বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে তৃণমূলের বিভক্তি দেখা দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কমিটি গঠনের দায়িত্বে থাকা সমন্বয়ক কমিটি ও উপজেলার শিশুর নেতৃত্ব প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই নিজেদের পছন্দের লোকদের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন করতে গিয়ে দলের জন্য প্রকৃত ত্যাগী ও যোগ্যদের উপেক্ষা করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে দলের তৃণমূলে দলীয় কর্মকাণ্ডে, অভিযোগ আছে আওয়ামীলীগকে দুর্বল করার জন্য একটা মহল সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু দায়িত্বশীল নেতারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করতেছেন। এতে করে আগামী দিনের রাজপথের আন্দোলন সংগ্রাম তথা দলের দূর্দীনে জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনে দলটির ভোট ব্যাংকে বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৫ সালে বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এই উপজেলার মোট ৯৯ টি ওয়ার্ড ও ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে অনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন ও কাউন্সিল এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা আওয়ামীলীগ। সে লক্ষ্যে ১০ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের মধ্যে থেকে ১১ টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়।

প্রতিটি সাংগঠনিক টিমে সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদকের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধান এবং ৫ থেকে ৮ জনকে সদস্য করা হয়। উক্ত টিমগুলো তৎসমূহ ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে পৌরসভা নির্বাচন ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কারণে সাংগঠনীক স্থবিরতা নেমে আসে।

গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল এবং চলতি বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেলের অবস্থান সুসংহত করতে গত অক্টোবর মাস থেকে পুরোদমে ফের শুরু হয় ওয়ার্ড সম্মেলনের প্রস্তুতি। দলীয় সূত্রে জানা যায় প্রতিটি ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা সম্মেলন করলেও অধিকাংশ ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের কাউন্সিল অধিবেশন সফলভাবে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হন। ফলে শতকরা ৮০ ভাগ ওয়ার্ডে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন না করে পরবর্তীতে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি ঘোষণা দিচ্ছেন দায়িত্বশীলরা। উপজেলার মোট ৯৯ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ইতিমধ্যে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অবশিষ্ট ওয়ার্ড গুলোর কমিটি অল্প দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে আভাস পাওয়া গেছে।

দলীয় সূত্র অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওয়ার্ল্ড কমিটির নতুন নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্রে তৃণমূলে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, পরীক্ষিত তেগী ও অধিকতর যোগ্যরা বেশিরভাগ ওয়ার্ডে উপেক্ষিত হয়েছেন। সেখানে সমন্বয় কমিটির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নেতৃবৃন্দ ও ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি সম্পাদকরা নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দের লোকদের কমিটিতে নিয়ে এসেছেন স্ব স্ব বলয় সৃষ্টি এবং পদ বাণিজ্য করতে গিয়ে। এক্ষেত্রে উপরে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ জেলা আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার নাম শোনা যায়। জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এডভোকেট আব্বাস উদ্দিন শেওলা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিজে উপস্থিত থেকে তার পছন্দের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন এক্ষেত্রে কাউন্সিলিং বা কারো মতামত নেওয়ার তোয়াক্কা করেননি তিনি।

ইতিমধ্যে লাউতা, মোল্লাপুর, তিলপাড়া, মাথিউরা ও শেওলা ইউনিয়নের সবকটি কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়ন ও পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড কমিটির ও সভাপতি সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকিগুলো অল্পদিনের মধ্যে ঘোষিত হবে। অভিযোগ রয়েছে, ঘোষিত এই সকল কমিটিতে যারা আসীন হয়েছেন তাদের অধিকাংশই হাইব্রিড, অন্য দল থেকে আগত অপেক্ষাকৃত অযোগ্য ও দলীয় রাজনীতিতে আনকুরা। তারা দলের চেয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রতি বেশি আনুগত্যশীল। আবার অনেকে নগণনারায়ণের মাধ্যমে পদ বাগিয়ে নিয়েছেন বলে তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্য রাজপথে প্রতিবাদ, মিছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা পোস্ট, কমেন্ট এমন কি স্থানীয় এমপির কাছে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এমপি মহোদয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তৃণমূলের নেতৃত্ববৃন্দের অভিযোগ গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও রহস্যজনক ভাবে তারা বিষয়টি উপেক্ষা করে যাচ্ছেন। এতে করে সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষোভ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমাগত। ফলশ্রুতিতে উপজেলা ব্যাপি তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিভক্তি ও কোন্দল মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে। পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অনেকেই দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় থেকে সময় সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন অবজ্ঞার সম্মুচিত জবাব দেওয়ার জন্য। তাই স্বাভাবিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে তৃণমূল আওয়ামীলীগ। যার ইতিবাচক প্রভাব আগামীতে দলের দুর্দিনে জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনগুলিতে পড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান বলেন, ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠনের মধ্য দিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে নতুন করে কর্ম চাঞ্চল্য ফিরে আসবে , নবগঠিত কমিটিগুলো দলীয় কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে আমি মনে করি। আওয়ামী একটা ঐতিহ্যবাহী সংগঠন দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল  এখানে কমিটি করতে গেলে নানা ষড়যন্ত্র ও অভিযোগ থাকবে। এই দলে অনেক নেতাকর্মী আসবে ও যাবে এতে সংগঠনের কিছু যায় আসে না । তিনি বলেন ইতিমধ্যে অধিকাংশ  ইউনিয়নের সব কয়টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে  অবশিষ্ট গুলো অল্প  দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। 

আলম শাওন।