজন, সুনামগঞ্জের ছাতকে তিনজন, মৌলভীবাজারে এক শিশু ও টিলা ধসে আরেকজন মারা গেছেন।
উপদ্রুত অঞ্চলে তৎপরতা চালাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতায় সেনাবাহিনীর পর নৌ ও বিমানবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া কোস্টগার্ডকেও ডেকে পাঠানো হয়েছে উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতার জন্য।
তবে বিপন্ন মানুষের জন্য সরকারের ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল। সহায়সম্বল সব হারিয়ে বহু মানুষের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। চিকিৎসা সেবায় ঘটেছে বিঘ্ন। সবচেয়ে দুর্বিপাকে সুনামগঞ্জ।
পুরো জেলা ডুবে থাকায় প্রকৃত খবর জানার মাধ্যমগুলো স্তিমিত হয়ে আছে। মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ তাদের দুর্ভোগের কথা জানাতে পারছে না কাউকে। এতে দেশের অন্য প্রান্ত ও বিদেশে থাকা স্বজনরা সময় কাটাচ্ছেন উৎকণ্ঠায়। সরকারের জরুরি পরিষেবাও অনেকটা অচল। কয়েকটি স্থানে ইউএনও, ওসিসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফোনও কাজ করছে না। বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন ও বাস চলাচল। উড়ছে না উড়োজাহাজও। একমাত্র সম্বল নৌকা ভাড়া হয়েছে ১০ থেকে ২০ গুণ।
সুনামগঞ্জে বন্ধ হয়ে গেছে ব্যাংকিং সেবাও। সিলেটেও অনেকটা তাই। মানুষ সিলেট ও সুনামগঞ্জ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় সেটাও এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে।
গতকাল পর্যন্ত সুরমা নদীর পর কুশিয়ারা নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জসহ আশপাশ এলাকায় নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত ছিল।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ সংলগ্ন এলাকা থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও ট্রেন যোগাযোগও এখনও সেভাবে চালু হয়নি।
কুমারগাঁওয়ে জাতীয় গ্রিড উপকেন্দ্রসহ বিদ্যুৎ স্থাপনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনস্থাপিত হলেও অধিকাংশ এলাকা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল। বন্ধ হওয়া মোবাইল নেটওয়ার্ক এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। এদিকে, কদমতলীতে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পানি ওঠায় যে কোনো সময় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
পরিবহন নেতা আবদুল গফুর জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের পর সিলেট জেলার সবকটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঢাকা-সিলেটসহ দূরপাল্লার কিছু বাস এখনও চলছে। তবে পানি আবার বাড়লে যে কোনো সময় তা বন্ধ হয়ে যাবে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় চিকিৎসাসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে আইসিইউ ও অপারেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের বিশেষ জেনারেটরটি আনার চেষ্টা চলছে। হাসপাতালের নিচতলায় পানি ওঠায় নিজস্ব জেনারেটর চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে একই পরিস্থিতি হওয়ায় রোগী ও স্বজনরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য নগরীর হোটেল-রেস্টুরেন্টের সিংহভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন প্রভাতী খবরকে জানান, সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম আরো বাড়াচ্ছি।
তিনি বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় প্রচুর সংখ্যক মানুষ উদ্ধারের অপেক্ষায় আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বয় করে তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে চালিয়ে যাচ্ছে ।